সংগঠনের সদস্যপদ অনুমোদন ও প্রতিনিধি নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ
শাখা সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে; কেন্দ্রীয় বিজিএম পেছানোর দাবি অযৌক্তিক: কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ারপার্সন
লণ্ডন, ১৩ ডিসেম্বর: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির অন্যতম বৃহৎ সংগঠন গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের বর্তমান নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে সংগঠনের সদস্যপদ অনুমোদন ও প্রতিনিধি নির্বাচনে অনিয়ম এবং?সদস্য চাঁদা নিয়ে?অস্বচ্ছতার অভিযোগ এনেছেন সংগঠনেরই একটি রিজিওনের সদস্য এবং শাখা কমিটির সভাপতি। গত ৮ ডিসেম্বর দুপরে পূর্ব লণ্ডনের বারাকা ইটারীতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের পোর্টসমাউথ শাখার সভাপতি মসুদ আহমেদ। সংগঠনের পোর্টসমাউথ শাখার পক্ষ থেকে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে পঠিত লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রের বর্তমান দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও আনা হয়। এ সময় জানুয়ারীতে অনুষ্ঠিতব্য কেন্দ্রের?বিজিএম পিছিয়ে দিয়ে আনীত অভিযোগ খতিয়ে দেখে তা সমাধানের পর বিজিএম আয়োজনের আহবান জানান নেতৃবৃন্দ।
তবে এ ব্যাপারে পত্রিকার কাছে দেয়া বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির চেয়ায়পার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান বলেছেন, শাখা সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা চলছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় বিজিএম পেছানোর দাবিকে তিনি অযৌক্তিক বলে বর্ননা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে পোর্টসমাউথ ব্রাঞ্চের সভাপতি মসুদ আহমেদ বলেন, গত কয়েকবছর ধরে কয়েকজন ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের একটা অবলম্বন হয়ে উঠেছে এই সংগঠন। সংগঠনকে জাতীয়ভাবে পরিচিত করার পরিবর্তে কয়েকজন ব্যক্তি ঘুরে ফিরে কমিটিতে স্থান দখল করে নিজেদের খেয়ালখুশি মতো সংগঠনটি চালাচ্ছেন। আর এই স্বেচ্ছাচারিতা ধরে রাখতে সংগঠনের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করছেন না তারা। লিখিত বক্তব্যে অভিযোগের বিস্তারিত তুলে জানানো হয়, আমাদের মেম্বারশিপ রিনিউ এবং নতুন মেম্বারশিপ গ্রহণের শেষ তারিখ ছিল ৩০ নভেম্বর ২০১৯ সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে যারা মেম্বারশীপের জন্য আবেদন করবেন এবং ফি পরিশোধ করবেন তারা হবেন ভোটার মেম্বার। এর পরে মেম্বার হতে পারলেও ভোটার মেম্বার হবেন না। লণ্ডনের বাইরের ব্রাঞ্চ ও অন্যান্য রিজিওনকে মেম্বারশিপ ডেডলাইনের পরে একটা নির্দিষ্ট তারিখ থাকে যার মধ্যে সেন্ট্রাল একাউন্টে সংশ্লিষ্ট রিজিওন ও ব্রাঞ্চের মেম্বারশিপ ফি পরিশোধ করতে হয়। এবার এই তারিখ ছিল ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯। সাউথ ইস্ট রিজিওনে ৩০ নভেম্বর ডেডলাইনের (সন্ধ্যা ৭ ঘটিকা) মধ্যে ২৩০৩ জন মেম্বারশিপের তালিকা ও ফি ঘোষণা করা হয়। আর ডেডলাইনের পরে (সন্ধ্যা ৮:০৫ ঘটিকা) বেডফোর্ড ব্রাঞ্চের ১১৫ জনের মেম্বারশিপ ঘোষণা করা হয়। সাউথ ইস্ট রিজিওনের মোট মেম্বারশীপের মধ্যে এক হাজার নয়শত সাতানব্বই (১,৯৯৭) জন মেম্বারের ফি ৩০ নভেম্বর ২০১৯ তারিখে ক্যাশ ও চেকের মাধ্যমে সাউথ ইস্টের তৎকালীন চেয়ারম্যান ইসবাহ উদ্দিন, সেক্রেটারি ফজলুল করিম চৌধুরী এবং ট্রেজারার সুফি সোহেল আহমদ দস্তখতসহ সমঝে নেন। অর্থাৎ এক হাজার নয়শত সাতানব্বই (১,৯৯৭) মেম্বারের জন্য উনিশ হাজার নয় শতসত্তর পাউণ্ড (১৯,৯৭০) যার মধ্যে ক্যাশ ছিল তিন হাজার আটশতনব্বই পাউণ্ড (৩,৮৯০) এবং চেক ছিল ষোল হাজার আশি পাউণ্ড (১৬,০৮০)। লণ্ডনের বাইরের ব্রাঞ্চ হিসেবে বেডফোর্ড, পোর্টসমাউথ ও মিড্লসেক্সের চারশত একুশ (৪২১) জন মেম্বারের চার হাজার দুইশত দশ পাউণ্ড পরিশোধের ডেডলাইন ছিল ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯। ৫। সাউথ ইস্ট রিজিওনের পোর্টসমাউথ ব্রাঞ্চের মেম্বারের ফি আমি মসুদ আহমদ ব্রাঞ্চের সভাপতি হিসেবে ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে জিএসসি সেন্ট্রাল ব্যাংকের একাউন্টে জমা রাখি। এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে দিন ছিল রবিবার। তাই আমি ব্যাংকিং করতে পারি নাই। আপনারা জানেন যেকোনো ডেডলাইনের দিন যদি সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্য কোনো সরকারি বন্ধ থাকে তাহলে পরবর্তী ওয়ার্কিং ডে ব্যাংকিং করলে সকল অফিস-আদালত পর্যন্ত মেনে নেয়। জিএসসিতেও এটা মানা হয়। কিন্তু নিজেদের একচেটিয়া স্বেচ্ছাচারিতা ও আধিপত্য ধরে রাখতে পরিকল্পিতভাবে আমাদের মেম্বারদেরকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। অর্থাৎ আমার মেম্বারশিপ ফি রাখা হয় কিন্তু ডেডলাইনের পরে টাকা জমা হয়েছে বলে আমাদের ৯২ জন মেম্বারদেরকে ননভোটিং মেম্বার করা হয়। আশ্চর্যের বিষয় হলো- ডেডলাইনের দিন ঘোষিত আমাদের ব্রাঞ্চ থেকে ১৩৮ জন মেম্বারের মধ্যে বর্তমান কমিটি বিশেষ করে কেন্দ্রীয় দায়িত্বশীলদের পক্ষের লোক বিবেচনা করে আমাদের ৯২ জন মেম্বারকে বাদ দিয়ে বাকি মেম্বারদের ভোটাধিকারসহ মেম্বারশিপ অনুমোদন করা হয়। এছাড়াও বেডফোর্ড ব্রাঞ্চের যাদের মেম্বারশিপ ডেডলাইনের পরে মেম্বারশীপের সংখ্যা জানিয়েছিলেন তাদের মেম্বারশিপ সেন্ট্রাল কমিটির দায়িত্বশীলরা অনুমোদন করলেন। কিন্তু আমাদের ৯২ জন মেম্বারের ভোটাধিকার হরণ করা হলো। ব্রাডফোর্ড ব্রাঞ্চের দায়িত্বশীল জনাব তৌফিক আলী মিনার মেম্বারশিপ ফি জমা দিয়েছেন ডেডলাইনের প্রায় এক বছর পরে ১১ সেপ্টেম্বর ২০২০ সালে। এই ধরণের পক্ষপাতিত্ব শুধু চ্যারিটি নিয়ম নয় সাধারণ নিয়মেরও পরিপন্থী। শুধু তাই নয় বেডফোর্ড ব্রাঞ্চের মেম্বার বলা হয়েছে ১১৫ জন। ১০ পাউণ্ড করে হলে এক হাজার