লণ্ডন, ২০ ডিসেম্বর: দেশাত্ববোধক কবিতা পাঠ, বিজয়ের গান পরিবেশন ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণার মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের ৫২তম বিজয় দিবস উদযাপন করলো লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব। ১৭ ডিসেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ক্লাব কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আয়োজনটি ছিলো বেশ ভাবগাম্ভীর্যপূর্র্ণ।
প্রেস ক্লাব সভাপতি মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও জেনারেল সেক্রেটারি তাইসির মাহমুদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানটি মহিমান্বিত হয়ে ওঠে জাতির সূর্যসন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মাসুদের উপস্থিতিতে। তিনি শোনান একাত্তরের হিরম্ময় সময় বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিকথা। ক্লান্তিহীন বর্ণনায় তুলে ধরেন সম্মুখ সমরে অংশ নেয়ার সাহসী কাহিনী। জীবনকে বাজি রেখে তাঁরা কীভাবে দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন বীরত্বের সে সব গৌরবগাথা তুলে ধরেন তিনি। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি তাদের জন্য সরাসরি একজন মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠে যুদ্ধদিনের স্মৃতিকথা শোনার সুযোগটি ছিলো নিঃসন্দেহে অনন্য এক অভিজ্ঞতা। একে এম মাসুদ বলেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা নেতৃত্ব দিয়েছেন, যারা ময়দানে যুদ্ধ করেছেন সকলকে যথাযথভাবে সম্মান দেওয়া উচিত। কাউকে ছোট করে দেখা উচিত নয়। যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণের আগে মুক্তিযোদ্ধা একে এম মাসুদকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করে নেন প্রেস ক্লাবের নির্বাহী কমিটির নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানটি শুরু হয় একাত্তরের বীর শহীদদের আত্মার শান্তি কামনা করে। সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে নিজ নিজ ধর্মবিশ্বাস অনুযায়ী শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মার শান্তি কামনা করেন। এরপর সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মিলনের নেতৃত্বে উপস্থিত অতিথিরা সমবেত কণ্ঠে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। মুক্তিযোদ্ধা একে এম মাসুদের যুদ্ধদিনের স্মৃতিচারণ শেষ হলে শুরু হয় মুক্ত আলোচনা। এতে বক্তব্য রাখেন লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট রহমত আলী। তিনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের উদ্দেশে নানা প্রতিকুলতার মধ্যে সহপাঠিদের সঙ্গে নৌকায় চড়ে ভারত যাওয়া এবং বয়স কম হওয়ার কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ফিরে আসার গল্প শোনান। সাংবাদিক-লেখক শহীদ সন্তান আকবর হোসেন ১৯৭১ সালের পয়লা সেপ্টেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী পরিচালিত গণহত্যায় তাঁর পিতা জগন্নাথপুরের রানীগঞ্জ বাজার কমিটির চেয়ারম্যান আকলু মিয়াসহ শতাধিক গ্রামবাসী শহীদ হওয়ার মর্মান্তিক ঘটনা তুলে ধরেন।
এরপর কবিতা পর্বে দেশাত“বোধক কবিতা আবৃত্তি করেন বিবিসি বাংলার সাবেক প্রযোজক উদয় শঙ্কর দাশ, কবি ও ছড়াকার দিলু নাসের, সাংবাদিক সারওয়ার-ই-আলম ও সাংবাদিক আমিমুল আহসান তানিম। সর্বশেষ আকর্ষণ ছিল সাংবাদিক মোস্তফা কামাল মিলনের কণ্ঠে একক সঙ্গীত পরিবেশনা। তিনি পরিবেশন করেন কয়েকটি কালজয়ী দেশাত্ববোধক গান, যেগুলো মুক্তিযুদ্ধে উদ্দীপ্ত করেছিল রণাঙ্গনের বীর যোদ্ধাদের। প্রতিটি গানের কথা যেন রক্তে আগুন ধরিয়ে দেয়। মোস্তফা কামাল মিলন যখন গলা ছেড়ে একের পর দেশাত্ববোধক গান পরিবেশন করছিলেন, তখন আর নীরবে বসে থাকতে পারলেন না মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মাসুদ। স্মৃতিতাড়িত হয়ে যেন ফিরে গেলেন একাত্তরে। উঠে এসে কণ্ঠ মেলালেন শিল্পীর সঙ্গে। অতিথিরাও মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে উপভোগ করছিলেন আর ছন্দে ছন্দে তালি বাজিয়ে চেষ্টা করলেন কণ্ঠ মেলাতে। ক্লাবের পক্ষ থেকে সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে বক্তব্য রাখেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহমেদ। আয়োজনটি সার্বিকভাবে সফল করতে সহযোগিতা করেন ক্লাবের এসিসটেন্ট ট্রেজারার মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম, ইভেন্ট এন্ড ফ্যাসিলিটজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা ও নির্বাহী সদস্য আহাদ চৌধুরী বাবু। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সদস্য, সিনিয়র সাংবাদিক লেখক আব্দুল মুনিম জাহেদী ক্যারল, টিভিওয়ানের সিনিয়র রিপোর্টার জাকির হোসাইন কয়েস, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব সদস্য মোহাম্মদ রহিম, হাবিবুর রহমান সাইফ রিজভী ও সাংবাদিক হাসনাত চৌধুরী। সাংস্কৃতিক পর্ব শেষে হোয়াইটচ্যাপেলের বিসমিল্লাহ রেস্টুরেন্টের সৌজন্যে ছিলো সুস্বাদু খাবার পরিবেশনা। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি