লণ্ডন, ১৭ ডিসেম্বর: একাত্তরের গণহত্যার স্বীকৃতি ও বাংলাদেশের আদালতে দণ্ডিত যুদ্ধাপরাধী, বুদ্ধিজীবী ঘাতকদের বিচারের রায় কার্যকরে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখা।
তারা বিশ্ব নেতৃন্দকে উদ্দেশ্য করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীর পক্ষে মানবাধিকার রক্ষার সবক না-দিয়ে গণহত্যা সংঘটনের অপরাধীদের বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করতে এগিয়ে আসুন।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে ১৪ ডিসেম্বর বুধবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টায় পূর্ব লণ্ডনের আলতাব আলী পার্ক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত প্রদীপ প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠান থেকে এ আহ্বান জানানো হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন আওয়ামী লীগ, সিপিবি, জাসদ, উদীচীর সহযোগিতায় অনুষ্ঠিত আয়োজনে জ্বলন্ত প্রদীপ হাতে দাঁড়িয়ে থেকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী ও তাদের স্থানীয় দোষর রাজাকার আলবদরদের হাতে নিহত শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান উপস্থিত সুধীজন। বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম শীর্ষ পরিকল্পনাকারী হিশেবে বাংলাদেশের আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্রিটেনে থাকা চৌধুরী মঈনুদ্দিনকে অবিলম্বে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরের দাবিতে এসময় অনুষ্ঠিত হয় এক প্রতিবাদ সভা। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি সৈয়দ আনাস পাশার সভাপতিত্বে ও সহসাধারণ সম্পাদক শাহ বেলালের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন নির্মূল কমিটির অন্যতম সাধারণ সম্পাদক স্মৃতি আজাদ। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের ডেপুটি হাই কমিশনার জাহিদুল ইসলাম। অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী দক্ষিণ এশীয় গণসম্মিলনের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলামনাই ইন দ্যা ইউকের সভাপতি দেওয়ান গৌস সুলতান এবং নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য ও ইউরোপীয়ান কমিটির সাধারণ সম্পাদক আনসার আহমেদ উল্লাহ।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির উপদেষ্টা হোসনা আরা মতিন, নির্মূল কমিটির সাবেক সভাপতি সৈয়দ এনামুল ইসলাম, সহসভাপতি মতিয়ার চৌধুরী, জামাল খান, নাজমা রহমান, বিশিষ্ট সাংবাদিক সারওয়ার ই আলম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুশান্ত দাশ প্রশান্ত, প্রেস সেক্রেটারী আ স ম মাসুম, পাবলিকেশন সেক্রেটারি রুমানা রাখি, কালচারেল সেক্রেটারি সেলিনা আক্তার, রিসার্চ সেক্রেটারি রোকসানা পারভিন জোসনা, জাসদ নেতা মুজিবুল হক মনি, শিক্ষাবিদ মোস্তফা কামাল মিলন, জাসদ নেতা মাহমুদুর রহমান শাহনুর, যুবনেতা সারওয়ার কবির, কমিউনিটি সংগঠক আব্দুল বাসির ও সংস্কৃতিকর্মী নজরুল ইসলাম ওকিব।
বক্তারা একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দাবি করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যাসহ বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে সংঘঠিত গণহত্যার যথাযথ বিচারের মাধ্যমেই সম্ভব প্রকৃত মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা। পৃথিবী থেকে গণহত্যা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের মত ঘটনা বন্ধ করতে হলে অতীতে ঘটে যাওয়া এমন ঘটনাগুলোর বিচার নিশ্চিতের কোন বিকল্প নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বক্তারা বলেন, কাউকে কোন উপদেশ দেয়ার আগে নিজে এটি চর্চা করতে হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার তাগিদ দেয়ার আগে একাত্তরে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া গণহত্যাসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যাগুলোর স্বীকৃতি ও বিচার সম্পন্নে সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে। তা না হলে বিষয়টি হবে ভণ্ডামীর মতো, যা নতুন করে গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের মতো ঘটনার জন্ম দেবে।
কোন কোন বক্তা হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, একাত্তরের গণহত্যার সাথে জড়িত মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি আজ যেভাবে সংঘবদ্ধ হচ্ছে, বিপরীতে পক্ষ শক্তি প্রতিনিয়ত হচ্ছে বিভাজিত। তারা আরো বলেন, রাজনৈতিক কৌশলের নামে সাম্প্রদায়িক শক্তির সাথে আপোস মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশের জন্য শুভ নয়, এটি বুঝতে হবে আমাদের রাজনীতিকদের। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি