পত্রিকা প্রতিবেদন, লণ্ডন, ১০ অক্টোবর: সাদা ভাত, গরুর মাংস, কলাই ডাল-এই তিনের গণভোজ উৎসব হলো মেজবান। তবে চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী মেজবান যুক্তরাজ্যে এসে পেয়েছে ভিন্নমাত্রা। কেবল খাবারে বৈচিত্র নয়; আয়োজনের ভিন্নতা আর সাংস্কৃতিক পরিবেশনা মেজবানকে করে তুলেছে আরও উপভোগ্য। প্রবাসে প্রিয়জনদের নিয়ে আনন্দঘন একটি দিন কাটানোরও উপলক্ষ এটি। সে কারণেই বছর বছর লণ্ডনে মেজবানের কদর ও জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। গত রোববার পূর্ব লণ্ডনের সুপরিসর ম্যাফেয়ার বেঙ্কুয়েটিং হলের মেজবানে ছিলো হাজারো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহর থেকে পরিবার- পরিজন নিয়ে হাজির হয়েছেন অনেকেই। পারস্পরিক দেখা-সাক্ষাত ও কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি চলেছে ভোজন উৎসব। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করেছে খাবারের জন্য। একজন খাচ্ছেন তো আরেকজন চেয়ার দখলের জন্য পেছনে দাঁড়িয়ে। খাবারের জন্য এমন অপেক্ষার দৃশ্য দেখে কবি হামিদ মোহাম্মদ কৌতুহল সামলাতে না পেরে প্রশ্ন করেই বসেন, খাবারের জন্য এমন করছে কেন এরা? সেখানে ক্রাউড কন্ট্রোলের দায়িত্বে থাকা একজন তাঁকে আশ্বস্ত করে বললেন, এটাই চট্টগ্রামের মেজবানের ঐতিহ্য। কারণ এটি হাজার হাজার মানুষের ভোজ উৎসব। আদর-আপ্যায়ন করে বসিয়ে খাওয়ানোর সুযোগ এখানে নেই। ফলে সবাই চেয়ার দখলের চেষ্টায় থাকে। গ্রেটার চিটাগং অ্যাসোসিয়েশন ইউকে এই মেজবানের আয়োজন করে। এটি ছিলো তাদের চতুর্থ মেজবানীর আয়োজন। এবার মোট সাড়ে ৩ হাজার লোকের জন্য খাবারের আয়োজন ছিলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা ৪ হাজার ছাড়িয়ে যায়। খাবার পরিবেশনের পাশাপাশি নিয়মিত রান্নার ব্যবস্থা থাকায় কাউকেই খালি মুখে ফিরতে হয়নি। সকাল ১২টা থেকে শুরু রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই ভোজ উৎসব ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এবারের আয়োজনে মঞ্চে বিশেষ আকর্ষণ ছিল মুক্তিযোদ্ধা ও সিনিয়র সিটিজেন অ্যাওয়ার্ড। এ সময় সংগঠনের ট্রাস্টি চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেনকে লাইফ টাইম এচিভম্যান্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদানসহ মোট ৮ জনকে সম্মাননা ক্রেস্ট প্রদান করা হয়। আয়োজনের শুরুতে মঞ্চে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি গ্রেটার চিটাগাং এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান ইসহাক চৌধুরী। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেনারেল সেক্রেটারি মোহাম্মদ কায়সার। সমবেত জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্যদিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিকতা। সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ব্যারিস্টার মনোয়ার হোসেন বলেন, ২০১৩ সালে গ্রেটার চিটাগাং এসোসিয়েশন আত“প্রকাশ করে। ২০১৪ সালেই তাঁরা প্রথমবারের মত যুক্তরাজ্যে চট্টগ্রামের ঐহিত্যবাহী মেজবানীর আয়োজন করেন। এরপর ২০১৫ ও ২০১৮ সালে মেজবানীর আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, বছর বছর মেজবানীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির
কারণে এবার আরও বড় পরিসরে এ আয়োজন করা হয়েছে। সংগঠনের এই নেতা বলেন, মেজবান চট্টগ্রামবাসীর শত বছরের ঐতিহ্য। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্যে চট্টগ্রামবাসীর পাশাপাশি অন্যান্য জেলার লোকদের কাছেও মেজবান এখন জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। আমরা সারা বিশ্বে এই ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে চাই। মঞ্চে বিভিন্ন পর্বের সঞ্চালনায় ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম, লুনা তানজিলা, নূরুন্নবী আলী, মাসুদুর রহমান, ওসমান ফয়সাল, এন এ চৌধুরী টিংকু, মোস্তফা সাঈদ ও শহিদুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন কাউন্সিলর সৈয়দ ফিরোজ গণি, সেলিমুল হক, মীর রাশেদ আহমেদ, আরশাদ মালেক, রাজ্জাকুল হায়দার বাপ্পী, আবু নাসের, আলী রেজা, শওকত মাহমুদ টিপু, চৌধুরী জিন্নাত আলী, আক্তারুল আলম, হাসান আনোয়ার, সাজ্জাদুল ইসলাম, মোবারক হোসেন টিটু ও হেফাজুল করিম রাকিব প্রমুখ। দিনব্যাপী এই আয়োজনে মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন বিলেতের জনপ্রিয় শিল্পীরা। তাদের মধ্যে ছিলেন সৌমেন অধিকারী, লাবনী বড়ুয়া, রুবা হোসেন, সাইদা তানি, অমিত দে, লণ্ডনের জেমস খ্যাত রাজ হাসান, তাহমিনা শিফু, আখতারুল আলম, ডাঃ রুবেল সাজিদ, শ্রেয়সী দাস, ব্যাণ্ড প্যান্টাটোনিক ও নাচের দল তাল তরঙ্গ। সবশেষে শেষে ছিলো আকর্ষণীয় র্যাফল ড্র।
রোববার ২০ অক্টোবর ভিক্টোরিয়া পার্কে মুসলিম চ্যারিটি রান
অংশ নিচ্ছে ৪০টি চ্যারিটি সংস্থা: সর্বস্তরের মানুষকে অংশগ্রহণের আহবান লণ্ডন, ২৭ সেপ্টেম্বর: রোববার, ২০ অক্টোবর সকাল সাড়ে ৯টায় পূর্ব লণ্ডনের ভিক্টোরিয়া পার্কে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে একাদশতম মুসলিম চ্যারিটি রান। এতে ইস্ট লণ্ডন মসজিদ সহ প্রায় ৪০টি চ্যারিটি সংস্থা অংশগ্রহণ...