পত্রিকা ডেস্ক লণ্ডন, ২৬ সেপ্টেম্বর: বেপরোয়া কর ছাড়ের নীতি ঘোষণা করেছেন নতুন চ্যান্সেলার কোয়াসি কোয়ার্টেং। ২১ সেপ্টেম্বর ঘোষিত মিনি বাজেটে তিনি করের সর্বোচ্চ হার ৪৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করেছেন। গত শুক্রবার থেকে এটি কার্যকর হয়েছে। এতে ধনীরাই উপকৃত হবে। আর সাধারণ আয়ের মানুষ যারা ২০ শতাংশ হারে কর দেয়, সেটি কমিয়ে ১৯ শতাংশ করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তবে এটি কার্যকর হবে আগামী বছরের এপ্রিল থেকে। বলা হচ্ছে, এটা ৫০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ কর ছাড়। দেশটির আয়করের সর্বোচ্চ হার হচ্ছে ৪৫ শতাংশ, নতুন অর্থমন্ত্রী বলেছেন, এই হারে ছাড় দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে জাতীয় বীমা পরিকল্প ও স্ট্যাম্প শুল্কেও ছাড় দেওয়া হবে। সবমিলিয়ে বছরে প্রায় ৪৫ বিলিয়ন পাউণ্ড কর ছাড় দিয়েছেন চ্যান্সেলার। এই কর ছাড়ে ঘটনায় ধনীরা আরও ধনী হবে। কিন্তু বাড়বে জাতীয় ঋণের বোঝা। কেননা, এত বিশাল কর ছাড়ের ঘাটতি সামাল দিতে সরকারকে ঋণ করতে হবে। লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার আগেই কর ছাড়ের নীতি ঘোষণা করেছিলেন। সরকারের দাবি কর ছাড়ের ফলে যুক্তরাজ্যের প্রতি ধনীদের আগ্রহ বাড়বে। তারা বেশি বেশি বিনিয়োগ করবে। আর তাতে দেশের প্রবৃদ্ধি পেয়ে সার্বিক অর্থনীতির বিকাশ ঘটবে। যার উপকারভোগী হবে সাধারণ মানুষও। কিন্তু চ্যান্সেলারের কর ছাড়ের ঘোষণার পরপরই আন্তর্জাতিক বাজারে পাউণ্ডের দরপতন ঘটতে শুরু করে। ২৬ সেপ্টেম্বর সোমবার পাউণ্ডের দাম কমে প্রায় ডলারের কাছাকাছি নেমে আসে। মিনি বাজেটের পর মার্কেটে এমন অস্থিরতা শুরু হওয়ার কারণ হিসেবে বিশ্লেষকরা বলছেন, সরকারের বেপরোয়া কর ছাড়ের ঘোষণা অর্থনীতির জন্য টেকসই নয়। তবে এ বিষয়ে বিবিসির প্রশ্নে চ্যান্সেলার কোয়াসি কোয়ার্টেং কোনো জবাব দেননি। লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর সরকার প্রত্যাশামাফিক এই কর ছাড় ঘোষণা করল, যা সংক্ষিপ্ত বাজেট হিসেবেও পরিচিতি পেয়েছে। তবে ইতিমধ্যে অভিযোগ এসেছে, এই বাজেট ধনীবান্ধব। নতুন চ্যান্সেলার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, সব শ্রেণির মানুষের কথা চিন্তা করেই এই বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, ২০২৩ সাল থেকে আয়করের ভিত্তি হার ১ শতাংশ হ্রাস করার পরিকল্পনা আছে। এতে প্রায় ৩ কোটি ১০ লাখ মানুষ উপকৃত হবেন। যুক্তরাজ্যের যেসব মানুষের বার্ষিক আয় ১ লাখ ৫০ হাজার পাউণ্ডের ওপরে, তাঁদের আয়কর ৫ শতাংশ হ্রাস করা হবে। ুু ১৪ ইংল্যাণ্ড, ওয়েলস ও উত্তর আয়ারল্যাণ্ডের ক্ষেত্রে এই কর হ্রাস প্রযোজ্য হবে। রাজস্ব বিভাগের তথ্যানুসারে, শীর্ষ পর্যায়ে এই কর হ্রাসের কারণে প্রায় ৬ লাখ ৬০ হাজার মানুষ উপকৃত হবেন। এতে বছরে তাঁদের প্রায় ১০ হাজার পাউণ্ড বেঁচে যাবে। এ ছাড়া জাতীয় বীমার প্রিমিয়াম চলতি বছর ১ দশমিক ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করা হয়েছিল। এই বর্ধিতাংশ প্রত্যাহার করা হবে বলে জানিয়েছেন চ্যান্সেলার। এতে গড়পড়তা পরিবারের বার্ষিক ৩৩০ পাউণ্ড বেঁচে যাবে। এ ছাড়া স্ট্যাম্প শুল্কের সীমা বৃদ্ধি করা হবে বলে জানানো হয়েছে। প্রথমবার বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বাড়ির দাম ৩ লাখ পাউণ্ড হলে স্ট্যাম্প শুল্ক দিতে হতো, সেই হার এখন বৃদ্ধি করে ৪ লাখ ২৫ হাজার করা হবে। এই প্রক্রিয়ায় ২০২৭ সালের মধ্যে মোট ৪৫ বিলিয়ন পাউণ্ড কর ছাড় দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। অর্থমন্ত্রী কোয়াসি কোয়ার্টেং-এর ভাষায়, এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাজ্যের অর্থনীতি স্থবিরতার দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে প্রবৃদ্ধির সুস্থচক্রে প্রবেশ করবে। তিনি আরও বলেন, ‘নতুন যুগের প্রবৃদ্ধির জন্য আমাদের নতুন মনোভঙ্গি দরকার।’ তবে রাজস্ব বিভাগ বলেছে, এতে নতুন সরকারের ঋণ আরও বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে তাদের ৭ হাজার ২০০ কোটি পাউণ্ড বিনিয়োগ প্রয়োজন হবে। স্বাধীন গবেষণা সংস্থা ফিসক্যাল স্টাডিজের পরিচালক পল জনসন বিবিসিকে বলেন, ‘১৯৭২ সালের বাজেটের পর এটিই যুক্তরাজ্যের ইতিহাসে সর্বোচ্চ কর ছাড়, এমনকি আমি যা আশা করেছিলাম, তার ৫০ শতাংশের বেশি।’ তবে তাঁর হিসাব, এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যকে আগামী ৩ বছরে ১২ হাজার কোটি ডলার ঋণ করতে হবে। পল জনসন সরকারের এই পদক্ষেপকে বড় ধরনের জুয়ার সঙ্গে তুলনা করেছেন। কারণ, মূল্যস্ফীতির হার বেশি থাকার সময় অর্থনীতিতে এভাবে অর্থের সঞ্চালন করা হলে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যেতে পারে। সবকিছু নির্ভর করছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ওপর, অর্থাৎ প্রবৃদ্ধির হারে গতি এলে এ সবকিছু ব্যবস্থাপনা করা সম্ভব। তবে এই পদক্ষেপকে সংক্ষিপ্ত বাজেট হিসেবে আখ্যা দিতে চান না বিবিসির রাজনৈতিক প্রতিনিধি নিক ইয়ার্ডলি। বরং তিনি মনে করেন, এটা বড় ধরনের কর হ্রাসমূলক রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ। নিক ইয়ার্ডলি বলেন, বরিস জনসনের করা পরিকল্পনা ছুড়ে ফেলা হয়েছে। অনেক পরিবারের টাকা বেঁচে যাবে, একই সঙ্গে, যাঁদের আয় অনেক বেশি, তাঁরাই সবচেয়ে লাভবান হবেন। এতে সরকারের রাজস্ব আয় অনেকটা কমে যাবে। চ্যান্সেলারও সে রকম মনে করছেন বলে মনে করেন নিক ইয়ার্ডলি। তিনি বলেন, মানুষের হাতে ব্যয়যোগ্য অর্থের প্রবাহ বৃদ্ধি পেলে ব্যয় বাড়বে। প্রবৃদ্ধির চাকা গতিশীল হলে করহার আবার বৃদ্ধি করা যাবে, এটাই চ্যান্সেলারের পূর্বানুমান।
আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক
গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...