ফুসফুস-ক্যান্সার পরীক্ষার জন্য মাইল এণ্ড লেজার সেন্টারে স্থাপিত হচ্ছে বিশেষ ‘স্ক্রিনিং ক্লিনিক’
প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ৫৭ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী সেরে ওঠেন
লণ্ডন, ২৬ নভেম্বর: যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশী কমিউনিটির মানুষের মধ্যে ফুসফুস-ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার হার বেশি। যেকেউ যেকোনো সময় এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন। তাই টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের ফুসফুসের ক্যান্সার পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আগামী বছরের শুরুতে পূর্ব লণ্ডনের মাইল এণ্ড লেজার সেন্টারে একটি ‘স্ক্রিনিং ক্লিনিক’ স্থাপন করা হবে। তখন ৫৫ থেকে ৭৪ বছর বয়সী ধুমপায়ী বাসিন্দাদের উক্ত পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য আহবান জানানো হবে। নিজ নিজ জিপির মাধ্যমে এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে এই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে। যদি কারো ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে তাহলে সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কারণ প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার চিহ্নিত করা গেলে রোগীর বেঁচে থাকার দ্বিগুণ সম্ভাবনা থাকে।
গত ২৫ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের উদ্যোগে লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়। ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির মাস নভেম্বর উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়। বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের ইনক্লুশন এণ্ড কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট ম্যানেজার খসরুজ্জমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট গ্রুপ লীডার আব্বাস মির্জা, ক্যান্সার বিষয়ক কনসালটেন্ট আদম জানুস-জেউস্কি ও রেসপিরেটরী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ নিনা প্যাটেল। ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ ডা. অ্যাডাম জানুস-জেউস্কি বলেন, ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সাধারণ লক্ষণগুলো জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করিয়ে নেয়া দরকার। যদি ক্যান্সারের মতো কিছু ফুসফুসকে আক্রান্ত করে তাহলে প্রাথমিক অবস্থায় জানতে পারলে চিকিৎসা করা সহজ হয় এবং সাফল্য আসার সম্ভাবনাও বাড়ে। তিনি বলেন, ফুসফুস ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে ধূমপান। প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তিন সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে কফ থাকা এবং কফের সঙ্গে রক্ত যাওয়া, বুকে ইনফেকশন হওয়া এবং তা সহজে সেরে না ওঠা এবং কোনো কারণ ছাড়াই ওজন কমতে থাকা অথবা বুকে ব্যথা অনুভব করা। এই লক্ষনগুলোর কোনো একটি ধরা পড়লে দ্রুত সংশ্লিষ্ট জিপির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া উচিত। তিনি বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এগুলো নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া ভালো। ট্রাস্টের কমিউনিটি এনগেইজমেন্ট গ্রুপ লীডার আবাস মির্জা বলেন, ফুসফুসে ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির মাস নভেম্বর। তাই বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্ট রোগের লক্ষণগুলো মানুষকে জানাতে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশি কমিউনিটির মানুষদের জিপির সঙ্গে আলোচনা করার জন্য উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হলে তাতে অংশগ্রহণে কেউ যেন দেরী না করেন। ডাঃ নিনা প্যাটেল জানান, কোভিড-১৯ মহামারির প্রথম তিন বছরে নর্থ ইস্ট লণ্ডনে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্তের হার অনেকটাই কমেছে। যুক্তরাজ্যে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে যারা মারা যান তাদের মধ্যে একটা বড় অংশের ফুসফুস আক্রান্ত হয়। মোট ক্যান্সারের মধ্যে এই হার ২১ শতাংশ। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে ৫৭ শতাংশ ফুসফুস ক্যান্সারের রোগী সেরে ওঠেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন এক্সটারনেল এফেয়ার্স ম্যানেজার লিসা দিনহ, মিডিয়া ম্যানেজার হানা ক্রাউচ, বাইলিঙ্গুয়াল হেলথ এডভোকেসি টিমের প্রধান লায়লা কিবরিয়া ও ‘নর্থ-ইস্ট লণ্ডন ক্যান্সার এলায়েন্স’-এর কর্মকর্তা এমা নিকলস।