ভ্রমণ

পেট্রা: পাথর-নগরীতে একদিন

১৮ জুন ২০২০ ৯:৩৬ অপরাহ্ণ | ভ্রমণ

দিলু নাসের ♦

পেট্রার ‘মনাস্টেরি’ এবং রাজকীয় সমাধির একাংশ  

২০১৯ সাল। নভেম্বরের ৩০ তারিখ। জর্ডানের আকাশ রোদ ঝলমলে। সকাল সাতটায় আমরা হোটেল থেকে বের হয়ে গাড়িতে উঠলাম আমি আর বন্ধু রুবেল। সাথে ট্যুর কোম্পানীর ড্রাইভার আবদুল্লাহ এবং গাইড মোহাম্মদ সালেহ। আম্মান শহরের উপকণ্ঠে ঐতিহাসিক আসহাবে কাহাফ পরিদর্শন করে আমাদের গাড়ি ছুটে চলছে বিশ্বের অন্যতম দ্রষ্টব্য স্থান রহস্যময় নাবাতিয়ানদের লাল পাথরের শহর পেট্রা অভিমুখে। রাজধানী আম্মান থেকে ২৮০ কিলোমিটার দূরত্ব পেট্রার। যেতে সময় লাগবে প্রায় তিন ঘন্টা।  গতরাতে আমার তেমন ঘুম হয়নি, তাই আসহাবে কাহাফ দেখার পর ভেবেছিলাম এই দীর্ঘ যাত্রায় আরামদায়ক মটরযানে ঘন্টা দেড়েক একটুখানি ঘুমিয়ে নেবো। কিন্তু ঘুম আসছেনা। গাইড সালাহ অনবরত হ্যাশেমাইট কিংডম অফ জর্ডনের ইতিহাস বলে যাচ্ছেন, আর রাস্তার দু’ধারের বিভিন্ন স্থাপনার সাথে আমাদেরকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। শহর ছাড়ার পরেই দেখলাম রাস্তার পাশে কিছু প্রাসাদ। সালাহ জানালেন, এগুলো রাজার নিকটাত্মীয়দের। পুরনো আমলের কিছু রেললাইন চোখে পড়লো। জানলাম এগুলো অটোমান আমলে নির্মিত। খোলা, জনশূন্য মরুভূমির মধ্যদিয়ে দু’টি হাইওয়ে, ডেজার্ট ও কিংস। আমরা ডেজার্ট ধরে মরুভূমি দেখতে দেখতে চলছি। সালাহ সামনে বসে পেট্রার ইতিহাসের পাঠ দিচ্ছেন আমাদেরকে। যেহেতু পেট্রার ইতিহাস আমার অনেকটা জানা তাই তার কথায় কান না দিয়ে আমি বাইরের দৃশ্যই উপভোগ করছি বেশী। এই মরুপ্রান্তরে কতো ইতিহাস লুকিয়ে আছে। কতো রক্ত ঝরেছে যুগে যুগে এসব এলাকায়! ঊষর মরুভূমিতে মাঝে মাঝে দেখা যায় সবুজের ছোঁয়া, ছোট বড় টিলা, টিলার উপরে ভাঙাচোরা ক্রুসেডারদের দুর্গ, আর কখনো দিগন্ত জোড়া বালির সমুদ্র। ইতিহাসখ্যাত এই ধুসর মরুর নিস্তব্ধতায় গভীর মুগ্ধতায় চোখ রাখতে রাখতে আমি এক সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যাই। হঠাৎ রুবেলের ডাকে ধ্যান ভাঙে। চেয়ে দেখি আবদুল্লার গাড়ী একটি সার্ভিস স্টেশনের সামনে। গাইড সালাহ বলেন, বেরিয়ে আসুন নাস্তা করবো। শীতাতপ হাওয়া থেকে মরুর মুক্ত বাতাসে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নেই। প্রাণটা অনেকক্ষণ থেকে চা চা করছিল তাই দেরী না করে ভেতরে ঢুকলাম। এটা একটি বিশাল দোকান এক পাশে স্যুভেনিরসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিষ পত্র আর অন্য পাশে রেস্টুরেন্ট। কিছু ইউরোপিয়ান এবং চায়নিজ পর্যটক দেখলাম কেনাকাটা করছেন। বাথরুম সেরে আমরা রেস্টুরেন্টের দিকে পা বাড়ালাম। সালাহ আমাদেরকে বসতে বল্লেন। আমি চায়ের কথা বল্লাম আগে। একটু পরই অলিভ অয়েল মাখানো বেশ কয়েকটা নান রুটি আসলো আমাদের সামনে পনির সহ। সকালে কিছু খাওয়া হয়নি তাই বেশ কয়েক টুকরো রুটি অনায়াসে খেয়ে ফেল্লাম। সময় সকাল সাড়ে নয়টা। আরো দেড় ঘন্টার পথ বাকি আছে, এগারোটায় পেট্রায় পৌছানো দরকার, তাই সালাহ উঠার তাগাদা দিলেন। আমরা বিল পরিশোধ করতে গেলে সালাহ বল্লেন লাগবেনা। দোকানের মালিক আমার পরিচিত তাই আপনাদের জন্য কমপ্লিমেন্টারী। আমি আবার এক কাপ চা নিলাম সাথে দুটো পানীয় আর কিছু ক্রিপস, কাউন্টারে গিয়ে পাঁচ দিনার দিয়ে আসলাম। বাইরে বেরিয়ে আরেকটু মরু হাওয়া গায়ে মেখে যাত্রা শুরু হলো আমার দীর্ঘ দিনের স্বপ্নপূরণের প্রত্যাশায়। গত কয়েক বছরে পৃথিবীর অনেক জায়গা ঘুরেছি। কিন্তু জর্ডানে আসার সুযোগ হয়নি কখনো। এবার হঠাৎ করে এই সুযোগ চলে আসায় তিন দিনের এই ঝটিকা সফর। গতকাল সকালে আম্মান অবতরণ করেই, সারাদিন শহর দেখেছি, আজ পেট্রা, আগামী কাল সড়ক পথে জেরুজালেম যাবো। এখন এতো বেশী ট্যুরিস্ট নেই তাই হাইওয়ে প্রায় খালি। সালাহ বল্লেন এগারোটার আগেই পৌছে যাবো আমরা। আমি রোমাঞ্চিত। আহা, পেট্রা। কতোকাল থেকে এই রহস্যপুরীতে আসার স্বপ্ন দেখছি।

