কারী লাইফ এওয়ার্ডস ও গালা ডিনার
লণ্ডন, ০৯ অক্টোবর: বরাবরের মত এবারও নান্দনিক আয়োজনে যুক্তরাজ্যের বাছাই করা সেরা শেফ ও রেস্টুরেটারদের হাতে এওয়ার্ডস তুলে দিয়েছে কারী লাইফ মিডিয়া গ্রুপ। গত রোববার (৯ অক্টোবর) সেন্ট্রাল লণ্ডনের অভিজাত গ্রোভনর হাউজ হোটেলের সুপরিসর ‘দ্য গ্রেট রুম’-এ এবারের কারী লাইফ এওয়ার্ডস ও গালা ডিনার অনুষ্ঠিত হয়। এবার পাঁচটি ক্যাটাগরিতে ৪০টি এওয়ার্ডস প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে, কারি লাইফ এডিটর চয়েস এওয়ার্ডস, কারি লাইফ সেরা রেস্টুরেন্ট এওয়ার্ডস, সেরা শেফ এওয়ার্ডস, সেরা টেকওয়ে এওয়ার্ডস ও কারী লাইফ লেজেণ্ড এওয়ার্ড। এর পাশাপাশি তিনটি বিশেষ সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়। এই ক্যাটাগরিতে রেস্টুরেন্ট খাতে বিশেষ অবদানের জন্য লাইফটাইম এচিভমেন্ট এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন স্কটল্যাণ্ডের রাজধানী এডিনবরার শেজান ইণ্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের আব্দুল গণি (সিনিয়র)। অশীতিপর এই ব্যবসায়ী প্রায় পঞ্চাশ বছর যাবত রেস্টুরেন্ট খাতে যুক্ত রয়েছেন। এছাড়া বিশেষ কারি লেজেণ্ড এওয়ার্ড দেয়া হয় স্টোক অন ট্রেন্টের কিসমত রেস্টুরেন্টের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত আলাউদ্দিন আহমদ। তিনি ১৯৬২ সালে স্টাফোর্ডশায়ারের সর্বপ্রথম ইণ্ডিয়ান খাবারের রেস্টুরেন্ট খোলেন। ব্রিটিশ বাংলাদেশি এই ব্যবসায়ীর একমাত্র ছেলে সালাউদ্দিন ৬০ বছরের এই পুরানো রেস্টুরেন্ট এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। ‘সেরা লাক্সারি বিজনেস হোটেল এওয়ার্ড পেয়েছে ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল। হোটেলের পক্ষে এওয়ার্ড গ্রহণ করেন জেনারেল ম্যানেজার আশওয়ানি নায়ার ও মার্কেটিং ডিরেক্টর শহিদুস সাদেক। এটি ছিলো কারী লাইফ এওয়ার্ডস ও গালা ডিনারের ১৩তম আয়োজন। কারী শিল্পের অর্জন, সম্ভাবনা ও সংকট নিয়ে নিয়মিত প্রকাশনা ও বিভিন্ন দেশে ব্রিটিশ কারী ফেস্টিভ্যাল আয়োজনের মাধ্যমে কারী লাইফ ইতিমধ্যে ব্রিটিশ কারী শিল্পের বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য মুখপত্র হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্যের কুলিনারি ক্যালেণ্ডারের বার্ষিক অন্যতম সেরা আয়োজন হিসেবে স্থান করে নিয়েছে কারী লাইফ এওয়ার্ডস। কারী শিল্পের জাঁকজমকপূর্ণ এই এওয়ার্ডস অনুষ্ঠানে এবারও রেস্টুরেটার্স ও খাদ্যরসিকদের প্রাণজ উপস্থিতি ছিলো দেখার মত। কারী শিল্পের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন ব্রিটিশ মূলধারার রাজনীতিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের স্বনামধন্য ব্যক্তিবর্গ। বিকাল সাড়ে চারটা থেকেই অতিথিরা হাজির হতে থাকেন। সন্ধ্যা ৬টা হতেই অতিথিদের প্রাণজ উপস্থিতিতে ভরে উঠে অনুষ্ঠানস্থল। রকমারী ও সুস্বাদু ক্যানোপির সাথে চলে অতিথিদের ছবি তোলা ও আড্ডা। সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হয় মূল আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মিনিস্টার ফর স্টেইট ফর লোকাল গভর্ণমেন্ট পল স্কালি এমপি, কনফেডারেশন অব ব্রিটিশ ইণ্ডাস্ট্রিজ (সিবিআই) এর সদ্যসাবেক চেয়ারম্যান লর্ড করণ বিলিমোরিয়া ছিলেন বিশেষ অতিথি। এছাড়া কারি লাইফ এর জাঁকজমকপূর্ণ এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে নাম লেখানো লেবার দলীয় এমপি রুশনারা আলী, অনলাইন অর্ডারিং কোম্পানী জাস্ট ইট ইউকে’র একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর মার্ক ফিঞ্চ। ছিলেন লেস্টার সিটির চ্যাম্পিয়ান লীগ টিমের সদস্য বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত উদীয়মান ব্রিটিশ ফুটবলার হামজা চৌধুরী। স্কাই নিউজের বিশিষ্ট ব্রডকাস্টার, সাংবাদিক ও লেখক এডাম বো?