পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ২৯ মে: করোনা মহামারির কারণে তিন বছর বিরতির পর জার্মানির রাজধানী বার্লিনের রাজপথ আবারও বর্ণিল হলো। ২৮ মে রোববার বার্লিনের ঝকঝকে রৌদ্রোজ্জ্বল রাজপথে যেন নেমে এসেছিল বিশ্ব সংস্কৃতির মহামিছিল। এবার বার্লিনের আন্তসংস্কৃতি কার্নিভ্যালের ২৫ বছর পূর্তি হলো। জার্মান ভাষায় যার পোশাকি নাম ‘কার্নিভ্যাল ডের কলটুর’। জার্মানিতে বসবাসরত বিদেশিদের প্রতি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রতীকী প্রতিবাদ শুরু হয়েছিল।
সেই প্রতীকী প্রতিবাদের আবেদন এখনো ফুরিয়ে যায়নি, বরং বেড়েছে। প্রতিবাদী সংস্কৃতির মিছিল বিশ্ব সংস্কৃতির মহামিছিলে পরিণত হয়। জার্মান তথা ইউরোপে অভিবাসীবিরোধী জাতীয়তাবাদী কট্টরপন্থীদের রুখতে সংস্কৃতির সংগ্রাম আরও উচ্চকিত।
রোববার পৃথিবীর নানান প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা জাতির ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতির মিলনমেলায় পরিণত হয়েছিল বার্লিনের রাজপথ। এতে ছিলেন লাতিন আমেরিকার ব্রাজিল, পেরু, বলিভিয়ার প্রতিনিধিরা। এ ছাড়া আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ ও ক্যারিবিয়ান দেশগুলোর প্রতিনিধিরাও তাঁদের সংস্কৃতি তুলে ধরেন। এ সময় এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সাংস্কৃতিক দলও অংশ নেয়। বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষের জমকালো পোশাক আর গানবাজনার তালে তালে বার্লিন হয়ে উঠেছিল ছন্দময় বর্ণিল।
সবচেয়ে বড় কথা, এই বিশ্ব মহামিছিলে ছিল বাংলাদেশও। ছিল বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতির গান আর নাচ। সঙ্গে ছিলেন বাঙালিদের শুভানুধ্যায়ী জার্মানরা। নীল আকাশের নিচে বার্লিন শহরের প্রাণকেন্দ্র মেরিংডাম থেকে হারমান স্কয়ার পর্যন্ত প্রায় পাঁচ কিলোমিটার রাস্তাজুড়ে বিশ্ব সংস্কৃতির মেলা বসেছিল। বাঙালি জাতিসত্তার অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক ধারণা ও বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতেই বাঙালিদের এই উদ্যোগ। বার্লিন তথা জার্মানিপ্রবাসী বাঙালিরা দীর্ঘদিন থেকেই এই মহাযাত্রার অন্যতম শরিক। এবারের যাত্রায় বাঙালিদের মূল বিষয় ছিল ধর্মীয় মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ। ২০০২ সাল থেকে প্রবাসী বাঙালিরা, বার্লিনের বিশ্ব সংস্কৃতির মহাযাত্রার সহযাত্রী হয়েছেন।
বার্লিনের অধিবাসীরা ২৫ বছর ধরে জার্মানির নানান জাত আর সংস্কৃতির এ মহামিছিলের সঙ্গে পরিচিত। রোববার পাঁচ কিলোমিটার রাস্তার দুই পাশে প্রায় আট লাখ মানুষের ঢল নেমেছিল। পৃথিবীর নানান জাতির সাংস্কৃতিক পরিবেশনার মাধ্যমে ধর্ম, বর্ণবাদের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদে অংশ নেন তাঁরা।
উৎসবের উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, জার্মানিতে প্রায় এক কোটি অভিবাসী ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছেন। তাঁদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে ও আন্তসাংস্কৃতিক সমাজব্যবস্থা ও ক্রমবর্ধমান ধর্ম, বর্ণবাদবিরোধী রাজনীতির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদের ব্যাপকতা, এখন আরও প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে।
বার্লিনসহ জার্মানির বিভিন্ন শহর থেকে আসা বাঙালিরা বার্লিনের রাস্তা কাঁপিয়েছেন। নারীরা লাল শাড়ি পরে, কপালে টিপ, খোঁপায় নানান রঙের ফুল, দেশীয় অলংকার পরে আর ছেলেরা লুঙ্গি-ফতুয়া ও মাথায় গামছা বেঁধে উৎসবে অংশ নেন। এ সময় কার্নিভ্যালের সঙ্গে জনপ্রিয় দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও লোকগীতির সঙ্গে নেচেগেয়ে দীপ্ত পদভারে তাঁরা এগিয়ে যাচ্ছিলেন। তখন রাস্তার দুই পাশের লাখো মানুষ করতালি দিয়ে আর চিৎকার করে সমস্বরে তাঁদের অভিনন্দন জানান।