আশরাফুল ওয়াহিদ দুলাল
লণ্ডন, ২৬ সেপ্টেম্বর: ‘প্রবাহের স্রোতে এসো মাতি উল্লাসে, দূর প্রবাসে’ শ্লোগানকে ধারন করে লণ্ডনে এক অভূতপূর্ব মিলনমেলায় মেতেছিলেন সিলেটের ঐতিহ্যবাহী সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ১৮ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয়ের জীবনের শৈশব কৈশোরের ফেলে আসা দিনের স্মৃতিগুলিকে প্রাণবন্ত করে তুলতে, ‘প্রবাহের স্রোতে এসো মাতি উল্লাসে, দূর প্রবাসে’ শ্লোগানকে সামনে রেখে, প্রবাসে বসবাসরত সিলেটের সুরমা পারের সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের সংগঠন পাইলটিয়ান এলুমনাই ইউকে আয়োজন করেছিলো পাইলটিয়ান মিলন মেলা ২০২২। লণ্ডনের স্থানীয় একটি হলে ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রায় সাড়ে তিন শতাধিক প্রাক্তন শিক্ষার্থীর উপস্থিতিতে জমজমাট হয়ে?ওঠে পুরো আয়োজন। বহুদিন পর অনুষ্ঠানে পুরানো সাথীদের কাছে পেয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে?পড়েন অনেকেই। কারী একরামুল হকের কোরয়ান তেলাওয়াত ও রিংকু সিংহার পবিত্র গীতা পাঠের মাধ্যমে শুরু হওয়া অনুষ্ঠানের প্রথমে কামরুল আহছানের পরিচালনায় প্রয়াত প্রাক্তন শিক্ষক ও ছাত্রদের স্মরণে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালন করা হয়। রিংকু সিংহার তত্ত্বাবধানে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পরপরই পরিবেশিত হয় বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রদের উদ্যোগে মিলন মেলার সংগীত। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের আদলে নির্মিত ফটকের পাশাপাশি প্রবীণদের মনোরঞ্জন ও শৈশবের স্মৃতি মনে করিয়ে দিতে ছিল ক্যারম বোর্ড খেলার সাথে চানাচুর, চটপটি কিংবা ফুচকার ব্যবস্থা। আর চানাচুর, ফুচকার পাশাপাশি চলছিল জম্পেশ আড্ডা। এক পর্যায়ে প্রাক্তন ছাত্র ও সাংবাদিক মোঃ এমরান আহমেদের উপস্থাপনায় মিলন মেলা উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকা ‘প্রবাসে প্রবাহ’-এর মোড়ক উন্মোচিত করা হয়। প্রাক্তন ছাত্র ও এটিএন বাংলার হেড অব মার্কেটিং মোঃ আদিল চৌধুরীর পরিচালনায় সম্মাননা জানানো হয় মিলন মেলার সকল স্পন্সর ও বিজ্ঞাপনদাতাদেরকে। ২০১৬/১৭ ব্যাচের ছাত্রদের মাধ্যমে সম্মাননা জানানো হয় প্রাক্তন ছাত্র ১৯৬৭ সালে বিদ্যালয় থেকে তৎকালীন সময়ে মেট্রিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে পুরো পাকিস্তানের সর্বাধিক নম্বরপ্রাপ্ত মোঃ আব্দুর রকিবকে। গান নাচ আর কবিতার ফাঁকে ফাঁকে সম্মান জানানো হয় পাইলট এলুমিনাইয়ের পক্ষ থেকে প্রথমবার মিলন মেলা আয়োজন কারী মিজানুর রহমান মিজান, সুয়েব আদমজী, তৌহীদ ফিতরাত হুসেইন, শাহেদ শামস, মোহাম্মদ একরাম সিদ্দিক উজ্জ্বল, মোহাম্মদ শামসুল করিম টিটুকে। মাহবুব শুভ ও আব্দুল হাফিজ শিপলু, আবু আরেফ, নজরুল ইসলাম ও মঞ্জুর চৌধুরীর ব্যবস্থাপনায় মধ্যা? ভোজনের সময় ব্রিটেনের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রত্যেকটি টেবিলে গিয়ে মাহমুদ হাছানের নবীন-প্রবীণের পরিচয় পর্বটি ছিল প্রশংসনীয়। ইমরান চৌধুরী, আব্দুল ফাত্তাহ চৌধুরী রানা ও আব্দুল্লাহ ফাতেনীর র্যাফল পরিচালনা করেন। অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে র্যাফেল ড্র পরিচালনা করেন জনপ্রিয় টিভি উপস্থাপক সায়েক আহমেদ সওদাগর। মোহাম্মদ আখলাকুর রহমান ও মেকদাদ খানের তত্ত্বাবধানে মিলন মেলায় আগত প্রাক্তন ছাত্রদের মধ্যে উপহার হিসেবে মিলন মেলার লগো সম্বলিত, ব্যাজ মগ, চাবি রিং, ব্যাগ ও কলম প্রদান করা হয়। সঞ্জিত দাশের সহযোগিতায় ও আশরাফুল ওয়াহিদ দুলালের পরিচালনায় সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের বিভিন্ন পর্যায়ে বড় পর্দার মাধ্যমে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন ভিডিও স্থির চিত্র প্রদর্শন করা হয়। এ সময় কবি জিয়াউর রহমান সাকলায়েনের কণ্ঠে পৃথিবীর সব বাবাদের উদ্দ্যেশ্যে বাবা কবিতাটি প্রদর্শনের সময় ছল ছল চোখে সবাই যেন ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা অতীতে। অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয় স্কুলের বিভিন্ন চিত্র। রাত ৮টায় ব্রিটেন সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথের প্রতি শোক ও শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। মোঃ সাকিব আলম চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ জাহিদ, আবিদুর রহমান, আব্দুল্লাহ নাইম, মাহফুজুর রহমান তায়েফ, আযহার উদ্দিন, শামাম আহমেদ, অপু তালকদার, মাহমুদুল হাছান চৌধুরী, শাহনেওয়াজ সুবান রাজা, রেজোয়ান, আদনান, মোহাম্মেল প্রমুখ স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন। নবীন প্রবীণদের এই মিলনমেলায় উপস্থিত বয়সের বাধা ডিঙ্গিয়ে?প্রবীণরাও যেন তালে তাল মিলিয়ে ফিরে গিয়েছিলেন ফেলে আসা শৈশবে। তাই তারা আয়োজক উত্তরসূরীদের প্রশংসা করতে কুণ্ঠা বোধ করেননি। সর্বোপরি এই আয়োজনের মধ্যদিয়ে?সুরমা পারের সন্তানরা টেমসের পারে মিলন মেলায় জড়ো হয়ে?শৃঙ্খলা ও শ্রদ্ধা ভালবাসায় সবাইকে আবদ্ধ করলেন। সহপাঠীরা এই অনুষ্ঠানের অন্যতম সমন্বয়ক মাহমুদ হাসান কে একজন দক্ষ সংগঠক হিসেবে সম্মাননা জানাতে কার্পণ্য করেননি। পুরানো সহপাঠীদের সাথে আনন্দঘন একটি দিন কাটিয়ে বিদায় বেলায়?বিষাদসিক্ত সবারই মনে যেন আহবান ছিলো- এই দেখা শেষ দেখা না হয়, আবার দেখা হবে বন্ধু।