আমাদের হৃদযন্ত্রের কাজ হলো শরীরে রক্ত সঞ্চালন (পাম্প) করা। কার্ডিওভাসকুলার রোগ (সিভিডি) হৃদযন্ত্রের বা রক্তনালীগুলোর উপর প্রভাব ফেলে এবং এই রোগ বিশ্বব্যাপী অকাল মৃত্যু ও মানুষের অসক্ষম (ডিসএবল) হয়ে পড়ার প্রধান কারণ। তাই আমাদের বোঝা প্রয়োজন- কীভাবে আমাদের জীবনযাত্রায় সিভিডি-এর ঝুঁকি কমানো যায়, কীভাবে আমাদের হৃদযন্ত্রকে শক্তিশালী ও সুস্থ রাখা যায় এবং কখন চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া প্রয়োজন।

জনাব আখতার নাসিম কনসালট্যান্ট ভাসকুলার সার্জন ও ক্লিনিক্যাল ডিরেক্টর হিশেবে শেফিল্ডে কাজ করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন, “শুরুর দিকে সিভিডি-এর কোনো লক্ষণ সবসময় না-ও থাকতে পারে। তাই প্রথম গুরুতর সংকেতটি হতে পারে হৃদরোগে (হার্ট অ্যাটাক) বা স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই ঝুঁকি বৃদ্ধি পায় এবং এটি জাতিগতভাবে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে বেশি হতে পারে। তাই আমাদের উচিত ঝুঁকি কমানোর জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করা।”
সিভিডি কী?
চারটি প্রধান ধরনের সিভিডি (কার্ডিওভাসকুলার রোগ) রয়েছে:
১. করোনারি হার্ট ডিজিজ: হৃদযন্ত্রে রক্তের প্রবাহ আটকে বা কমে যাওয়া। এটি সাধারণত চর্বিজাতীয় পদার্থ জমে ধমনী ও রক্তনালী সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে ঘটে, যা এক সময় অ্যাঞ্জাইনা, হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া বা হার্ট ফেইলিউর ঘটাতে পারে।
২. স্ট্রোক: মস্তিষ্কের কোনো অংশে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়া, যা মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বা সম্ভাব্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। ‘ট্রানজিয়েন্ট ইস্কেমিক অ্যাটাক’ বা “মিনি-স্ট্রোক”হলো একই ধরনের অবস্থা। তবে এক্ষেত্রে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ সাময়িকভাবে বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. পেরিফেরাল আর্টেরিয়াল ডিজিজ: অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ধমনীগুলো সাধারণত পায়ের ধমনীতে প্রতিবন্ধকতা (ব্লকেজ) সৃষ্টি হওয়া।
৪. অর্টিক ডিজিজ: আমাদের দেহের সবচেয়ে বড় রক্তনালী ‘অর্টা’ আক্রান্ত হওয়া –
যেটি হৃদযন্ত্র থেকে শরীরের অন্যান্য সকল অংশে রক্ত সরবরাহ করে। অর্টিক রোগের মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ হলো অ্যাবডোমিনাল অর্টিক অ্যানিউরিজম (এএএ)।

আমি কি সিভিডি-তে আক্রান্ত হবার বেশি ঝুঁকিতে আছি?
