ডিপোজিট ন্যূনতম ২ শতাংশ
রাইট টু বাই সুবিধা হাউজিং এসোসিয়েশনের টেনেন্টদের জন্যও
ডিপোজিট ন্যুনতম ২ শতাংশ রাইট টু বাই সুবিধা হাউজিং এসোসিয়েশন টেনেন্টদের জন্যও পত্রিকা প্রতিবেদন লণ্ডন, ১৩ জুন: প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানিয়েছেন, হাউজিং বেনিফিটের অর্থ দিয়ে মানুষকে বাড়ি কেনার সুযোগ দেয়ার সুযোগ দেয়ার কথা ভাবছে তাঁর সরকার। তিনি বলেন, সময় এসেছে হাউজিং বেনিফিটের অর্থকে আরও ভালোভাবে কাজে লাগানোর। গত বৃহস্পতিবার দেয়া এক বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেন, তিনি প্রয়োজনীয় নিয়ম পরিবর্তন করবেন যাতে বাড়ি কেনার মর্গেজ পেতে বেনিফিটের অর্থকে আয় হিসেবে গণ্য করা হয়। তাঁর এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে ব্রিটেনে বেনিফিটে থাকা লাখ লাখ মানুষ নিজস্ব বাড়ির মালিক হতে সক্ষম হবে। প্রধানমন্ত্রী আরও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তাঁর সরকার মর্গেজ মার্কেট নিয়ে নতুন করে পর্যালোচনা করবে, যাতে ন্যুনতম ২ শতাংশ ডিপোজিট দিয়ে মানুষ বাড়ি কেনার মর্গেজ পেতে সক্ষম হয়। প্রায় সাত বছর আগে ততকালীন কনজারভেটিভ সরকার রাইট টু বাই পলিসি হাউজিং এসোসিয়েশনের টেনেন্টদের জন্যও প্রয়োগ করার কথা বলেছিলো। বরিস জনসন বলেছেন, তিনি সেটিও বাস্তবায়ন করতে কাজ করবেন। নেতৃত্ব নিয়ে নিজ দলের ৪০ শতাংশ এমপি বরিস জনসনের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর উদার ঘোষণাকে চাপ সামলানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন সমালোচকরা। বিরোধী দল লেবার পার্টি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে অকার্যকর আখ্যা দিয়ে বলেছে, ১৬ হাজার পাউণ্ডের বেশি জমা অর্থ থাকলে যারা মানুষ বেনিফিট পাওয়ার যোগ্য হয় না। সেক্ষেত্রে বেনিফিটে থাকা মানুষ বাড়ি কেনার সুযোগ নিয়ে প্রয়োজনীয় ডিপিজোট জমাবে কি করে? তবে মর্গেজ প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে মোটাদাগে স্বাগত জানিয়েছে। নেটওয়েস্ট বলেছে, ইতিমধ্যে তারা কিছ ক্ষেত্রে আয় হিসেবে গণ্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, ব্রিটেনে বর্তমানে হাউজিং বেনিফিট বাবদ বছরে ৩০ বিলিয়ন পাউণ্ড ব্যয় হচ্ছে সরকারের। এটা জনগণের করের অর্থ। অফিস ফর বাজেট রেসপনসিবিটির পূর্ভাবাস অনুযায়ী ২০৩০ সাল নাগাদ হাউজিং বেনিফিট বাবদ সরকারের ব্যয় বেড়ে হবে বছরে ৫০ বিলিয়ন পাউণ্ড। প্রধানমন্ত্রীর মতে, হাউজিং বেনিফিট বাবদ দেয়া এ বিশাল অর্থ প্রকৃতপক্ষে দীর্ঘমেয়াদে মানুষের কেনো কাজে আসছে না। মাসিক ভাড়া দিয়ে ঘরে থাকতেই এ অর্থ শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেনিফিটে থাকা মানুষ আজীবন ভাড়াটিয়াই থেকে যাচ্ছেন। আজীবন তাদের একইভাবে হাউজিং বেনিফিট দিয়ে যেতে হবে সরকারকে। সে কারণে হাউজিং বেনিফিট নিয়ে নতুন করে ভাবার এবং এই অর্থ আরও কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদে উপকার হয় এমন উপায় খোঁজা সময় এসেছে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী জনসন। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, হাউজিং বেনিফিট দিয়ে যাতে মানুষ নিজস্ব বাড়ি কিনতে পারে সে সুযোগ দেয়া উচিত। এতে লাখ লাখ লোক বাড়ির মালিক হতে পারবে এবং তাদের ভাড়াটিয়া জীবনের অবসান হবে। এতে হাউজিং বেনিফিট বাবদ দেয়া অর্থ মানুষের স্থায়ী কাজে লাগবে। দীর্ঘ মেয়াদে হাউজিং বেনিফিট বাবদ বার্ষিক ব্যয়ও কমে আসবে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব অনুযায়ী, মূলত বেনিফিট হিসেবে পাওয়া অর্থ মানুষের মাসিক আয় হিসেবে গণ্য করা হবে। এতে বাড়ি কেনার জন্য মানুষের মর্গেজ পেতে সুবিধা হবে। আর ন্যূনতম ২ শতাংশ ডিপোজিট দিয়ে মর্গেজ পাওয়ার সুযোগ অনেক দরিদ্র মানুষকেও বাড়ি কেনার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করবে। মাত্র ২ শতাংশ ডিপোজিটে বাড়ি কেনা গেলে ৫শ হাজার পাউণ্ডের বাড়ির জন্য ডিপোজিট দিতে হবে মাত্র ১০ হাজার পাউণ্ড। এতদিন শুধু কাউন্সিল হাউজগুলো রাইট টু বাইয়ের অধীনে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্টে টেনেন্টরা কিনতে পারতেন। প্রায় সাত বছর আগে কনজারভেটিভ সরকার এই সুবিধা হাউজিং এসোসিয়েশনের টেনেন্টদের জন্যও প্রয়োগ করার প্রস্তাব করেছিলো। কিন্তু এতদিন বিষয়টি আর না আগালেও প্রধানমন্ত্রী জনসন বলেছেন, তিনি ওই প্রস্তাবও বাস্তবায়ন করার উদ্যোগ নেবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাউজিং এসোসিয়েশনের প্রতিটি বাড়ি বিক্রির বিপরীতে নতুন করে সমান সংখ্যাক বাড়ি নির্মাণ করা হবে, যাতে সোশ্যাল হাউজিং খাতে বাড়ির সংকট তৈরি না হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেনিফিটে থাকা লোকজন যাতে বাড়ি কেনার জন্য ১৬ হাজার পাউণ্ডের বেশি জমাতে পারে সেজন্য লাইফ টাইম আইএসএ এবং হেল্প টু বাই আইএসএ স্কিমকে ১৬ হাজার পাউণ্ডের ক্যাপ থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে তার সরকার। লেভেলিং আপ সেক্রেটারি মাইকেল গোভ বলেছেন, হাউজিং বেনিফিট নিয়ে সরকারের ঘোষিত প্রস্তবনা বহু লোককে নিজস্ব বাড়ি কিনতে সাহায্য করবে। তিনি বলেন, কনজারভেটিভ দল সব সময় মানুষকে নিজস্ব বাড়ির হওয়ার সুযোগ দেয়ার পক্ষে। লেবার দলের শ্যাডো সেক্রেটারি লিজা নন্দী বলেন, মর্গেজ ল্যাণ্ডাররা ভূমিকা না রাখলে সরকারের পরিকল্পনা কোনো কাজে আসবে না। বিষয়টি নিয়ে শ্যাডো মিনিস্টার জেস ফিলিপ বলেন, কিভাবে হাউজিং বেনিফিটের এই সুবিধা কাজ করবে তা সরকার এখনও স্পষ্ট করেনি। কারন যারা দেশটিতে ১৬ হাজার পাউণ্ডের উপর আয় করেন তারা ইউনিভার্সেল ক্রেডিট পায় না। কিন্তু তারা তো অর্থনৈতিক সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তাই সরকার যারা বেনিফিট সুবিধার আওতায় রয়েছে তাদের বাড়ি কেনার জন্য সুযোগ দিচ্ছেন, কিন্তু যারা আয় করেও ভালো নেই তাদের জন্য কি সুবিধা থাকবে তা সরকার স্পষ্ট করে নি।