পাথর-পাহাড় কেটে নির্মিত পেট্রার প্রবেশের রাস্তা ‘সিক’।

কবে কখন পেট্রা সম্পর্কে প্রথম জেনেছিলাম মনে নেই। তবে পেট্রার ইতিহাস পড়ে আর বিভিন্ন প্রামাণ্য চিত্র দেখে দেখে মানব সভ্যতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এই প্রাচীন নিদর্শন স্বচক্ষে দেখার স্বপ্ন আমার অনেক দিনের। এই স্বপ্ন এখন বাস্তবায়নের পথে।  কিছু দূর এগিয়ে চলন্ত গাড়ী থেকে চোখে পড়লো ওয়াদি মুসার সাইন। পেট্রার পাশে পাহাড়ি ঢালের আধুনিক জনপদটির নাম ওয়াদি মুসা বা মুসার উপত্যকা। হজরত মুসা (আ) এ পথেই পাড়ি দিয়েছিলেন পবিত্র ভূমি জেরুজালেম দর্শন করতে আর সেই গ্রামে ছিলেন কিছুদিন। তাই এই উপত্যকার এমন নাম। কথিত আছে হজরত মুসা এখানে সিলা পাথর থেকে তাঁর অনুসারীদের জন্য পানি উত্তোলন করেছিলেন।  পেট্রার গোড়াপত্তনের আরো প্রায় হাজার বছর পরে নাবাতিয়ান জাতির মাধ্যমে। একসময় নাবাতিয়ান আর আরব জাতি একই সমার্থক ছিলো। তখন পেত্রার নাম ছিলো রাকমু! গ্রিক ভাষায় রাকমু শব্দের অর্থ পাথর। বাইবেলেও এই নগরীর নাম এসেছে সেলা (ওণফট) বলে; সেলা এবং পেত্রা দুটি শব্দের অর্থই পাথর! কারো কারো মতে, এই নাবাটিয়ানরাই কুরাআনে বর্ণিত সামুদ (কদটবলঢ) জাতি। জেনেসিস অনুসারে, তারা ইসহাক (আ.) এর পুত্র এশার বংশধর (কদণ ঋঢমবর্ধণ্র)! পবিত্র কোরআনে বর্ণিত সামুদ সম্প্রদায়ে রাজ্য ছিলো এটি যা আজকের সৌদী আরবের মদীনা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিলো এবং সেখানেও পেট্রার মত পাহাড় কেটে বানানো হুবহু একই ধরনের নির্মিত স্থাপত্যের দেখা পাওয়া যায়। মদীনা শহর থেকে ৪০০ কিলোমিটার উত্তরে এই শহরের বর্তমান নাম মাদায়েন সালেহ বা সালেহের (আঃ) শহর এবং প্রাচীন নাম ঊণঢটভ ও ঔণথরট.  পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে সামুদ সম্পর্কে এভাবে বলা হয়েছে। “আর সামুদের প্রতি কেমন ব্যবহার করা হয়েছিল, যারা পাহাড়ের উপত্যকায় পাথর কেটে গৃহ নির্মাণ করেছিলো! (সূরা ফাজর-৮৯)” “তোমাদেরকে কি পার্থিব ভোগ বিলাসের মধ্যে নিরাপদে ছেড়ে রাখা হবে? বাগবাগিচার মধ্যে, ঝরণাসমূহের মধ্যে শস্যক্ষেত্র ও মঞ্জুরিত খেজুর বাগানের মধ্যে? তোমরা তো পাহাড় কেটে গৃহ নির্মাণ করেছো নৈপুণ্যের সাথে!” (সূরা: আশ শু’আরা), “আর তোমরা স্মরণ কর, যখন তিনি তোমাদেরকে আদ জাতির পরে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং এমনভাবে তোমাদেরকে ভূপৃষ্ঠে বাসস্থান দিয়েছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ নির্মাণ করছো এবং পাহাড় কেটে বাসগৃহ নির্মাণ করছো।” (সূরা আল আ’রাফ :৭৪)  “নিশ্চয় হিজরের অধিবাসীরাও রাসুলগণের প্রতি মিথ্যা আরোপ করেছিলো (৮০), তারা নিরাপদ বাসের (সুরক্ষা) জন্য পাহাড় কেটে নিজেদের বাসগৃহ নির্মাণ করত (৮২)।” (১৫: সূরা আল হিজর) ঔণথরট শব্দের আরবী হলো ‘হিজর’,আর কোরআনে আল হিজর নামে সম্পূর্ণ একটি সূরা রয়েছে! আরবীতে ‘হিজর’ শব্দের অর্থ আবদ্ধ জায়গা, কক্ষ, সমাধি বা দুর্গ! মাদায়েন সালেহ এবং পেট্রা শহরের স্থাপত্যগুলিও বাসস্থান, সমাধি, উপাসনালয় ও দূর্গ হিসেবে ব্যবহৃত হত!  ইতিহাস অনুযায়ী, ৪০০ খ্রিস্টপূর্ব থেকে ১০৬ খ্রীস্টাব্দ পর্যন্ত নাবাতিয়ান বলে এক যাযাবর আরব জাতি ছিলো আর পেট্রা ছিলো এই নাবাতিয়ান রাজ্যের রাজধানী!   গ্রিক শব্দ পেট্রা কথাটার মানে বড় প্রস্তর খণ্ড। এর আরবী আল বাত্রা। পাহাড়ের ঢালে ঢালে বেলে পাথর খুদে নির্মাণ করা এই শহর, যে শহরের কোনও দেখা মিলেনা পাখির চোখ দিয়ে আকাশ থেকে দেখলেও। তাই দীর্ঘ দেড় হাজার বছরের বেশি সময় ধরে এই শহরের কোন খোঁজ পায়নি পৃথিবীর মানুষ।  পেট্রা নগরী ছিল অত্যন্ত সুরক্ষিত ও অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ। পেট্রার চারধারে উঁচু পাহাড় আর অফুরন্ত ঝরণাধারা। পশ্চিম গাজা, উত্তরে বসরা ও দামাস্কো, লোহিত সাগরের পাশের আকাবা বন্দর ও লিউস এবং মরুভূমির ওপর দিয়ে পারস্য উপসাগরে যাওয়ার প্রধান সব বাণিজ্যিক পথগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করত পেট্রা তখন।  এটি বিখ্যাত এর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর গুরুত্বপূর্ণ স্মৃতিস্তম্ভগুলোর জন্য। এটি সিলা পাথর কেটে গুহার মধ্যে তৈরি করা হয়েছে।  