পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ১২ জুন: সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রবাসীরা। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের অনেকেই সিলেটে অবস্থান করছেন। তাঁরা আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানি, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের কয়েক শ প্রবাসী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর পক্ষে প্রচারে দেশে গেছেন। তাঁরা পাড়া-মহল্লায় লিফলেট হাতে ছোটাছুটি করছেন। বক্তব্য দিচ্ছেন বিভিন্ন নির্বাচনী মতবিনিময় সভা এবং উঠান বৈঠকেও। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত।
২ জুন আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর অন্তত পাঁচ শ প্রবাসী আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সমর্থন জানাতে সিলেটে ছুটে গেছেন বলে জানা গেছে। তাঁরা প্রায় প্রতিটি ওয়ার্ডে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইছেন। এ ছাড়া কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রবাসী আত্মীয়স্বজনও দেশে গিয়ে প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। আর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় আগামী ২১ জুন সিলেট সিনি নির্বাচনের ভোট হবে। তবে প্রবাসীদের কার্যক্রম ও গতিবিধি নজরদারিতে রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মেয়র প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম বাবুল এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান। তাঁরা অভিন্ন কণ্ঠে জানান, টাকা ছড়িয়ে প্রবাসীরা যেন ভোটারদের প্রভাবিত করতে না পারেন, সে জন্য নির্বাচন কমিশনকে কড়া নজরদারি রাখতে হবে। এদিকে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী দীর্ঘকাল ধরে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও। এ সুবাদে যুক্তরাজ্যসহ প্রবাসী সিলেটিদের সঙ্গে তাঁর চমৎকার সম্পর্ক রয়েছে।
তাই তিনি দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর অনেক প্রবাসী তাঁর পক্ষে কাজ করতে দেশে এসেছেন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত পাঁচ শ প্রবাসী সিলেটে এসেছেন। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৪০০ জনই যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। বাকিরা ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে থাকেন। এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সিলেট প্রবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানে জাতীয়, স্থানীয় প্রতিটি নির্বাচনেই একাধিক প্রবাসী প্রার্থীর দেখা মেলে। এমনকি প্রার্থীদের অনেকে প্রবাসী আত্মীয়স্বজন ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে পাওয়া টাকায় নির্বাচনী ব্যয়ও মেটান। এ ছাড়া নির্বাচনী প্রচারণায়ও প্রবাসীদের আধিপত্য দেখা যায়। এ অঞ্চলে এটা অনেকটা চিরায়ত দৃশ্য। গত এক সপ্তাহ প্রবাসীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, প্রবাসীরা বিভিন্ন পাড়ামহল্লা ও বিপণিবিতানে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সমর্থনে লিফলেট বিলি করছেন। মতবিনিময় সভা, উঠান বৈঠক এবং নানা সামাজিক আয়োজনে যোগ দিয়ে ভোট চাইছেন। কেউ কেউ নগরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা নিজেদের আত্মীয়স্বজনকে জড়ো করে নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ থাকার অনুরোধও করছেন। এ ছাড়া প্রার্থীর সঙ্গেও অনেক প্রবাসী সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত প্রচার-প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভাইয়ের ছেলে রুহুল আমিন চৌধুরী সিলেটের সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের একসময়ের পরিচিত মুখ ছিলেন।
তিনিও বর্তমানে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। চাচার নির্বাচন সামনে রেখে সিলেটে এসেছেন। রুহুল জানান, সিলেটে প্রবাসীদের বাড়িঘর দখল হয়ে যাওয়াসহ নানা অভিযোগ আছে। এ ছাড়া সিলেট শহরে অনেক প্রবাসী ব্যবসা কার্যক্রমও পরিচালনা করছেন। তাই তাঁর চাচা মনোনয়ন পাওয়ার পর প্রবাসীরা মনেপ্রাণে তাঁকে জেতাতে কাজ করছেন। নির্বাচনের আগে প্রচারণা চালাতে আরও প্রবাসী দেশে আসবেন বলে তিনি জানান। একাধিক প্রবাসী জানিয়েছেন, সিলেট প্রবাসী-অধ্যুষিত অঞ্চল এবং আওয়ামী লীগের প্রার্থী নিজেও প্রবাসী। তাই আওয়ামী লীগের প্রার্থী প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আন্তরিকতার পরিচয় রাখবেন বলে ভোটারদের প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। নির্বাচিত হলে প্রবাসী সেল জোরদার করাসহ প্রবাসীরা যেন সিলেটে এসে নিরাপদে বিনিয়োগ করতে পারেন, সে ব্যাপারে তিনি যথাযথ উদ্যোগ নেবেন বলেও বক্তব্যে বলছেন। তাই যেসব প্রবাসী দেশে নির্বাচনী প্রচারণায় আসতে পারেননি, তাঁরাও মুঠোফোনে আত্মীয়স্বজনকে কল করে নৌকায় ভোট দিতে বলছেন।
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মল্লিক শাকুর ওয়াদুদ বলেন, তিনি গত ১৮ মে দেশে এসেছেন। ২ জুন আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণা শুরু হলে তিনি প্রায় প্রতিদিনই নৌকার পক্ষে গণসংযোগ করছেন। সিলেটের অসংখ্য মানুষ যুক্তরাজ্যপ্রবাসী। এসব রেমিট্যান্স-যোদ্ধাদের একজনকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মূল্যায়ন করে আওয়ামী লীগ প্রবাসীদের প্রতি ভালোবাসাই প্রকাশ করেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘নাগরিক হিসেবে দেশে আসার এবং প্রচারণা চালানোর অধিকার তাঁদের (প্রবাসী) আছে। প্রবাসীদের প্রতি আমাদের যথেষ্ট শ্রদ্ধাও আছে। নির্বাচিত হলে প্রবাসীদের সমস্যা সমাধানে আমিও আন্তরিক থাকব।
তবে কোনো প্রবাসী যেন টাকা লেনদেনের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার পাশাপাশি প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন, সে জন্য নির্বাচন কমিশনের খেয়াল রাখা দরকার।’ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফয়সল কাদের বলেন, ‘প্রবাসী কিংবা দেশি, এটা বিষয় নয়। কেউই নির্বাচনে কালো টাকা ছড়াতে পারবেন না। আমরা গভীরভাবে এটা পর্যবেক্ষণ করছি। নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য করে তুলতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’