সারওয়ার-ই আলম ♦
হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায় বাংলায় লেখা সাইনবোর্ডগুলো দেখলে মনে হয় বাংলাদেশের কোনো রাস্তা ধরে হাঁটছি। চারপাশে নিজেদের মানুষ- গায়ের রং, ভাষা, সংস্কৃতি সবই অভিন্ন। খুব ভাল লাগে। নিজেকে খুব নিরাপদ মনে হয়। একজন অভিবাসীর জন্য নিরাপত্তার এই অনুভূতিটা খুব জরুরি।
এটা সহজে অর্জিত হয়নি। আমাদের পূর্ব পুরুষদের অনেক ত্যাগ ও শ্রমের বিনিময়ে অর্জিত। অর্জিত শহীদ আলতাব আলীর মত মহান বাঙালিদের জীবনের বিনিময়ে। আমরা যারা এই সময়ে এসে সবকিছু তৈরী পেয়েছি, সবকিছু নিজেদের অনুকূলে পেয়েছি এটা সম্ভব হয়েছে আমাদের পূর্বসূরীদের কল্যাণে। তাঁদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধায় ও কৃতজ্ঞতায় মনটা আনত হয়।
সন্ধ্যার আলো ঝলমল পরিবেশে পথের দু’পাশ ধরে বাঙালিদের মুদি দোকান, রেস্টুরেন্ট, মিষ্টান্নভাণ্ডার, মাছ-মাংসের দোকানগুলো দেখার অনুভূতিটা অন্যরকম। কী অপূর্ব প্রাণচাঞ্চল্য প্রায় প্রতিটি দোকানে। দেশী শাক-সব্জী, পোশাক-আশাক, মসল্লা, মৌসুমী ফল-ফলাদিতে ভরা। মনে হয় আমি যেন মাইজদী কিংবা ঢাকার মিরপুর ধরে হাঁটছি। মনে হয় এ যেন এক খণ্ড বাংলাদেশ এই বিশাল দেশে, যে দেশটি আমাদেরকে শাসন করেছিল প্রায় দু’শ বছর। আজ সে দেশে শোভা পাচ্ছে বাংলা বর্ণমালার বর্ণালি সৌন্দর্য। শোভা পাচ্ছে বাঙালির মাতৃভাষার অহংকার। পসরা সাজিয়েছে বাঙালির সাংস্কৃতিক বৈচিত্র।
মনে প্রশ্ন জাগে, যাঁদের গভীর ত্যাগ, শ্রম, মেধা ও ঘামে এই বিলেতে আমাদের আজকের এই একখণ্ড বাংলাদেশ পাওয়া, তাঁদের জন্য আমরা কী করতে পেরেছি? আমরা কি আজও প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি একটি যাদুঘর যার নাম হতে পারে বেঙ্গল মিউজিয়াম; যেখানে শোভা পাবে বিলেতে বাঙালির অভিবাসনের সচিত্র ইতিহাস, ব্রিকলেন ব্যাটলের গৌরবগাঁথা। যে মিউজিয়ামে গিয়ে প্রজন্ম জানবে আমাদের পূর্বসূরীদের আত্মত্যাগের কাহিনী।
আমাদের এত এত কমিউনিটি সংগঠন। টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে আমাদের নিজেদের মেয়র। আমাদের এমপি। প্রভাবশালী ব্যবসায়ী সংগঠন। শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক। আমরা কি পারিনা সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এখানে একটি যাদুঘর প্রতিষ্ঠা করতে, যে যাদুঘরে সংরক্ষিত হবে ব্রিটিশ বাঙালিদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গৌরবগাঁথা?
ইলফোর্ড, ১৭ অক্টোবর ২০২৩
লেখক: কবি, সাংবাদিক