পত্রিকাকে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী
পত্রিকা প্রতিবেদন ♦
হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি পুরোপুরি বাতিল করেছি
জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি
হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বা পর্যালোচনা আমার সময়ে হয়নি। এটি নিয়ে যেহেতু জনমনে উদ্বেগ-আপত্তি রয়েছে, তাই আমরা মানুষের উদ্বেগ নিরসনে এটি ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে পুরোপুরো বাতিল করে দিয়েছি। আমরা দেশে-বিদেশে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত এবং নতুন করে পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছে। আমি তাদের সেবক। জণগণের আপত্তি থাকে এমন কাজ তো আমার করা উচিত নয়।
লণ্ডন, ১০ জুন: সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, ‘একটি সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রশাসনকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ ভালো একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলা গেলে সেবার মান বৃদ্ধির পাশাপাশি মানুষের হয়রানিসহ নানা সমস্যারও সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি মনে করেন। মেয়র বলেন, ‘আমরা হয়তো সিলেট শহরকে লণ্ডন বানিয়ে ফেলতে পারবো না। কিন্তু আমরা সিলেটকে লণ্ডনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাই।’
সাপ্তাহিক পত্রিকার সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে এমন আকাঙক্ষার কথা জানান সিলেট সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। তিনি একজন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। তিনি বলেন, মানুষ দেখে দেখেও অনেক কিছু শিখে। আমি দীর্ঘকাল যুক্তরাজ্যে বসবাসের সুবাদে দেখেছি উন্নত দেশগুলোতে একটি সুষ্ঠু ব্যবস্থা কীভাবে সবকিছু সুন্দরভাবে পরিচালিত করছে।
লণ্ডন সফরকালে গত ৫ জুন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান সাপ্তাহিক পত্রিকা অফিস পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সিলেটের বন্যা, বিতর্কিত হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি, প্রবাসীদের হয়রানির নানা বিষয় নিয়ে পত্রিকার বিভিন্ন প্রশ্নের খোলামেলা জবাব দিয়েছেন। সিলেটে আকস্মিক বন্যার কারণে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে গেছেন। তবে ঈদুল আজহার পর তাঁর আবার লণ্ডনে আসতে পারেন বলে জানা গেছে।
আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, গত বছরের ২১ জুন আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলাম। দায়িত্ব নিয়েছি নভেম্বরে। যখন আমি ক্যাম্পেইনে নামলাম তখন দুটি বিষয় আমাকে বেশ মোকাবেলা করতে হয়েছিলো। বলা হলো, আমি প্রবাসী। আরেকটি হলো আমার গ্রামের বাড়ি সিলেট শহরের বাইরে। আমি নগরীর মানুষ নই। কিন্তু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দেয়ার পর বেশির ভাগ মানুষ আমাকে সাদরে গ্রহণ করেছেন, আমাকে সাহায্য করেছেন এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের সমর্থন ও ভোটে আমি নির্বাচিত হয়েছি। এ কাজটি অনেক চ্যালেঞ্জিং। আমরা একটি পরিকল্পিত টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করছি। আমরা সিটিকে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজানোর লক্ষ্যে কাজ করছি।
সিলেটে বন্যা ও জলাবদ্ধতা একটি বড় সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতিমধ্যে স্বল্পমেয়াদী কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে যার ফলে এবার সিলেট মূল শহরে পানি উঠে নাই। কিন্তু উপশহরে এখনও পানি উঠছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধানে টেকসই ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ করছি। সিলেটকে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থান হিশেবে গড়ে তোলার জন্য সুরমা রিভার ড্রাইভ করার পরিকল্পনা নিয়েছি আমরা। যেখানে সুরমার দুই পাড়ে মানুষের চলাচলের জন্য প্রশস্ত রাস্তা থাকবে। সিলেট সিটি করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে আমরা এটি করতে চাই।
