লেবার লিডার কিয়ার স্টারমারের চরম আপত্তিকর মন্তব্যে ব্রিটেনজুড়ে কমিউনিটিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া
পত্রিকা প্রতিবেদন ♦
লণ্ডন, ০১ জুলাই: আগামী ৪ জুলাই বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে সাধারণ নির্বাচন। নির্বাচনকে সামনে রেখে এমনিতেই ফিলিস্তিনের গাজা ইস্যুতে লেবার পার্টির ভূমিকা নিয়ে ক্ষুব্ধ যুক্তরাজ্যের মুসলিম সম্প্রদায়। তাঁর ওপর সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিকভাবে বাংলাদেশীদের নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে কমিউনিটিকে চরমভাবে মর্মাহত ও ক্ষুব্ধ করে তুলেছেন লেবার নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার। তাঁর ওই মন্তব্যে গত কয়েকদিন যাবত রীতিমত তোলপাড় চলছে। অনেকেই বলছেন, ডানপন্থী ভোট পাওয়ার উদ্দেশ্যে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে বাংলাদেশীদের বলির পাঁঠা বানিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। গাজা ইস্যু ছাপিয়ে কমিউনিটিতে এখন তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে লেবার নেতার ভিত্তিহীন ওই মন্তব্যে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশীল সামাজিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে ক্ষমা প্রার্থনার দাবী করে চিঠি দিয়েছে।
এদেশে বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিসিএ), ব্রিটিশ-বাংলাদেশী ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন, ব্রিটিশ-বাংলাদেশী প্র্যাকটিসিং ব্যারিস্টার এসোসিয়েশন, বাংলাদেশে প্রবাসী কল্যাণ পরিষদ, সোসাইটি অফ ব্রিটিশ-বাংলাদেশী সলিসিটর্স, বাংলাদেশ ইয়ূথ লীগ, লুটন ও ইউকিবিবিসিআইসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। ব্রিটেনজুড়ে বিসিএর প্রায় দুই ডজন আঞ্চলিক কমিটি থেকেও প্রতিবাদের চিঠি গেছে লেবার পার্টির কার্যালয়ে। এমনকি দলটির ‘লেবার ফ্রেণ্ডস অফ বাংলাদেশ’ থেকেও আপত্তি ও অসন্তোষ জানিয়ে তাঁর কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি চলছে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ। লণ্ডনে আলতাব আলী পার্কের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, বার্মিংহামের স্মলহীথ পার্ক এবং টাওয়ার হ্যামলেটসের লেবার পার্টির কার্যালয়ে ইতোমধ্যে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বাংলাদেশী কমিউনিটির প্রতিনিধিত্বশীল সামাজিক ও ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর প্রতিবাদ
টাওয়ার হ্যামলেটস ডেপুটি লেবার লীডারসহ আরো দুই কাউন্সিলারের দলত্যাগ
সাফাইতে সন্তুষ্ট নয় কমিউনিটি, ক্ষমা প্রার্থনার দাবী
যুক্তরাজ্যের বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বাংলাদেশকে উদাহরণ হিশেবে উল্লেখ করেন লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমার। এর জের ধরে তুমুল বিতর্ক চলছে রাজনীতিতে। খোদ লেবার দল থেকেই দলনেতার ওই মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ উঠেছে। কিয়ার স্টারমারের আপত্তিকর ওই মন্তব্যের প্রতিবাদে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটস লেবার দলের ডেপুটি লীডার কাউন্সিলার সাবিনা আক্তার। সোমবার এর প্রতিবাদে নিউহাম ও ওয়ালসলের দুজন কাউন্সিলার লেবার পার্টি ত্যাগ করেছেন। শক্ত প্রতিবাদ জানিয়েছেন বাংলাদেশি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকার লেবার দলীয় এমপি প্রার্থী আপসানা বেগম। আর নেতার এই বক্তব্য ভুল বলে বিবৃতি দিয়েছেন আরেক প্রার্থী রুশনারা আলী। এদিকে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা লেবার নেতার বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে লেবার দলকে আসন্ন নির্বাচনে বর্জন করার আহবান জানাচ্ছেন।
