লিফলেটে মেয়রের ছবি ব্যবহারের প্রশ্নে যা বললেন আজমাল মাশরুর
পত্রিকা ডেস্ক ♦
লণ্ডন, ০১ জুলাই: পূর্ব লণ্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন এণ্ড স্টেপনি আসনে এবার ভিন্নরকম এক নির্বাচনী উত্তাপ বিরাজ করছে। শুরুতে গাজা ইস্যু নিয়ে সরগরম এ আসনটি এখন লেবার নেতার বাংলাদেশিদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে উত্তপ্ত। এ আসনে মোট প্রার্থী আছেন ১১ জন। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় লেবার দলীয় প্রার্থী রুশনারা আলী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমাল মাশরুর।
রুশনারা আলী গত ১৪ বছর যাবত এই এলাকায় লেবার দলের এমপি হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করছেন। গত নির্বাচনে রুশনারা আলী ৩৭ হাজার ভোটের ব্যবধানে এমপি নির্বাচিত হন। বিপরীতে আজমাল মাশরুর ইতিপূর্বে দুই দফা নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছিলেন। এবার গাজা ইস্যুতে লেবার দলের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ জনতার পক্ষ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন আজমল মাশরুর।
নির্বাচনী প্রচারে একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি আক্রমণ করে যাচ্ছেন। প্রচারণার শুরু থেকে আজমাল মাশরুর বলছেন, রুশনারা আলী গাজার মানুষের পক্ষ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি গাজায় যুদ্ধ বন্ধের জন্য ভোট দেননি। গাজায় ৪০ হাজারের মত মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। কিন্তু রুশনারা আলী যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেননি।
স্থানীয় এলাকার হাউজিং, ড্রাগ, এবং অপরাধদমনসহ কোনো কাজে রুশনারা আলীকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করছেন আজমল মাশরুর। আজমল মাশরুর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, নির্বাচিত হলে তিনি ফিলিস্তিন বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের নীতি বদলাতে এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে তিনি জোরালো ভূমিকা রাখবেন। সর্বশেষ লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার বাংলাদেশিদের ডিপোর্ট করবেন বলে যে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন সেটির জন্যও রুশনারা আলীকে দোষারোপ করেন আজমল মাশরুর।
এছাড়া রুশনারা আলী তাকে নারীবিদ্বেষী হিসেবে প্রচার চালাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মাশরুর। পাশাপাশি তাঁর লিফলেটে টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রে ছবি ব্যবহারে নিয়ে ওঠা প্রশ্নের জবাবও দেয়েছেন আজমাল মাশরুর।
এসবের জবাবে রুশনারা আলী এক সাক্ষাতকারে বলেন, একজন স্বতন্ত্র এমপি হয়ে তিনি বাংলাদেশিদের ডিপোর্ট ঠেকিয়ে দেবেন, ব্রিটিশ সরকারের নীতি বদলে ফেলবেন এবং ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করে দেবেন। মানুষের হাউজিং সমস্যারও সমাধান করে ফেলবেন আবার অপরাধও দমন করে ফেলবেন। তিনি যদি একাই সবকিছুর সমাধান দিয়ে দিতে পারেন তাহলেও তো দেশে পার্টি আর প্রধানমন্ত্রী বা সরকারের দরকার নাই। একজন প্রার্থী যে মানুষকে এত প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে এগুলো তিনি কীভাবে বাস্তবায়ন করবেন মানুষের উচিত সেটি জানতে চাওয়া। কমিউনিটির জন্য কাজ করতে গেলে, সরকারের নীতিতে প্রভাব রাখতে হলে অবশ্যই দলে থাকতে হয়। দলছুট হয়ে কিছু একলা কিছু অর্জন করা যায় না। লেবার দল ক্ষমতায় গেলে প্রায় ১৫ লাখ নতুন বাড়ি-ঘর বানানোর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। এছাড়া মানুষের জন্য কল্যাণকর নানা উদ্যোগ ঘোষণা করেছে।
ফিলিস্তিনের ব্যাপারে তিনি বলেন, অক্টোবরের ২৭ তারিখে আমি আমার সহকর্মী কয়েকজন মিলে সিজ ফায়ারের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছি। জাতিসংঘও এ ব্যাপারে আহবান জানিয়েছে। সাধারণ মানুষ যাতে ভুক্তভোগী না হয়, বিশেষ করে গাজায় যেভাবে হামলা করা হয়েছে, সেটি আমরা কোনোভাবেই সমর্থন করি না। সিজফায়ারের বিষয়ে পরবতীর্তে স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি (এসএনপি) পালার্মেন্টে একটি প্রস্তাব আনে। আমরা আমাদের দলের নীতি অনুযায়ী অন্য পার্টির প্রস্তাব সমর্থনও করিনি বা এর বিরুদ্ধেও যাইনি। আমরা বিরত থেকেছি। এর মানে হলো প্রস্তাবটিকে এগিয়ে যেতে দেয়া। আমাদের পলিসি হলো আমাদের নিজস্ব প্রস্তাবকে এগিয়ে নেয়া। আমাদের প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি রয়েছে। কিন্তু এটা নিয়ে অনেকেই বলেছেন আমরা সিজফায়ারে সমর্থন দিচ্ছি না। এটি একেবারেই সঠিক নয়। এছাড়া পার্লামেন্টে এসব প্রস্তাব আসার আগেই আমি আমার ওয়েবসাইটে এবং বিবৃতিতে যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানিয়েছি। আমি আমার পালার্মেন্টারি জীবনের পুরোটাই ফিলিস্তিনিদের জন্য ক্যাম্পেইন করেছি। আমার প্রথম বক্তব্যে থেকে গাজার অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটানোর জন্য কথা বলে আসছি। আমি ২০১১ সালে দখলকৃত ফিলিস্তিনি এলাকাসহ অনেক স্থান সফর করেছি। ফিরে এসে পালার্মেন্টে ক্যাম্পেইন করেছি। আমাদের পার্টি ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতির বিষয়টি সমর্থন করছে।