পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ২২ মে: বাংলাদেশে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধ ও তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার দাবি জানিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। গত ১৬ মে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮ পরিচালক এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। যার মধ্যে ৭ জন গত বছর বাংলাদেশে হয়রানিমূলক মামলায় গ্রেফতার হবার পর এবং ৮ দিনের কারাবাস শেষে জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন।এসব বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়েরের পথ অবিলম্বে বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি দাবি জানান। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশে মিথ্যা মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটে। এসব মামলার সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা।
প্রবাসীদের বিনিয়োগ আস্মসাৎ করতে দুর্নীতিবাজরা মিথ্যা মামলা দায়েরকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। যাতে প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা মামলার ভয়ে বিনিয়োগ রেখে দেশ ছাড়ে। নিজেদের গ্রেফতার ও কারাবরণের নেপথ্যে এমন দূরভিসন্ধি কাজ করেছে বলে মনে করেন তাঁরা। জানান, আগের মামলা সুরাহা হওয়ার পর আবারও নতুন করে দুটি মামলা এবং একটি রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির এসব বিনিয়োগকারী হলেন- ভাইস চেয়ারম্যান জামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক, পরিচালক কামাল মিয়া, পরিচালক আব্দুল আহাদ, পরিচালক আব্দুল হাই, পরিচালক জামাল উদ্দিন, পরিচালক এম এ রব ও পরিচালক ফয়জুল হক। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক। তাঁরা সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। বাংলাদেশে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগকারী যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরও অনেকেই এই সংবাদ সম্মেলনের দাবির সাথে একাত্মতা পোষণ করে উপস্থিত হন। লিখিত বক্তব্যে তাঁরা বলেন, হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় যোগ দিতে গেলে গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই ৭ পরিচালককে ঢাকার মতিঝিলে কোম্পানির প্রধান কার্যালয় থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায় পুলিশ। গ্রেফতারের কোনো কারণও ব্যখ্যা করেনি পুলিশ। কেবল বলেছে, ‘আপনাদের সঙ্গে কথা আছে। থানায় নেয়ার পর জানানো হয় মাগুরায় তাদের বিরুদ্ধে ২৭টি মামলা হয়েছে। বীমার টাকা না পেয়ে হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানির চার গ্রাহক এসব মামলা করেছেন।
এসব বিনিয়োগকারী বলেন, “কোম্পানির চেয়ারম্যান ছাড়াও তখন ১০জন পরিচালক ছিলেন। তাদের মধ্যে আমরা ৭জন ব্রিটেনের, একজন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। চেয়ারম্যান ও দুই পরিচালক থাকেন বাংলাদেশে। কিন্তু বীমার টাকা না পাওয়ায় বেছে বেছে কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৭ পরিচালক এবং একজন শেয়ারহো?ারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করলো মাগুরার ৪ গ্রাহক। আবার ওই মামলা সম্পর্কে কোনো কিছু জানার আগেই কোম্পানির সভা থেকে আমাদের গ্রেফতার করা হলো- এ ঘটনা থেকে অনুমান করা যায়, এটি কোনো সাধারণ মামলার ঘটনা নয়। এটি প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কোম্পানি দখলের গভীর কোনো ষড়যন্ত্রের অংশ।” তাঁরা প্রশ্ন করেন, গ্রাহক টাকা না পেলে কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলাকরতে পারে। আর বিষয়টি দেওয়ানি। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা নেয়া হলো কি করে? লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তাঁরা মামলাগুলো মোকাবেলা করে গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর মাগুলার আদালত থেকে মুক্তি পান। কিন্তু বোর্ড মিটিং এলেই তাঁদের বিরুদ্ধে নানাকিছু শুরু হয়ে যায়। তাঁদের জড়িয়ে হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্সকে নিয়ে নানা ধরণের মিথ্যা সংবাদ প্রচার করা হয় বাংলাদেশের কয়েকটি কাগজে। ওইসব খবরে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোম্পানির ১০৪ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে বানোয়াট অভিযোগ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে এসব প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবিতে রিট পিটিশনও হয়। এছাড়া গত এপ্রিল মাসে আরও দুটি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। এই মামলাগুলোও গ্রাহকের টাকা ফেরত না দেয়ার অভিযোগে করা। তাঁরা বলেন, “আগের মামলা কেবল আমরা ৮ জন যুক্তরাজ্য প্রবাসীর বিরুদ্ধে করা হয়েছিলো। এবারের মামলাগুলোতে যুক্তরাজ্য প্রবাসী ৮জনের পাশাপাশি কোম্পানির চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সহ অন্যদেরও রাখা হয়েছে।
যাতে মনে না হয় কেবল যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের টার্গেট করা হয়েছে।” বাংলাদেশ সরকার, পুলিশ প্রশাসন ও আদালতের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তাঁরা বলেন, প্রবাসীদের বিরুদ্ধে মামলা নেয়ার আগে ভালোভাবে খোঁজখবর নেয়া হয়। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মিথ্যা মামলা যাতে কেউ করতে না পারে সেই পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। তাঁরা স্থায়ীভাবে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে এবং প্রবাসী বিনিয়োগ ও বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার জন্য মহান জাতীয় সংসদে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দাবী জানান। হোমল্যাণ্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা কোনো অন্যায়ের শিকার হয়ে বিনিয়োগ হারালে সেটি বাংলাদেশে প্রবাসী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে চরম খারাপ উদাহরণ তৈরি করবে বলে সতর্ক করেন তাঁরা।