পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ১২ জুন: অবশেষে অভিন্ন শরণার্থী নীতি সংস্কারে ঐকমত্যে পৌঁছেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। জোটের ২৭ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা গত বৃহস্পতিবার লুক্সেমবার্গে এক বৈঠকে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছান। ইইউ অভিবাসনবিষয়ক কমিশনার ইভা ইয়োহানসন একে ‘ঐতিহাসিক’ পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন। ইয়োহানসন বলেন, ইইউভুক্ত দেশগুলো যদি এখন থেকে একসঙ্গে কাজ করে, তাহলে ইউরোপে আসা শরণার্থীদের সমস্যা মানবিক অথচ কঠোর পন্থায় সামলানো যাবে। এতে সব সদস্য দেশের জন্য সুবিধা হবে। এত দিন অভিন্ন শরণার্থী নীতি থাকলেও আগে তা প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছিল। সেসব বিষয় মাথায় রেখেই এবার শরণার্থীবিষয়ক নীতি সংস্কার করেছে ইইউ।
সংস্কার নীতির তিনটি মূল বিষয়। এক, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর কোনো একটির সীমান্তে বা বিমানবন্দরে কোনো শরণার্থী যদি রাজনৈতিক আশ্রয় (অ্যাসাইলাম সিকার) প্রার্থনা করে, তাহলে আশ্রয়প্রার্থীকে ১২ সপ্তাহের জন্য সীমান্তবর্তী আশ্রয়শিবিরে রাখা হবে। আশ্রয়শিবিরে রেখেই সেই রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন যাচাই-বাছাই করা হবে যে আদৌ তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার যোগ্য কি না। দ্বিতীয় বিষয়টি হলো কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী যদি তাঁর নিজের দেশ থেকে সরাসরি আশ্রয় চাওয়া দেশে না এসে তৃতীয় কোনো দেশ থেকে আসেন, তাহলে তাঁকে তৃতীয় দেশটিতে ফেরত পাঠানো হবে। আর তৃতীয় বিষয় হলো ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটভুক্ত দেশগুলোর জনসংখ্যার অনুপাত বিবেচনা করে শরণার্থীদের রাখার ব্যবস্থা করা হবে। অর্থাৎ জনসংখ্যা অনুযায়ী ঠিক হবে কোন দেশে কত শরণার্থী থাকবেন। সংস্কার নীতিগুলোর প্রথমটি ছাড়া অন্যগুলো কার্যকর ছিল। তবে ইইউভুক্ত পূর্ব ইউরোপের প্যোলাণ্ড বা হাঙ্গেরিসহ আরও কিছু দেশ তা আমলে নিত না। মুসলিম শরণার্থী গ্রহণেও গড়িমসি করত। নতুন নীতিতে বৈধ রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীকে আশ্রয় না দিয়ে অন্য দেশে পাঠালে মাথাপিছু ২০ হাজার ইউরো জরিমানার মুখোমুখি হবে সংশ্লিষ্ট দেশটি। আশ্রয়দাতা দেশটি এই জরিমানার অর্থ পাবে। লুক্সেমবার্গে ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের নেওয়া এই নতুন সংস্কার নীতিটি আইনে পরিণত হলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দৃষ্টিতে যেসব দেশে রাজনৈতিক সমস্যা, গৃহযুদ্ধ বা যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে না, সেসব দেশের নাগরিকেরা রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী হিসেবে যোগ্য হবেন না।
এ ক্ষেত্রে কোনো এক দেশের আশ্রয়শিবিরে রেখে ১২ সপ্তাহের মধ্যে তৃতীয় দেশে বা আশ্রয়প্রার্থীর দেশেই ফেরত পাঠানো হবে। ইয়োহানসন একে ঐতিহাসিক পদক্ষেপ দাবি করলেও প্রকৃতপক্ষে চুক্তিটি ‘ঐতিহাসিক পদক্ষেপ’ কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার। ন্যান্সি বলেন, ‘তিনি এই নীতিতে সম্মতি দিলেও সমস্যাটির সন্তোষজনক সমাধান হয়েছে কি না, তা বুঝতে সময় লাগবে।’ জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেসার এ বিষয়ে আরও বলেছেন, সীমান্তের শরণার্থী শিবিরগুলোয় ১৮ বছরের কম বয়সী আশ্রয়প্রার্থীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত না নেওয়া বিষয়ে তার প্রস্তাবটি গৃহীত হয়নি। তিনি জানান, জার্মান সরকার নতুন এ বিষয়টি সম্মতি দিলেও অন্য সদস্যদেশগুলো তা সমর্থন করেনি। জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থার হিসাবে, চলতি বছরে অবৈধভাবে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ৫০ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী ইতালিতে নিবন্ধিত হয়েছেন। এর বেশির ভাগই তিউনিসিয়া, মিসর ও বাংলাদেশের। তবে তাদের বৈধভাবে ইউরোপে বসবাসের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অভিবাসী ও শরণার্থীবিষয়ক জার্মান সংস্থাগুলো শরণার্থীদের ইউরোপে প্রবেশে কড়াকড়ি নীতির সমালোচনা করেছে।
জার্মানির অভিবাসীবিষয়ক গবেষক ম্যাক্সিমিলিয়ান পিচল বলেন, ‘জার্মানি অন্য দেশগুলোর সম্মতিতে শরণার্থীদের বিচ্ছিন্ন একটি সম্প্রদায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে করে তাদের আশ্রয়ের অধিকার শুধু কাগজে বহাল থাকবে।’ তিনি এ নীতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে লুক্সেমবার্গে ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে গৃহীত এই নতুন সংস্কার নীতি আইনে পরিণত করতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের অনুমোদন লাগবে।