পত্রিকা ডেস্ক ♦ লণ্ডন, ১৯ ডিসেম্বর: যুক্তরাজ্যে অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় চাওয়া ব্যক্তিদের রুয়াণ্ডায় পাঠানোর জন্য সরকার যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেটিকে বৈধ বলে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ১৯ ডিসেম্বর সোমবার দেয়া রায়ে হাইকোর্ট বলেছে, সার্বিক বিবেচনায় সরকারের নীতি বৈধ। তুমুল বিতর্কিত রুয়াণ্ডা নীতি নিয়ে হাইকোর্টের এই রায়কে সরকারের বিজয় হিসেবে দেখছেন হোম সেক্রেটারি সুয়েলা ব্রেভারম্যান। তিনি বলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়াণ্ডা প্রেরণের নীতিতে তিনি অটল আছেন।
তবে হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, যে আটজন আশ্রয়প্রার্থীকে সরকারের নীতির বিরুদ্ধে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন, তাদের ব্যক্তিগত পরিস্থিতি সঠিকভাবে মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে হোম অফিস। সরকারের রুয়াণ্ডা নীতি বৈধ। কিন্তু এই নীতি বাস্তবায়নে এবং কোনো আশ্রয়াপ্রার্থীকে রুয়াণ্ডা প্রেরণের আগে সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর ব্যক্তিগত পরিস্থিতিকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে।
গত এপ্রিল মাসে হোম সেক্রেটারির দায়িত্বে থাকা প্রীতি পাটেল রুয়াণ্ডা সরকারের সঙ্গে এক বিতর্কিত চুক্তি করেন। ওই চুক্তি অনুযায়ী, যারা অবৈধ উপায়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করবে তাদের প্রাথমিকভাবে রুয়াণ্ডায় পাঠিয়ে দেয়া হবে। রুয়াণ্ডা থেকেই তাদের আশ্রয় আবেদন করতে হবে। সেখানে তাদের জন্য নিরপদ বসবাসের ব্যবস্থা করা হবে। যাদের আশ্রয় আবেদন গৃহীত হবে তাদের যুক্তরাজ্যে আসার সুযোগ দেয়া হবে। বাকীদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে রুয়াণ্ডা থেকেই। তবে গর্ভবতী নারী ও শিশুদের এই নীতি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। তারা যুক্তরাজ্যে থেকে আশ্রয় আবেদনের সুযোগ পাবেন।
র্পূব আফ্রিকার দেশ রুয়াণ্ডার শাসন ব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। ফলে সরকারের ওই চুক্তির পর এ নিয়ে বিভিন্ন তরফ থেকে তুমুল সমালোচনা শুরু হয়। এই নীতিকে অমানবিক এবং নিষ্ঠুর বলে আখ্যা দেয়া হয়। বিরোধী দল লেবার পার্টি দাবি করে, সরকারের এই বিতর্কিত ও নিষ্ঠুর নীতি শরণার্থীদের অবৈধ প্রবেশ ঠেকাতে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখবে না। নানা বিতর্কের মধ্যেই গত ১৪ জুন আটজন আশ্রয়প্রার্থীকে নিয়ে রুয়াণ্ডার পথে প্রথম ফ্লাইট যেতে প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু একের পর এক আইনী চ্যালেঞ্জে ওই ফ্লাইট আর যেতে পারেনি। ফলে বন্ধ হয়ে থাকে রুয়াণ্ডা নীতির বাস্তবায়ন।
সরকারের রুয়াণ্ডা নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে ক্যাম্পেইনার, চ্যারিটি এবং আশ্রয়প্রার্থীদের করা মামলায় গত সেপ্টেম্বরে হাইকোর্টে পাঁচদিনব্যাপী শুনানী হয়। আর গত সোমবার এই মামলার রায় আসলো। আদালত ওই আট আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনকে পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছে।
মামলার বাদীরা রুয়াণ্ডা আশ্রয়প্রার্থীদের বসবাসের জন্য নিরাপদ দেশ নয় বলে দাবি করেছিলেন। আদালত তাঁদের সেই দাবি খারিজ করে দিয়েছে।
তবে হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে সরকার আশ্রয়প্রার্থীদের রুয়াণ্ডা পাঠিয়ে দিতে পারবে না। কারণ রায়ের বিরুদ্ধে কোর্ট অব আপিল ’ এবং পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টে আপিল করার সুযোগ রয়েছে। রায়ের বিরোধীরা ইতিমধ্যে আপিল করবেন বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, অবৈধ উপায়ে প্রবেশ করলে তাদের অন্য কোনো নিরাপদ দেশে অবস্থানের সুযোগ করে দেয়ার বিষয়টি সাধারণ বোধগম্য বিষয়।
লেবার দলীয় শ্যাডো হোম সেক্রেটারি ইভেট কুপার বলেছেন, সরকারের রুয়াণ্ডা নীত অকার্যকর, অনৈতিক এবং বিশালরকম ব্যয়বহুল।
ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অবৈধ প্রবেশ চলছেই
ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ফ্রান্স থেকে শরণার্থীদের যুক্তরাজ্যে প্রবেশ চলছেই। চলতি বছর এ পথে অবৈধ প্রবেশকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজারের কাছাকাছি। সরকার এসব আশ্রয়প্রার্থীর বাসস্থান ও খাওয়া- দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হিমমিশ খাচ্ছে।
এদিকে ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যগামী অভিবাসীদের একটি ছোট নৌকা ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় ডুবে গেছে। এতে চারজন অভিবাসীর মৃত্যু হয়েছে। গত বুধবার ভোরে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে বলা হয়েছে। এর আগে গত বছরের নভেম্বরে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দেওয়ার সময় একটি ডিঙি নৌকা ডুবে ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছিল। গত সপ্তাহে ব্রিটেনজুড়ে তাপমাত্রা নেমে গেছে, দেশের কিছু অংশে তুষারপাত হয়েছে। তীব্র ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে অভিবাসীরা ছোট ছোট নৌকায় করে বিপজ্জনকভাবে যাত্রা করছে। রয়টার্স বলেছে, এ বছর অন্তত ৪০ হাজার অভিবাসী ফ্রান্স থেকে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। এটি একটি রেকর্ড। এই অভিবাসীদের বেশির ভাগই আফগানিস্তান, ইরান, আলবেনিয়া ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ থেকে নিপীড়নের শিকার হয়ে ব্রিটেনে আশ্রয় নিতে চায়।
এই দুর্ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। সংসদে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি বলেছেন, ‘আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। এ দুর্ঘটনায় যারা নিহত হয়েছে, আহত হয়েছে ও উদ্ধারকাজ চালিয়েছে-সবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।’ এদিকে এ দুর্ঘটনার জন্য মানব পাচারকারী চক্রকে দায়ী করেছেন ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুয়েলা ব্র্যাভারম্যান। তিনি বলেছেন, ‘এভাবে ছোট ছোট নৌকায় করে চ্যানেল পাড়ি দেওয়া মারাত্মক বিপজ্জনক প্রচেষ্টা।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা মানব পাচারকারীদের রুখতে কঠোর পরিশ্রম করছি। তারা ভয়ংকর দুষ্ট এবং সংগঠিত চক্র।