কূটনীতিকরা সক্রিয়, সরব জাতিসংঘও
লণ্ডন, ০৬ নভেম্বর: বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে টালমাটাল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বিরোধী দলগুলো নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে হরতাল অবরোধের মতো কঠোর কর্মসূচি পালন করছে। অন্যদিকে সরকারি দল ও নির্বাচন কমিশন একটি নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিয়ে এগোচ্ছে।
চলতি নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে আগামী ৯ই নভেম্বর প্রেসিডেন্টের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন নির্বাচন প্রস্তুতির বিষয়ে আলোচনা করবে। রাজনৈতিক বিরোধের মধ্যে নির্বাচন কমিশন নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করলে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিরোধী দলগুলো বলছে, সংসদ বিদ্যমান রেখে, সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। তাদের দাবি একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচনের আগে সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে এবং সংসদ ভেঙে দিতে হবে। যদিও সরকারি দলের তরফে বলা হচ্ছে, বিদ্যমান সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কেউ ঠেকাতে পারবে না।
টানা তিন মেয়াদে সরকারে থাকা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পুরো দমে নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে। নির্বাচনী ক্ষণ গণনার মধ্যে একের পর এক বিরোধী দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।
সর্বশেষ ২৮শে অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপি’র মহাসমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বল প্রয়োগ ও দলটির নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষের জেরে দায়ের করা মামলায় নেতাদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অনেকে বলছেন, সামনে নির্বাচন আয়োজন নির্বিঘ্ন করতে এই গ্রেপ্তার অভিযান চলছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে তড়িঘড়ি করে এমন অভিযান চালানো হচ্ছে। এই গ্রেপ্তার অভিযান নিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন এমনকি জাতিসংঘ পর্যন্ত প্রশ্ন তুলেছে।
এ পর্যন্ত বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ার্যান ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমরসহ দলের অনেক নেতা গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের রিমাণ্ডে নেয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে গত আট দিনে পল্টনের ঘটনায় ৮৯টি মামলা হয়েছে, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ২২৬২ জনকে।
সমাবেশে হামলা ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গত সপ্তাহের রোববার হরতাল পালন করে বিএনপি। এর পরে ৭২ ঘণ্টার সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি। সর্বশেষ রোববার থেকে চলছে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ। বিএনপি ছাড়াও সমমনা অনেক দল এবং জামায়াত এই কর্মসূচি পালন করছে। সর্বশেষ শনিবার ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত মহাসমাবেশ থেকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ সরকারকে এক সপ্তাহের আল্টিমেটাম দিয়েছে। তারা বলেছেন, ১০ই নভেম্বরের মধ্যে একটি জাতীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। অন্যথায় সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। এছাড়া বিরোধী দলগুলোর চলমান আন্দোলনেও সমর্থন ঘোষণা করেছে দলটি।
ওদিকে একাদশ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি রহস্যজনক অবস্থান নিয়েছে। দলটি বলছে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে। ভোটের পরিবেশ থাকলে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে। অন্যথায় বর্জন করবে। এমন অবস্থায় নির্বাচন কমিশন শনিবার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে একটি আলোচনার উদ্যোগ নেয়। সেখানে নিবন্ধিত ৪৪ দলের মধ্যে ২৬টি অংশ নেয়। বাকি ১৮টি দল ইসির ডাকে সাড়া দেয়নি। বৈঠকে অংশ নেয়া অন্তত ১২টি দল নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে নিজেদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ওই বৈঠক থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, বর্তমান সংকট নিরসনে ইসির সামর্থ নেই। সংকট সমাধানে দলগুলোকেই আলোচনা করতে হবে। নির্বাচন নিয়ে বিদ্যমান সংকট কাটাতে কূটনীতিকরাও সরব রয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিসহ কূটনীতিকরা একের পর বৈঠক করেছেন আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে। নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গেও তাদের নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে। তারা একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনে সংলাপ এবং সমঝোতার পরামর্শ দিয়ে আসছেন। তবে এ পর্যন্ত সমঝোতার দৃশ্যমান কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র একটি ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। ইতোমধ্যে এই ভিসানীতি কার্যকর হয়েছে বলেও যুক্তরাষ্ট্রের তরফে বলা হয়েছে। গণতান্ত্রিক নির্বাচনে বাধাদানকারীদের বিরুদ্ধে এই ভিসানীতি প্রয়োগ হবে এবং সরকার ও বিরোধী দলের রাজনীতিক, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ এমন কী গণমাধ্যম সংশ্লিষ্টরা এই ভিসানীতির আওতায় পড়তে পারেন বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।