একশত পঞ্চাশ পাউণ্ড হওয়ার কথা। দুই পাউণ্ড করে ব্রাঞ্চের অংশ রেখে দিলেও নয়শত বিশ পাউণ্ড হওয়ার কথা। তাহলে কোন হিসেবে ডেডলাইনের এক বছর পরে ৫১০ পাউণ্ড জমা দেয়া হলো আর কোন নিয়মে নেয়া হলো তা আমাদের বোধগম্য নয়। এছাড়া ডেডলাইনের এক বছর পরে ফি দিয়ে মেম্বারশীপ দেয়া হয় আর একদিন দেরি দেখিয়ে ৯২ জন মেম্বারের মেম্বারশীপের ভোটাধিকার কেড়ে নেয়া হলো। এটি চরম অন্যায়। আমরা এসব ব্যাপারে চিঠি লিখে সাউথ ইস্ট রিজিওনের ট্রেজারারের কাছ থেকে বা অন্য কারো কাছ থেকে কোনো সদুত্তর পাই নাই। এমনকি এসব ব্যাপারে সেন্ট্রাল কমিটিকে চিঠির কপি দেয়া হলেও কোনো উত্তর আসে নাই। বরং আমরা শুনেছি সেন্ট্রাল কমিটির মিটিংয়ে আমাদের এসব অভিযোগের ব্যাপারে আলোচনায় দুএকজন সিনিয়র দায়িত্বশীল বলেছেন, আমরা যারা এসব জানতে চেয়েছি তাদেরকে শোকজ করার জন্য। আর আমাদের চিঠি ডাস্ট বিনে ফেলার কথাও পর্যন্ত করা হয়েছে। এরা সবাইকে অবজ্ঞা আর তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে করে থাকেন। জিএসসির সম্মানিত প্যাট্রন যারা আমাদের সংগঠনের সাংবিধানিক গার্ডিয়ানও বটে। তারা সেন্ট্রাল কমিটির চেয়ারম্যান ও সেক্রেটারিকে গত ২৬ নভেম্বর ২০২২ তারিখে চিঠি লিখে সেন্ট্রাল কমিটির নির্বাচনের পূর্বে আমাদের অভিযোগ সমাধান করার জন্য বললেও এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেন নাই। আমরা আশা করবো সেন্ট্রাল কমিটির নেতৃবৃন্দ আগামী নির্বাচনের পূর্বে আপত্তিগুলো সমাধানের জন্য প্যাট্রনদের দায়িত্ব দিয়ে বিষয়গুলো সমাধান করে নির্বাচন সম্পন্ন করবেন। যদি তা না করেন তাহলে সংগঠনের ভাবমূর্তিসহ কোনো ধরণের ইমেজ ক্ষুণœ ও মেম্বাররা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদেরকে এর দায় নিতে হবে। জিএসসির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও চ্যারিটি ট্রাস্টি ড. মুজিবুর রহমান ও হেলেন ইসলাম মেম্বারশিপ ও অন্যান্য মেম্বারশীপের ফিসহ সংগঠনের আর্থিক রিপোর্ট জানতে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কেন্দ্রীয়?কমিটিতে। এর জবাবে জিএসসির সেক্রেটারি লিখেছেন তারা একটি তদন্ত কমিটি করেছেন যার রিপোর্ট ২৮ ফেব্রুয়ারীতে মিলবে। কথা হলো জানুয়ারিতে নির্বাচন করে ফেব্রুয়ারিতে রিপোর্ট পেয়ে কি লাভ। তাই আমরা নির্বাচন স্থগিত করে সম্মানিত প্যাট্রনদেরকে দিয়ে আমাদের আপত্তিগুলো তদন্ত করার দাবি জানাচ্ছি। আমরা জিএসসির দায়িত্বশীলদের প্রতি আহবান জানাতে চাই যে, আমাদের পোর্টসমাউথ ব্রাঞ্চের ৯২ জন মেম্বারের ভোটাধিকার নিশ্চিত করে ন্যায্য মেম্বারদের মধ্য থেকে সংবিধানসম্মত উপায়ে ডেলিগেট নির্বাচন করে নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য। সংগঠনের সেন্ট্রাল ব্যাংক ও রিজিওনাল ব্যাংক একাউন্ট যাচাই করে মেম্বারদের সঠিক তালিকা নির্ণয় করে সংবিধানসম্মত উপায়ে ডেলিগেট নির্বাচন করতে হবে। অন্যথায় এই নির্বাচন স্বচ্ছ হবে না এবং নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আর এটা যাতে সঠিকভাবে করা হয় তার জন্য আমরা নিয়মের ভেতর থেকে সকল পন্থা অবলম্বন করতে দ্বিধাবোধ করবো না।