নের উপস্থাপনায় এবারের আয়োজনে অতিথিরা বিজয়ীদের হাতে এওয়ার্ড তুলে দেন। কারী লাইফ ম্যাগাজিনের এবারের আয়োজনও ছিলো নতুনত্বে ভরা। নজরকাড়া সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি এবার বিশেষ মর্যাদায় বিজয়ীদের এওয়ার্ড মঞ্চে নেয়া হয়। সুবিশাল হলরুমের দুই দিকে সারি সারি অতিথিদের বসার টেবিল। মাঝখানে লালগালিচার পথ। সেই পথেই এওয়ার্ডপ্রাপ্তরা একে একে মঞ্চে গেলেন স্বীকৃতি গ্রহণ করতে। এওয়ার্ড গ্রহীতাদের লালগালিচা মাড়িয়ে মঞ্চে যাওয়ার মুহূর্তটি এবার বিশেষেভাবে ভিডিও ধারণ করা হয়। আবার পুরো অনুষ্ঠানটি এবার ‘লাইভ’ সম্প্রচার করা হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন কারি লাইফ এর সম্পাদক সৈয়দ বেলাল আহমদ। তিনি বলেন, ব্রেক্সিট, করোনা মহামারী, মূল্যস্ফীতি এবং কস্ট অব লিভিং সঙ্কটের ওপর এখন চলছে এনার্জি সঙ্কট। একের পর এক সংকটের কারণে কারী শিল্পখাত ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে টিকে থাকার জন্য কারী হাউজগুলো নানা রূপান্তরও ঘটিয়েছে। অতীতের ন্যায় আগামীতেও সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে কারী শিল্প এগিয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি লর্ড করণ বিলিমোরিয়া বলেন, কঠিন সময়ে জনগণ ও ব্যবসাকে সহায়তা করার জন্য সরকার বেশ উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। কিন্তু সংকট এখনও বিদায় নেয়নি। তাই কারী শিল্পের মত বিশাল এই খাতকে টিকেয়ে রাখতে সরকারের আরও সহায়তা অব্যাহত রাখতে হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে কারী শিল্প ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বছরে বিলিয়ন বিলিয়ন পাউণ্ডের অবদান রাখে। ডেলিভারী সেবাসহ এই খাত কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান করে থাকে। তাই একে আরও শক্তিশালি করা দরকার। মিনিস্টার ফর লোকাল গভর্ণমেন্ট পল স্কালি এমপি বলেন, আমরা হসিপটালিটি সেক্টরের পাশে আছি, থাকবো এবং এটি যাতে আরও উন্নতির দিকে যায় সে লক্ষ্যে কাজ করবো। এ প্রসঙ্গে কোভিড মহামারী চলাকালে সরকারের ৪০০ বিলিয়ন পাউণ্ড প্রণোদনার কথা উল্লেখ করেন। অনুষ্ঠানে এমপি রুশনারা আলীও বক্তব্য রাখেন। জাস্ট ইট ইউকে’র একাউন্ট ম্যানেজমেন্ট ডিরেক্টর মার্ক ফিঞ্চ বলেন, অনলাইনে খাবার অর্ডারের তালিকায় শুরু থেকে এখনও শীর্ষে রয়েছে কারী। সবশেষে অতিথিদের ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন কারি লাইফ ম্যাগাজিনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা। তিনি জানান, যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কারীপ্রেমীরা এ আয়োজনে উপস্থিত হয়েছেন। নাহাস পাশা বলেন, ২০২৩ সালে কারি লাইফ এর বয়স হবে কুড়ি। কারী লাইফ ম্যাগাজিন আগামীতে আরও ব্যাপকভাবে কারী শিল্পের পক্ষে মুখপত্রের কাজ করে যাবে। সবশেষে ছিলো অতিথিদের জন্য স্বপ্না ক্যাটারিং পরিবেশিত রকমারী ডিশের ডিনার আয়োজন। পাশাপাশি মঞ্চে চলে সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এবারের আয়োজনে প্রধান স্পন্সর ছিলো জাস্ট ইট। অনুষ্ঠানে আরো সহায়তা করে কোবরা বিয়ার, ইউনিসফট, ওয়ার্ক পারমিট ক্লাউড, ট্রেভেল লিংক, বাংলাদেশের সিটি ব্যাংক ও হালদা ভেলি।