আপনার জীবনযাত্রার ধরন সিভিডিতে আক্রান্ত হবার ঝুঁকিকে প্রভাবিত করতে পারে। যেমন: ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, শারীরিকভাবে নিষ্ক্রিয় থাকা ও শরীরের অতিরিক্ত ওজন। এসবই ধমনী ও রক্তনালীগুলোর মধ্যে অস্বাস্থ্যকর চর্বিজাতীয় পদার্থ জমাতে ভূমিকা রাখে যা উচ্চ রক্তচাপসহ বিভিন্ন বাড়তি সমস্যা সৃষ্টির কারণ হতে পারে এবং যা আমাদের শরীরের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা কঠিন করে তুলতে পারে।
জনাব নাসিম বলেন, “আপনার জীবনযাত্রার ধরনের পাশাপাশি আপনি কৃষ্ণাঙ্গ, দক্ষিণ এশীয় কিংবা কোনো জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকলে আপনার সিভিডি-তে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি থাকতে পারে। এর কারণ হলো, আমাদের এসব গোষ্ঠীর মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি রোগ ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের মতো স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকার প্রবণতা বেশি।”
এক্ষেত্রে পারিবারিক স্বাস্থ্য-ইতিহাসও ভূমিকা রাখে। আপনার রক্তসম্পর্কের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় যদি তরুণ বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন কিংবা স্ট্রোক বা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে আপনারও এসবে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশী।
জনাব নাসিম আরও বলেন, “আপনার পরিবারের স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্যসমূহ জানা থাকলে আমরা আপনাকে এ ব্যাপারে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে এবং কোন কোন লক্ষণের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে সে সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারি। এছাড়া এমনও হতে পারে যে, কোনো উপসর্গ সৃষ্টির সময় সমস্যা দেখা দেবার আগেই আমরা তা শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে সক্ষম হতে পারি।”
আপনার পরিবারের কারো হৃদরোগ (করোনারি হার্ট ডিজিজ) থেকে থাকলে আপনার জিপি সার্জারি নিয়মিত আপনার কোলেস্টেরল বা রক্তচাপ পরীক্ষা করতে চাইতে পারে। এছাড়া কিছু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া শারিরীক অবস্থাগুলোও পরীক্ষা করা যায়।
আমি কীভাবে সিভিডি-এর ঝুঁকি কমাতে পারি?
৪০ বছর এবং এর বেশি বয়সী প্রত্যেক ব্যক্তি প্রতি পাঁচ বছরে একবার বিনামূল্যে এনএইচএস-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে পারেন। এটি জিপি সার্জারি, স্থানীয় কাউন্সিল বা কিছু ফার্মেসিতে করানো যায়। এই পরীক্ষাগুলো হৃদরোগ ও স্ট্রোকসহ কিডনি রোগ, ডিমেনশিয়া এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করতে পারে।

অনেক ফার্মেসিতেও রক্তচাপ পরীক্ষা করা হয়ে থাকে এবং ধূমপান ছাড়তে এবং মদ্যপানের পরিমাণ কমাতে সহায়তা দেওয়া হয়।
জনাব নাসিম ব্যাখ্যা করে আরো বলেন, “যদিও কিছু ঝুঁকি ব্যাপার যেমন বয়স বা জাতিগত পটভূমি আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, তবুও আমাদের সিভিডি (কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ)-এর ঝুঁকি কমাতে আমরা জীবনযাপনের অভ্যাসে ইতিবাচক পরিবর্তন করতে পারি । আমি সবাইকে সুস্থভাবে জীবনযাপন এবং বিদ্যমান স্বাস্থ্য সমস্যা ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে পরামর্শ নেবার পাশাপাশি ধূমপান ত্যাগ, বিনামূল্যে এনএইচএসএ-এর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, স্ক্রিনিং এবং টিকাদান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার ডাক পেলে তা গ্রহণের পরামর্শ দিচ্ছি।”
আমি কি হৃদযন্ত্রের অবস্থা জানতে স্ক্রিনিং করাতে পারি?
যদিও এনএইচএস কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজের জন্য ‘স্ক্রিনিং’ করে না। তবে পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে ‘অ্যাবডোমিনাল অর্টিক অ্যানিউরিজম’ (এএএ) ‘স্ক্রিনিং’ অফার করে। এএএ হলো হৃদযন্ত্র থেকে পেটে রক্ত প্রবাহিত করা প্রধান রক্তনালীর স্থানীয়ভাবে ফুলে যাওয়া। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এতে কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। তবে এটি ফেটে গেলে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হতে পারে, যা জীবনঘাতী হতে পারে।
এএএ স্ক্রিনিং ৬৫ বছর পূর্ণ হওয়ার বছরে পুরুষদের জন্য বিনামূল্যে অফার করা হয়। কারণ, এই বয়সী পুরুষদের ঝুঁকি বেশি। এই স্ক্রিনিং পেটের একটি আলট্রাসাউন্ড স্ক্যান। এটি দ্রুত ও ব্যথাহীন প্রক্রিয়া ।
মিস্টার নাসিম বলেন: “এএএ মূলত বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায় যাদের- উচ্চ রক্তচাপ বা উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল রয়েছে, যারা ধূমপান করেন বা অতীতে ধূমপান করেছেন অথবা যাদের করোনারী হৃদরোগসহ অন্যান্য শারিরীক অসুস্থতা আছে। স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ‘অর্টা’র ফোলাভাব আগে থেকেই শনাক্ত করা সম্ভব যখন এটি সাধারণত চিকিৎসাযোগ্য থাকে।”
যদি আপনার এএএ স্ক্রিনিং এপয়েন্টমেন্ট বাদ (মিসিং) পড়ে যায়, তবে আপনি এখনও আপনার স্থানীয় স্ক্রিনিং সার্ভিসে বুকিং দিয়ে স্ক্রিনিংটা করিয়ে নিতে পারেন।
সিভিডি কি শুধু পুরুষদের হয়?
যদিও পুরুষরা সাধারণত কম বয়সেই সিভিডি-তে আক্রান্ত হবার বেশী ঝুঁকিতে থাকে এবং তাদের এএএ (অ্যাবডোমিনাল অর্টিক অ্যানিউরিজম) হওয়ার ঝুঁকিও বেশি, তবে সিভিডি-জনিত কারণে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ও স্ট্রোক ইত্যাদিতে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হওয়ার বা মারা যাওয়ার বেশি ঝুঁকিতে থাকে নারীরা । মেনোপজ চলাকালীন বা এর পরবর্তী সময়ে নারীদের এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যেতে পারে- নারীদের ঝুঁকি সম্পর্কে আরো জানতে পারবেন এই লিঙ্ক থেকে।
আমরা যে কেউ হৃদরোগে আক্রান্ত হতে পারি – রণজিৎ সিং
আমি কখনো ভাবিনি আমার হৃদযন্ত্র কোনো ঝুঁকিতে রয়েছে। কিন্তু ৫৫ বছর বয়সে ২০১৭ সালে আমি হৃদরোগে আক্রান্ত হই। এটি শুধু আমার জন্য তো বটেই আমার চারপাশের সবার জন্যও একটি বিশাল ধাক্কা ছিল। আমি নিরামিষভোজী, অধূমপায়ী এবং মদ্যপানও করি না— তাই সুস্থই আছি ভাবতাম। আমার উচ্চ রক্তচাপ ছিল না, এমনকি আমার পরিবারেও কারো হৃদরোগে আক্রান্ত ইতিহাসও নেই।

