লণ্ডন দেখে নিলাম পদ ব্রজে নয়ন জুড়িয়ে
YES 152 MILES
I HAVE DONE IT
১৫২ মাইল হাঁটা হল আজ সমাপ্ত। যাকে বলে ” লন্ডন লুপ” বা হাইকারদের এম২৫
৯টি পুরো শনিবার ও মাঝখানে সপ্তাহের ১দিন সহ মোট ১০ দিনে শেষ করে ফেললাম। দেখে নিলাম চিত্তাকর্ষক সুন্দরের রানী লন্ডন শহরকে। মোট ট্র্যাকের উপর ও এর বাহিরে কিছু অতিরিক্ত হাঁটা মিলিয়ে মোট হেঁটেছি ২০৬.৯৯ মাইল। বিশেষ করে জোরালোভাবে বলব যারা ট্রাকিং করেন সম্ভব হলে এই ” লন্ডন লুপ”-টা করে নেন । হাতের কাছে এত নয়নাভিরাম অবারিত চমক ও আনন্দ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। এক চক্করেই এক শত বায়ান্ন মাইল। লন্ডন শহর যে শুধু ইট পাথরেরই না, এখানে আছে রুপ প্রকৃতির এক অবিশ্বাস্য মেলবন্ধন । ক্রে রিভারের স্ফটিক স্বচ্ছ পানি। পায়ে হাঁটার প্রায় পথটি যেন সবুজ বনানীতে ভরপুর এক মায়াপুরী। ট্রান্সপোর্ট ফর লন্ডন খুবই সুন্দর করে ২৪ টি ভাগে ভাগ করে দিয়েছে লন্ডন লুপ। আপনি পছন্দ মত ছোট বড় যে কোন অংশ দিয়ে শুরু করতে পারেন বা কেন্টের ইরিথ থেকে শুরু করে এসেক্সের পারফ্লিট পর্যন্ত ভাগ করে করে বা একাধিক ছোট বড় ভাগ মিলিয়ে নিজের মত পরিকল্পনা করে শেষ করতে পারেন। গ্রীষ্মকালের লম্বা দিনেই আমি বলব শুরু করাটা সমীচীন।
সেই বরফ যুগের ইতিহাসের উপর দিয়ে হাঁটবেন। সুশীতল ছায়া পল্লব আচ্ছাদিত পথ পাশে যখন থাকবে স্ফটিক স্বচ্ছ পানির ধারা, খেলবে সেথায় মাছ ও জল পক্ষী, আপনি এমনিতেই নিজের অজান্তে চলে যাবেন এক অপরূপ মহিমায়।হাঁটতে হাঁটতে আকস্মিক হারিয়ে যেতে পারেন সুগন্ধি লেভেন্ডার বাগানে বা দেখবেন আপনার সাথে মিতালি হয়ে গেছে পথ-পাশে বিচরণ করা হরিণের দলের সাথে। আপনি প্রায়ই দেখবেন যখন ঘন জঙ্গলে সুনশান নীরবতার মধ্যে হাঁটছেন তখন এক ঝাঁক টিয়া পাখি মাথার উপর কসরত দেখিয়ে জানান দিবে ইহা শুধু আপনার হাঁটার জায়গা নয় তারাও আছে আপনার আশেপাশে।
ক্রয়ডন ডাউনের চড়াই উৎরাই যখন মাড়াচ্ছেন ধীরে ধীরে নিজেকে নিজের অজান্তে নিয়ে আসবেন ৩৫০ ফুট উচ্চতায়। টিয়া পাখির দুষ্টামি আপনাকে চমকিয়ে দিতে পারে। চোখ মেলে দিতে পারেন প্রসারিত সীমানায়। ২৬ মাইল দূর পর্যন্ত চলে আসবে আপনার চোখের নজরে। দেখতে পারবেন লণ্ডনে শহরের আকর্ষণীয় স্থাপনা সমূহ । হয়ত আপনি চমকিত হবেন, যে পাহাড়ের উপর দিয়ে হাঁটছেন সেটা হাজার বছর আগে ছিল সমুদ্র গর্ভে। আপনার পায়ের নিচে যে সুদৃঢ় পাহাড় তা লাইমের ( চুন ) পাহাড়। সন্ধান পেয়ে যেতে পারেন ২০০০ বছর আগের পাথরের তৈরি অস্ত্রের ঠিকানার।
জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এই স্মৃতি যোগাবে আপনাকে অনাবিল আনন্দের ফোয়ারা। আমার সাথীদের মধ্যে একজন ৬৩ বছরের ও অন্যজন ছিলেন ৫৯ বছরের। উভয়ের ডায়াবেটিস রোগ আছে। উনাদের কোন অসুবিধা হয় নাই এমন পথ চলতে। যদিও উনারা এখনও শেষ করতে পারেন নাই। তবে খুব শীঘ্রই শেষ করে ফেলবেন। একজন দেরিতে শুরু করেছিলনে বলে শেষ করতে দেরি হচ্ছে। আরও একজন আর একদিন হাটলেই শেষ হয়ে যাবে। তাই বলছিলাম অনেক ওজরআপত্তি অনেকের থাকে। কিন্ত মূল বিষয়টা হচ্ছে ইচ্ছা শক্তি। যত হাঁটবেন তত মনোজগত ভালো হবে আর শরীরতো ভাল থাকবেই।
পরিশেষ নিজেকে নিজে যদি প্রশ্ন করি আমি এই কষ্ট করে কি পেলাম ? তাহলে বলতে হয়।
The best and the most beautiful things in this world can not be seen or touched. It must be felt by the heart.——
যদিও হেঁটেছি বহুদূর, দেখেছি বিচিত্র জৈব প্রকৃতি , স্পর্শ ও মননে হয়েছি পুলকে পুলকিত তবে তাহা যাই হউক তার প্রভাব চলে যাবে অত শীঘ্রই। কিন্ত কী যে এক প্রশান্তির অনুভূতির ছায়া মেখে থাকল মননে ও অনুভবে তার স্বাদ থাকবে আমৃত্যু।
লেখকঃ মোহাম্মদ ছালিকুর রহমান
(২০২০ সালের ডায়েরি থেকে)
Email: msrahman1914@gmail.com