এদিকে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের পক্ষ থেকেও লেবার দলকে বিষয়টি নিয়ে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে অভিবাসন নিয়ে লেবার নেতার বাংলাদেশকে এককভাবে উল্লেখ করার বিষয়ে জোর দ্বিমত জানিয়ে বাংলাদেশিদের সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য তুলে ধরেছে হাইকমিশন। এমন মন্তব্যে ব্রিটেনের বাংলাদেশীর কমিউনিটিতে সৃষ্ট ক্ষোভের কথাও জানানো হয়েছে দূতাবাসের চিঠিতে। বাংলাদেশিদের নিয়ে লেবার নেতার ওই আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়টি মূলধারার গণমাধ্যমেও বেশ সাড়া ফেলেছে। চারদিক থেকে এমন তীব্র প্রতিবাদের মুখে কিয়ার স্টারমারের ওই বক্তব্য নিয়ে শুরুতে একটি লিখিত ব্যাখ্যা দেয় লেবার পার্টি। ওই ব্যাখ্যায় কিয়ার স্টারমারের বক্তব্য?সম্পাদনা করে প্রচার করা হচ্ছে বলে দাবী করা হয়, যা সত্য নয়। এরপর বাংলা টিভি চ্যানেল এটিএন বাংলার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে এনিয়ে নিজের উদ্বেগের কথা বলেন কিয়ার স্টারমার। কিন্তু ভুল স্বীকার করেননি লেবার নেতা। মূলধারার একাধিক গণমাধ্যমেও এই অবস্থান বজায় রাখেন তিনি।
লেবার নেতার এই জবাবে মোটেও সন্তুষ্ট নয় বাংলাদেশি কমিউনিটি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে অনেকে বলছেন, লেবার নেতার উচিত তাঁর ভুল স্বীকার করে পাশাপাশি ক্ষমা প্রার্থনা করা। কারণ তিনি সমগ্র বাংলাদেশিদের অপমান করেছেন। ভুল ধারণা প্রচার করে বাংলাদেশিদের তিনি বর্ণবাদীদের টার্গেটে পরিণত করেছেন, যা বিপদজনক।
সাধারণ নির্বাচন সামনে রেখে গত ২৭ জুন সোমবার ডেইলি সান আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে কিয়ার স্টারমার বৈধ কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের ব্রিটেন থেকে ফেরত পাঠানো প্রসঙ্গে উদাহরণ টানতে গিয়ে সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে বাংলাদেশের কথা উল্লেখ করেন। সান-এর সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ক্ষমতায় গেলে তার সরকার অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে, সে দেশেই তাদেরকে ফেরত পাঠাবে। আর এ সময়ই তিনি বাংলাদেশের উদাহরণ দেন। একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, “এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে আসা মানুষজনকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কারণ বর্তমান সরকার তেমন কোনও ব্যবস্থা দাঁড় করাতে পারেনি। “অভিবাসীরা যেখান থেকে এসেছে সেখানে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার সংখ্যা ৪৪ শতাংশ কমে গেছে। সুতরাং লেবার সরকারের প্রথম কয়েক দিনে আমি কি করব তা বলছি, আমি তাদেরকে (অভিবাসী) ফিরতি বিমানে তুলে দেব।” অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদাহরণ দিতে গিয়ে তিনি দুই দফা কেবল বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেন। অথচ নৌকা করে ব্রিটেন যেসব অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ করছে সেই তালিকায় বাংলাদেশিরা নেই বললেই চলে। এছাড়া অবৈধ উপায়ে যুক্তরাজ্যে বাসবাসকারীদের তাকিলায় শীর্ষ ২০ এর মধ্যেও নেই বাংলাদেশিরা। সে কারণেই অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর উদাহরণ দিতে গিয়ে লেবার নেতা কেন বাংলাদেশিদের টার্গেট করলেন- তা নিয়ে তীব্র আপত্তি উঠেছে। তিনি অন্য কোনো দেশের নাম নেননি। কেবল বাংলাদেশিদের কথাই বলেছেন একাধিকবার। যেন বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যে অবৈধ অভিবাসনের মূল সমস্যা। এর মাধ্যমে লেবার নেতা বাংলাদেশিদের চরম নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করেছেন বলে অভিযোগ।
লেবার নেতার এমন বক্তব্যে বিপাকে পড়েছেন লেবার পার্টির মনোনয়ন পাওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। দ্যা টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়েছে, অবৈধ অভিবাসী নিয়ে স্টারমারের এই বক্তব্য তীব্র ক্ষোভ ও সমালোচনা তৈরি করেছে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে। এই বক্তব্য দেয়ার পর নিজ দলের সদস্যদেরও তোপের মুখে পড়েছেন লেবার পার্টির এই নেতা। ওই বক্তব্যের ভিডিও যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি ভোটারদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া নিয়ে উদ্বেগের মাঝে লেবার পার্টি বিষয়টি নিয়ে একটি ব্যাখা দেয়। এতে দাবি করা হয়, স্টারমারের কথার অপব্যাখ্যা হচ্ছে। স্টারমার যে যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে গর্বের সঙ্গেই সমর্থন দিয়েছেন সেকথাও জোরের সঙ্গেই বলেছিল লেবার পার্টি। এতে কাজ না হওয়ায় স্টারমার এটিএন বাংলাকে এক সাক্ষাতকার দেন স্টারমার। সাক্ষাতকারে বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কিছু বলেননি বলে দাবি করেন লেবার নেতা স্টারমার। তিনি বলেন, ‘কাউকে উদ্দেশ্য করে বা কাউকে আঘাত করার জন্য আমি এমন মন্তব্য করিনি। তাঁর মন্তব্যে বাংলাদেশিরা আহত হওয়ার ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশিরা যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি এবং সংস্কৃতিতে বিরাট অবদান রেখেছে। লেবার পার্টি এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির মধ্যে দৃঢ় একটি বন্ধন আছে। আমার সঙ্গেও বাংলাদেশ কমিউনিটির বন্ধন খুবই শক্ত। বিশেষ করে আমার নির্বাচনী এলাকায়।” তিনি আরো বলেছেন, এ বন্ধন এতটাই প্রগাঢ় যে, লেবার এমপি হিসাবে প্রথমেই বাংলাদেশ সফর করেছেন। কিন্তু বার বার ব্যাখ্যা দেয়ার পরও বিষয়টি তাঁর পিছু ছাড়ছে না। সর্বশেষ বিবিসি রেডিও-৫ লাইভ অনুষ্ঠানে ফোনকলে একজনের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় স্টারমার তার মন্তব্যের আবারও ব্যাখ্যা দেন। এ সময় তিনি এও স্বীকার করেছেন যে, তিনি একজন ‘আনাড়ির’ মতোই কথা বলেছিলেন। বিবিসি রেডিও-৫ লাইভের উপস্থাপক নিকি ক্যাম্পবেল বলে ওঠেন, তাহলে আপনি যে মন্তব্য করেছিলেন, তা ‘আনাড়িপনা’ ছিল বলে আপনি মেনে নিচ্ছেন কিনা। জবাবে, স্টারমার বলেন, “সেটি বলাই ভাল হবে। আমি কাউকে আক্রমণ করে কথা বলতে চাইনি। আমি কেবল আশ্রয়প্রার্থনা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিলাম।”
লেবার পার্টির ব্যাখ্যা
বাংলাদেশি কমিউনিটির ক্ষোভের মুখে স্টারমারের মন্তব্যের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে বাধ্য হয়েছে লেবার পার্টি। এতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের বিশাল অবদানের জন্য স্টারমার গর্বিত এবং তিনি যুক্তরাজ্যজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে সমর্থন করেছেন। কিন্তু ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ক্লিপটি এমনভাবে সম্পাদনা করা হয়েছে, যেন স্টারমার ব্রিটিশ বাংলাদেশিদের প্রত্যাবাসনের কথা বলছেন। লেবার পার্টির ব্যাখ্যায় আরও বলা হয়েছে, স্টারমার লেবার পার্টির দীর্ঘদিন ধরে প্রতিষ্ঠিত নীতির কথা উল্লেখ করছেন। সেটি হচ্ছে, যুক্তরাজ্যে যাঁদের থাকার আইনগত অধিকার নেই, তাঁদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে দেওয়া। বাংলাদেশকে শুধু উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ, সম্প্রতি বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে এ-সংক্রান্ত একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়েছে। দীর্ঘ ১৪ বছর যাবত লেবার এমপি হিশেবে দায়িত্ব পালন করা রুশানারা আলী এক বিবৃতিতে বলেন, লেবার নেতার বক্তব্যের যে ভিডিও ছড়িয়েছে এবং তা নিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে যে উদ্বেগ বিরাজ করছে এবং আপত্তি উঠেছে সেটি তিনি লেবার টিমকে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, লেবার দলের সাথে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় থেকে নিবিড় সম্পর্ক। এ সম্পর্কের সুরক্ষায় তিনি সব সময় কাজ করে যাচ্ছেন। সামনে লেবার ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশিদের কল্যাণের বিষয়টি লেবার সরকারের নীতিতে যুক্ত রাখতে কাজ করবেন তিনি। বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত রুশনারা আলি বলেন, হাউজ অব কমন্সে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি হয়ে তিনি গর্বিত ছিলেন। কিন্তু স্টারমারের মন্তব্যে তিনিও ব্যথিত হয়েছেন। এভাবে আলাদাভাবে বাংলাদেশকে নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা ঠিক হয়নি।
আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত লেবার এমপি আফসানা বেগমও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এক ভিডিও বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাজনীতিবিদরা অভিবাসীদের ‘বলির পাঁঠা’ বানাতে পারেন না। কেবল বাংলাদেশি নয়; যে কোনো কমিউনিটির মানুষকে খাটো করে এমন মন্তব্যে তিনি নীরর থাকবেন না।