একদিন তীব্র বুকে ব্যথার কারণে আমাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ব্যথা এতটাই তীব্র ছিল যে, আমি নিজের জন্মতারিখও মনে করতে পারছিলাম না। মরফিন ইনজেকশন দিয়েও ব্যথা কমছিল না। পরীক্ষার পর দেখা গেল- আমার হৃদপিণ্ডের প্রধান তিনটি ধমনী সম্পূর্ণ বন্ধ (ব্লকড) হয়ে গেছে। এই গুরুতর পরিস্থিতিতে মাত্র ৩ ঘণ্টার মধ্যে আমার অস্ত্রোপচার করা হয়। আমার হৃদযন্ত্রের ধমনীগুলো খোলা রাখতে ‘স্টেন্ট’ লাগানো হয়, যাতে আবার রক্ত প্রবাহ চলতে পারে।
২০২৪ সালের মে মাসে, হাঁটার সময় আমি শ্বাসকষ্ট অনুভব করি এবং স্বাভাবিক গতিতে হাঁটতে পারছিলাম না। কাঁধের চারপাশজুড়ে আটঁসাট বোধ করছিলাম। বুঝতে পারছিলাম কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। হাসপাতালে যাওয়ার পর ডাক্তার বললেন, আবারও আমার একটি ধমনী বন্ধ (ব্লকড) হয়ে গেছে। তবে এবার আমাকে ‘ট্রিপল বাইপাস সার্জারি’ করাতে হবে। এই কথা শুনে আমি ভয় পেয়েছিলাম। তবে ভাগ্যক্রমে সফল অস্ত্রোপচার ও হাসপাতালে ৭ সপ্তাহ থাকার পর আমি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠি।
‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’ নিয়ে বসবাসের অর্থ হচ্ছে- প্রতিদিন ঠিক সময়ে ওষুধ আমাকে সেবন করতে হবে। ওজন কমানো একটা সংগ্রাম ছিল। তবে আমি কম খাচ্ছি এবং স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণের বিষয়টি মেনে চলছি । আমি সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে খাবার খেয়ে নেই। আমি সহায়তা, পরামর্শ এবং ব্যায়াম পরিকল্পনা পেতে ‘কার্ডিয়াক রিহ্যাবিলিটেশন প্রোগ্রাম’-এ আমার নাম নিবন্ধন করেছি।
আগে আমার কাজ বেশ শারীরিক পরিশ্রমের ছিল, তাই আলাদা করে কখনো ব্যায়ামের প্রয়োজন অনুভব করিনি। কিন্তু এখন আমি সপ্তাহে ৩ দিন জিমে যাই এবং আমার প্রশিক্ষক লুসি ও রে আমাকে দারুণভাবে সহায়তা করছেন। দৈনন্দিন জীবনের চাপও (স্ট্রেস) হয়তো আমার সমস্যা সৃষ্টির একটি কারণ ছিল। তাই আমি এখন আগের মতো আবার গিটার বাজানো ও গান গাওয়ার মতো আনন্দের কাজগুলো শুরু করতে চাইছি যা আমার শরীর-মনকে প্রশান্তি দেবে।
হৃদরোগ নিয়ে যারা জীবনযাপন করছেন তাদের প্রতি আমার পরামর্শ হচ্ছে- ওজন কম রাখার চেষ্টা করুন, নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং চাপের মাত্রা কমানোর চেষ্টা করুন। আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো কাজ করে এমন সব কোন ব্যায়াম ও কর্মকাণ্ড খুঁজে বের করতে বিভিন্ন ধরনের তৎপরতা যাচাই করে দেখুন। আপনার জীবন এবং পরিবারকে যদি আপনি মূল্য দিয়ে থাকেন তাহলে ডাক্তারের দেয়া ওষুধ সময়মতো সেবন করুন। আমি স্বল্প সময়ের জন্য ওষুধ সেবন বন্ধ রেখেছিলাম, হয়তো সেই কারণেই আমাকে আবার হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল! ‘কার্ডিয়াক’ নার্সদের পরামর্শ নিন – সুস্থ হবার জন্য আপনাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দিতে তারা বিশেষজ্ঞ। যদি আপনার মনে কিছু একটা ঠিকঠাক বোধ হচ্ছে না, তাহলে কাউকে তা বলুন- ১১১ নম্বরে বা জরুরি পরিস্থিতিতে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন। এই ফোন করতে ভয় পাবেন না।
‘হার্ট ইউকে’ বা ‘ব্রিটিশ হার্ট ফাউন্ডেশন’ থেকে আপনি পরামর্শ ও সহায়তা পেতে পারেন ।
আপনার হৃদযন্ত্রের যত্ন নেওয়ার সাতটি পদক্ষেপ
১. নিয়মিত শারীরিক কর্মকাণ্ড
আমাদের লক্ষ্য থাকা উচিত প্রতি সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি ধরণের শারীরিক কর্মকাণ্ড বা ৭৫ মিনিট জোরালো ধরণের শরীরচর্চা করা।
২. সুষম খাবার গ্রহণ ও স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা
বিনামূল্যে এনএইচএস ডিজিটাল ওজন ব্যবস্থাপনা প্রোগ্রাম অতিরিক্ত ওজনের অর্থাৎ স্থূলকায় ব্যক্তি যাদের ডায়াবেটিস এবং/অথবা উচ্চ রক্তচাপ রয়েছে তাদেরকে সহায়তা দিয়ে থাকে।
৩. ধূমপান করবেন না
সব ধরনের তামাক (চিবানোর তামাক এবং শিশাসহ) আপনার ক্যান্সার এবং কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এ ব্যাপারে আপনার স্থানীয় ধূমপান বন্ধ করার সার্ভিস থেকে বিনামূল্যে পরামর্শ নিন।

৪. আপনার অ্যালকোহল পানের মাত্রা কমান
দীর্ঘমেয়াদে অতিমাত্রায় মদ্যপানের ফলে আপনার হৃদযন্ত্র বড় হয়ে যেতে পারে। ইংল্যান্ডজুড়ে অ্যালকোহল আসক্তি সহায়তা কেন্দ্র রয়েছে। আপনার প্রয়োজন হলে তারা সহায়তা দিতে পারে।
৫. সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিন
যারা বিনামূল্যে এনএইচএস ভ্যাকসিন পাবার উপযুক্ত তাদেরকে রুবেলা এবং ফ্লুর মতো অসুস্থতা যা হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে টিকা তা থেকে সুরক্ষা দেয় ।
৬. আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি নজর রাখুন
এনএইচএস ৪০-৭৪ বছর বয়সী সবার জন্য বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে থাকে, যেখানে রক্তচাপ ও কোলেস্টেরল পরীক্ষা অন্তর্ভুক্ত থাকে। দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় যারা ভূগছেন তাদের প্রতি পরামর্শ হচ্ছে- নিয়মিত (রুটিন) চেকআপে অংশ নেওয়া তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এর ফলে সমস্যাগুলি চিহ্নিত এবং দ্রুত চিকিৎসা করা যায়।
৭. নিয়মিত ওষুধ সেবন করুন
আপনার ফার্মাসিস্ট আপনাকে আপনার ওষুধপত্র ব্যবস্থাপনায় সহায়তা করতে এবং প্রেসক্রিপশন খরচের জন্য সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে পরামর্শ দিতে পারেন।
আপনি কি সিভিডি-এর ‘এবিসি’ জানেন?
