যুক্তরাজ্যে রিসাইক্লিং শিল্পে বাংলাদেশিদের সূচনা উদ্যোগ
পত্রিকা প্রতিবেদন
লণ্ডন, ১৯ জুন: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটির লোকেরা শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার যুক্তরাজ্যের অত্যাধুনিক রিসাইক্লিং শিল্পে (বর্জ্যরে পুনর্ব্যবহার প্রক্রিয়াকরণ) বাংলাদেশিদের পরিচালনায় যাত্রা শুরু করেছে ‘কিউসি পলিমার।’ এটি যুক্তরাজ্যের বিশাল রিসাইক্লিং খাতে বাংলাদেশি বংশোদ্ভ‚তদের দ্বারা পরিচালিত প্রথম কোনো প্রতিষ্ঠান।
গত ১৬ জুন শুক্রবার লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে জানান উদ্যোক্তারা। সংবাদ সম্মেলনে এই প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরে জানানো হয়, কিউসি পলিমারের কারখানা ওয়েস্ট মিডল্যাণ্ডসে। সেখানে ৪৫ হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে ওয়্যারহাউজ রয়েছে। একটি মেশিনের সঙ্গে আরেকটি মেশিনের সংযুক্তি ঘটিয়ে ১৪৫ মিটার দীর্ঘ প্রক্রিয়াকরণ লাইনে চলে রিসাইক্লিংয়ের কাজ। প্লাস্টিক বর্জ্য (প্লাস্টিকের বোতল ও কনটেইনার) প্রক্রিয়া করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য শতভাগ পরিচ্ছন্ন প্লাস্টিক ফ্লেইক (প্লাস্টিকের কণা বা আঁশ) তৈরি করেন তাঁরা যেটি ‘ফুড গ্রেইড পিইটি ফ্লেইক’ নামে পরিচিত। উন্নতমানের এসব পিইটি ফ্লেইক পুনরায় খাদ্যপণ্যের মোড়ক তৈরির কাজে ব্যবহার হয়। যারা প্লাস্টিক পণ্য তৈরির জন্য প্লাস্টিক শীট বা ফিল্ম তৈরি করেন তারা এসব ফ্লেইক কিনে নেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, যুক্তরাজ্যের রিসাইক্লিং শিল্পে অবস্থান করে নেয়ার জন্য তাঁদের যে পরিকল্পনা তার প্রথম ধাপে আছে প্রকল্পটি। পরিকল্পনার দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপ এখনো বাকী। দ্বিতীয় ধাপে তাদের পরিকল্পনা হলো- নিজস্ব জায়গায় আরও বড় পরিসরে কারখানা স্থাপন করা, যেখানে আমাদের উৎপাদন সক্ষমতা দ্বিগুন হবে। আর তৃতীয় ধাপের জন্য পরিকল্পনা হলো- নিজস্ব কারখানায় ফ্লেইক শুরু করে প্লাস্টিক শীট বা ফিল্ম তৈরি করা এবং পুনরায় ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক বোতল ও কনটেইনার তৈরি করা।
কোম্পানিতে বর্তমানে ১১ জন ডাইরেক্টর ও ৬০ জন শেয়ারহো?ার আছেন। তারা এ পর্যন্ত ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউণ্ড বা ২৫ লাখ পাউণ্ড বিনিয়োগ করেছেন। এটি সম্পূর্ণ ডাইরেক্টর ও শেয়ারহো?ারদের বিনিয়োগের অর্থ। কোম্পানির কোনো ব্যাংক লোন নেই। কোম্পানির প্রথম বছরের প্রাক্কলিত টার্নওভার (ব্যবসা) প্রায় ৬ দশমিক ৫ মিলিয়ন পাউণ্ড (৬৫ লাখ পাউণ্ড) হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উদ্যোক্তারা জানান, তাদের কাছে এখনও ১০০ শেয়ার রয়েছে। যা আগ্রহীরা চাইলে কিনে নিয়ে সাফল্যের পথে এগিয়ে চলা পরিবেশবান্ধব, চমৎকার লাভজনক এই প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হতে পারেন। প্রতিটি শেয়ারের মূল্য ৪ হাজার পাউণ্ড। যারা প্রথম ধাপের প্রকল্পে বিনিয়োগ করবেন তারা কোনো নতুন বিনিয়োগ ছাড়াই দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপের প্রকল্পের শেয়ারহো?ার হবেন। তাঁরা বলেন, এটি এমন এক বিনিয়োগ যা দারুণ লাভজনক এবং একই সঙ্গে নিরাপদ-পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতকরণে ও জলবায়ুর বিরুপ পরিবর্তন মোকাবেলায় অবদান রাখার চমৎকার সুযোগ।