ডেপুটি লিডার সাবিনার পদত্যাগ
লেবার পার্টির নেতা স্যার কিয়ার স্টারমারের বাংলাদেশিদের নিয়ে মন্তব্যের জেরে পদত্যাগ করেছেন পূর্ব লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে লেবার পার্টির ডেপুটি লিডার সাবিনা আক্তার। তিনি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলার ও প্রথম নারী স্পিকার ছিলেন। সাবিনা আক্তার বলেছেন, দলের নেতা যখন আমার সম্প্রদায়কে একঘরে করে, আমার বাংলাদেশি পরিচয়কে অপমান করে, তখন আমি আর দল নিয়ে গর্ব করতে পারি না। পদত্যাগপত্রে সাবিনা আক্তার লিখেছেন, আমি লেবার পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছি। আমি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলের প্রথম নারী স্পিকার এবং একজন গর্বিত লেবার পার্টির সদস্য ছিলাম। তবে আমি এই দলটি নিয়ে আর গর্ব করতে পারি না, যখন দলের নেতা আমার সম্প্রদায়কে একঘরে করে দেয় এবং আমার বাংলাদেশি পরিচয়কে অপমান করে। তিনি লিখেছেন, আমি সারা জীবন দলকে রক্ষা করেছি এবং এর জন্য খুব গর্বিত ছিলাম। কিন্তু এটা স্পষ্ট, আমার এবং আমার সম্প্রদায়ের কাছে এটি (দলের নেতার মন্তব্য) গ্রহণযোগ্য নয়।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের চিঠি
বাংলাদেশিদের বিষয়ে লেবার নেতার আপত্তিকর মন্তব্যের বিষয়ে সাপ্তাহিক পত্রিকার পক্ষ থেকে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম লিখিত জবাবে বলেন, লেবার নেতার বক্তব্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গত ২৬ জুন বাংলাদেশ হাইকমিশন লেবার পার্টিকে একটি চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাজ্যের মধ্যকার অভিবাসন, যাতায়াত, ফেরত পাঠানো সংক্রান্ত সকল তথ্য তুলে ধরা হয়। হাইকমিশন স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, নদী পথে অবৈধ উপায়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশকারীদের তালিকায় শীর্ষ ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই এবং কখনো ছিলো না। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- বাংলাদেশিরা কখনো নৌকা করে যুক্তরাজ্যে আসে না। তারা বৈধ উপায়ে ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে আসেন। বাংলাদেশিদের নিয়ে তথ্যের বিভ্রান্তি দূর করতে ভবিষ্যতে লেবার দলের সঙ্গে একযোগে কাজ করে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন। উল্লেখ্য, চলতি বছরের মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত যেসব বাংলাদেশির আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হয়েছে, যাঁরা অপরাধী এবং যাঁদের ভিসার বৈধ মেয়াদ অতিবাহিত হয়েছে, তাঁদেরকে ‘ফাস্ট-ট্র্যাক’ (দ্রুত) পদ্ধতিতে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি সই করেছে যুক্তরাজ্য। তবে ব্রিটেনের সাথে এই চুক্তি করে বাংলাদেশের মিশন এ বিষয়ে বাংলাদেশ হাইকমিশনার বলেন, ওই চুক্তির অর্থ এই নয় যে, যুক্তরাজ্যে অবৈধদের তালিকায় বাংলাদেশিরা শীর্ষে। হাইকমিশনার বলেন, ২০১৭ সালে ইউরোপিয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাংলাদেশের একটি চুক্তি সম্পাদিত হয় ‘অবৈধ’ অভিবাসীদের প্রত্যাপর্ন বিষয়ে। যুক্তরাজ্যের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছে সেটি আগের চুক্তিরই ধারাবাহিকতা। যুক্তরাজ্য ইইউ ছাড়ার কারণে এটি করতে হয়েছে। এদেশে বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণ ও সম্মান নিশ্চিত করার জন্য হাইকমিশন যুক্তরাজ্যের আগামী সরকারের সাথে কাজ করে যাবে বলে জানান হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনিম।
লেবার লিডার কিয়ার স্টারমারের চরম আপত্তিকর মন্তব্য সম্পর্কে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এক প্রবীণ রাজনীতিক বলেছেন, তিনি ডানপন্থী ভোট পাওয়ার আশায় ইমিগ্রেশন ইস্যুতে বাংলাদেশীদের বলির পাঁঠা বানিয়েছেন। তিনি জানেন এজন্য কোন জবাবদিহি না করেই তিনি পার পেয়ে যাবেন। আর এজন্যই এখনও তিনি ভুল স্বীকার না করে, দুঃখ প্রকাশ না করে নানা টাল-বাহানা করে চলেছেন।