লণ্ডন, ১০ জুন: অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশের ধরপাকড়, কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত ও কিরগিজস্তানে বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার, শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশ করার ও শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সন্মান প্রদর্শন করার এবং ছাত্রছাত্রীদের সিভিল রাইটস নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন, ইউকে। ‘শিক্ষার্থীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের আহ্বান’ শিরোনামে রবিবার প্রকাশিত একটি প্রেস রিলিজে প্রাক্তন ও বর্তমান আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের নিয়ে গড়া সংগঠনটি এ আহ্বান জানায়। সেইসঙ্গে সকল দেশের সরকার এবং সকল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের অবাধ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সিভিল রাইটস রক্ষার স্বার্থে ক্যাম্পাসে একটি শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
সংগঠনের প্রেসিডেন্ট হাসনাত আরিয়ান খান স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি নৃশংস হামলা ও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার দাবিতে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে আন্দোলন করছেন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপ্রিয় শিক্ষার্থীরা; আর তা দমনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি তৎপর পুলিশ প্রশাসনও। বিক্ষোভ-আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে আন্দোলনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে আরও ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে। গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার মধ্যে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতার আহ্বান জানিয়ে ছাত্র বিক্ষোভের ওপর কলাম্বিয়ায় ভয়ংকর দমনপীড়ন আমাদের সবাইকে শঙ্কিত করেছে। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের মত প্রকাশের অধিকার রক্ষায় লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ইসরায়েলের গণহত্যার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদকারী শিক্ষার্থীদের সহিংসভাবে গ্রেফতার করার জন্য দাঙ্গা পুলিশ আনা হয়েছে। ন্যাশনাল গার্ডকে দিয়ে তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাস থেকে জোরপূর্বক বের করে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্ব হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের রক্ষা করা। কিন্তু তা না করে তাঁরা বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বরখাস্ত করেছে। তাদেরকে ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ করেছে। যাদের স্নাতক শেষ করার বিষয়টি নির্ধারিত ছিল, তারাও এখন আর তার জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না বলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে। শুধুমাত্র কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ই নয়, জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, নিউইয়র্কের কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া ইন লস অ্যাঞ্জেলেসসহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে এ ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থী ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তাদের গণহারে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য শিক্ষার্থীদের বাইরে বের করে এনে বাসে করে সে এলাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়েছে। যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তাদের ক্লাসরুম তালাবদ্ধ করা হয়েছে, ক্লাস ছেড়ে দিতে এবং তাদের পরীক্ষা বিলম্বিত করতে বাধ্য করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের সাথে বৈষম্যমূলক আচরণ করছে। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্বারা মারাত্মক হয়রানির শিকার হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অধিকার রক্ষা করতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। উপরন্তু শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহিংসতা ও দমনপীড়নে ভূমিকা পালন করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীদের বরখাস্তের নিন্দা জানাই। একইসাথে উক্ত ঘটনায় বরখাস্ত হওয়া ছাত্রদের ছাত্রত্ব ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাই। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আমরা সকল প্রকার বর্ণবাদ ও বৈষম্যের অবসান চাই। আমরা শিক্ষার্থীদের সিভিল রাইটস নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, গাজায় হামলা বন্ধের দাবিতে ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের সমর্থনে এবং কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদ ও তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ব্যাপক ধরপাকড় চালিয়েছে পুলিশ। আটক করা হয়েছে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ছাত্রছাত্রীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি সন্মান প্রদর্শনের আহ্বান জানাই।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস ইউনিয়ন জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের প্রতি তাদের বাধ্যবাধকতা মেনে চলতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। তৃতীয় কোনো পক্ষ যাতে এসব অধিকার চর্চার প্রচেষ্টাকে দমিয়ে দিতে না পারে, সেটিও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিশ্চিত করতে হবে। আমরা পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি যে, তাঁরা যেন শুধুমাত্র যেখানে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে বল প্রয়োগ অত্যন্ত প্রয়োজন সেখানেই একটু বল প্রয়োগ করেন। আর সেক্ষেত্রেও এই বল প্রয়োগ হতে হবে বৈধভাবে, সংযমের সঙ্গে এবং সংশ্লিষ্ট নীতি অনুসারে। কোন অবস্থাতেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দমনপীড়ন করা যাবে না, শিক্ষার্থীদের হয়রানি করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাবে না।
সম্প্রতি কিরগিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ও মিশরের শিক্ষার্থীসহ বিদেশি শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংস হামলার সুষ্ঠ তদন্ত ও বিচার দাবি করে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, কিরগিজস্তানের সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বর্তমানে প্রায় ৬০ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এসব আর্ন্তজাতিক শিক্ষার্থীরা কেউ হোস্টেলে থাকেন। আবার কেউ বাইরের বিভিন্ন অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন। দুই জায়গাতেই তাঁরা হামলার শিকার হয়েছেন। স্থানীয় সন্ত্রাসীরা তাদের টার্গেট করে আক্রমণ করেছেন। বিদেশি শিক্ষার্থীদের স্থানীয় তরুণরা ভয়ভীতি প্রদর্শন করেছেন। শিক্ষার্থীদের রুম ভাঙচুর করা হয়েছে। মালামাল লুটপাট করা হয়েছে। তাদের গায়ে হাত তোলা হয়েছে। ভয়ে শিক্ষার্থীদের অনেকেই নিজ নিজ দেশে ফিরে গেছেন। আমরা এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানাই। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানাই। আমরা স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই। আমরা কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই যেন বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সেখানে নিশ্চিত করা হয়। তাদের মৌলিক অধিকার এবং স্বাধীনতা যেনো নিশ্চিত করা হয়। বিদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতি যেনো যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি