পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ২৯ মে: বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন আলোচনার কেন্দ্রে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতি। ২৪ মে ঘোষিত যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া ব্যাহত করার জন্য দায়ী বা এ রকম চেষ্টা করেছেন বলে প্রতীয়মান হলে ওই ব্যক্তিকে ভিসা দেওয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপে ‘ধীরে চলো’ নীতিতে চলার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সরকার পতনের আন্দোলনে থাকা বিএনপি বলছে, এটি সরকারের জন্য ‘বড় বার্তা।’ এ নিয়ে কিছুটা চাঙাভাব দেখা গেলেও দলটির নেতারা সতর্ক।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে’ অনুষ্ঠানে সহায়তার জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এন্টনি জে বিøনকেন ২৪ মে বুধবার বাংলাদেশিদের জন্য ভিসায় বিধিনিষেধের কথা জানান।
এই নীতির আওতায় বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করার জন্য দায়ী বা জড়িত বলে মনে করা হলে যেকোনো বাংলাদেশিকে ভিসা দেওয়ায় বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র।
কোন কোন কাজ গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, তার একটি তালিকাও তুলে ধরেছেন বিøণকেন।
যার মধ্যে আছে- ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভয় দেখানো, সহিংসতার মাধ্যমে জনগণের সংঘবদ্ধ হওয়ার স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার প্রয়োগে বাধা দেওয়া, রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ বা গণমাধ্যমকে মতামত প্রচার থেকে বিরত রাখার লক্ষ্যে সাজানো নানা পদক্ষেপ নেওয়া।
গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করে এমন কাজ করা যেকোনো বাংলাদেশি ভিসার বিধিনিষেধের আওতায় পড়তে পারেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যাঁদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের মধ্যে আছেন- বর্তমান ও সাবেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সরকারপন্থী ও বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্য, আইন প্রয়োগকারী, বিচার বিভাগ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও জানান, গত ৩ মে বাংলাদেশ সরকারকে নতুন ভিসা নীতির কথা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে পরিষ্কার হয়ে যায় চলতি মাসের শুরুতে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের মন্ত্রীরা কেন বার বার যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে কথা বলছিলেন।
বিøনকেন বলেন, ‘অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব ভোটার, রাজনৈতিক দল, সরকার, নিরাপত্তা বাহিনী, সুশীল সমাজ, গণমাধ্যমসহ সবার। যাঁরা বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে চান, তাঁদের সবাইকে সমর্থন দিতে আমি এই নীতি ঘোষণা করছি।’
আওয়ামী লীগ বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের চাপের কাছে দল নতজানু হবে না। কূটনৈতিক তৎপরতা, বিশেষ করে মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি জোরদারের চেষ্টা চলছে। আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্য রোববার জানান, বর্তমানে চায়না কমিউনিস্ট পার্টির আমন্ত্রণে চীন সফরে আছে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল। আগামী জুলাইয়ে ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) আমন্ত্রণে ভারত সফরে যাবে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল।
জি২০ সম্মেলনে যোগ দিতে সেপ্টেম্বরে ভারতে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব সফরে দেশ দুটির সঙ্গে সম্পর্ক আরও ঝালাই করবে আওয়ামী লীগ। এদিকে আগামী মাসে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের। দলটির সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।
আওয়ামী লীগ বলছে, নির্বাচনে অনিয়ম করলে যুক্তরাষ্ট্র ভিসা দেবে না বলেছে। একই সঙ্গে তারা বলেছে, নির্বাচনে সহিংসতাকারীদেরও ভিসা দেবে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। তাই তাঁরা কোনো ধরনের সহিংসতা চান না। তাঁরা নেতা-কর্মীদের আগ বাড়িয়ে অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে বলেছেন।
এদিকে বিএনপি মনে করছে, মার্কিন নতুন ভিসা নীতি আওয়ামী লীগকে বেশ চাপে ফেলেছে। আগামীতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এই সিদ্ধান্ত সহায়ক ভূমিকা রাখবে। দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে চাঙাভাব বিরাজ করছে। দলটির কয়েকজন নেতা মনে করছেন, এক দফার আন্দোলনে মার্কিন এই নীতি সহায়ক হবে। আবার কেউ কেউ বলছেন, এই নীতি নিয়ে এখনো অনেক কিছু ভাবার আছে। আর দলও এ বিষয়ে যথেষ্ট সতর্ক রয়েছে। দলের কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রেও এর ছাপ দেখা যাচ্ছে। বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক কমিটির সদস্য শামা ওবায়েদ বলেন, ‘ভিসা নীতিতে কড়াকড়ি আরোপের সিদ্ধান্ত কোনো দেশের জন্যই সুখকর নয়। আমরা আশা করছি ভালো কিছু হবে। তবে এ নীতি আসলে কী ফল আনবে, সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না। আমরা বিষয়টাকে সতর্কতার সঙ্গে অনুসরণ করছি।’
বিএনপির নেতারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসা নীতির কারণে সরকার যে চাপে পড়েছে, এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। গাজীপুর সিটি নির্বাচনে তার একটা নজির দেখা গেছে। এই চাপের ওপর আন্দোলনের চাপ বাড়াতে পারলে একটা ভালো ফল আসবে। তবে এ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলার সময় এখনো আসেনি। কারণ, বিএনপির কর্মসূচি পালনে বাধা দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। সবখানে না হলেও অনেক জায়গায় হামলা হচ্ছে, মামলা হচ্ছে, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার-হয়রানি করা হচ্ছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে এগুলোও তো বাধা। এমন চলতে থাকলে কী হবে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যায়।
বিএনপির নেতারা সংঘাতের পথ পরিহার করেই সরকার পতনের আন্দোলন চালানোর কথা বলছেন। তাঁরা মনে করছেন, সংঘাতে জড়ালে ফল উ?ো হতে পারে। এই বিবেচনায় অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বর্তমান সময়ে কর্মসূচি পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা বেশ সাবধানী। গত কয়েক দিনের কর্মসূচিতে এর প্রতিফলন দেখা গেছে।