লণ্ডন, ২০ ডিসেম্বর: বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালকে প্রবাসীদের অর্থায়নে মানবসেবায় ‘রোলমডেল’ প্রতিষ্ঠান হিশেবে বর্ণনা করেছেন বক্তারা। এই হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বিশেষ সহযোগিতা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এক সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে এ কথা বলা হয়।
গত ১২ ডিসেম্বর সোমবার লণ্ডনের হাউস অফ পার্লামেন্টে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি হোস্ট করেন ব্রিটেনে বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত প্রথম এমপি রুশনারা আলী। তিনি বলেন, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালটি অসহায় ও দুস্থদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে যা অনুকরণীয় একটি উদ্যোগ। তিনি সম্মাননাপ্রাপ্ত সহ হাসপাতালটিতে যারা নানাভাবে সহযোগিতা করছেন তাদের সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, প্রকৃত অর্থে এইসব কাজই শ্রেষ্ঠ, যা থেকে মানুষ সরাসরি উপকৃত হয়।
অনুষ্ঠানে ১০ জন এম্বেসেডর ও চারজন কন্ট্রিবিউটরসহ ১৪ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির হাতে সম্মাননা তুলে দেয়া হয়।
রুশনারা আলী এমপি বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের মানবিক উদ্যোগে প্রবাসীদের আরও বেশী করে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সম্মিলিত ছোট-বড় সহায়তায় বাংলাদেশের সুবিধা বঞ্চিত একটি বড় অংশের জীবন বদলে যেতে পারে।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের উদ্যোগ ও অর্থায়নে দুরারোগ্য ব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসার লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল প্রতিষ্ঠিত হয়। ধারাবাহিকভাবে এটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ সেবামূলক হাসপাতালে প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ধরণের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
চ্যানেল এস এর হেড অফ প্রোগ্রাম ফারহান মাসুদ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন টিউলিপ সিদ্দিক এমপি, পপলার হারকার সিইও স্টিভ স্ট্রাইড, ইয়াং সিটি ব্যারিস্টার মার্টিং ডেভিস, জিএলএ মেম্বার উমেশ দেশাই, বাংলাদেশ হাইকমিশন লণ্ডনের পলিটিক্যাল মিনিস্টার এ এফ এম জাহিদুল ইসলাম। এছাড়া কমিউনিটির বিশিষ্টজনেরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি ব্রিটিশ-বাংলাদেশী এমপি টিউলিপ সিদ্দিক বলেন, সম্মিলিত প্রচেষ্টায় অনেক কঠিন কাজ সফলভাবে করা সম্ভব। ব্রিটেনে আমাদের অগ্রজরা অনেক চ্যালেঞ্জিং ভালো কাজ করে উদাহরণ রেখে গেছেন। বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রবাসীদের এই উদ্যোগ ও সহযোগিতা নি:সন্দেহে একটি রোলমডেল। টিউলিপ সিদ্দিক এমপি হাউস অব পার্লামেন্টে রুশনারা আলী এমপির এই উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এরকম মহৎ কাজে সহযোগিতায় প্রবাসীদের আরও বেশী করে সম্পৃক্ত হওয়া জরুরী। আগামীতে আমি যখন বাংলাদেশে যাবো- বিশেষ করে সিলেটের বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতাল দেখে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো।
এওয়ার্ডপ্রাপ্ত ১০জন এম্বাসেডর হলেন- বিশিষ্ট ক্যাটারার ও সমাজসেবক কুটি মিয়া ও মতিন রহমান, চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার চেয়ারম্যান মাহি ফেরদৌস জলিল, বিশিষ্ট ক্যাটারার ও সমাজসেবক রাজ্জাক আমীন, হেলাল তাপাদার, জুলফিকার গোলাম হোসেইন বীরানি, এশিয়ান কারী এওয়ার্ডস এর ফাউন্ডার ইয়াওর খান, ক্রয়ডন কাউন্সিলের সাবেক মেয়র কাউন্সিলার শেরওয়ান চৌধুরী, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আজাদ হোসেন। চারজন আউটস্টেন্ডিং এওয়ার্ড প্রাপ্তরা হলেন- বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালের ট্রাস্টি যথাক্রমে করিম মিয়া শামীম, মানিরুল হক, মোয়াজ্জেম উদ্দিন ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আল নাসির।
এসময় সম্মাননা প্রাপ্তরা মানবসেবায় অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত রেখে যাওয়া বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালে আগামীতেও সহযোগিতা দানের আশ্বাস দিয়ে বলেন, প্রবাসীরা সব সময় দেশের মানুষের জন্য মানবিক ও সেবামূলক কাজ করে থাকেন। অসহায় ও দুস্থদের ক্যান্সার চিকিৎসায় এই হাসপাতালটি সমন্বিত উদ্যোগ ও পরিকল্পনায় যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আগামীতে সকলের সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ সেবামূলক হাসপাতালে রুপান্তরিত করা সম্ভব।