কারো কারো মতে লাল পাথর দিয়ে তৈরি বলে সম্ভবত এই শহরটির নাম রাখা হয়েছে পেট্রা। শহরটিতে আছে প্রায় ৩,০০০ লাল পাথরের স্তম্ভ, থিয়েটার, প্রাসাদ সহ আরো অনেক স্থাপত্য। খ্রিস্টপূর্ব ৩১২-তে আরব আদিবাসী নাবাতিয়ানরা এই অঞ্চলে বসবাস শুরু করলে নাবতিয়ান রাজা চতুর্থ এরাটাস পেট্রায় রাজধানী স্থাপন করেন। পেট্রার মসলা ছিল পৃথিবী বিখ্যাত। পেট্রা থেকে চীন, গ্রীস, ভারত ও মিশরে মসলা রপ্তানি করা হতো। ধনী নাবাতিয়ানরা শহরটিকে নতুন করে সাজাতে লাগলেন। মরুভূমির মধ্যে কৃত্রিমভাবে পানির ব্যবস্থা এবং পানি সংরক্ষণ করার জন্য বড় বড় রিজার্ভার, বাঁধ তৈরি করা হয় তখন। পেট্রার এমন অভূতপূর্ব উন্নতি দেখে ধীরে ধীরে এটি রোমান সম্রাটদের নজর পড়তে থাকে।  ১০৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট ট্রোজান পেট্রা অধিকার করেন। সেসময় বৃহৎ রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে আরো শ্রীবৃদ্ধি হতে থাকে পেট্রার। তখন ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য পেট্রার ওপর অনেক ধনী সম্রাটের নজর ছিল। কারণ যে এই জায়গাটিকে দখল করতে পারবে, সে-ই পেট্রা ও এর ওপর দিয়ে যাওয়া বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক পথগুলোর দখল নিতে পারবে। এই পথ ধরেই বণিকরা মশলা, জামাকাপড় নিয়ে পাড়ি দিতেন গাজা, বোগ্রা, দামাস্কাসের দিকে। তার পর রেড সী, মেডিটেরেনিয়ান সী পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়তেন নানা দেশে। আর সেই সময় পশ্চিম এশিয়ার বাসিন্দাদের প্রধান জীবিকা ছিল ব্যবসা। এতে করেই সকলের কাছে পেট্রার গুরুত্ব খুব সহজেই আন্দাজ করা যায়। প্রাচীনকাল থেকেই একের পর এক জাতিগোষ্ঠী রাজত্ব করেছে পেট্রায়। তাই বিভিন্ন জনগোষ্ঠী পেট্রাকে সাজিয়েছে তাদের মতো করে। এর ফলেই শিল্পশৈলীর এই নান্দনিক মিশ্রণ, যা মানুষকে খুব সহজে অবাক করে। ৩৩০ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কন্সটান্টাইনের হাত ধরে পেট্রায় খ্রিস্টধর্মের প্রবেশ ঘটে। ‘দ্য মনাস্ট্রি’ স্তম্ভকে ভেঙে তৈরি করা হয় চার্চ। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতকে শহরটির কিছুটা উন্নতি সাধন করা হলেও, পরবর্তীতে পেট্রার প্রতিদ্বন্দ্বী শহর ‘পালমিরা’ পেট্রার অধিকাংশ বাণিজ্য দখল করে ফেললে এর গুরুত্ব একেবারেই কমে যায়। পালমিরা হলো খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীর মধ্যভাগে সিরিয়ায় রোমান সাম্রাজ্যের একটি অংশ।  কালের পরিবর্তনে পেট্রার অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়তে থাকে। জানা যায়, পেট্রা বিলুপ্তির প্রধান কারণ ছিলো এক ভয়াবহ ভূমিকম্প। ৩৬৩ খ্রিস্টাব্দের মে মাসের ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে শহরের ঘরবাড়ি, চার্চ, মন্দির। ভেঙে পড়ে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা। স্তব্ধ হয়ে পড়ে পেট্রার জীবনযাত্রা।  রোমান সাম্রাজ্যের পেটে ঢুকে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নাবাতিয়ানরা অনেক প্রভাবশালী ছিলো। শুধু বাণিজ্যই নয়, বরং প্রযুক্তিগত দিক দিয়েও। পানি সরবরাহ, সংরক্ষণ, সেচ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাদের বিচক্ষণতার পরিচয় পাওয়া যায়। তাই নাবাতিয়ান এবং রোমান-গ্রিক ধাঁচের স্থাপত্য ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে পুরো এলাকায়। সপ্তম শতকের দিকে মুসলমানরা জর্ডানের এইসব এলাকা দখল  করলেও দ্বাদশ শতকে ক্রুসেডারা একে পুনর্দখল করে। পরবর্তীতে জর্ডান মুসলমানদের হস্তগত হলেও পেট্রার প্রতি মুসলিম শাসকদের তেমন কোনো আগ্রহ ছিলোনা। এর কারণ হিসাবে এই হাদীসটিকে অনেকে গুরুত্ব দেন। তাবুক যুদ্ধে যাবার পথে মুসলিম বাহিনী যখন ‘হিজর’ এলাকা অতিক্রম করে, যা ছিল খায়বরের অদূরে ‘ওয়াদিল ক্বোরা’। এটাই ছিল ছামূদ জাতির গযবের এলাকা। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বললেন, তোমরা গজবপ্রাপ্ত ছামূদ জাতির বাড়ী-ঘরে প্রবেশ করবে না। এখানকার কোন কূয়ার পানি পান করবে না। তোমরা কাঁদতে কাঁদতে মাথা নীচু করে দ্রুত এই স্থান ত্যাগ কর’ (বুখারী হা/৪৩৩, ৪৪১৯)। তবে কোরানে বর্ণিত আদ-ছামুদসহ বিভিন্ন অভিশপ্ত জাতি গোষ্ঠীর ধ্বংসাবশেষ স্বচক্ষে দেখতে অনেক মুসলমান আজকাল এসব স্থান পরিদর্শন করেন। এক সময়ের জমজমাট পেট্রা সুদীর্ঘকাল পড়ে থাকে ইতিহাসের আড়ালে। অনেক বছর অজানা থাকার পর এই প্রাচীন শহরটিকে পশ্চিমা বিশ্বের কাছে উম্মোচন করেন সুইস পরিব্রাজক জোহান লুইডইগ বুর্কহার্ট। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের চাইতেও ঐতিহাসিক ধ্বংসাবশেষের প্রতি তার ছিল বিশেষ আকর্ষণ। