হাসনাত চৌধুরী ♦
লণ্ডন, ২০ এপ্রিল: টাওয়ার হ্যামলেটসের অবস্থান ও এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা নিয়ে দুর্লভ শিল্পকর্মের এক বিশেষ প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। ‘কেয়ার ফর সেইন্ট অ্যান’ চ্যারিটির উদ্যোগে লাইম হাউজের সেইন্ট অ্যান চার্চে এই প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। তাদের সহযোগিতায় রয়েছে ‘স্টিচেস ইন টাইম’ নামক স্থানীয় চ্যারিটি সংস্থা। ২৪ এপ্রিল শুরু হয়ে এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ ৫ মাস চলবে এই বিশেষ শিল্পকর্মের প্রদর্শনী।

এই আয়োজনকে সামনে রেখে গত ১৮ এপ্রিল শুক্রবার লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তা সংস্থা ‘কেয়ার ফর সেন্ট অ্যান’ চ্যারিটির পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আয়োজকরা জানান, প্রদর্শনীতে বৃহৎ ক্যানভাসে আঁকা ৮টি ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম (টাপেস্ট্রি) স্থান পাবে। এই শিল্পকর্মগুলোতে রোমান যুগ থেকে শুরু করে ২০০০ সাল পর্যন্ত টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বৈচিত্র্যময় সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসের অবস্থান ও এই এলাকার মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিলো তা এসব শিল্পকর্মে (টাপেস্ট্রি) সুন্দরভাবে চিত্রায়িত হয়েছে।
উদ্বোধনী দিন ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার প্রদর্শনীটি সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে। এরপর প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার ও শনিবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উন্মুক্ত থাকবে প্রদর্শনী। উদ্বোধনী দিনে দর্শনার্থীদের জন্য থাকবে বাংলাদেশী ঐতিহ্যবাহী খাবারের ব্যবস্থা। ‘স্টিচেস ইন টাইম’-এর নারীরা সকাল ১১টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাঁদের কাজের প্রদর্শনী করবেন । এছাড়া মে মাস থেকে শুরু হবে বিভিন্ন অংশগ্রহণমূলক ওয়ার্কশপ, যেখানে আগ্রহীরা সেলাই শেখার সুযোগ পাবেন।
আয়োজকরা কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষকে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করে শিল্পকর্ম দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে বলেন, প্রদর্শনী দেখলে তারা জানতে পারবেন টাওয়ার হ্যামলেটস হাজার বছর আগে কেমন ছিলো।
জানা গেছে, এই দুর্লভ টাপেস্ট্রি লাইম হাউস টাউন হলে সংরক্ষিত থাকে । আর এগুলো খুব কমই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।
সংবাদ সম্মেলন আয়োজকরা বলেন, সহস্রাব্দ উদযাপন উপলক্ষে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত দুই বছরে মোট ৫০টি শিল্পকর্ম তৈরি করা হয় । এই ৫০টির মধ্যে আমরা ৮টির প্রদর্শনী আয়োজন করতে যাচ্ছি। এগুলো তৈরীতে স্থানীয় স্কুল, কমিউনিটি গ্রুপসহ ইস্ট এণ্ডের হাজারেরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করেন । এছাড়া মর্গান স্টেনলীর মতো মত কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানও এতে সহযোগিতা করেছে।
উল্লেখ্য, যৌথভাবে আয়োজিত প্রদর্শনীতে সার্বিক সহযোগিতা করছে ‘স্টিচেস ইন টাইম’ নামক স্থানীয় একটি চ্যারিটি সংস্থা। এই সংস্থাটি প্রায় ৩০ বছর ধরে টাওয়ার হ্যামলেটসের পিছিয়ে পড়া নারীদের উন্নয়নে কাজ করছে। এখানে নারীদের বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। অধিকাংশ বাংলাদেশী-ব্রিটিশ নারী এখানে এসে ইংরেজী ভাষা ও শেলাই কাজ শিখে নিজেদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলছেন। প্রদর্শনীতে নারীদের তৈরি বিভিন্ন কাজ প্রদর্শন করা হবে।
উল্লেখ্য, লাইম হাউজে অবস্থিত ৩০০ বছরের প্রাচীন সেইন্ট অ্যান চার্চ হলো হলো প্রখ্যাত ইংরেজ আর্কিটেক্ট নিকোলাস হকসমোরের অসাধারণ স্থাপত্যশৈলীর একটি নিদর্শন । লণ্ডনে তাঁর ডিজাইন করা ছয়টি গির্জা রয়েছে । এই গির্জাকে কমিউনিটির মানুষের একটি প্রাণকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চান ‘কেয়ার ফর সেন্ট অ্যান’ -এর পরিচালকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ‘কেয়ার ফর সেন্ট অ্যান’ এর চেয়ারম্যান ফিলিপ রেড্ডাওয়ে, স্টিটেস অন টাইমস-এর পরিচালক ক্রিস্টিন সিবলবী ও ‘কেয়ার অব সেন্ট অ্যান’-এর ফ্রেণ্ডস আনসার আহমদ উল্লাহ।
সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন এবং কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষ যাতে প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেন সেজন্য বাংলা মিডিয়ার সক্রিয় সহযোগিতা কামনা করেন। এই প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া নারীদের জন্য সেলাই শেখার ব্যবস্থা আছে কিনা এবং তাদের জন্য দোভাষী সহায়তা থাকবে কিনা জানতে চেয়ে সাংবাদিক তৌহিদুল করিম মুজাহিদের প্রশ্নের জবাবে উদ্যোক্তারা জানান, সেই ব্যবস্থা থাকবে। এটি তাদের একটি চলমান প্রকল্পও বলেও জানানো হয়।