লণ্ডন, ১৩ ডিসেম্বর: ব্রিটেনে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-ঐতিহ্যের স্মারক আর এখানে বাঙালী কমিউনিটির নানা সংগ্রামের সাক্ষী ‘দিলচাঁদ’ রেস্টুরেন্টকে টিকিয়ে রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সাবেক এমপি শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, আমি আমার পরবর্তী প্রজন্মের পরিচালকদের বলেছি, আর্থিক ক্ষতি স্বীকার করে হলেও এটি টিকিয়ে রাখতে হবে।
রেস্টুরেন্টটির ষাট বছর পূর্তি উপলক্ষে গত ৬ ডিসেম্বর দিলচাঁদ রেস্টুরেন্টে বাংলা মিডিয়ার সাথে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে তিনি জানান, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্বলিত এই রেস্টুরেন্টে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাঙালি রাজনৈতিক নেতা ও বিশিষ্টজনের পদধূলি পড়েছে। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন এবং এক সময়ে বিলাতে কমিউনিটির সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুও ছিল এ রেস্টুরেন্ট। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যের পূর্ব লণ্ডনের ওয়াইডগেইট স্ট্রীটস্থ ‘দিলচাঁদ’ রেস্টুরেন্ট। ব্যস্ততম লিভারপুল স্ট্রীট স্টেশন ও স্পিটালফি?স মার্কেটের কাছের ছোট্ট গলির ভেতরের একটি ভবনে বিলেতে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, পঞ্চাশের দশকে ব্রিটেনে আসা আব্দুল মতলিব চৌধুরী ষাট বছর আগে রেস্টুরেন্টটির যাত্রা শুরু করেছিলেন। কেক কেটে ১৯৬২ সালে প্রতিষ্ঠিত এই রেস্টুরেন্টটির ৬০ বছরপূর্তি উদযাপন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বাংলা মিডিয়ার স্থানীয় সাংবাদিকরা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিলেতে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ও কমিউনিটি উত্থান সময়ে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের দুজন সক্রিয় কর্মী নুরুল হক লালা মিয়া ও সাবেক কাউন্সিলার আকিকুর রহমান। সাংবাদিক আহাদ চৌধুরী বাবুর পরিচালনায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের সহসভাপতি সৈয়দ নাহাস পাশা, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক তাইসির মাহমুদ, সত্যবাণী সম্পাদক সৈয়দ আনাস পাশা, ডেইলী স্টারের লণ্ডন করেসপণ্ডেন্ট আনসার আহমেদ উল্লা, সিনিয়র সাংবাদিক মতিয়ার চৌধুরী, কবি হামিদ মোহাম্মদ, দর্পণ সম্পাদক রহমত আলি, রানার টিভি’র এএসএম মাসুম, ওয়ানবাংলার জাকির হোসেন কয়েস, এনটিভি’র আকরাম হোসেইন, বাংলা টিভির একিউ চৌধুরী মুরাদ, সাংবাদিক শাহ শামীম, সারোয়ার কবির, সারওয়ার কবির, তানভির হাসান, মুস্তাক আলি বাবুল, খালেদ মাসুদ রনি এবং ‘দিলচাঁদ’ এর বর্তমান পরিচালকবৃন্দ ও প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম সদস্য মিঠু চৌধুরী, তপু চৌধুরী ও লিটন চৌধুরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিতরা ‘দিলচাঁদ’কে বাঙালির ইতিহাসের অংশ, ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, একটি দেশের মুক্তি সংগ্রাম ও ভিন্ন একটি দেশে অবস্থানরত সেই সংগ্রামী মানুষগুলোর কমিউনিটি আন্দোলন ইতিহাসের কেন্দ্রে যে একটি রেস্টুরেন্ট অবস্থান করে নিতে পারে ‘দিলচাঁদ’ ছাড়া এমন নজির মনে হয় কোথাও নেই।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানাসহ বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় রাজনীতিক, সাংবাদিক এবং বিলেতের বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের শীর্ষনেতাদের পদস্পর্শে ধন্য আমাদের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘দিলচাঁদ‘। বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও বিলেতের কমিউনিটি আন্দোলনে দিলচাঁদ-এর রয়েছে ঐতিহাসিক ভূমিকা। আর এ কারণেই আমাদের তৃতীয় প্রজন্মও এখনও এই প্রতিষ্ঠানটি সগৌরবে চালিয়ে যাচ্ছে। শফিক চৌধুরী বলেন, লাভ-লোকসান মূখ্য নয়। মূলধারায় নিজেদের সুদৃঢ় অবস্থান তৈরীতে একটি কমিউনিটির বিরামহীন সংগ্রামের ইতিহাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পৌছে দিতে আমাদের পরিবার ‘দিলচাঁদ’কে বাঁচিয়ে রাখতে সচেষ্ট। বর্তমান পরিচালক তৃতীয় প্রজন্মের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে শফিক চৌধুরী বলেন, দেশের বাইরে বেড়ে ওঠা প্রজন্মের অধিকাংশই শিকড় ভূমির ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামায় না। এদিক থেকে মতলিব চৌধুরী পরিবার ভাগ্যবান। আমাদের সন্তানরা যতটা না ব্যবসায়ী দৃষ্টিকোণ থেকে, তাঁর চেয়ে বেশি শিকড় ইতিহাসকে গুরুত্ব দিয়ে দিলচাঁদ পরিচালনা করে যাচ্ছে। পরিবারের পক্ষ থেকে আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, বিলেত-বাংলাদেশের আন্দোলন সংগ্রামে দিলচাঁদ যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, ঠিক তেমনি আমার আজকের অবস্থানের পেছনেও রয়েছে ‘দিলচাঁদ’-এর ভূমিকা। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার পর বঙ্গবন্ধুর বিলেত আগমন ও দিলচাঁদ এ সভা করা, ৭৫ পরবর্তী ও ১/১১ এর দুঃসময়ে দিলচাঁদে সংবাদ সম্মেলন করে বঙ্গবন্ধু কন্যাদের বিশ্বাবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ, ব্রিটেনে বর্ণবাদ বিরোধী আন্দোলনের দিলচাঁদ নেতাকর্মীদের আশ্রয়স্থলে পরিগণিত হওয়া, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ট্রাফালগার স্কোয়ারসহ লণ্ডনের বিভিন্ন আন্দোলন স্পটে যাওয়ার আগে নেতাকর্মীদের দিলচাঁদে পরামর্শ করা, এমনসব ঘটনার ইতিহাস জেনে জেনে এবং কোন কোন ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততা থেকেই মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে আমি সম্পৃক্ত হই। সেদিক থেকে বিচার করলে আমার বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য হওয়ার পেছনেও রয়েছে ‘দিলচাঁদ’এর ভূমিকা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি