পত্রিকা ডেস্ক
লণ্ডন, ১৪ নভেম্বর: লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহাম্মদ জুবায়ের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের স্ট্র্যাটেজিক এডভাইজার (বিএমই মিডিয়া এণ্ড কমিউনিটি) নিযুক্ত হয়েছেন। সম্প্রতি তাঁকে এই নিয়োগ দেয়া হয়। এই দায়িত্বে যোগ দেয়ার আগে তিনি চ্যানেল এস-এর চীফ রিপোর্টার পদ থেকে অব্যহতি নেন। প্রায় ১৭ বছর কাজ করার পর চ্যানেল এসের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিলেন।
মুহাম্মদ জুবায়ের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়রের অফিসের চীফ অব স্টাফ এমি জ্যাকসনের নেতৃত্বে কাজ করবেন। মেয়র লুৎফুর রহমানের চীফ অব স্টাফ হিসেবে যোগ দেয়ার আগে এমি জ্যাকসন পার্লামেন্টারী লেবার পার্টির ডেপুটি চীফ এবং ব্রিটেনের বৃহত্তম ট্রেড ইউনিয়ন ইউনাইট-এর ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। নির্বাহী মেয়রের অফিসে হেড অব এক্সটারনাল রিলেশন্স পদে আছেন ডঃ কিরন এণ্ড্রু এবং সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার পদে আছেন অক্সফোর্ড-স্নাতক এমি এডি।
প্রসঙ্গত, মেয়র লুৎফুর রহমান যুক্তরাজ্যের এথনিক মাইনরিটি কমিউনিটি থেকে নির্বাচিত প্রথম মেয়র এবং একই সাথে টাওয়ার হ্যামলেটসের প্রথম নির্বাহী মেয়রের রেকর্ডও বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত এই রাজনীতিকের। মুহাম্মদ জুবায়ের চ্যানেল এস এর চীফ রিপোর্টারের দায়িত্বের পাশাপাশি জ্যেষ্ঠ্য প্রযোজক হিসেবেও কাজ করেন। সহপ্রযোজক ছিলেন আলোচিত লাইভ শো রিয়েলিটি উইথ মাহি অনুষ্ঠানের। কমিউনিটির প্রধান ইস্যুকে গুরুত্ব দেওয়া এবং এখানকার জীবন ও সমাজ-বাস্তবতা নিয়ে রিপোর্টিং-এর জন্য বিশেষ পরিচিতি রয়েছে তার। মুহাম্মদ জুবায়েরের বহু প্রামাণ্যচিত্রও আলোচিত হয়েছে। তিনি এক সময় চ্যানেল এস-এর জনপ্রিয় প্রামাণ্যচিত্র ডিটেই? স্টোরির ডিরেক্টর ছিলেন। গোল্ডস্মিথ ইউনিভার্সিটি অব লণ্ডন তাঁর নির্মিত একটি প্রামাণ্যচিত্র কমিশন করে। তাঁর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং প্রামাণ্যচিত্র লণ্ডনে একটি বড় ধরনের জালিয়াত মামলায় সত্য উদঘাটনে সহায়ক হয়। আদালতের চূড়ান্ত রায়ে পুলিশ সূত্রে এই ভূমিকার প্রশংসা করা হয়। চ্যানেল এস-এর ওই রিপোর্টের সূত্র ধরেই গ্রেফতার করা হয় প্রধান আসামীকে।
লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের মাধ্যমে ভলান্টারি কাজেও সক্রিয় মুহাম্মদ জুবায়ের। তিনি ক্লাবের নির্বাহী কমিটিতে নানা পদে দায়িত্ব পালন করেন প্রায় ১৭ বছর। ছিলেন দুই মেয়াদে যথাক্রমে জেনারেল সেক্রেটারি, ট্রেজারার, এসিসটেন্ট সেক্রেটারি ও অর্গেনাইজিং সেক্রেটারি। ক্লাবের বড় দুটি অর্জন নিজস্ব প্রোপার্টি ও নিজস্ব অফিস প্রতিষ্ঠায় নেতৃত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন তিনি।
মুহাম্মদ জুবায়ের অনেকগুলো মানবিক উদ্যোগের সহযোগী। কভিড-১৯ মহামারীর সময় চ্যানেল এস-এর ‘ফিড ফাইভ থাউজেণ্ড প্রকল্প, ২০১৯ সালে বহুল প্রশংসিত সেইভ তাফিদা ক্যাম্পেইন ও ২০২২ সালে বন্যা পরবর্তী সেইভ সিলেট টুগেদার প্রকল্পের কো-অর্ডিনেটর ছিলেন। লাভ ফর এনএইচএস-প্রকল্পের মাধ্যমে কোভিডকালের ভূমিকার জন্য ব্রিটিশ স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রদান করা হয় ১ লাখ ১৫ হাজার পাউণ্ড। এই প্রকল্পেও তহবিলদাতা অংশীদারদের সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ইতিমধ্যে প্রেস ক্লাবে নেতৃত্বপূর্ণ ভূমিকার জন্য ক্যানারি ওয়ার্ফের এওয়ার্ড লাভ করেছেন জুবায়ের। এছাড়া লণ্ডনে সানরাইজ টুডে এবং ইস্টউড এওয়ার্ড পেয়েছেন বেস্ট রিপোর্টিং-ক্যাটাগরিতে। তালিকাভূক্ত হয়েছেন ব্রিটিশ বাংলাদেশী পাওয়ার হাণ্ড্রেডস-এ ২০১৮ সালের নেক্সট জেনারেশন পাবলিক্যাশন্স-এ। কোভিডকালে অনন্য ভূমিকা এবং বিশেষ করে কারী খাত সম্পর্কে যথার্থ রিপোর্টিং-এর জন্য ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড লাভ করেন ২০২০ সালে। এটি ছিলো ব্রিটিশ কারী এওয়ার্ড প্রবর্তক এনাম আলী এমবিই-এর জীবনের শেষ আয়োজন। জুবায়েরকে এই এওয়ার্ড উপস্থাপন করেন বিবিসিখ্যাত সাংবাদিক মিডিয়া ব্যক্তিত্ব রাগি ওমর। এওয়ার্ডের উপস্থাপনায় বলা হয়, মুহাম্মদ জুবায়ের একজন পরিশ্রমী ও মানবিক বোধসম্পন্ন সাংবাদিক। তিনি নিঃস্বার্থভাবে সাংবাদিকতার মাধ্যমে কমিউনিটির কল্যাণে অনন্য ভূমিকা রাখছেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচিত মেয়রের উপদেষ্টা হিশেবে নতুন দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি তিনি সময়-সুযোগে লেখালেখি, টিভি অনুষ্ঠান এবং বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে গণমাধ্যমের সাথে যুক্ত থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও ট্রু নিউজ নামে একটি স্বাধীন অনলাইন প্রডাকশনের কথাও ভাবছেন জুবায়ের।