বাম থেকে বর্তমান কমিটির প্রথম সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন ও সহ সভাপতি আবুল হাশেম, মজম্মিল আলী, হরমুজ আলী এবং?সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী
উপর থেকে রিয়াজ উদ্দিন, আ স ম মিসবাহ, শাহ শামীম আহমদ ও আবদুল আহাদ চৌধুরী।
পত্রিকা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ০১ মে: সুলতান মাহমুদ শরীফ ও সৈয়দ সাজিদুর রহমানের ফারুকের নেতৃত্বাধীন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটির এক যুগ পার হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে যুক্তরাজ্যের নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটি দাবি করেছেন। শেখ হাসিনা নতুন কমিটি ঘোষণা করবেন বলেও বিভিন্ন সময়ে শোনা গেলেও নতুন কোনো কমিটি আর হয়নি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নেতা বলেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগই একমাত্র সংগঠন যেখানে বিগত এক যুগেও কোনো সম্মেলন হয়নি। তাঁরা বলছেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এই কমিটির মেয়াদকালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন হয়েছে চারবার। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ সাধারণ সম্পাদক পদে দুইবার করে দুজন দায়িত্ব পালন করেছেন। কিন্তু যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটির কোনো রদবদল হয়নি। নেতা-কর্মীরা এখনও তাকিয়ে আছেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের দিকে।
২০১১ সালের ২৯ জানয়ারি লণ্ডনের হিলটন হোটেলে সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করা হয়েছিলো ৭১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির। যার সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরীফ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক। নেতা-কর্মীরা বলছেন, দীর্ঘ দায়িত্ব পালন করা সভাপতি সুলতান মাহমুদ শরিফ গত বেশ কয়েক বছর যাবত শারীরিকভাবে অসুস্থ। করোনায় কমিটির পাঁচ জন সহ-সভাপতিসহ বেশ কয়েকজন নেতৃবৃন্দ মৃত্যুবরণ করেছেন। শূণ্য হওয়া পদগুলো পূরণ করা হয়নি। আবার কমিটির কেউ কেউ নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে দায়িত্ব পালন করতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে বাংলাদেশে স্থায়ী হয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কার্যত কোনো পূর্ণাঙ্গ কমিটি আর বহাল নেই। রেওয়াজ আছে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা নিজে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করেন। তার সিদ্ধান্ত ছাড়া কখনোই কমিটি হয় না। বিগত কয়েক বছর যাবত যখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য আসেন, তখনই যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সম্মেলন ও নতুন কমিটি গিয়ে নতুন করে আগ্রহ দেখা দেয়। প্রধানমন্ত্রী এবারের আগমন ঘিরেও একই রকম প্রত্যাশা ও উতসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কমিটির বিষয়ে শেখ হাসিনা এবং নেতা-কর্মীদের কথা শুনবেন এবং সম্মেলনের বিষয়ে একটি দিক নির্দেশনা দিয়ে যাবেন বলে প্রত্যাশা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেন, দলের মধ্যে গণতন্ত্রের স্বার্থ্যে সম্মেলন ও নতুন কমিটি হওয়াটা জরুরি। দলের মধ্যে যোগ্য অনেকেই আছেন সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে নতুন করে ঠেলে সাজাতে পারবেন। দলের জন্য ভালো ভ‚মিকা রাখতে পারবেন। কারণ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৬৫টি শাখা সংগঠনের মধ্যে গত ১৩ বছরে হাতে গোনা কয়েকটি শাখার সম্মেলন করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে শাখাগুলোর নিয়মিত সম্মেলন করা হয়নি। যার ফলে সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দ্ব›দ্ব ও স্থবিরতা বিরাজ করছে। নেতাকর্মীদের অভিযোগ- একটি গ্রæপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাদেরকে দেখা করারও সুযোগ দেন না। তাদের মতে, নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার এবং কথা বলার সুযোগ পেলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরো শক্তিশালী করা, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও নানামুখী সমস্যা তুলে ধরতে পারতেন নেত্রীর কাছে। তাই অধিকাংশ নেতাকর্মীর দাবি, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগকে আরও শক্তিশালী করতে দীর্ঘদিন থেকে বঞ্চিত, দলের জন্য নিবেদিত মাঠের কর্মীদের মাধ্যমে নতুন কমিটি করা হোক। এদিকে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সম্মেলন হলে নতুন কমিটিতে কারা দায়িত্ব পেতে পারেন তা নিয়েও চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। নতুন সভাপতি হিসাবে যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির প্রথম সহ সভাপতি জালাল উদ্দিন, সহ সভাপতি আবুল হাশেম, মজম্মিল আলী ও হরমুজ আলী এবং বর্তমান সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ আহমেদ চৌধুরী। অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে এতদিন বর্তমান যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী শক্তিশালী প্রার্থী ছিলেন। কিন্তু আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পেয়েছেন। ফলে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় পদে তাঁর আর থাকার সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। যার ফলে সাধারণ সম্পাদক পদে এখন যাদের নাম উচ্চারিত হচ্ছে তাদের মধ্যে আছেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নঈম উদ্দিন রিয়াজ, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল আহাদ চৌধুরী, দফতর সম্পাদক শাহ শামীম আহমেদ, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক আ স ম মিসবাহ। তবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য তুলনামূলক তরুণ এবং যিনি সার্বক্ষণিক দলকে সময় দিতে পারবেন এমন কাউকে চান নেতা-কর্মীরা।