পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ১৫ মে: জার্মানিতে শরণার্থীর সংখ্যা বেড়ে চলায় দেশটির পৌর স্তরের প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে। ১০ মে চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠকে চূড়ান্ত সমাধানসূত্র সম্ভব না হলেও ফেডারেল সরকার বাড়তি অনুদান দিতে রাজি হয়েছে। শরণার্থীর ঢল সত্তে¡ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনো সম্মিলিতভাবে সংকট সামলাতে ব্যর্থ হচ্ছে। পারস্পরিক সংহতির ভিত্তিতে আগত শরণার্থীদের বণ্টনের ক্ষেত্রেও কোনো ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সেই সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে জার্মানির মতো দেশ শরণার্থীর ঢল সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিষয়টি দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতেও উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। জার্মানির ফেডারেল সরকারের শরণার্থীসংক্রান্ত নীতি ও সিদ্ধান্তের প্রভাব আর মানতে চাইছে না রাজ্য সরকারগুলো। ১০ মে জার্মানির চ্যান্সেলর ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের এক বৈঠকে দলমত-নির্বিশেষে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারের মধ্যে চরম মতপার্থক্য স্পষ্ট হয়। এমনকি জার্মানির জোট সরকারের প্রধান শরিক দল এসপিডির মুখ্যমন্ত্রীরাও চ্যান্সেলর শলৎজের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বচসা করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত আপস মীমাংসার প্রশ্নে ঐকমত্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। জার্মানির রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীরা শরণার্থী গ্রহণ, তাদের আশ্রয় ও সমাজের মূল স্রোতে তাদের সম্পৃক্ত করার উদ্যোগের বিপুল ব্যয় নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বিশেষ করে পৌর স্তরে সেই দায়িত্ব সামলাতে গিয়ে অনেক শহর, জেলা ও গ্রাম কর্তৃপক্ষ নাজেহাল হচ্ছে বলে তাঁরা অভিযোগ করেন। তাঁরা সাফ জানিয়ে দেন, ফেডারেল সরকারের বাড়তি আর্থিক সহায়তা ছাড়া সেই গুরুদায়িত্ব সামলানো আর সম্ভব নয়। চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের সরকার রাজ্য ও পৌর কর্তৃপক্ষের সেই দাবি গ্রাহ্য করছিল না। বুধবারের দীর্ঘ বৈঠকের পর নতিস্বীকার করে ফেডারেল সরকার চলতি বছর ১৬টি রাজ্যের জন্য বাড়তি ১০০ কোটি ইউরো মঞ্জুর করেছে। সেই সঙ্গে ফেডারেল ও রাজ্য সরকারগুলো শরণার্থীসংক্রান্ত নীতির কাঠামো সংস্কারের লক্ষ্যে ধাপে ধাপে কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করতে প্রক্রিয়া গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জার্মানিতে শরণার্থীর ঢলের ক্ষেত্রে কোনো ধারাবাহিকতা না থাকায় বেশ কিছু সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কখনো বেশি শরণার্থীর জন্য প্রস্তুতি নিলে বাস্তবে তাদের সংখ্যা কম থাকছে। যেমন চলতি বছর জানুয়ারি মাসে ফেডারেল কর্তৃপক্ষ প্রায় এক লাখ দুই হাজার শরণার্থীর আশ্রয়ের আবেদন গ্রহণ করেছে, যা গত বছর একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭৮ শতাংশ বেশি। আবার প্রস্তুতির মাত্রা কমালে হঠাৎ ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে? রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তাই একটি ডায়নামিক (গতিশীল) নীতির দাবি করছেন। এককালীন অনুদানের বদলে শরণার্থীদের জন্য মাথাপিছু ব্যয় স্থির করে বাস্তব সংখ্যা অনুযায়ী ফেডারেল সরকারের আর্থিক সহায়তা চাইছেন তাঁরা। আপাতত সেই দাবির বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে? প্রথমত সব রাজ্যকে একটি ডিজিটাল কাঠামো গড়ে তুলতে হবে, যার মাধ্যমে আগত শরণার্থীসংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য আদান-প্রদান করা সম্ভব হবে। তাছাড়া ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর হাতে কিছু বাড়তি ক্ষমতা তুলে দিয়ে বিচার ও অভিবাসন কর্তৃপক্ষের মধ্যে তথ্য বিনিময় আরও সহজ করা হবে? তারপর আগামী নভেম্বর মাসে চূড়ান্ত সমাধানসূত্র অর্জনের চেষ্টা চালানো হবে। সংসদে বিরোধী পক্ষের মতে, এত বিলম্বের কারণে ২০২৪ সালে নতুন কাঠামো কার্যকর করা যথেষ্ট কঠিন হবে। পৌর স্তরের প্রশাসনগুলোকেও তত দিন বাড়তি চাপ সামলাতে হবে।