পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ০৫ জুন: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জমজমাট প্রচারণায় মুখর নগরী। ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন প্রার্থীরা। সকাল থেকে দিনভর গণসংযোগে ব্যস্ত থাকছেন তাঁরা। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে করছেন মতবিনিময় ও উঠান বৈঠক। এদিকে নগরের ৪২টি ওয়ার্ডের রাস্তাঘাট ও অলিগলি ছেয়ে গেছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ব্যানার ও পোস্টারে। পাড়া-মহল্লায় তাঁদের সমর্থনে চলছে মাইকিং। রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, ২১ জুন ইভিএমে সিলেট সিটির ভোট অনুষ্ঠিত হবে। মোট ভোটার ৪ লাখ ৮৬ হাজার ৬০৫ জন। নির্বাচনে মেয়র পদে ৭ জন, কাউন্সিলর পদে ২৭৩ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮৭ জন প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় সিলেট জালালাবাদ গ্যাস মিলনায়তনে নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের ঘোষণা দেন। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরপরই প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী প্রচার ও গণসংযোগ শুরু করেছেন।
দলীয় প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নৌকা, জাতীয় পার্টির নজরুল ইসলামের লাঙ্গল, ইসলামী আন্দোলনের মাহমুদুল হাসানেরহাতপাখা, জাকের পার্টির জহিরুল আলমের গোলাপ ফুল প্রতীক আগেই বরাদ্দ ছিল। বিষয়টি শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী হওয়া মোহাম্মদ আবদুল হানিফ ঘোড়া, ছালাহ উদ্দিন (রিমন) ক্রিকেট ব্যাট ও শাহ জাহান মিয়াকে বাস প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
প্রার্থীরা প্রতীক পাওয়ার পরপরই আনুষ্ঠানিক প্রচারে নেমে পড়েন। প্রচারপত্র নিয়ে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন তাঁরা। রোববার দুপুর ১২টায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী কাজলশাহ এলাকার ইসকন মন্দিরে মতবিনিময় করেন। এরপর তিনি কাজলশাহ ও শিববাড়ী এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি ও তাঁর সমর্থকেরা ভোটারদের মধ্যে প্রচারপত্র বিলি করেন।
শিববাড়ী এলাকায় গণসংযোগের সময় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, শুধু উন্নয়ন করলেই হবে না। পরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়নের প্রয়োজন। সিলেটে স্থায়ী বা দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন চোখে পড়ে না। তাই সিলেটকে একটি আধুনিক ও স্মার্ট নগর হিসেবে গড়ে তুলতে সুপরিকল্পিতভাবে কাজ করতে হবে।
দুপুর ১২টার দিকে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল নগরের কালীঘাট এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি স্থানীয় চালবাজার এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে। আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা-হয়রানি চলছে। এর বিচার আল্লাহর কাছে দিয়ে রেখেছি। জনগণের কাছেও বিচার দিয়ে রাখলাম।’
আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ায় জাপার নেতাকে কারণ দর্শানোর পর অব্যাহতি
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলামকে পাস কাটিয়ে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার ঘটনায় কারণ দর্শানোর পর জাপার কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রোববার বিকেলে জাপার কেন্দ্রীয় কমিটির দপ্তর সম্পাদক-২ এম এ রাজ্জাক খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তবে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে অব্যাহতির বিষয়টি আজ সোমবার দুপুরে জানাজানি হয়। ইয়াহ্ইয়া সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ্ইয়া চৌধুরীকে দলীয় শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যক্রমে জড়িত থাকার কারণে ইতিপূর্বে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় তাঁকে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হকের সুপারিশে দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সাময়িকভাবে তাঁর অব্যাহতির আদেশ অনুমোদন করেছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এ বিষয়ে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা আমি গ্রহণ করেছি। তাঁরা এখন প্রয়োজন মনে করেছেন, তাই সাময়িকভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। আবার যখন প্রয়োজন মনে করবেন, তখন পদোন্নতিও দেবেন। এটা দলের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।’
গত ১২ মে রাতে সিলেট নগরের ঝেরঝেরিপাড়া এলাকায় আয়োজিত এক সভায় অতিথি হিসেবে যোগ দিয়ে ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে ভোট চান। এ ঘটনায় দলের ভেতরে সমালোচনা দেখা দেয়। এরপর ১৪ মে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।