লণ্ডন, ০২ অক্টোবর: নানা ধর্ম ও বর্ণের হাজার হাজার ভিন্ন ধর্মবালম্বীর অংশগ্রহণে যুক্তরাজ্যে অষ্টমবারের মতো উদযাপিত হলো ‘ভিজিট মাই মস্ক’ কর্মসূচি। গত ২৩ সেপ্টেম্বর শনিবার যুক্তরাজ্যের দুই শতাধিক মসজিদ ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নারী পুরুষ ও শিশু কিশোরদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। গত শনিবার ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ইস্ট লণ্ডন মসজিদ শত শত মুসলিম-অমুসলিমদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে।
সারাদিনই দলে-দলে আসতে থাকেন খৃস্টান, ইহুদীসহ বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষ। তাঁরা মসজিদের ভেতর ঘুরে দেখেন। মসজিদ যে উপসনার স্থান, এখানে গোপনীয় কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়না- এই স্বচ্ছ ধারণা নিয়ে ফিরে যান তারা। দুপুরে এলএমসি ভবনে দিবসটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়।
মারিয়াম সেন্টারের প্রধান সুফিয়া আলমের উপস্থাপনায় এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার ও ইস্ট লণ্ডন মসজিদের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাইয়ুম মিয়া তালুকদার বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলে ইন্টারফেইথ ফোরাম রয়েছে। এই ফোরামের মাধ্যমে আমরা সকল ধর্ম পালনে সংশ্লিষ্টদের সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কাজ করি। আমরা মনে করি, একসাথে কাজ করলে কমিউনিটিতে অনেক কিছু সমাধান করা যায়। অনেক ধরনের ইস্যূ রয়েছে। ভিজিট মাই মস্ক বেশ কয়েক বছর ধরে হয়ে আসছে এবং দিন দিন বড় হচ্ছে। আমি মনে করি, এই ধরনের আয়োজন কমিউনিটিতে অনেক পরিবর্তন নিয়ে আসে। কমিউনিটিকে একীভুত করে এবং একে অন্যের ধর্মের ব্যাপারে যে ভুল বুঝাবুঝি আছে তা দুর করতে সহযোগিতা করে।
ড. আব্দুল হাই মুর্শেদ বলেন, প্রতিবেশীদের সঙ্গে আমাদের ভালো একটা সম্পর্ক রাখা উচিত। আমাদের মধ্যে যেসব বিষয়ে মতপার্থক্য আছে সেগুলো না দেখে যে বিষয়গুলোতে আমাদের মিল আছে সেগুলোতেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। মানুষ হিসেবে আমরা মানুষের প্রতি কীভাবে ব্যবহার করতে পারি। কী করলে আমরা একে অপরের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে পারি, সেদিকেই আমাদের বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। ইস্ট লণ্ডন মসজিদ হিসেবে আমরা চাই, কমিউনিটির সাথে আমাদের এমন একটি সম্পর্ক থাকবে যে, ওই সম্পর্কের কারণে নন-মুসলিমরা ইসলামকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখবে। তাই আমরা আশা করবো, আমাদের কমিউনিটির মানুষ ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে অমুসলিমদের কাছে ইসলামকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবো।
অন্যান্য মসজিদের মতোই ইস্ট লণ্ডন মসজিদ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত খোলা ছিলো। এলএমসি’র গ্রাউণ্ড ফ্লোরে ছিলো ইসলামের নানা প্রদর্শনী। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ছিলো ফেইথ এণ্ড ফুড (ধর্ম ও খাবার)। প্রতিপাদ্যের ব্যাপারে মারিয়াম সেন্টারের প্রধান সুফিয়া আলম বলেন, খাবারের টেবিলে আমরা এক সাথে বসি। খাবার আমাদেরকে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একত্রে বসায়। আমরা খাবারের জন্য সবকিছুর উর্ধে ওঠে একসাথে বসতে পারি। সেখানে পারস্পারিক আলোচনা করতে পারি।
এলএমসি গ্রাউণ্ডফ্লোরে প্রদর্শনীতে স্থান পায় বিভিন্ন ধরনের ফলমুল। যেমন তরমুজ, খাজুর, জয়তুন, আদা, রসুন, পিয়াজ ইত্যাদি। এগুলোর কথা পবিত্র কুরআনের উল্লেখ করা হয়েছে। তাই ফলমুল ও গাছগাছালির মাধ্যমে নন-মুসলিমদেরকে কুরআন বুঝানোর চেষ্টা করা হয়। দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে ছিলো নন-মুসলিমদেরকে মসজিদের বিভিন্ন কার্যক্রম ঘুরে দেখানো, মসজিদ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস নিয়ে ডুকমেন্টারি প্রদর্শন, জামাতে নামাজ পড়ার দৃশ্য দেখানো, মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রদর্শনী, চিলড্রেন এক্টিভিটি কর্ণার ও চা-কেক আপ্যায়ন। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে মুসলিম কাউন্সিল অব বৃটেন (এমসিবি) ভিজিট মাই মস্ক কর্মসূচি উদ্বোধন করে। প্রথম বছরই নন-মুসলিমদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া যায়। ওই বছর যুক্তরাজ্যের ২০টি মসজিদ এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ ও ২০১৯ সালে সারাদেশের প্রায় ১৮০টি মসজিদে ব্যাপকভাবে এই কর্মসূচি পালিত হয়। তবে কোভিড-১৯ এর কারণে ২০২০ সালে ‘ভার্চূয়াল’ মাধ্যমে আয়োজন করা হলেও ২০২১ সালে আয়োজন করা সম্ভব হয়নি। কোভিডের পর এই দ্বিতীয়বারের মতো মানুষের শারিরীক উপস্থিতিতে ভিজিট মাই মস্ক ওপেন ডে উদযাপিত হলো।