পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ২২ মে: বিতর্কিত কাণ্ড করে আবারও তুমুল সমলোচনার মুখে পড়েছেন হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রেভারম্যান। তিনি মন্ত্রীসভার আরচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন কি-না, তা তদন্তের দাবি উঠেছে। স্পিডিং এর জরিমানা এড়াতে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়ান টু ওয়ান স্পিড এওয়ারনেস কোর্স (গাড়ির গড়িসীমা বিষয়ক সচেতনতা কোর্স) আয়োজনের চেষ্টা চালিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সানডে টাইমের খবরে বলা হয়, গত বছরের গ্রীষ্মে গাড়ির গতিসীমা লঙ্ঘন করে জরিমানার টিকিটি পেয়েছিলেন সুয়েলা ব্রেভারম্যারন। তাঁর লাইসেন্সে তিন পয়েন্ট দেয়া হয়। পাশাপাশি তাঁকে আর্থিক জরিমানা করা হয়।
আর্থিক জরিমানা এড়াতে চাইলে তাঁকে একদিনের স্পিড এওয়ারনেস কোর্স (গাড়ির গতিসীমা বিষয়ক সচেতনতা কোর্স) করার সুযোগ দেয়া হয়। সাধারণত গতিসীমা লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্তদের সম্মিলিতভাবে দিনব্যাপী এই প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। কিন্তু সুয়েলা ব্রেভারম্যান অন্যলোকদের সাথে ওই সম্মিলিত ক্লাসে যেতে রাজি ছিলেন না। তখন সরকারের এটর্নি জেনারেল ছিলেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান। তিনি ক্ষমতার অপব্যহার করে তাঁর জন্য ব্যক্তিগতভাবে ওয়ান টু ওয়ান গাড়ির গতিসীমা বিষয়ক সচেতনতা কোর্স আয়োজনের অনুরোধ করেছিলেন। কোর্স প্রদানকারীরা কেবল সুয়েলা ব্রেভারম্যানের জন্য কোর্স আয়োজনে অস্বীকৃতি জানায়। সুয়েলা ব্রেভারম্যান বিষয়টিতে কেবিনেট অফিসের সাহায্য চেয়েছিলেন। খবরে বলা হয়, শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে সুয়েলা ব্রেভারম্যান কোর্সের পরিবর্তে জরিমানার অর্থ প্রদান করেন এবং লাইসেন্সে তিন পয়েন্ট গ্রহণ করেন। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, গতিসীমা লঙ্ঘন করে সুয়েলা ব্রেভারম্যান যে অপরাধ করেছেন সেটি তাঁর সরকারী কাজের জন্য কোনো সমস্যা নয়। সমস্যা হচ্ছে তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে ওয়ান টু ওয়ান কোর্স আয়োজনের চেষ্টা করেছেন। যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীসভার আচরণবিধিতে জনসেবকের ক্ষমতা ব্যবহার করে ব্যক্তিগত কোনো সুবিধা আদায়ের সুযোগ নেই। আর সুয়েলা ব্রেভারম্যান এটর্নি জেনারেল হিসেবে কেবিনেস অফিসকে ব্যবহার করে ব্যক্তিগত সুবিধা নিতে চেয়েছেন। বিরোধী দলগুলোর পক্ষ থেকে এ ঘটনায় তদন্তের দাবি করা হয়েছে। সুয়েলা ব্রেভারম্যান মন্ত্রীসভার আচরণবিধি লঙ্ঘন করে থাকলে তাঁর হোম সেক্রেটারির পথ থেকে বহিস্কারের দাবি উঠেছে। কিন্তু সুয়েলা ব্রেভারম্যান বিষয়টিতে বেশ কৌশলী অবস্থান নিয়েছেন। বিবিসিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোর্স আয়োজনের প্রসঙ্গটি এড়িয়ে বলছেন, গাড়ির গতিসীমা লঙ্ঘণের দায়ে তিনি জরিমানা দিয়েছেন এবং লাইসেন্সে তিন পয়েন্ট পেয়েছেন। ফলে বিষয়টির সেখানে ইতি ঘটেছে। প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বিষয়টি আগে জানতেন না বলে প্রতিয়মান হয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ নিয়ে তাঁর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টার পরামর্শ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। কট্টর ডানপন্থী এবং অভিবাসন বিরোধী হিসেবে পরিচিত সুয়েলা ব্রেভারম্যান ২০২০ সালের ফেব্রæয়ারি থেকে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারের এটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লিজ ট্রাস প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাঁকে হোম সেক্রেটারি পদে উন্নীত করেন। ব্যক্তিগত ইমেইল থেকে সরকারী নথি শেয়ার করার দায় নিয়ে তিনি গত বছরের ১৯ অক্টোবর হোম সেক্রেটারির পথ থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রী হয়ে তাঁকে ৬ দিনের মাথায় আবারও হোম সেক্রেটারি পদে ফিরিয়ে আনেন। শরণার্থী ও অভিবাসন নিয়ে নানা বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে সমালোচিত হয়ে আসছেন সুয়েলা ব্রেভারম্যান।