পত্রিকা ডেস্ক:
লন্ডন, ২২ মে: মূল দৃষ্টি ছিল মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর দিকে। বিএনপির শীর্ষ নেতারাও ছিলেন দ্বিধাদ্বন্দে। আরিফ কী করেন- সেটি ছিল বড় প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের সুরাহা করে দিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি এবারের সিটি নির্বাচনে প্রাথী হচ্ছেন না। জানিয়ে দিলেন; ‘যতদিন জীবিত থাকবেন দলের সঙ্গেই থাকবেন।’ তার এই সিদ্ধান্তকে প্রশংসায় নিয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড। কারণ; সিলেটকে নিয়ে ছিল যত দুশ্চিন্তা।
নেতারা জানিয়েছেন, জাতীয়নর্বাচনের আগে বিগত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয় তুলে নেন বিএনপি’র মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। এতে জাতীয় নির্বাচনেরও ‘কিঞ্চিত’ বৈধতাও হয়ে গিয়েছিল। এ জন্য এবারো ফোকাসে ছিলেন আরিফ। তারা জানান, আরিফ মেয়র হিসেবে একজন জনসম্পৃক্ত নেতা। তার গ্রহণযোগ্যতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। নগরের মানুষের কাছেও তিনি দায়বদ্ধ ছিলেন। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে এসে আরিফ নির্বাচন না করার ঘোষণা দিয়েছেন। আরিফের ঘোষণার পর একে একে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাচ্ছেন বিএনপি’র কাউন্সিলর প্রার্থীরা। রোববার থেকে তারা ঘোষণা দেয়া শুরু করেছেন। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন মানবজমিনকে জানিয়েছেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়র প্রার্থী না হওয়ার বিষয়টি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
এদিকে, গোটা দেশবাসী তাকিয়ে ছিলেন তার সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি নির্বাচনে যাচ্ছেন না। এখন একে একে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সরে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন ‘বিএনপি’র ঘোষণা হচ্ছে; এই সরকারের অধীনে দল নির্বাচনে যাবে না। আমরা দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দিচ্ছি না। এমনকি স্বতন্ত্র হিসেবে যারা প্রার্থী হবেন তাদেরকে চিরতরে বহিষ্কার করা হবে। আমরা বহিষ্কার করতে চাই, তার আগে প্রার্থীরা নিজ থেকে সরে গেলে আমাদের জন্য ভালো হয়।’ সিলেটে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের চার বারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি’র সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী। মেয়র আরিফের ঘোষণার দু’দিন আগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। দলের সিদ্ধান্ত মেনে তিনি প্রার্থী হচ্ছেন না বলে জানিয়ে দেন। রোববার পর্যন্ত আর কেউ এভাবে প্রকাশ্য ঘোষণা না দিলেও বিএনপি নেতারা জানিয়েছেন, প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে ছিলেন এমন ১০-১২ জন নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। টুকেরবাজারের একটি ওয়ার্ড থেকে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাব হোসেন সুমন। তিনি প্রচারণা চালালেও শেষ মুহূর্তে নির্বাচন থেকে সরে এসেছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা আমির হোসেনও প্রার্থী হচ্ছেন না। নেতারা জানান, আমির হোসেন প্রার্থী হচ্ছেন না। দলের সিদ্ধান্ত মেনে রোববারই তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। এ ছাড়া ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি নেতা সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিনও প্রার্থী হচ্ছেন না। তিনি ভোটের মাঠ থেকে সরে গেছেন।
সিলেট সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিজয়ী এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থী ছিলেন বিএনপি ঘরানার। অনেকেরই কোনো পদপদবি নেই। এ কারণে তারা মাঠে থাকছেন। বিএনপি নেতারা তাদের নিয়ে তেমন চিন্তা করছেন না। তবে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী, বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী এডভোকেট শাহনারা বেগম শাহনাজ ও জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সালেহা কবির শেপী এখনো ভোটের মাঠে। বিএনপি’র মহানগর নেতারা জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলা হয়েছে। এমনকি সিনিয়র নেতারাও তাদের নিয়ে বসেছেন। আজ-কালের মধ্যে তাদের তরফ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে নেতারা মনে করছেন। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি। মহানগর বিএনপি’র কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই করেছেন। কয়েস লোদী সরলেও তিনি সরছেন না। তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে এখনো ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থিত কর্মীর। বোববার বিকালে গণমাধ্যমকে শামীম জানিয়েছেন, ‘আমি কী করছি সবাই জানে। এখানে প্রকাশ্যে বলার কিছুই নেই। এলাকার মানুষের ‘চাহিদার’ বিষয়টিও তার মাথায় রয়েছে বলে জানিয়েছেন।’ এদিকে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, ‘আমরা সবাইকে পরিস্থিতি বুঝাচ্ছি। সবার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। অনেকেই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখছেন। আজ-কালের মধ্যে নির্বাচনের মাঠ থেকে অনেক নেতাই সরে যাবেন আশাবাদী তিনি।’ ইমদাদ জানান, ‘যারা দলের এই ক্রান্তিকালে সরবে না, তারা আজীবনের জন্য বহিষ্কার হবে। বিএনপিতে থাকার কোনো অধিকারই তাদের থাকবে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।’