লণ্ডন, ০৬ মে: বাঙালী অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের এবছরের সিভিক এওয়ার্ড পেয়েছেন মানবিক ও সেবামূলক কাজে সক্রিয় সাংবাদিক, কমিউনিটি সংগঠক মো. আবদুল মুনিম জাহেদী ক্যারল এবং?কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক আনোয়ারুল ইসলাম অভি। এঁরা দুজনেই লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য। উল্লেখ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, সাংবাদিকতা এবং চ্যারিটি কাজে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতিবছর একাধিক ব্যক্তিকে এই এওয়ার্ড প্রদান করা হয়। এবার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য মোট ১২ জনকে এই সিভিক এওয়ার্ড প্রদান করা হয়েছে। গত ২ মে মঙ্গলবার বিকেলে পূর্ব লণ্ডনের দ্যা আর্টস প্যাভিলিয়নে বারার স্পিকার কাউন্সিলার শাফি আহমেদ আনুষ্ঠানিকভাবে এই এওয়ার্ড তাদের হাতে তুলে দেন।
সাংবাদিক, কমিউনিটি সংগঠক মো. আবদুল মুনিম জাহেদী ক্যারল
লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বাসিন্দা মো. আবদুল মুনিম জাহেদী ক্যারল করোনা মহামারীর সময় কাউন্সিল অব মস্কস টাওয়ার হ্যামলেট্সের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। এ বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য ব্রিটেনে বাংলাদেশীদের পরিচিত মুখ সাংবাদিক মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল এবার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল সিভিক এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছেন। মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল ব্রিটেনের ইসলামিক প্রতিষ্ঠান লণ্ডন মুসলিম সেন্টার ও ইস্ট লণ্ডন মসজিদের একজন সক্রিয় সদস্য। এছাড়া তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস-এর ৫৫টি মসজিদের সংগঠন ‘কাউন্সিল অব মস্ক’-এর কোষাধ্যক্ষ। তিনি বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করছেন। ব্রিটেন থেকে প্রকাশিত অধুনালুপ্ত সাপ্তাহিক ইউরো বাংলা পত্রিকার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিজলিঙ্ক এসোসিয়েট গ্রুপের চেয়ারম্যান, সিলেটের দৈনিক জালালাবাদ সিণ্ডিকেট-এর পরিচালক, জালালাবাদ এসোসিয়েশন ইউকের প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, সিলেটের ন্যাশনাল হার্ট ফাউণ্ডেশনের ইউকে কমিটির প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারি, রেজিয়া-রহিম মেমোরিয়াল ট্রাস্ট-এর চেয়ারম্যান, রেজিয়া-রহিম গণপাঠাগার-এর প্রতিষ্ঠাতা, গোলাপগঞ্জ ইসলামিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ফুলবাড়ি ইউনিয়ন সোসাইটি ইউকে-এর প্রতিষ্ঠাতা সহ-সভাপতি, লণ্ডন-বাংলা ডটকম-এর সম্পাদক, লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্য ও দৈনিক জালালাবাদ-এর লণ্ডন ব্যুরো প্রধান ও স্টার লাইট একাডেমিসহ হিউম্যান রাইট ইউকে, বাংলাদেশী মুসলিম ইন ইউকে, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এণ্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে, গোলাপগঞ্জ হেল্পিং হ্যাণ্ডস ইউকে, গোলাপগঞ্জ উপজেলা সোশ্যাল ট্রাস্ট ইউ’কে, ট্রেনিং সেন্টারসহ বিভিন্ন সামাজিক ও মানবাধিকার সংগঠনের মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে দেশ-বিদেশে অনেক জনকল্যাণমুখী, সামাজিক ও ইসলামিক কাজ করে মানবসেবায় নিজেকে নিবেদিত করছেন। মোঃ আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল পূর্ব লণ্ডনে অবস্থিত লণ্ডন এডুকেশন ট্রাস্ট-এর একটি প্রতিষ্ঠান ‘ইকরা ইনস্টিটিউট’ নামে একটি মানসম্পন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এ প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এছাড়া তিনি বøুগেইট ফি? স্কুলের স্কুল গভর্নর ছিলেন। মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল বাংলাদেশিদের যুব সংগঠন ‘ইয়ং মুসলিম অর্গানাইজেশন ইউকে’র কর্মপরিষদ সদস্য ছিলেন। তিনি সুরমা ইয়ং রাইটার্স গ্রুপ ও নিউমুন ইয়ং রাইটার্স এণ্ড আর্টিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, সংলাপ সাহিত্য-সংস্কৃতি ফ্রন্টের প্রেসিডিয়াম মেম্বার, সংহতি সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ সাহিত্য পরিষদ, রেনেসাঁ সাহিত্য মজলিশ, মুসলিম সাহিত্য সংসদ সিলেট, মোবাইল পাঠাগার সিলেটসহ বিভিন্ন সংগঠনের দাতা ও আজীবন সদস্য। মো. আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারলের জন্ম ১৯৬৬ সালের নভেম্বর। তাঁর পিতা মো. আব্দুর রহিম জাহেদী ও মাতা রেজিয়া খানম। বাংলাদেশে তাঁর পৈতৃক নিবাস গোলাপগঞ্জ উপজেলাধীন হিলালপুরে। তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয় নিজগ্রাম হিলালপুর বরায়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ১৯৮৫ সালে তিনি পিতামাতার সাথে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তিনি সিটি এণ্ড ইস্ট লণ্ডন কলেজ, হ্যাকনি কলেজ ও সবশেষে লণ্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করেন। এই সময় তিনি স্থানীয় ইয়ূথ ক্লাবে খণ্ডকালীন কাজ ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনে দায়িত্ব পালন করেন।
কবি, সাংবাদিক ও সংগঠক আনোয়ারুল ইসলাম অভি লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারার বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম অভি দীর্ঘ দুই যুগ থেকে কমিউনিটিতে বিভিন্ন মানবিক ও চ্যারিটি কাজ, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সাংবাদিকতা ও সামাজিক সংগঠনে সক্রিয়ভাবে কাজ করে আসছেন। মানবিক, সেবা ও চ্যারিটি কাজে বিশেষ অবদানের জন্য তাকে এবার সিভিক এওয়ার্ড ২০২৩-এ সম্মানিত করা হয়েছে। আনোয়ারুল ইসলাম অভি ৫২বাংলা টিভি ও ওয়েভ পোর্টাল ৫২বাংলাটিভি ডটকম-এর সম্পাদক ও পরিচালক। একজন সৃজনশীল লেখক হিশেবেও সুপরিচিত তিনি। তার প্রকাশিত বই তিনটি। তিনি শিল্প সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক ওয়েবজিন পলল ডটকো ডট ইউকে-এর সম্পাদক। বাংলাদেশে তিনি জাতীয় দৈনিক বাংলাবাজার, দৈনিক আজকের সিলেট-এর প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করেছেন। ছাত্রাবস্থা থেকে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্র-এর বইপড়া আন্দোলনের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। লণ্ডনে প্রায় এক দশক হেলথ এণ্ড সোশ্যাল কেয়ার-এর একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে টিম লীডার হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের এনএইচএস বøাড ডোনেশন, সেইভ দ্যা চিলড্রেন, লণ্ডন এয়ার এম্বুলেন্সে চ্যারিটি ডোনার হিশেবে যুক্ত। ‘ট্রিজ ফর সিটিজ’ ব্রিটেনে গত ৩০ বছর ধরে পরিবেশ দূষণ দূর করতে বৃক্ষরোপণ অভিযান পরিচালনা করে আসছে। বিশ্বের ২১টি দেশের ১৬৮টি শহরে কার্যক্রম পরিচালনাকারী আন্তর্জাতিক এই সংগঠনে তিনি এ বছর থেকে স্বেচ্ছাসেবী হিশেবে কাজ শুরু করেছেন। উল্লেখ্য, বৃক্ষরোপণ, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি এবং শহুরে ও কমিউনিটি বনায়ন সম্প্রসারণ ও পরিচর্যাসহ সামগ্রিক সবুজায়নের কাজের জন্য টাওয়ার হ্যামলেটস টানা দ্বিতীয় বছরের