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটিতে আরবি ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শেষ করেই রওনা হয়ে যান পশ্চিম এশিয়ায়। পশ্চিম এশিয়ায় ঢোকার জন্য বুর্কহার্ট ইসলাম ধর্মগ্রহণ করলেন। ১৮১২ খ্রিস্টাব্দে তিনি বেরিয়ে পড়লেন জর্ডানের উদ্দেশে। সেই বছরই ঘুরতে ঘুরতে একদিন মরুভূমির মধ্যে এক প্রাচীন শহরের ধ্বংসাবশেষের সামনে এসে শহরটির স্থাপত্য-ভাস্কর্য দেখে মুগ্ধ হন জোহান। ঐতিহাসিক জোহান বুঝে গেলেন তিনি চলে এসেছেন সেই আশ্চর্য প্রাচীন শহর পেট্রায়। তার হাত ধরেই ইতিহাসের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া পেট্রা আবার উঠে এল সকলের চোখের সামনে। ধীরে ধীরে শহর পেট্রা হয়ে ওঠে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্? হ্যারিটেজ হিসাবে ঘোষণা দেয় পেট্রাকে। বলা হয়, মানব সভ্যতার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের সবচে মূল্যবান সম্পদ এটি। এছাড়া ২০০৭ সাল থেকে পৃথিবীর নতুন সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় তৃতীয় স্থান দখল করে নেয় পেট্রা। তাই প্রতি বছর অসংখ্য লোক এই শহরে আসেন প্রাচীন নিদর্শন দেখতে, অনেক অনেক বছর আগে কিভাবে একটি সভ্যতা গড়ে উঠেছিল তার প্রত্যক্ষ সাক্ষী হতে।  সকাল এগারোটার আগেই আমাদের গাড়ী এসে ওয়াদি মুসা শহরে প্রবেশ করে। ছোট্ট ছিমছাম পাহাড়ী শহর। বেশ কিছু দোকানপাট এবং অনেকগুলো হোটেল রয়েছে এখানে। দূর থেকেই চোখে পড়ে পেট্রার গোলাপী পাহাড় চুড়া। সেদিকে দৃষ্টি পড়তেই আমার মনে পড়ে যায় অনেক আগে পড়া ব্রিটিশ কবি জন উইলিয়াম বার্গোনের বিখ্যাত কবিতার পঙতি-  র্অ ্রণণব্র ভম ষমরপ মত ুটভম্ব্র ডরণর্টধশণ দটভঢ, ঠহ ফটঠমলর ষরমলথর্দ ট্র ষটশণরধভথ তটভডহ যফটভভণঢ; ঈর্ল তরমবর্ দণ রমডপ ট্র ধত ঠহ বটথধড থরমষভ, র্ণণরভটফ, ্রধফণর্ভ, ঠণটর্লধতলফ, টফমভণ!  ঈর্ল রম্রণ-রণঢ ট্র ধতর্ দণ ঠফল্রদ মত ঢটষভ,র্ দর্ট তর্ধর্র ঠণদণফঢর্ দণব ষণরণ ভর্ম হর্ণ ষর্ধদঢরটষভ; কদণ দলণ্র মত হমর্লদ লযমভ ট ঠরমষ মত ষমণ, ষদধডদ ুটভ ঢণণবণঢ মফঢর্ ষমর্ দমল্রটভঢ হণর্টর টথম, বর্টডদ বণ ্রলডদ বটরশণফ ্রটশণ ধভ ঋর্ট্রণরভ ডফধবণ, ট রম্রণ-রণঢ ডর্ধহ দটফত ট্র মফঢ ট্রর্ ধবণ. -(ামদভ ঈলরথমভ, ১৮৪৫) পেট্রার প্রবেশদ্বারের পাশেই আবদুল্লাহ গাড়ি থামান। গাড়ি থেকে চোখে পড়লো বড় সাইন ওয়েলকাম টু পেট্রা। পেট্রা মিউজিয়ামের পাশে দাঁড়িয়ে রুবেল আইসক্রিম কিনলেন। আমি কিনলাম কোকাকোলা আর একটা এনার্জি ডিংক। কয়েক কিলোমিটার হাঁটতে হবে তাই এই শক্তি সঞ্চয়। আমাদের হাতে সময় কম তাই সালাহ তাড়াতাড়ি টিকিট কাউন্টারের দিকে গেলেন। আমরা কিছু ছবি তুললাম। ভ্রমণের মৌসুম নয় এখন তবুও বিভিন্ন দেশের বেশ পর্যটক এখানে। সালাহ কিছুক্ষণের মধ্যেই টিকিট নিয়ে আসলেন আমাদের। দাম জনপ্রতি ৫০ দিনার। তবে আমরা ভাগ্যবান টিকিটের টাকা নিজেদের পকেট থেকে যায়নি। আমাদের এই তিনদিনের সফর জর্ডানের একটি বিখ্যাত ট্যুর কোম্পানির সৌজন্যে। টিকিট কেটেই অগ্রসর হলাম কল্পনার স্বপ্নপুরীর দিকে। চারদিকে শুধু সোনালি বালি, সোনালি রঙের পাথর আর পথের নিশানা। গাইড বললেন, আমাদেরকে মূল আকর্ষণীয় স্থানে যেতে হলে পাড়ি দিতে হবে দেড় কিলোমিটারের বেশি পথ। আর পুরো হেরিটেজ সাইটের শেষ অবধি দেখতে হলে পার হতে হবে পাঁচ কিলোমিটার পথ। সাধারণত এ পথ আমার জন্য তেমন কোনো দূরত্বই নয়, রোদের তেজও তেমন নেই। শুধু সময়ের অভাব।  ট্যুরিস্ট-অফিস থেকে পেট্রার পাহাড়ের গুহামুখে যাবার জন্য অনেক বেদুইন তাদের ঘোড়া, গাধা বা উট নিয়ে হাজির। পাহাড়ি পথে হাঁটতে কষ্ট হলে এসব ভাড়া করা যায়। আমাদের দেশের মতোই চেঁচামেচি, দর-দস্তুর করতে হয়। সৌন্দর্য উপভোগ করতে আমরা পায়ে হেঁটেই চললাম।  এখানে যারা আসেন তারা বেশীর ভাগ লোক রাত্রিযাপন করেন। রাতের পেট্রা খুবই সুন্দর। মোমবাতির আলোয় সৃষ্টি হয় এখানে মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। হেঁটে হেঁটে ছবি তুলতে তুলতে বিশাল এক খোলা সোনালি চত্বর পার হতে সময় লাগল পনেরো বিশ মিনিট। এরপর শুরু হলো প্রাচীন স্থাপনা আর সোনালি, কমলা, আর লালের মিশ্রণে অনিন্দ্যসুন্দর পাথুরে পাহাড়ের কারুকাজ।  এখানে স্থানীয় বেদুঈনরা অনেক জিনিসের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। রুবেল পেট্রা লেখা টুপি কিনলেন। আমি একজন প্রৌঢ় পর্যটকের সাথে খানিক আলাপ করলাম। তিনি সস্ত্রীক এসেছেন সুইডেন থেকে। বললেন অনেক বছর ধরে ইচ্ছে ছিলো এখানে আসার এবার আসলাম দিনে দেখছি রাতে ও আসবো।  পথের ডানে-বাঁয়ে আদিম কালের বাড়িঘর পাহাড় খোদাই করে তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটা নাকি জিনের বাড়ি। বলা হয়ে থাকে, এখানে জিনদের বসবাস ছিল একসময়। মতান্তরে পেট্রায় এ রকম পঁচিশটি জিনের বাড়ি আছে। অনুচ্চ পর্বত খোদাই করে নির্মিত বাড়িগুলো কোনোটা একতলা, কোনোটা আবার দোতলা ভবন। হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ খেয়াল হল দু’দিকের পথ ঘনিয়ে এসেছে পাহাড়ের দেওয়ালে। সরু ফাটলের মতোন পথ চলে গেছে দৃষ্টিসীমার বাইরে। এ কোনও প্রাকৃতিক ফাটল নয়। এটা নাবাতরা তৈরি করেন ভূমিকম্প এবং বন্যার মতোন প্রাকৃতিক রোষ থেকে বাঁচতে। এই ফাটলকে বলা হয় সিক। ১ দশমিক ২ কিমি হাঁটা পথ এই সিক-এর মধ্য দিয়েই। ঘোড়ারগাড়ি চলাচলের জন্য উপযুক্ত প্রশস্ত। পর্বতগাত্রের বামধার বরাবর নালার মতোন সরু পরিখা। পানীয় জল যাওয়ার পথ। মাঝে মাঝেই কৃত্রিম অগভীর নালার ভিতর। সে যুগের ওয়াটার ফি?ার। এতক্ষণ বেশ রোদ এবং ধুলোর মধ্যে ছিলাম সিক-এর ভেতরে ঢুকে স্বস্তি মিললো। সিক দেখতে অত্যন্ত মনোরম। সরু পথের দুপাশে পাহাড় ঢেকে ছায়া দিয়েছে পথকে, বাইরের তাপ স্পর্শ করছে না। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অন্য যেকোনো মরুভূমির পাহাড়কে হার মানায়। সোনালি পর্বতের গায়ে রেখা টেনে টেনে আঁকা আছে যেন কমলা, হলুদ, লাল খনিজের রূপকথা। এখানে পর্বতের দেহ খোদাই করে দাঁড়িয়ে রয়েছে খ্রিস্ট জন্মের পূর্বের কয়েকটি রোমান টেম্পল। যেখানে দেবদেবীর মূর্তির খানিকটা অবশিষ্টাংশ ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় নাবাতিয়ানদের জানান দিচ্ছে। সিক ধরে হাঁটতে হাঁটতে মাথার ওপর মিলবে প্রগাঢ় নীল আকাশ। আমাদের দেশের শরতের আকাশের মতো ঝকঝকে আর নীল, এক ফোঁটা মেঘ নেই। এ দেশে বৃষ্টি হলে উৎসবের ঢল নামে পথে পথে। আর বৃষ্টির দর্শন পাওয়া যায় কয়েক বছরে একবার। সিকের ভেতর মাঝখান দিয়ে হাঁটছিলাম হঠাৎ সালাহ টান দিয়ে পাহাড়ের পাশে নিয়ে গেলেন। চোখ ফিরিয়ে দেখি খুব দ্রুতগতিতে একটা ঘোড়ার গাড়ি যাত্রী নিয়ে আসছে। আমি না সরলে হয়তো উপরেই ওঠে যেতো। পেট্রার বাইরের স্থাপত্য যেমন সুন্দর তেমনি অন্দরমহল ও নজরকাড়া। বিভিন্ন কারুকার্য ও সুনিপুণ হাতের কাজ পুরো শহরটিতে ছড়িয়ে রয়েছে। দেয়ালে দেয়ালে আঁকা ছবি দেখে নাবাতিয়ানদের ধর্ম চর্চা পরিলক্ষিত হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে এরা ‘দুশরা’ নামক এক দেবতা আর দেবী ‘আল উজা’র পূজা করতেন। পরবর্তীতে এখানকার অধিবাসীরা পেগান ধর্মগ্রহণ করেন। পাথরের স্তূপ। একধার মসৃণ করা। যার উপর খোদাই করা দেবদেবীর মুখ। বুঝে নিতে হবে। শুধু চোখ আর নাকের সাজেশন। ঠোঁট নেই। দ্য সাইলেন্ট গড, তাই। এই স্তূপকে প্রদক্ষিণ করাই ছিল তাদের পুজোর রীতি। কোনো কোনো জায়গায় বিভিন্ন জীব জন্তুর ছবি ও আঁকা। একটি জন্তুর বিশাল পা দেখলাম। খুনখারাবি নেই।  চোখ পড়ল দু’দিকের পাহাড়ের গায়ে প্রচুর অগভীর কুলুঙ্গি। যাতে ছোটখাটো নানান আকৃতি। অর্ধেক ডিমের মতোন দেখতে খোদাই বেশির ভাগ কুলুঙ্গিতে। জানলাম নাবাতরা মানত পূরণ করতেন এভাবেই। কেশ বিসর্জনের বদলে কুলুঙ্গি খনন। আর ওই অর্ধেক ডিম্বাকৃতি ভাস্কর্য তাঁদের সূর্যদেবতা। আমরা হাঁটছি আর ছবি তুলছি। গাইড সালাহ খুব ভালো ফটোগ্রাফার। এখানকার ইতিহাস চমৎকারভাবে বর্ণনা পাশাপাশি তিনি আমাদের ছবি তোলার দায়িত্ব নিলেন। একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে দেখলাম দেয়ালে অনেকগুলো চিত্র আঁকা এবং পাশেই বড় একটা জায়গা। সালাহ বললেন, এই জায়গাটি ছিলো নাবাতিয়ানদের বড় মূর্তি উজ্জ্বার মন্ডপ। একবার কোথায় পড়েছিলাম, সেই যুগে মক্কায় প্রথম উজ্জ্বার মূর্তি এখান থেকেই আমদানি করা হয়েছিলো।  এরা আরামাইক ভাষা ব্যবহার করতেন যা আরবীর মতো অর্থাৎ ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লেখা শুরু করা হতো। পাহাড়ের গায়ে কিছু কিছু লেখা এখনো স্পষ্ট।  সেকালে সূর্য ডোবার পর পাথরের বাড়ির খাঁজে-খাঁজে ব্রোঞ্জের তৈরি ল্যাম্পে আলো জ্বালিয়ে রাখা হতো। খাওয়ার জন্য সিরামিকের থালা, বাটি ব্যবহার করতেন পেট্রার অধিবাসীরা। খাবারের প্লেটের কারুকার্য দেখে ধনী-দরিদ্রের পার্থক্য করা হত। যিনি যত ধনী, তার প্লেটে তত কারুকাজ। পেট্রার স্থাপত্যে হেলিনিস্টিক গ্রীক স্থাপত্যশৈলীর সঙ্গে মিশে আছে নাবাতিয়ান আর রোমান শিল্পশৈলী।  