এওয়ার্ড গ্রহণের সময়ে প্রায় সকলেই তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তারা বলেছেন, পরিবারের নতুন প্রজন্মদের ক্যান্সার এওয়ারনেস সহ হাসপাতালের চ্যারেটিবল কাজে সম্পৃক্ত করলে সহযোগিতার দ্বারটি আরও প্রশস্ত হবে।
অনুষ্ঠানে বিয়ানীবাজার ক্যান্সার ও জেনারেল হাসপাতালটির জন্য নানা সময়ে ফান্ডরাইজিং, সচেতনতা সৃষ্টি এবং সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে বিশেষ ভূমিকার জন্য ব্রিটেনের জনপ্রিয় গণমাধ্যম চ্যানেল এস-কে এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এওয়ার্ড গ্রহণ করে চ্যানেল এস এর ফাউন্ডার মাহি ফেরদৌস জলিল বলেন, শুধু সংবাদ প্রকাশ করে আমাদের দায়িত্ব শেষ নয়। মানবিক ও সেবামূলক কাজে সব সময় পাশে থাকবে চ্যানেল এস। আমাদের প্রত্যাশা এই হাসপাতালটি যেন আজীবন মানুষের সেবা দিতে পারে। হাসপাতালটির সিইও সাব উদ্দিন বলেন, কমিউনিটিতে অনেক বিত্তশালী পরোপকারী মানুষ আছেন। তারা এগিয়ে আসলে এইরকম প্রতিষ্ঠান মানবতার উজ্জ্বল উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে বিশ্বাস করি। হাসপাতালটির সাথে একজন ট্রাস্টি, এম্বাসেডর, লাইফ মেম্বার, অথবা নিয়মিত ছোট ডোনেশনের মাধ্যমে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। মার্কেটিং ডাইরেক্টর ফরহাদ হোসেন টিপু বলেন, যারা দুস্থ এবং গরীব তাদেরকে হাসপাতাল থেকে বিনা খরচে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এবং যারা জটিলভাবে আক্রান্ত তাদের প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞ বোর্ডের মাধ্যমে সুচিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হয় যাতে করে রোগীর পরিবার সঠিক জায়গায় চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে পারেন। বর্তমানে ২০জন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা চলছে। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ট্রাস্টি যথাক্রমে আব্দুস শফিক, সোহেল খান, মারুফ আহমদ চৌধুরী, নাসির উদ্দিন, আব্দুল সামাদ, আলী আবদুর রউফ, ওহিদ উদ্দিন, মেসবাহ আহমদ, রাশিদ আল মামুন হিলারী, মিসেস খান ও নিলুফার বেগম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, প্রবাসীদের বিরাট একটি অংশের অর্থ সহায়তায় প্রতিষ্ঠিত বিয়ানীবাজার ক্যান্সার এন্ড জেনারেল হাসপাতাল এর অবস্থান সিলেটের বিয়ানীবাজার পৌর শহরে হলেও এর সেবার পরিধি সিলেটসহ দেশব্যাপী বিস্তৃত। প্রতিষ্ঠানটি কোন আঞ্চলিকতা বা সিলেট অঞ্চলকেন্দ্রীক দুর্বলতা ইত্যাদিতে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে সেবা প্রদান করে আসছে। হাসপাতালটি ইতিমধ্যে প্রায় ১ লক্ষ রোগীকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে। হাসপাতালের উদ্যোগে স্থানীয় পর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধে এওয়ারনেস কার্যক্রম পরিচালনা এবং হাসপাতালের হেলথ ভিজিটররা বাড়ী বাড়ী গিয়ে প্রায় ৬৫ হাজার পরিবারে ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে স্বাস্থ্য সচেতনতা প্রদানসহ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্বাবধানে স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে। এছাড়াও করোনা মহামারী সময়ে বিনামুল্যে সরাসরি চিকিৎসা সেবা, টেলিমেডিসিন সেবা প্রদানের পাশাপাশি করোনা আইসোলেশন ইউনিট চালু করে প্রায় ২২ হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছে।
বর্তমানে হাসপাতালে দুস্থ ও অসহায় রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দানে নিয়োজিত আছেন ৪জন চিকিৎসক। এছাড়া প্রতি সপ্তাহে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা হাসপাতালে এসে সেবা দিয়ে থাকেন। এই চ্যারিটি হাসপাতালটির সকল কাজে আলাদা আলাদা বিভাগ, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অভিজ্ঞদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। প্রতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্য থেকে এইসব কাজের তথ্য ও আর্থিক হিসাব মনিটরিং এবং করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেয়া হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি