লণ্ডন, ১৭ জুন: ব্রিটেনের মর্যাদাপূর্ণ ‘মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ (এমবিই) খেতাবে ভূষিত হয়েছেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্ট মিডল্যাণ্ডসে বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে এই রাজকীয় খেতাব প্রদান করা হয়েছে।
যুক্তরাজ্যের রাজা-রানীর জন্ম দিবস ও নববর্ষ এই দুই উপলক্ষে প্রতি বছর এদেশের শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনীতি, অর্থনীতি ও কমিউনিটি উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়ে থাকে।
রাজা তৃতীয় চার্লসের জন্মদিবস উপলক্ষে গত ১৫ জুন রাজপ্রাসাদ ‘বাকিংহাম প্যালেস’ ‘কিংস এওয়ার্ডস’ এবারের খেতাবপ্রাপ্তদের প্রাপ্তদের তালিকা প্রকাশ করে।
উল্লেখ্য, ইউরোপের সর্ববৃহৎ ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ‘বামিংহাম ম্যাজিট্রেট কোর্ট’-এর সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট এবং ‘জাস্টিস অব দ্য পিস’ ছিলেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। তিনি ওয়েস্ট মিডল্যাণ্ডসের প্রথম বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘জাস্টিস অব দ্য পিস’। ২০০৪ সালে বিচারকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ফেঞ্চুগঞ্জের এই গুণী সন্তান।
রাজার খেতাবপ্রাপ্ত জিয়াউস সামাদ চৌধুরী ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। এখানে তিনি ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট, সেলস এণ্ড মার্কেটিং, একাউন্টিং, এডভান্সড কাউন্সেলিং, জুডিশিয়াল এডমিনিট্রেশনসহ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনায় থাকা অবস্থাতেই তিনি রেস্টুরেন্ট ব্যবসা শুরু করে যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে ব্যবসার পাঠ চুকিয়ে তিনি চাকরিতে মনোনিবেশ করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি স্যাণ্ডওয়েল মেট্রোপলিটান বারায় চীফ বাংলাদেশী কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তিনি সরকারের ‘সিঙ্গেল ইকনোমিক রিজেনারেশন বাজেট’ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করেন।
তিনি স্যাণ্ডওয়েলে বাংলাদেশী কমিউনিটির শিক্ষা, ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক চর্চা এবং সামাজিক ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশী কমিউনিটির কল্যাণে বিভিন্ন তহবিলের ব্যবস্থা, চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর বেনিফিট আবেদন, হাউজিং সমস্যার সমাধান, ইন্টারপ্রিটিং সেবা ও ইমিগ্রেশন সেবাসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির সার্বিক উন্নয়নে বহুমুখী ভূমিকা পালন করেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি।
তিনি স্যাণ্ডওয়েলের বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা-দীক্ষায় উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি আত্মনির্ভর জীবন গঠনে পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করেন। স্থানীয় স্কৃলগুলোতে বাংলাদেশি সন্তানদের জন্য সামার স্কুল চালু, খেলাধুলা, পেইন্টিং ও কম্পিউটার গেইমসসহ নানা শিক্ষামূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। স্যাণ্ডওয়েলের হাসপাতালগুলোতে মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার চালুর ক্ষেত্রে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন।
বিচারিক কাজ থেকে অবসরে যাবার পর জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর লিখিত ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘মেমোয়ার্স অব বাংলাদেশ’। তাঁর প্রকাশিত কবিতার বইগুলোর মধ্যে আছে- মনোচ্ছাস, মনমুরলী, মনমোহনা ও মনোদয়।
সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত এক পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। তাঁর ছোট দুই ভাই আহমদ-উস-সামাদ চৌধুরী ও প্রয়াত মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এমপি দেশে-বিদেশে বহুল পরিচিত ও সম্মানিত। তাঁদের পিতা ফেঞ্চুগঞ্জের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব মরহুম দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। ৮৫ বছর বয়স্ক জিয়াউস সামাদ চৌধুরী পাঁচ সন্তানের গর্বিত জনক। তাঁর সন্তানরা সবাই পেশাগত জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।