ইতিহাসের চোরাগলি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে মন চলে গিয়েছিলো হাজার হাজার বছর আগের সেই নাবাতিয়ান যুগে। হঠাৎ মাথা তুলে তাকাতেই বিস্ময়ের বিস্ফোরণ। সামনেই সুবিশাল প্রাসাদ যার প্রবেশপথটুকুই দৃষ্টিগোচরে তখন। মনে হলো এটা খুবই চেনা জায়গা। এর ভিতরেই তো রাখা ছিল সেই পবিত্র পানপাত্রটি। দ্য হোলি গ্রেইল যা উদ্ধার করতে এসে আর একটু হলেই প্রাণ খোয়াচ্ছিলেন শন কোনারি এবং হ্যারিসন ফোর্ড। আমরা যারা ইন্ডিয়ানা জোনস অ্যান্ড হিস লাস্ট ক্রুসেড ছবির ক্লাইম্যাক্স দৃশ্যের প্রবেশ পথ দেখেছি এই জায়গাটি তাদের সকলেই চেনা। এছাড়া পেট্রা সম্পর্কিত সব রচনায়ই এই ছবিটি ব্যবহার করা হয়। এটাই নাবাত সভ্যতার শ্রেষ্ঠ কীর্তি আল খাজানা বা ট্রেজারি বি?িং। আবার ভুল হল। আসলে তাও নয়। প্রায় দু’হাজার বছরের নাবাত সভ্যতার সর্বশ্রেষ্ঠ শাসক চতুর্থ আরাতাসের সমাধি। পাহাড়ের গা কেটে নির্মিত এই সৌধটি তৈরি করতে লেগেছিল দুশো বছর। সমাধিটি সৌধের ভিতরে। খটকা লাগলো প্রবেশদ্বারের মুখেই রোমানশৈলিতে নির্মিত স্তম্ভগুলো দেখে। পরে জানলাম নাবাত সভ্যতায় নানাশৈলি মিশেলের রহস্য। গ্রিক, ইজিপশিয়ান, রোমান এবং মেসোপটেমিয়ান সভ্যতার অনেক কিছুই গ্রহণ করেছিলেন নাবাতরা। মতান্তরে ভবনটি মিসরের কোনো এক ফেরাউন রাজার ফেলে যাওয়া অর্থভান্ডার। মতান্তর যতই থাকুক না কেন, ভবনটির স্থাপত্যকলা তাক লাগিয়ে দেওয়ার মতো। এর আকর্ষণীয় ছবিটিই মানুষকে পেট্রার দিকে হাতছানি দেয়। এই জায়গাটিতে পর্যটকদের ছবি তোলার হিড়িক। বেদুইনরা উট সাজিয়ে রেখেছেন ছবি তোলার জন্য।  খাজানার সামনে সারিবদ্ধভাবে নাবাতিয়ান সৈন্যদের পোশাকে দাঁড়িয়ে আছে একদল অভিনয়শিল্পী। তাঁরা কিছুক্ষণ পরপর বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গে লাইন ধরে পুরো চত্বর প্রদক্ষিণ করে ভ্রমণার্থীদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। কেউ কেউ তাদের সাথে ছবি তুলেন, আমরা তুললাম এবং সামান্য বকশিশ দিলাম। জানা গেল আগে খাজানার ভিতরে ঢুকে সমাধি দর্শন করা গেলেও এখন সেখানে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ। কারণটি বিস্ময়কর। এখানে নাকি আগে লোকজন ঢুকে দেয়ালে নিজেদের নাম লিখে আসতেন। গবেষণার জন্যে এখনো এর চারপাশে খোঁড়াখুঁড়ি চলছে। মাটির নীচেও একতলা আবিষ্কার হয়েছে।  আল-খাজানার মায়া কাটিয়ে খানিকটা এগোতেই চোখে পড়ল তাঁবু খাটানো এক বিচিত্র দর্শন সুভেনির শপ। ‘ওয়ার্? ফেমাস স্যান্ড আর্ট অফ পেট্রা’। সরু মুখ ছোটো ছোটো বোতলে রংবেরঙের বালি ঢেলে নানান ছবি। দক্ষ হাতের নিপুণ চালুনিতে সরু সরু শিকের খোঁচায় মূর্ত হচ্ছে কখনও মানুষের মুখ, কখনও বা মরুভূমিতে হেঁটে যাওয়া উট। জাদুমাখা ঘোর লাগাল চোখে। প্রতি শিশি মাত্র দশ জর্ডনিয়ান দিনার। পর্যটকদের মধ্যে হুড়োহুড়ি প্রিয়জনকে পেট্রার অতুলনীয় উপহার তুলে দেওয়ার। আরেকটু সামনে গিয়েই চোখে পড়লো অ্যাম্পি-থিয়েটার। একটা আস্ত পাহাড়কে খুদে খুদে চৌদ্দশ’ আসন বিশিষ্ট বিশাল এই অ্যাম্পি-থিয়েটার নির্মাণ সম্ভব! চোখে না দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হত। অর্ধচন্দ্রাকৃতির রোমান থিয়েটারের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এর যেকোনো সিঁড়িতে বসে অভিনেতা বা শিল্পীর গলার আওয়াজ শুনতে পাওয়া যেত। অ্যাম্পি-থিয়েটারের উ?ো পাশ ধরে বেশ বড় একটা এলাকাজুড়ে রয়েছে অনেক যতœ করে সাজানো, থাম ইত্যাদিতে কারুকার্য, এগুলো হলো রাজসমাধি- রাজপরিবারের লোকেদের জন্য তৈরি। রাজকীয় সমাধিগুলো পাহাড়ের খাঁজ কেটে গুহার মতো করে তৈরি। সমাধি ভবনের ওপরে পাহাড় বেয়ে উঠে আশপাশের দৃশ্য দেখা যায় আরও ভালোভাবে। ভবনগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লাগোয়া। অনেকগুলি রাস্তা এঁকেবেঁকে চলে গেছে। সব জায়গাতেই পাহাড়ের গায়ে সমাধির জন্যে গুহা খোদাই করা। বেশিরভাগই সাদামাটা, কারুকার্যবিহীন। নিশ্চয়ই সাধারণ বা গরীব প্রজাদের জন্য তৈরি। তাতে শ্রেণিভেদ পরিষ্কার বোঝা যায়।  আরও খানিক হেঁটে চললাম রাজপ্রাসাদের দিকে। অন্যান্য স্থাপনার মতো এটিও পাহাড়ের শরীর খোদাই করে কারুকার্যে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে শিল্প। অন্যান্য সাধারণ ভবনের চেয়ে শিল্পে আরেকটু বেশি জৌলুসময়, আরও প্রাচুর্যময়। প্রাসাদের ভেতরে চার দেয়াল ছাড়া আর কিছুই নেই। এরপর চললাম পেট্রা নগরীর সর্বশেষ আকর্ষণ ‘মনাস্টেরি’ বা আরবিতে ‘আল-দিইর’ দেখতে। সে পথ মরুভূমির সে পথে যেতে হলে আরেকটু উচু নিচু ধুলোর পথ পাড়ি দিতে হয়। আমাদের হাতে সময় বেশী নেই তাই ‘মনাস্টেরি’ না দেখেই যে পথে এসেছিলাম সে পথেই ফেরার জন্য পা বাড়ালাম।  