এসেক্সের জিপি এবং কার্ডিওভাসকুলার স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিস অলুকান্নি বলেন, ‘এবিসি’র তিনটি অবস্থা রয়েছে যেগুলো কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হবার উচ্চ ঝুঁকি বহন করে বলে বিবেচনা করা হয়।
যদিও এই অবস্থাগুলো চিকিৎসাযোগ্য, তবে অনেকেই বুঝতে পারেন না যে তারা এতে ভুগছেন যতক্ষণ না তাদের কোনো বড় স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়।”

ক: হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ
হৃৎপিণ্ডের অস্বাভাবিক ছন্দ (আট্রিয়াল ফিব্রিলেশন সংক্ষেপে এএফ) হৃদস্পন্দন অনিয়মিত করে তুলতে পারে যা স্ট্রোকের একটি প্রধান কারণ। বয়স্ক এবং যাদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্যগত সমস্যা যেমন হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা বা হার্ট-ভালভের সমস্যা আছে তাদের মাঝে এটি বেশি দেখা যায়।
ডা. অলুকান্নি বলেন: “অনেক সময় এএফ-এর কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে কেউ কেউ মাথা ঘোরা, ক্লান্তি বোধ করা, বুক ধড়ফড় করা কিংবা হৃদযন্ত্রে দ্রুতগতির স্পন্দন বা হৃদস্পন্দন ‘মিস’ হয়েছে- এমন অনুভব করতে পারেন বলে জানান।”
“আপনার যদি এধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, তবে আপনার নাড়ী (পালস রেট) পরীক্ষা করুন এবং জিপির সঙ্গে যোগাযোগ করুন। নাড়ীর (পালস রেট) স্বাভাবিক গতি প্রতি মিনিটে ৬০ থেকে ১০০টি স্পন্দন ।”
খ. উচ্চ রক্তচাপ
যুক্তরাজ্যে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মধ্যে একজন এই সমস্যায় ভুগছেন। এ দেশে যত মানুষের হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক হয়, তার অর্ধেকের জন্যই দায়ী করা হয় এই উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনকে। উচ্চ রক্তচাপ থাকা মানুষজনের ৫০ ভাগই জানেন না, তাঁদের এই সমস্যা আছে। কারণ, এই সমস্যার কোনো উপসর্গ সাধারণত থাকে না।
ডা. অলুকান্নি আরো বলেন: “আপনি যদি কৃষ্ণাঙ্গ বা এশীয় জাতিগত সম্প্রদায়ের সদস্য হন তবে আপনার উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বেশি এবং এটি তুলনামূলক কম বয়সে হতে পারে। আপনার জিপি সার্জারি ও বেশিরভাগ ফার্মেসিতে গিয়ে রক্তচাপ জেনে নিতে পারেন অথবা ডিজিটাল ব্লাড প্রেসার মেশিন কিনে নিজেই রক্তচাপ পরীক্ষা করতে পারেন।”
গ: উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল
ডা. অলুকান্নি বলেন, “উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল প্রায়শই আমাদের জীবনযাপনের অভ্যাসের কারণে হয়ে থাকে এবং এটি ধমনীতে রক্ত চলাচলেরর গতিরোধ সৃষ্টি করতে পারে। অবশ্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে এটি বংশগতও হতে পারে। অতীতে পরিবারের কারও এই সমস্যা থাকলে, তা জিনগতভাবে পরের প্রজন্মে স্থানান্তরিত হতে পারে। এর ফলে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা হয়, তাকে বলা হয় পারে। ফ্যামিলিয়াল হাইপারকোলেস্টেরলামিয়া সংক্ষেপে এফএইচ। এর কারণে অত্যন্ত উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল হতে পারে।”
আপনার জিপি সার্জারিতে রক্ত পরীক্ষা করিয়ে কোলেস্টেরেলর মাত্রা জেনে নিতে পারেন অথবা স্থানীয় ফার্মেসিতে ‘ফিঙ্গার-প্রিক টেস্ট’ পাওয়া যেতে ।
আপনার স্বাস্থ্যের জন্য বিনিয়োগ করুন
ডা. অলুকান্নি বলেন, “কেউ আমাদের কাছে উপদেশ নিতে আসার আগে কোনো একটা স্বাস্থ্যগত সমস্যায় পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুক, সেটা আমরা চাই না। আপনার স্বাস্থ্য ও সুস্থতায় সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আপনি আনতে পারেন জীবনযাপনে ইতিবাচক পরিবর্তন এনে এবং শারিরীকভাবে সক্রিয় থাকার মাধ্যমে। এমনকি ইতোমধ্যে আপনি কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলেও এই পরিবর্তন আনা সম্ভব।”

“অভ্যাস বদল করা খুবই কঠিন হতে পারে। কিন্তু এ থেকে আপনি যা অর্জন করবেন, তা হয়তো আপনার জীবন বদলে দেবে; এমনকি বাঁচিয়ে দিতে পারে আপনার জীবন।”