সংবাদ সম্মেলনে উদ্যোক্তারা বলেন, ২০২১ সাল থেকে মূলত আমাদের কিউসি পলিমার কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়। কারাখানা নির্মাণ, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও সংস্থানসহ উৎপাদনে জন্য প্রস্তুতি নিতে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় লেগে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমরা পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করি। চলতি মাসের (জুন) শুরু থেকে আমাদের কারখানায় পুরোদমে রিসাইক্লিংয়ের মাধ্যমে ‘পিইটি ফ্লেইক’ তৈরির কাজ চলছে।বর্তমানে প্রতি ঘন্টায় আমরা ২ টন ‘হট ওয়াশ পিইটি ফ্লেইক’ তৈরি করতে সক্ষম। বছরে ১৮ হাজার টন ‘হট ওয়াশ পিইটি ফ্লেইক’ তৈরির সক্ষমতা রয়েছে।
লিখিত বক্তব্যে তাঁরা জানান, বর্তমান বিশ্বে বিশেষ করে যুক্তরাজ্যে প্লাস্টিকের ব্যবহার এবং পরিবেশের সুরক্ষার বিষয়টি বেশ আলোচিত হচ্ছে। যুক্তরাজ্য সরকারও পরিবেশের সুরক্ষায় রিসাইক্লিং প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করার জন্য নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো- সরকার আইন করে বেধে দিয়েছে- প্লাস্টিকের বোতল, কনটেইনার বা অন্যকোনো প্লাস্টিক পণ্য তৈরি করতে হলে কমপক্ষে ৩০ শতাংশ রিসাইকেল করা ‘পিইটি ফ্লেইক’ ব্যবহার করতে হবে। সরকারের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যে প্লাস্টিক রিসাইক্লিং ব্যবসার জন্য দারুণ সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এমন সুযোগ দেখেই ‘কিউসি পলিমার’ কোম্পানির যাত্রা শুরু হয়।
সংবাদ সম্মেলনে কিউসি পলিমার সম্পর্কে বিস্তারিক তথ্য তুলে ধরার পাশাপাশি কারখানায় বর্জ প্রক্রিয়াকরণের ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন কিউসি পলিমারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া।
এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ গোলাম কিবরিয়া বলেন, অন্য যে কোনো বিনিয়োগের প্রস্তাব থেকে তাদের এই বিনিয়োগ প্রস্তাব আলাদা। কারণ, তাদের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে এবং পুরোদমে কাজ চলছে। আগ্রহীরা চাইলে কারখানা পরিদর্শন করে কাগজ-পত্র যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। এছাড়া এটি যুক্তরাজ্যে নিবন্ধিত কোম্পানি এবং এর কার্যক্রমও যুক্তরাজ্যে। ফলে এটিকে অন্য বিনিয়োগের প্রস্তাবের মত করে দেখা উচিত হবে না।
তিনি বলেন, সম্পূর্ণ হালাল উপায়ে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতে চাই বলে আমরা কোনো ব্যাংক লোন নিচ্ছি না।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পরিচালক ওবায়দুল হক ইভান, পরিচালক লিয়াকত আলী, পরিচালক প্রæজডি বুশি, পরিচালক জয়নাল আবেদিন রুবেল, পরিচালক জুনেদ রহমান এবং বিনিয়োগকারী মোহাম্মদ শাজাহান ও বিনিয়োগকারী ইমরান আহমেদ।