ফেরার পথে আমাদেরকে বেদুইন দল ছেঁকে ধরলো। এ বলে আমার উটে চড়ো, ও বলে না, আমার দাম কম। সালাহ বল্লেন না আমরা হেঁটেই যাবো। আসার পথে আরও কিছু চমৎকার জায়গায় সালাহ আমাদের ছবি তুল্লেন। আর একটি জিনিস খেয়াল করলাম প্রথম থেকেই, এখানকার স্থানীয় কিছু গরীব লোক মোহাম্মদ সালাহর পাশে আসে। আর তিনি খুব নীরবে ওদের টাকা দিলেন। পরে আমরা বুঝলাম তিনি নিয়মিত আসেন তাই এখানকার গরীবদেরকে তিনি সাহায্য করেন।  সুপ্রাচীন পাথুরে নগরে হাঁটতে হাঁটতে হারিয়ে গিয়েছিলাম আড়াই হাজার বছরের পুরোনো ঐশ্বর্যময় জগতে।  ফেরার পথে সিক দিয়ে হাঁটার সময় পানির ঝর্ণা ধারাগুলোর দিকে আবারও ভালো করে নজর দিলাম। একটু পরখ করেও দেখলাম। কি বিস্ময়কর! পানি সরবরাহের এই প্রযুক্তি নিয়েই মূলত ধাঁধায় পড়ে গেছেন বর্তমানের গবেষকেরা। বছরে মাত্র ছয় ইঞ্চি বৃষ্টিপাত হতো যে অঞ্চলে, সেখানে এত মানুষের চাহিদা মেটানোর মতো উন্নত প্রযুক্তি এলো কোথা থেকে? শুধু তাই নয়, নাবাতিয়ানদের স্থাপত্যবিদ্যা নিয়ে অনেকেই সন্দেহ প্রকাশ করেন। তারা মূলত যাযাবর শ্রেণীর মানুষ ছিলেন। সারাজীবন যারা তাঁবুতে বাস করে অভ্যস্ত, তাদের পক্ষে কি আসলেই এত উন্নত মানের পাথর খোদাই করা এমনকি তার মধ্য থেকে অনেকটা আধুনিক ধাঁচের একটি পরিকল্পিত শহর বের করে ফেলা সম্ভব? কোনও সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না এই প্রশ্নের। তার ওপর এই প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা নিজেদের ব্যাপারে কখনো কোনও লিখিত তথ্য রেখে যায়নি। তারা যে লেখাপড়া করতে সক্ষম ছিলো, তার প্রমাণ পেলাম দেয়ালে আঁকা বিভিন্ন গ্র্যাফিটিতে। কিন্তু অন্যান্য প্রাচীন সভ্যতার মানুষেরা নিজেদের উৎকর্ষের কাহিনী যেভাবে লিপিবদ্ধ করে রেখে গেছে, নাবাতিয়ানরা সেটা করেনি। তার কারণ কি? এটা জানা না গেলেও, তারা যে গোপনীয়তা পছন্দ করত, সেটা বোঝাই যায়। এর একটি বড় উদাহরণ হলো তাদের বাসস্থান। এত জায়গা থাকতে তারা পাহাড়ের গায়ে এমন দুর্গম একটি স্থানে আস্তানা গাড়ে। এ নগরী যখন সক্রিয় ছিলো তখনও নিজেদের বাণিজ্য এবং প্রযুক্তির সব তথ্য তারা গোপন করেই রাখত। এখন আমরা অনেক কিছুই হয়তো ধারণা করে নিতে পারি। কিন্তু সত্যি এটাই যে পেট্রার অনেক রহস্য হয়তো বিলুপ্ত হয়ে গেছে নাবাতিয়ানদের বিলুপ্তির সাথে সাথেই। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, এই নগরীর মাত্র ১৫ শতাংশ এখন পর্যন্ত এসেছে প্রতœতাত্ত্বিকদের গবেষণার আওতায়। বাকিটা রয়ে গেছে অজানা। পেট্রার ভূগর্ভের অনেক নিদর্শন এখন আছে মানুষের ধরাছোঁয়ার বাইরে। পাহাড়ের নীচে। যদি উদ্ধার করা যায় তাহলে  হয়তো সেগুলোই পেট্রার ইতিহাস জানতে মানুষকে সাহায্য করবে একদিন। সিক থেকে বেড়িয়ে ওয়াদি মুসা শহরের পড়ন্ত বিকেলের রোদ চোখে লাগতেই বাস্তবে ফিরে আসলাম।  ইচ্ছে ছিলো ফেরার সময় মুসা নবীর পদছাপ সিক্ত ভূমি ওয়াদি মুসায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে আসবো। কিন্তু ট্যুরিস্ট অফিসের পাশে এসেই দেখি ড্রাইভার আবদুল্লাহ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। সালাহ বলেন, লাঞ্চ করবো সার্ভিস স্টেশনে, না হলে আম্মান পৌঁছাতে দেরী হয়ে যাবে। আমরা ও আর দেরী করলাম না গাড়িতে উঠে বসলাম। তবে মনে মনে বললাম আবারও আসবো ইনশাআল্লাহ পেট্রায় রাত্রি যাপন করতে। এই শহরের পাশেই আরেকটি চমৎকার জায়গা আছে এর নাম ওয়াদি রাম। ওয়াদি মানে উপত্যকা আর রাম মানে উচুঁ। এখানে ছোট ছোট টিলা আর বালির পাহাড়।। পর্যটকরা তাঁবুতে রাত্রি যাপন করেন চাঁদের আলোতে। এই মরু শুধু ইতিহাসের নয় সাক্ষ্য বহন করছে অনেক হলিউড ব্লকবাস্টার্স নির্মাণেরও। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আরব বিশ্বের স্বাধীনতার ইতিহাসের (১৯১৬-১৯১৮) অনন্য ছবি দ্য গ্রেট আরব রিভো?। তাছাড়া ট্রান্সপোর্টার টু, ইন্ডিয়ানা জোন্স অ্যান্ড হিস লাস্ট ক্রুসেড। আছে চাঁদের উপর নির্মিত বিশ্বখ্যাত একটি তথ্যচিত্রও। তাই এই মরুকে দ্য মুন ভ্যালি নামেও ডাকা হয়। সেখানেও যাওয়ার ইচ্ছে আছে আগামীতে।  আমাদের গাড়ি চলছে দ্রুত বেগে। মরু পথের দুধারে লালচে ধূসরের যুগলবন্দিতে ইতিউতি সবুজের থাবা। সোনালী বালুকায় সূর্যের মায়াবী আলোর ঝিকিমিকি। বোঝা যাচ্ছে সূর্য মরুভুমিকে আলিঙ্গনের প্রস্তুতি নিচ্ছে দিকচক্রবালের ধূসর আড়ালে। প্রাচীন নাবাত সভ্যতার বিস্ময়ের ঘোর চোখে নিয়ে রাত সাড়ে আটটায় আমাদের গাড়ী এসে প্রবেশ করে আলো ঝলমল আধুনিক আম্মানে। ক্লান্তি আর অবসাদ নিয়ে হোটেলে ঢুকেই পরের দিন প্রাচীন ভূমি জেরুজালেম যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি।

