পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ২৯ মে: খাদ্যের মূল্যস্ফীতির হার অনেক বেড়ে যাওয়ায় এবার যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীরা মাঠে নেমেছেন। সুপারমার্কেটগুলোর সঙ্গে তাঁদের আলোচনার বিষয় হচ্ছে, এরা যেন নিজে থেকে পণ্যের দাম বেঁধে দেয়। তবে সরকার স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, পণ্যের দাম বাধ্যতামূলকভাবে বেঁধে দেওয়া হবে না।
দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, খাদ্য ও পানীয়ের দাম ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উঠে যাওয়ার কারণে দেশটির রাজস্ব বিভাগ ও সুপারমার্কেটগুলোর মধ্যে আলোচনা চলছে, কিছু মৌলিক পণ্যের সর্বোচ্চ দাম বেঁধে দেওয়া যায় কি না। তবে সেটা চাপিয়ে দেওয়া হবে না, সুপারমার্কেটগুলোকে চাইলে স্বেচ্ছায় তা করতে পারে। এসব পণ্যের মধ্যে রুটি ও দুধ থাকতে পারে।
এভাবে পণ্যের দাম বেঁধে দেওয়ার উদ্যোগ দেখে অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যুক্তরাজ্য ১৯৭০-এর দশকের মূল্য নিয়ন্ত্রণের যুগে ফেরত যাচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটা বাধ্যতামূলক কিছু নয়, সুপারমার্কেটগুলোর ইচ্ছার ওপর তা ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসির সানডে অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্টিভ বার্কলে বলেছেন, ‘আমি বুঝতে পারছি, সরকার গঠনমূলকভাবে সুপারমার্কেটগুলোর সঙ্গে কাজ করছে, কীভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি নিয়ে মানুষের প্রকৃত উদ্বেগ আমলে নেওয়া যায়। তবে সেটা করতে গিয়ে সরকার সরবরাহকারীদের বিষয়টিও মাথায় রাখছে।’
এর আগে ফরাসি সরকারও এমন উদ্যোগ নেয়। দেশটির সরকার ও খাদ্য সরবরাহকারীরা প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য কিছু পণ্যের ‘সম্ভাব্য সবচেয়ে কম দাম’ বেঁধে দিয়েছে। এই ঐকমত্যের ভিত্তিতে খুচরা বিক্রেতারাই ঠিক করছেন, কোন কোন পণ্য এর আওতায় আসবে, সেগুলোর প্যাকেটে আবার বিশেষ লোগো থাকবে।
সম্প্রতি অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্টের সঙ্গে দেশটির সুপারমার্কেট চেইনের বৈঠকে এ নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে, অর্থাৎ কীভাবে কী করা যায়। একটি বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়েছে, যে কর্মসূচিতে সুপারমার্কেটগুলো অংশ নিতে পারে।
সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে দেশের পরিবারগুলো কেমন চাপে আছে, আমরা তা জানি। সামগ্রিকভাবে মূল্যস্ফীতির হার কমে এলেও খাদ্যদ্রব্যের দাম এখনো বাড়তি। সে জন্য এ বিষয়ে আর কী করা যায় তা বের করতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী খাদ্যশিল্পের সঙ্গে বৈঠক করছেন।
মুখপাত্র আরও বলেন, ‘পরিবারগুলোকে সহায়তা করতে ৯৪ বিলিয়ন (৯ হাজার ৪০০ কোটি) পাউণ্ডের প্যাকেজ সহায়তা এখনো চালু আছে। পরিবারগুলো সেখান থেকে গত বছর গড়ে ৩ হাজার ৩০০ পাউণ্ড করে পেয়েছে, এবারও তা-ই পাবে।’
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এলেও খাদ্য ও অ্যালকোহলহীন পানীয়ের মূল্যস্ফীতি ১৯ শতাংশে উঠেছে, পশ্চিম ইউরোপে যা সর্বোচ্চ।
খাদ্যের মূল্যস্ফীতির কারণে যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষ খাবার কমাতে বাধ্য হচ্ছেন। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, সে দেশে সেভ দ্য চিলড্রেনের মতো এনজিওকে তৎপর হতে হয়েছে। সেভ দ্য চিলড্রেনের কর্মীরা জানাচ্ছেন, যুক্তরাজ্যের পরিবারগুলো ফল ও শাকসবজি কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। এমনকি শিশুদের জন্য গরম কাপড় কিনতেও কষ্ট হচ্ছে তাদের।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে মূল্যস্ফীতি বাড়তে থাকে। যুদ্ধের কারণে গত বছরের মার্চ-এপ্রিল মাসে খাদ্য পরিবহন ব্যাহত হয়। ফলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মূল্যসূচক রেকর্ড উচ্চতায় ওঠে। এরপর জাতিসংঘের মহাসচিবের উপস্থিতিতে কৃষ্ণসাগর দিয়ে খাদ্যশস্য পরিবহনে রাশিয়া ও ইউক্রেনের চুক্তি হয়। তাতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার খাদ্যের মূল্যসূচক কমেছে। কিন্তু যুক্তরাজ্য রাশিয়ার কাছ থেকে জ্বালানি না কেনায় জ্বালানির দাম অনেকটাই বেড়েছে। সে কারণে খাদ্যের দামও বেড়েছে।
এদিকে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, ২০২৪ সাল পর্যন্ত খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা থাকবে। মূল্যস্ফীতিও থাকবে বাড়তি। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার তথ্যানুসারে, তীব্র খাদ্যসংকট কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের অন্তত ৫৩টি দেশের ২২ কোটি ২০ লাখ মানুষের জরুরি সহায়তা প্রয়োজন হবে। ফলে বিশ্বের অনেক মানুষ রাতের বেলা ক্ষুধা নিয়ে ঘুমাতে যাবেন।