লণ্ডন, ১৫ মে: সারা বিশ্বের মতো যুক্তরাজ্যের মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েছে। পরিস্থিতি এত সঙিন যে সাত লাখ মানুষ গত মাসে বাড়ির মর্গেজ কিংবা ভাড়া দিতে পারেননি। সব মিলিয়ে ২০ লাখ পরিবার কোনো না কোনো বিল পরিশোধ করতে পারেনি। সেই সঙ্গে ১ কোটি ৬৬ লাখ পরিবারকে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহে অন্তত একটি খাতে ছাড় দিতে হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে ‘হুইচ?’ নামের ভোক্তা সংগঠনের বরাতে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যে ভাড়াটেদের মধ্যে ভাড়া দিতে না পারার হার অনেক বেশি। হুইচের জরিপে যাঁরা অংশ নিয়েছেন, তাদের প্রতি ২০ জন ভাড়াটের মধ্যে ১ জন ভাড়া দিতে পারেননি। এই পরিস্থিতিতে ব্যাংক অব ইংল্যাণ্ড আবারও নীতি সুদের হার বাড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত বৃহস্পতিবার আরও শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশ সুদ বৃদ্ধির মধ্য দিয়ে নীতি সুদহার হয়েছে এখন ৪ দশমিক ৫ শতাংশ। এটি টানা ১২ বার নীতি সুদ হার বৃদ্ধির ঘটনা। সুদের হার বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই বন্ধকি ঋণগ্রহীতা ও ভাড়াটেদের পক্ষে ঋণ করা কঠিন হয়ে গেছে। এখন আবার সুদের হার বৃদ্ধি কারণে মর্গেজ গ্রহিতাদের বাড়তি ১২ বিলিয়ন পাউণ্ড গুনতে হবে। সেই সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বাড়িভাড়াও বেড়েছে। গড় বাড়িভাড়া রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে বলে দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে। রাইটমুভ নামের সম্পদবিষয়ক এক ওয়েবসাইটের সূত্রে গার্ডিয়ান এ তথ্য দিয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সামগ্রিকভাবে ২০ লাখ পরিবার অন্তত একটি বন্ধক ও ঋণের কিস্তি, বাড়িভাড়া বা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধ করতে পারেনি। অনলাইনে পরিচালিত জরিপের ভিত্তিতে এ তথ্য দিয়েছে হুইচ। তবে গত বছরের এপ্রিল মাসে পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ ছিল বলে জানিয়েছে গার্ডিয়ান। সেবার প্রায় ২৫ লাখ মানুষ বাড়িভাড়া, ঋণের কিস্তি বা ক্রেডিট কার্ডের বিল পরিশোধে ব্যর্থ হয়েছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৫৯ শতাংশ বা দেশের মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে আনুমানিক ১ কোটি ৬৬ লাখ পরিবার গত মাসে ব্যয় মেটাতে গিয়ে অন্তত একটি খাতে ছাড় দিয়েছে বলে জরিপে জানা গেছে। জ্বালানির উচ্চমূল্যের কারণে জেরবার যুক্তরাজ্যের মানুষ। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। গত বছর মূল্যস্ফীতি ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। এই বাস্তবতায় অনেক মানুষ খাদ্য ব্যয় কমাতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে গার্ডিয়ানের আরেক সংবাদে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির এক সমীক্ষার সূত্রে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের মানুষ চলতি বছর অপ্রয়োজনীয় ব্যয় না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নতুন বছরে মানুষ যেমন নানা সংকল্প করে, অনেকটা সেভাবেই ব্যয় হ্রাস করার পণ করেছেন দেশের মানুষ। বিভিন্ন সংস্থার পূর্বাভাস, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের গড় প্রকৃত মজুরি কমে যাবে। এতে আগামী দুই বছর তাঁদের জীবনযাত্রার মান কমবে অন্তত ৭ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি চলতে পারে। ফলে, গত আট বছরে দেশটির যে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে, তা অনেকটাই ¤øান হয়ে যাবে। এদিকে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে যুক্তরাজ্যে ক্রেতার বেশে দোকানে প্রবেশ করে টুকিটাকি জিনিস চুরির ঘটনা বেশ বেড়ে গেছে। এই চুরির হার অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি। দ্য ইনডিপেনডেন্ট-এর এক খবরে এমন কথা বলা হয়েছে। ট্র্যাসি ক্ল্যামেন্তস একটি বিপি কনভেনিয়েন্স স্টোর পরিচালনা করেন। তিনি দাবি করেছেন, ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে এখন যুক্তরাজ্যেই সবচেয়ে বেশি চুরি হচ্ছে। আর এর জন্য জনসাধারণের জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাওয়াকেই দায়ী করেছেন তিনি। কান্টার নামে একটি মার্কেট রিসার্চ ফার্মের জরিপে বলা হয়েছে, গড়পড়তা একটি সাধারণ পরিবারের বার্ষিক মুদি খরচ মাত্র এক বছরেই গড়ে ৮৩৭ পাউণ্ড পর্যন্ত বেড়ে গেছে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা লাখ টাকারও বেশি। দুধ, ডিম ও চিজের মতো পণ্যগুলোর দাম হু হু করে বাড়ছে। এ অবস্থায় চুরি বেড়ে যাওয়ায় দুশ্চিন্তার মধ্যে আছেন ট্র্যাসির মতো ব্যবসায়ীরা। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে ২০০৭ সালের কথা মনে পড়ছে তাঁর। সে সময় অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হলে এ ধরনের চুরি বেড়েছিল বলে জানান তিনি। সরকারি জরিপ বলছে, ইংল্যাণ্ড ও ওয়ালেসের মুদিদোকানগুলোতে চুরির হার ২২ শতাংশ বেড়েছে। গত বছর প্রায় ৭৯ লাখ চুরির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ২০১৬-১৭ সালের তুলনায় যা প্রায় ৫০ লাখ বেশি।
আমাদের রাজনৈতিক আন্দোলনে ভাসানী এখনো প্রাসঙ্গিক
গাজীউল হাসান খান ♦ সামন্তবাদী কিংবা পুঁজিবাদী, আধিপত্যবাদী কিংবা উপনিবেশবাদী— যেখানেই যেকোনো ধরনের অপশাসন ও শোষণ দেখেছেন, সেখানেই প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে গর্জে উঠেছেন আজন্ম সংগ্রামী মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। খোলা তরবারির মতো ঝলসে উঠেছে তাঁর দুটি হাত। কণ্ঠে উচ্চারিত...