লণ্ডন, ১৮ জুন ২০২০  

সবচেয়ে বেশি পঠিত

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

গাজীউল হাসান খান ♦ আবদুল লতিফের কথা ও সুরে আমাদের প্রিয় একটি গান, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাঙলা, কারো দানে পাওয়া নয়।’ অপরাজেয় বাংলা বড় বেশি মূল্যের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই দেশ। এটি কারো দান বা দয়ায় পাওয়া নয়। সে কারণেই আমাদের ভালোবাসার এই দেশটি সম্পর্কে কেউ...

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

গাজীউল হাসান খান ♦ এই বিশাল দিগন্তের কোনো প্রান্তেই অকারণে মেঘ জমে ওঠে না। এর পেছনেও অনেক কার্যকারণ নিহিত থাকে। প্রায় এক বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি এক দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এর আগে গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব...

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

গাজীউল হাসান খান ♦ যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন...

কারি শিল্পের সাফল্য উদযাপনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো বিসিএর সপ্তদশ এওয়ার্ড অনুষ্ঠান

কারি শিল্পের সাফল্য উদযাপনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো বিসিএর সপ্তদশ এওয়ার্ড অনুষ্ঠান

চার ক্যাটাগরিতে দেয়া হলো ২৫টি সম্মাননা পুরস্কার লণ্ডন, ০১ নভেম্বর: বর্ণাঢ্য আয়োজনে সেরা শেফ এবং রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে মালিকদের সম্মাননা দিয়েছে বিলেতে বাংলাদেশী কারি শিল্পের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটার্রাস এসোসিয়েশন (বিসিএ)। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার লণ্ডনের বিখ্যাত ওটু...

আরও পড়ুন »

 

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

১৬ ডিসেম্বর অর্জিত বিজয় একান্তই আমাদের

গাজীউল হাসান খান ♦ আবদুল লতিফের কথা ও সুরে আমাদের প্রিয় একটি গান, ‘আমি দাম দিয়ে কিনেছি বাঙলা, কারো দানে পাওয়া নয়।’ অপরাজেয় বাংলা বড় বেশি মূল্যের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি এই দেশ। এটি কারো দান বা দয়ায় পাওয়া নয়। সে কারণেই আমাদের ভালোবাসার এই দেশটি সম্পর্কে কেউ...

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

দিগন্তে জমে ওঠা কালো মেঘ কিভাবে কাটবে

গাজীউল হাসান খান ♦ এই বিশাল দিগন্তের কোনো প্রান্তেই অকারণে মেঘ জমে ওঠে না। এর পেছনেও অনেক কার্যকারণ নিহিত থাকে। প্রায় এক বছর পর ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি সম্প্রতি এক দিনের জন্য বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এর আগে গত বছর নভেম্বরে দিল্লিতে দুই দেশের পররাষ্ট্রসচিব...

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক

গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

যুক্তরাষ্ট্র কি একজন নারী প্রেসিডেন্ট পাবে

গাজীউল হাসান খান ♦ যুক্তরাষ্ট্রের এবারের ৪৭তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে কেউ এখনো নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারছে না। রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক এবং এমন কি জ্যোতিষীদের মধ্যেও এ ব্যাপারে যথেষ্ট মতভেদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী গণমাধ্যম সিএনএনসহ বিশ্বের বিভিন্ন...

কারি শিল্পের সাফল্য উদযাপনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো বিসিএর সপ্তদশ এওয়ার্ড অনুষ্ঠান

কারি শিল্পের সাফল্য উদযাপনের মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হলো বিসিএর সপ্তদশ এওয়ার্ড অনুষ্ঠান

চার ক্যাটাগরিতে দেয়া হলো ২৫টি সম্মাননা পুরস্কার লণ্ডন, ০১ নভেম্বর: বর্ণাঢ্য আয়োজনে সেরা শেফ এবং রেস্টুরেন্ট ও টেকওয়ে মালিকদের সম্মাননা দিয়েছে বিলেতে বাংলাদেশী কারি শিল্পের প্রাচীনতম সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটার্রাস এসোসিয়েশন (বিসিএ)। গত ২৮ অক্টোবর সোমবার লণ্ডনের বিখ্যাত ওটু...

‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম এওয়ার্ড ও প্রকাশনা অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর

‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র ১৫তম এওয়ার্ড ও প্রকাশনা অনুষ্ঠান ১২ নভেম্বর

হাসনাত চৌধুরী ♦ লণ্ডন, ০১ নভেম্বর: ‘ব্রিটিশ-বাংলাদেশী হুজহু’র পঞ্চদশ আসর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আগামী ১২ই নভেম্বর মঙ্গলবার। কমিউনিটিতে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাজনীতি, সিভিল সার্ভিস, ব্যবসা, মিডিয়া, সমাজসেবা এবং সংস্কৃতি ও ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সফলদের সম্মাননা জানানোর...