জন্য ‘বিশ্বের বৃক্ষের শহর’ হিশেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এছাড়া ব্রিটিশÐবাংলাদেশী প্রজন্মদের সমন্বয়ে গঠিত বাংলাদেশে ‘সবুজে হাসি সবুজে বাঁচি’ প্রকল্পের মাধ্যমে অস্বচ্ছল পরিবার ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষরোপণ এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচলনা করছেন আনোয়ারুল ইসলাম অভি। এই প্রকল্পে ব্রিটিশ-বাংলাদেশী প্রজন্মের ৫০ জনেরও বেশী তরুণ সম্পৃক্ত রয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয় আনোয়ারুল ইসলাম অভি প্রায় এক যুগ থেকে ব্রিটেনে মুসলমানদের দুই ধর্মীয় উৎসবে ঈদের ছুটির দাবী নিয়ে লেখালেখি করছেন। ২০২২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে এ আন্দোলনের ক্যাম্পেইনের সমন্বয়কের দায়িত্বে থেকে কমিউনিটিতে সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাজ করছেন। যুক্তরাজ্যে বাংলাভাষিদের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠন সংহতি সাহিত্য পরিষদের উদ্যোগে ‘সংহতি কবিতা উৎসব‘ ও যুক্তরাজ্যবাসী কবি-লেখকদের প্রকাশিত গ্রন্থ নিয়ে সংহতির ‘লণ্ডন বইমেলা’ আয়োজনে আনোয়ারুল ইসলাম অভি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। তিনি দীর্ঘদিন সংগঠনের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিশ্রæতিশীল, মেধাবী চিত্রশিল্পী লেখক, কবি, সাহিত্যিক ও সংগঠকদের সহযোগিতা দিতে ও অনুপ্রেরণামূলক চর্চায়?উৎসাহ যোগাতে ২০০৯ সালে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির সংগঠন পলল-এর প্রতিষ্ঠাতা তিনি। আনোয়ারুল ইসলাম অভি তাঁর পিতামাতার নামে প্রতিষ্ঠা করেছেন সমছুল-করিমা ফাউণ্ডেশন। অন্ধকারে আলো শ্লোগান নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে সমছুল-করিমা ফাউণ্ডেশন বিভিন্ন মানবিক, শিক্ষা-শিক্ষক সম্পর্কিত এবং সমাজসেবামূলক ধারাবাহিক নিজস্ব প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ করছে। তিনি এর প্রধান নির্বাহী। এছাড়া শিক্ষকদের কল্যাণে যুক্তরাজ্যে প্রতিষ্ঠিত ‘টি আলী স্যার ফাউণ্ডেশন-এর অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা তিনি। মূলত ফাউণ্ডেশনটি বাংলাদেশে অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকদের সহায়তা ও সার্বিক কল্যাণের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত। আনোয়ারুল ইসলাম অভি সিলেট জেলার বিয়ানীবাজার উপজেলার কমলা-আনারসখ্যাত ঐতিহ্যবাহি অঞ্চল জলঢুপ-এর ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে ১৯৯৮ সালে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেন নয়ন সাহিত্য পরিষদ। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক তিনি। সংগঠনের উদ্যোগে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হয় জলঢুপ অঞ্চলের একটি গবেষণামূলক তথ্যগ্রন্থ ‘জলঢুপ ইতিহাস ঐতিহ্য।’ তিনি জলঢুপ ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট ইউকের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি। সংগঠনটি নিজ অঞ্চলের শিক্ষা ও আর্থ সামাজিক কল্যাণ এবং যুক্তরাজ্যে নবীন-প্রবীণদের মধ্যে সামাজিক ও মানবিক বন্ধন সুদৃঢ় করতে কাজ করছে। আনোয়ারুল ইসলাম অভির বাংলাদেশে পৈতৃক নিবাস সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার জলঢুপের বড়বাড়ি। সহধর্মিণী ও তিন মেয়ে নিয়ে লণ্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। পিতা প্রয়াত অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. সমছুল ইসলাম ও মা করিমা খানম।