জায়গা-জমি বেদখল, মিথ্যা মামলাসহ প্রবাসীদের নানা হয়রানির বিষয়ে মেয়র বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনে প্রবাসীদের সেবা প্রদানের জন্য আলাদা একটি ডেস্ক চালু করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কে লোকবল নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই এর কার্যক্রম শুরু হবে। দুর্নীতি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়টি উড়িয়ে দিতে চাই না। আমি যেহেতু নতুন দায়িত্ব নিয়েছি এ বিষয়ে আমার সরাসরি কোনো কথা বলা উচিত হবে না। তবে আমি একটি ব্যবস্থা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি, যে ব্যবস্থায় মানুষকে হররানি করার কোনো সুযোগ রাখা হবে না। আপনারা আগামী দুই বছরে মধ্যে অতীতের সঙ্গে আমার প্রশাসনের তুলনা করতে পারবেন। আমরা সিলেটকে একটি অন্যতম সেরা সিটি করপোরেশন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো কীভাবে মানুষের হয়রানি বন্ধ করেছে? তারা সিস্টেম ডেভেলপ করেছে। আমরাও যদি ভালো সিস্টেম ডেভেলপ করতে পারি তাহলে অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আমরা হয়তো সিলেটকে লণ্ডন বানাতে পারবো না। তবে আমরা সিলেটকে লণ্ডনের কাছাকাছি নিয়ে যেতে চাই।
হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে সাম্প্রতিক বিতর্ক সম্পর্কে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আমাকে আমাকে যিনি দায়িত্ব হস্তান্তর করে গেলেন তিনি আমাদের আরিফুল হক চৌধুরী। আমাকে দায়িত্ব্ হস্তান্তরের আগের ১০ বছর তিনি সিটির দায়িত্বে ছিলেন। তিনি ২০১৬ সালে সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডে হোল্ডিং ট্যাক্স পর্যালোচনা করিয়েছিলেন। ফুল কাউন্সিলে এটি পাশ করিয়েছিলেন। এরপর স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়েও এটি অনুমোদিত হয়। জনাব আরিফুল হক চৌধুরী আমাকে বলেছেন যে, করোনার কারণে তিনি এটি স্থগিত করেছিলেন। কাউন্সিল মিটিংয়ে নয়; একটি নোটশীটের মাধ্যমে তিনি এটি স্থগিত রেখেছিলেন। আমরা দায়িত্ব নেয়ার পর জনাব আরিফুল হক চৌধুরীর সকল কাজ অব্যাহতভাবে চালু রেখেছি। হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়টিও বাস্তবায়নের সময় আসে। কিন্তু এটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনমতে একটি অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দেশে-বিদেশে এটি নিয়ে মানুষ প্রবল আপত্তি জানিয়েছে। মানুষের বক্তব্য ছিলো হোল্ডিং ট্যাক্স বহুগুণ বেড়ে গেছে। আসলে এটি বহুগুণ বাড়ে নাই। দেখা গেছে যে, আগে আপনার হোল্ডিং ট্যাক্স ২০ হাজার টাকা নির্ধারিত হয়েছিলো। কিন্তু তখন আপনি সেটিকে কোনোভাবে কমিয়ে ৫শ করে নিয়েছিলেন। এখন ১৬ বছর যখন নতুন হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারিত হয়েছে, সেটি স্বাভাবিকভাবে আগের নির্ধারিত ২০ হাজার টাকা থেকে বেড়েছে। ফলে এটি ৫শ টাকা থেকে অনেক বেড়ে গেছে বলে মনে হচ্ছে। এই হলো ঘটনা। কিন্তু হোল্ডিং ট্যাক্স বাড়ানোর সিদ্ধান্ত বা পর্যালোচনা আমার সময়ে হয়নি। এটি নিয়ে যেহেতু জনমনে উদ্বেগ-আপত্তি রয়েছে, তাই আমরা মানুষের উদ্বেগ নিরসনে এটি ফুল কাউন্সিল মিটিংয়ে পুরোপুরো বাতিল করে দিয়েছি। আমরা দেশে-বিদেশে সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত এবং নতুন করে পর্যালোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। কারণ জনগণ আমাকে ভোট দিয়ে মেয়র নির্বাচিত করেছে। আমি তাদের সেবক। জণগণের আপত্তি থাকে এমন কাজ তো আমার করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, সিটি মেয়রকে নগরপিতা বলার একটা চল আছে। কিন্তু আমি বলেছি আমাকে নগরপিতা বলা যাবে না। আমি নগরের জনগণের সেবক হয়েই থাকতে চাই।