পত্রিকা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ২৬ মার্চ: প্রাজ্ঞজন মো. শওকত আলীর আত্মজীবনী লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়েছেন বিলেতের সুধীজনেরা। লণ্ডনে মো. শওকত আলীকে নিয়ে? আয়োজিত এক সমাবেশে উপস্থিত সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবী ও সাংবাদিকবৃন্দ এ আহবান জানান।
গত ২১ মার্চ মঙ্গলবার সাপ্তাহিক পত্রিকা কার্যালয়ে?‘মো. শওকত আলী সান্নিধ্য’ শীর্ষক এক বিরল আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন লণ্ডনের সাহিত্য-সংস্কৃতিসেবী ও সাংবাদিকবৃন্দ। মো. শওকত আলী সিলেট পিটিআইয়ের অবসরপ্রাপ্ত সুপারিন্টেণ্ডেন্ট ও সীমান্তিক টিচার্স ট্রেনিং কলেজের শিক্ষক ছাড়াও বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতায় ঋদ্ধ একজন ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। তাঁর কণ্ঠস্থ কমপক্ষে ৩ হাজার ফার্সী, উর্দু, সংস্কৃত, ইংরেজি, বাংলা কবিতা ও গদ্য। তিনি উর্দু, ফার্সী, ইংরেজি ও সংস্কৃত ভাষায় অধ্যয়ন করেছেন এবং এসব ভাষায় পারদর্শী বক্তাও।
কবি হামিদ মোহাম্মদের সঞ্চালনায় ও পত্রিকার প্রধান সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সুধী সমাবেশে সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসনের সূচনা বক্তব্যের পর মো. শওকত আলী বিভিন্ন ভাষায় কবিতা আবৃত্তি করেন। প্রথমে কবি ওমর খৈয়াম, মহাকবি ইকবাল, কবি ফেরদৌসীর রচনাবলী থেকে পাঠ করেন তিনি। সংস্কৃত শ্লোক ও ইংরেজি কবিতার পর বাংলা কবিতা ও গদ্য পাঠ করেন। মীর মোশাররফ হোসেনের বিষাদ সিন্ধু ও মো.বরকত উল্লাহর পারস্যপ্রতিভা থেকে পাঠ করেন শোনান। তিনি কবি ফেরদৌসীর ‘শাহনামা’ প্রণয়ন ও তৎসংক্রান্ত মর্মস্পর্শী একটি বাস্তব তথ্য গল্পাকারে বলে কাতর করে তুলেন সবাইকে। বয়স আশি পেরুলেও মো. শওকত আলীর কণ্ঠ সুললিত। উচ্চারণ ও পাঠ মনোমুগ্ধকর। দীর্ঘ দুঘণ্টা তিনি একটানা বিশ্বসাহিত্য থেকে আবৃত্তি ও পাঠে ছিলেন প্রাণবন্ত ও উচ্ছ¡ল। ক্লান্তি তাকে স্পর্শ করেনি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত মুগ্ধ সুধীজনের মধ্যে বক্তব্য রাখেন শিক্ষাবিদ মুহাম্মদ আবদুর রাকিব, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, সঙ্গীত শিল্পী রীপা রাকিব, সাংস্কৃতিক নেতা সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সাংবাদিক তামিম আহমদ, সংস্কৃতিকর্মী তৌহিদ চৌধুরী, সুশান্ত দাস প্রশান্ত, মো. শওকত আলীর ছাত্রী জোহরা, সহধর্মিনী ফারহানা সুলতানা এবং কন্যা মুনিরা পারভীন। সব শেষে বক্তব্য রাখেন নুষ্ঠানে মো. শওকত আলীর আত্মজীবনী লিপিবদ্ধ করার উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানিয়ে সুধীজনেরা বলেন, ‘ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য শিক্ষণীয় শওকত আলীর মত গুণীজনের সংগ্রামী জ্ঞানঋদ্ধ জীবন। তারা আরো বলেন, জ্ঞানীর কদর ছাড়া জাতি সমৃদ্ধ হয় না। আর এর জন্য প্রয়োজন জ্ঞানীর লিপিবদ্ধ জীবনাচরণ এবং জ্ঞানসমৃদ্ধ অভিজ্ঞতার আত্মজীবনী রচনা। যে রচনা পড়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম উপকৃত হবে।
মুহম্মদ আবদুর রাকিব বলেন, অনুষ্ঠানে না এলে বুঝতেই পারতাম না মো.শওকত আলী এমন একজন প্রাজ্ঞব্যক্তিত্ব। মো. শওকত আলীর জ্যেষ্ঠভ্রাতা প্রফেসর মোহাম্মদ আলী ছিলেন সকল পরীক্ষায়?প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হওয়া একজন শিক্ষার্থী। মো. আবদুর রাকিব বলেন, তিনি আমার সরাসরি শিক্ষক নন, তবে তার গল্প অনেক শুনেছি। আজকে সেই সুবাস পাচ্ছি মো. শওকত আলীর সান্নিধ্যে এসে। সুশান্ত দাস প্রশান্ত বলেন, আমি হাওরের মানুষ, শাল্লায় আমার বাড়ি, শওকত আলীর বাড়ি বানিয়াচঙ্গে, এই গুণীজনের কণ্ঠে হাওরের গন্ধ পাচ্ছি। আমি বিমোহিত হয়েছি তার কথায়, আবৃত্তি এবং গল্পে। তামিম আহমদ, তৌহিদ চৌধুরী এবং জোহরা নিজ নিজ অনুভূতির কথা বক্তব্যে তুলে ধরেন।
মো. শওকত আলীর কন্যা মুনিরা পারভীন বলেন, বাবার কথা বলার আগে বলবো আমার চাচা মোহাম্মদ আলীর কথা। তাঁর ছায়াই আমরা বড় হয়েছি। আমার চাচা দুহাতে সমানভাবে লিখতে পারতেন। দর্শন শাস্ত্রে এম এ পরীক্ষার খাতায় এরকম দুহাতে লিখে বিস্ময় সৃষ্টি করেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। চারঘন্টার পরীক্ষা দুই ঘণ্টায় দুই হাতে ৮০ পৃষ্ঠা লিখে শেষ করার কৃতিত্ব একমাত্র তাঁরই।