আমেরিকান স্যাংশনের ভয়ে আমরা ভীত নই
মাহবুব আলী খানশূর
লণ্ডন, ২৯ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশের পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘আমেরিকান স্যাংশনের ভয়ে আমরা ভীত নই।’ গত ২৬ সেপ্টম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লণ্ডনে এক শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
‘এনআরবি’স রোল ইন বাংলাদেশী পলিটিক্স’-এর ব্যানারে এবং?মহিব চৌধুরী, সৈয়দ নাহাস পাশা, শফিকুল ইসলাম ও দিলু নাসেরের উদ্যোগে আয়োজিত লণ্ডন-বাংলা প্রেসক্লাব কার্যালয়ে?এই শুভেচ্ছাবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়।
এতে লণ্ডনের বাংলা মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিক, লেখক ও বিভিন্ন পেশার শ্রেণীপেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীও উপস্থিত ছিলেন।
সভায় সভাপতিত্ব করেন লণ্ডন-বাংলা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মহিব চৌধুরী। কবি ও ছড়াকার দিলু নাসেরের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের সূচনা পর্বে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন। পরিকল্পনামন্ত্রী তার বক্তব্যের শুরুতে বাংলাদেশের জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের অবদান এবং সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের জন্ম হয়েছে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে এবং দেশের মানুষকে যা দিয়েছে আর কেউ তা দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। নিম্ন আয়ের অবস্থান থেকে দেশ আজ মধ্য আয়ের এবং দেশের সর্বত্র ডিজিটাল হয়েছে। অনলাইনের মাধ্যমে আপনি যাতে ঘরে বসে জমি সক্রান্ত কাজ সম্পাদন করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সারাবিশ্ব বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছে। বিশ্বনেত্রী বলে সবাই তাকে মেনে নিয়েছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কোনো তুলনা নাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কোনো বিকল্প নাই।
পরিকল্পনামন্ত্রী আরও বলেন, এটা ঠিক ঔপনিবেশিক আইনের কারণে গরীব মানুষ যা পাওয়ার তা পাচ্ছে না। তারপরও যেটুকু পাচ্ছে শেখ হাসিনার জন্য পাচ্ছে। শেখ হাসিনা তাদের দিচ্ছেন। আর কেউ এর চেয়ে বেশি তাদের দেবে না। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় না থাকলে দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে। বিএনপি-জামায়াত-মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে। স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় আসবে। দেশ থেকে টাকা পাচার হবে। দেশ দুর্নীতিতে ছেয়ে যাবে। বর্তমানে দেশে কোনো অস্থিতিশীল পরিবেশ নেই। এরপর তিনি মানুষের ভোটাধিকার, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের দাবিতে আন্দোলনরত বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কথা বলেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। আগামী নির্বাচন প্রসঙ্গে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে। সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে’।
সে সময় আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ‘নির্বাচন যেভাবে হচ্ছে, সেভাবেই হবে বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন হবে’? এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া থেকে বিরত থাকেন মন্ত্রী। বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা প্রসঙ্গে আরেকজন সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উনার জেলে থাকার কথা, উনি ঘরে বসে সুযোগ ভোগ করছেন। সরকার তাকে সেই সুযোগ দিয়েছে। সরকার তাকে অনুকম্পা দেখিয়েছে। কিন্তু সরকারেরও লিমিটেশন আছে। এরপর তিনি আইনের দোহাই দেন’।
কিউ নিউজের পরিচালক সাংবাদিক আবদুল কাইয়ুম প্রশ্ন করেন, ‘আপনি স্বীকার করেন আর নাই করেন বিএনপি বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল। বিএনপিকে নির্বাচনে নেওয়ার জন্য আপনাদের কেনো পরিকল্পনা আছে কি? আবদুল কাইয়ুমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। বিএনপিকে আপনি অন্যতম বৃহৎ দল বলতে পারেন। কিন্তু যদি মাথাগুনতির দিকে যান তাহলে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের বৃহত্তম পার্টি। বিএনপিকে নির্বাচনে আনা না আনা আমাদের কাজ না। উই আর নট দেয়ার গার্ডিয়ান। আমরা তাদের দল সৃষ্টি করিনি। তারা নিজেরাই তাদের দল তারা সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের জাতির পিতাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পেছনে তাদের অংশীদারত্ব ছিল। এটা প্রতিষ্ঠিত বাই ল, বাই উচ্চ আদালত। সুতরাং আমার এখানে বলার কী আছে!’ ‘তারা অতীতে সরকার গঠন করেছে আবার করুক। কিন্তু সংবিধানকে অবজ্ঞা করে, আইন-কানুন না মেনে, নির্বাচন কমিশনকে অস্বীকার করে এবং বলে এ থাকলে নির্বাচন করবো না, অমুক প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা নাই, এই ধরনের হঠকারী কথা শুনে নির্বাচন তো আর বন্ধ রাখা যাবে না। উই ডু আওয়ার জব, দে ডু দেয়ার জব। এরপর তিনি ইংল্যাণ্ডের নির্বাচনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচনের তুলনা করেন’।
টিভি ওয়ান-এর রিপোর্টার জাকির হোসেন কয়েছ মন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘আপনি কি স্যাংশন পেয়েছেন’? এ সময় সমাবেশে আবারও হাসির রোল ওঠে। জাকির হোসেন কয়েছের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি স্যাংশন পাইনি। আমেরিকান স্যাংশনের ভয়ে আমরা ভীত নই’।
টুএনিউজ এর পরিচালক সাংবাদিক আবদুল হান্নান প্রশ্ন করেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সজীব ওয়াজেদ জয়ের সম্পদ যদি বাজেয়াপ্ত করে কিছু আসে যায় না। এটা বলার আসলে কারণটা কী? যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা’? জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রী, আমার দলের প্রধান, আমার নমস্য নেতা, ডিসিপ্লিনড পলিটিশিয়ান উনার মন্তব্যে অ্যাড করা বা মাইনাস করার কিছু নাই। ঠিক আছে? ভিসানীতি আমাদের কিছু করতে পারবে না। তাদের পলিসি তাদের আমাদের পলিসি আমাদের। উই আর ইন দ্য রাইট ট্র্যাক’। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন লণ্ডনস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশিকুননবী চৌধুরী, বিশিষ্ট সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বাসন, প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি রহমত আলী, প্রেসক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমদ, সিলেট-৩ আসনের সম্ভাব্য এমপি পদপ্রার্থী যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও আইনজীবী মোহাম্মদ মনির হোসেন, সাংবাদিক সৈয়দ মনসুর উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম, আমিরুল চৌধুরী, ডাঃ এ রোয়াব উদ্দিন, আকবর হোসেন, সৈয়দ জামিল, আহাদ চৌধুরী বাবু, এম এ কাইয়ুম, সুহেব কবির, জাকির হোসেন কয়েস, রেজাউল করিম মৃধা, খালেদ মাসুদ রনি, রাশিদ আব্দুল হান্নান, সারওয়ার হোসেন, আহমেদ চৌধুরীসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা মহিব চৌধুরী বলেন, মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী সুনামগঞ্জে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। আজ পর্যন্ত তাঁর কোন দুর্নীতির কথা শুনতে পাইনি। তিনি ক্লিন ইমেজের মানুষ। বাংলাদেশে তাঁর মতো ব্যক্তিদের মূল্যায়ন করলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে।