পরাগায়ন ছাড়াই ধান উৎপাদন
লণ্ডন, ১৬ অক্টোবর: মানবতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ক্ষেত্র মানব স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তা এবং জলবায়ু নিয়ে কয়েক দশক ধরে কাজ করছেন বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জনকারী আধুনিক জীববিজ্ঞানের প্রথম সারির গবেষক ড. আবেদ চৌধুরী।
সিলেটে জন্ম নেয়া এই বিজ্ঞানী ধানগাছের দ্বিতীয় জন্ম নিয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর গবেষণা করে উদ্ভাবন করছেন পাঁচ ফসলী ধান যা একবার রোপণ করেই পাওয়া যাবে বছরজুড়ে পাঁচটি ফসল। ড. আবেদ চৌধুরীর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার সর্বত্র সাড়া জাগিয়েছে।
পরাগায়ন ছাড়াই ধান উৎপাদনের যুগান্তকারী আবিষ্কারের নায়কও আবেদ চৌধুরী। বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ‘নেচার’গত সপ্তাহে তাঁর এই উদ্ভাবনী গবেষণাটি প্রকাশ করেছে।
মৌলভীবাজার সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ে স্কুল থেকে সরাসরি ঢাকা নটরডেম কলেজ হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়ন শাস্ত্রে পড়াশোনা। ১৯৭৯ সালে রসায়ন এবং আণবিক জীববিদ্যা পড়ার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গমন।
সেখানে ওরেগন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ মলিকুলার বায়োলজিতে উচ্চতর পড়াশোনা ও গবেষণা। পরে সিএসআইআরও প্ল্যান্ট ইণ্ডাস্ট্রিতে অস্ট্রেলিয়াতে পাড়ি জমানোর আগে এনআইএইচ এবং এমআইটি-তে জীববিজ্ঞান বিভাগে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা সম্পন্ন করেন।
অস্ট্রেলিয়ার ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিলের যেসব গবেষকের নাম নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন তালিকায় উঠেছিল, তাঁদের মধ্যে বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরীও একজন। তিনি ১৯৮৩ সালে পিএইচডি করেন যুক্তরাষ্ট্রের অরিগন স্টেট ইনস্টিটিউট অব মলিকুলার বায়োলজি থেকে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ ও ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে পোস্ট-ডক্টরাল গবেষণা করেন। পিএইচডি গবেষণাকালে তিনি রেকডি নামক জেনেটিক রিকম্বিনেশনের একটি নতুন জিন আবিষ্কার করেন যা নিয়ে আশির দশকে আমেরিকা ও ইউরোপে ব্যাপক গবেষণা হয়। তাঁর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজটি ছিল উদ্ভিদের জিন চিহ্নিত করা। ১০০টিরও বেশী গবেষণা প্রকাশনা রয়েছে তাঁর।
দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করে তিনি ডিজিটাল স্বাস্থ্য এবং গাট মাইক্রোবায়োমকে কেন্দ্র করে একটি কোম্পানি জেনোফ্যাক্স সহ-প্রতিষ্ঠা করেছেন। মিথেন প্রশমনের জন্য একটি অভিনব কৌশলও তৈরি করেছেন তিনি।
তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ, ম্যাসাচুসেট্স ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং ফ্রান্সের ইকোল নরমাল সুপিরিয়রের মতো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও গবেষণা করেছেন।
২০১৯ সালে তিনি সোনালি ধান নামে আরেকটি নতুন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছিলেন; যেটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। পাশাপাশি এটি ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে ও ওজন কমাতে সহায়তা করে। এই ধান পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন হতে স্বীকৃতি পায়।
অস্ট্রেলিয়ায় দীর্ঘ প্রবাসজীবনের পর প্রায় এক যুগ আগে সিলেটে নিজ গ্রাম কানিহাটিতে গড়ে তোলেন একটি মাঠপর্যায়ের গবেষণাগার। সেখানে দেশীয় ধান নিয়ে বিশদ গবেষণার পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন প্রায়-বিলুপ্ত দেশি ধানের সংগ্রহ। একসময় বাংলাদেশে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার ধানের প্রচলন থাকলেও এখন বেশির ভাগই বিলুপ্ত। যেগুলো এখনো বিলুপ্ত হয়নি, সেগুলো দেশের নানা প্রান্ত থেকে তিনি সংগ্রহের চেষ্টা করছেন।
জিন বিজ্ঞানী ড. আবেদ চৌধুরী বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় এক গবেষণা সংস্থার বৈজ্ঞানিক উদ্ভাবক বিভাগের প্রধান হিসেবে কর্মরত আছেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিরোধী প্রযুক্তি উদ্ভাবনের কাজে নিয়োজিত।
বিজ্ঞান চর্চার পাশাপাশি সাহিত্য রচনায়ও তিনি ব্রতী। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে- মানুষের জিন, জিনের মানুষ, অনুভবের নীলনকশা, শৈবাল ও অন্তরীক্ষ (কবিতা সংকলন), দুর্বাশিশির ও পর্বতমালা (ইংরেজিতে লেখা প্রবন্ধগুচ্ছ), নির্বাচিত কবিতা- স্বপ্ন সত্তা নদী ও অন্যান্য।