এদিকে, সাউথইস্ট রিজিওনের পোর্টসমাউথ সদস্যপদ এবং?অন্যান্য বিষয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে চেয়ে?পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয়?চেয়ায়পার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান বলেন, গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জিএসসির সাউথইস্ট রিজিওনের বিজিএম অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভায় সংগঠনের সদস্যপদ নিয়ে অথবা আর্থিক অনিয়ম নিয়ে কোনো সদস্য প্রশ্ন তুলেননি। বরং উত্থাপিত রিপোর্ট সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। তিনি আরো বলেন, সাউথইস্ট রিজিওনের কার্যকরী কমিটি গঠনের পর তাদের প্রথম নির্বাহী সভায় অতিরিক্ত ১২ জন সাধারণ সসদ্য থেকে কোঅপ্ট করা হয়। এই ১২ জনের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন আহবানকারী হারুনুর রশিদ ও মাসুম আহমদ রয়েছেন। কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হবার পরবর্তীতে সাউথইস্ট রিজিওনের নির্বাহী সভায় তাদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণও ছিলো। তাই এখন তাদের ডাকা সাংবাদিক সম্মেলন প্রশ্নবিদ্ধ। এই তৎপরতাকে জিএসসির জন্য একটি কালো অধ্যায় হিশেবে বর্ণনা করে তিনি বলেন, এটি সংগঠনের জন্য অশনিসংকেত বলেই আমরা মনে করি। চেয়ায়পার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান জানান, জিএসসি কাউন্সিল ইউকে সর্বমোট ১২টি রিজিওন নিয়ে গঠিত। এরমধ্যে একটি রিজিওনের ৫টি শাখার মধ্যে একটি শাখার সদস্যপদ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির পায়তারা চলছে। আর কেন্দ্রীয় বিজিএম পিছিয়ে দেয়ার দাবি খুবই অযৌক্তিক। আমাদের কেন্দ্রীয় বিজিএম ‘ওভারডিউ’। কাজেই আমরা মনে করি এই সময়ে?ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের জন্য একটি মহল চেষ্টা করে যাচ্ছে।
সদস্যপদ অনুমোদন নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকা সম্পর্কে তিনি বলেন, সদস্যপদের চাঁদা ১০ পাউণ্ডের মধ্যে (দুই বছরের জন্য) ৪ পাউণ্ড কেন্দ্রের। তাই বাস্তব কারণেই অনেক রিজিওন জিএসসির জন্মলগ্ন থেকে তাদের অংশ রেখে আমাদেরকে আমাদের অংশ বুঝিয়ে দেয়। এর পরই কেন্দ্র সদস্যপদ অনুমোদন করে দেয়। সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের সাবেক সভাপতি নুরুল ইসলাম মাহবুব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আব্দুল কাইউম কায়সার, সাউথ ইস্ট রিজিওনের ইসি সদস্য হারুনার রশিদ, জিএসসি পোর্টসমাউথ ব্রাঞ্চের সেক্রেটারি মাসুম আহমেদ, সাহান আহমদ চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন, আহবাব হোসেন, রেজাউল করিম সিপার, কদর উদ্দিন, সৈয়দ করিম সায়েম প্রমুখ।