ব্যবসা হারাচ্ছে এজেন্টগুলো, বিপাকে যাত্রীরা
পত্রিকা প্রতিবেদন লণ্ডন, ১৩ জুন: হজের জন্য নিজস্ব অনলাইন বুকিং সেবা চালু করেছে সৌদি কর্তৃপক্ষ। হজের ভিসা, যাতায়তের টিকিট এবং থাকার হোটেল সহ সৌদি সরকারের চালু করা ওই নির্দিষ্ট ওয়েবসাইট থেকেই করতে হবে। হজের এক মাসেরও কম সময় বাকী থাকতে সম্প্রতি সৌদি সরকারের এমন আকস্মিক ঘোষণায় বিরাট বিপাকে পড়েছেন যুক্তরাজ্যের হজে যেতে ইচ্ছুক মানুষরা। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্যের হজ সেবাদানকারী এজেন্টগুলোর লাখ লাখ পাউণ্ড আটকা পড়েছে বিভিন্ন এয়ারলাইন্স ও সৌদি আরবের বিভিন্ন কোম্পানির কাছে। আবার যারা ইতিমধ্যে হজে যাওয়ার জন্য বিভিন্ন এজেন্টের কাছে অর্থ দিয়েছেন তারাও পড়েছেন বিপাকে। অনলাইন ব্যবহার না জানা, সৌদি আরবে গিয়ে ভাষাগত সমস্যা, এবং হজের নিয়ম কানুন সম্পর্কে অবগত না হওয়ার কারণেও মানুষ বিপাকে পড়েছেন। সব মিলিয়ে হজ নিয়ে সৌদি সরকারের নতুন নিয়ম হাজার হাজার মানুষকে বড় বিপাকে ফেলেছে। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের সবকটি দেশ এবং আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ার হজ যাত্রীরা অনলাইনে হজে যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করতে হবে। এরপর নির্ধারিত কোটা অনুযায়ী লটারির মাধ্যমে ঠিক করা হবে কারা হজে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন। লটারি জেরা ব্যক্তিরা নির্ধারিত ওয়েবসাইটে হজের ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে, যাতায়তের টিকিটি করতে হবে এবং হোটেল বুকিং করতে হবে। এসব সেবার সবকিছুই সৌদি সরকারের বাছাই করা প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ করবে। সরকারী ওয়েবসাইট থেকেই এসব সেবা ক্রয় করতে হবে। হজের সেবাখাত সংশ্লিষ্ট সকল আয় সৌদি কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার কৌশল হিসেবে এমন উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি সরকার। এখন পর্যন্ত কেবল হজের ক্ষেত্রে এ নিয়ম চালু করা হলেও খুব শিঘ্রই ওমরাহর ক্ষেত্রে একই নিয়ম চালু করা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এতদিন গ্রুপ ভিত্তিক হাজীদের নিয়ে যেতো এজেন্টরা। হাজীদের গাইড সেবা ও গ্রুপ লিডারের সেবা প্রদান করতো। ফলে থাকা-খাওয়া, যাতায়তসহ হজ পালনে হাজীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হতো না। নতুন নিয়মে গাইড বা গ্রুপ লিডারের সুযোগ নেই। সর্বোচ্চ ৯জন পর্যন্ত এক গ্রুপে হজের আবেদন করতে পাররেও লটারিতে সবার সুযোগ মেলার নিশ্চয়তা নেই। আবার গাইড বা গ্রুপ লিডার হিসেবে কেউ আবেদনও করারও সুযোগ নেই। হজ সেবাপ্রদানকারী একটি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার নাম প্রকাশ না করার শর্তে পত্রিকাকে বলেন, যুক্তরাজ্যে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি বছর অন্তত ২৮ হাজার মানুষকে হজের ভিসা দেয় সৌদি কর্তৃপক্ষ। হজের সেবা দেয়ার জন্য যুক্তরাজ্যে ১৭০টির বেশি কোম্পানি আছে। কোম্পানিগুলো হজের বেশ আগ থেকেই এয়ারলাইন্স এবং সৌদির হোটেলগুলোর বুকিং নিয়ে রাখে হাজীদের জন্য। গত মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত সৌদি কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে হজ বুকিংয়ের বিষয়ে উতসাহ দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন হুট করে সব বাতিল করে তারা নিজস্ব অনলাইন সেবা বাধ্যতামূলক করেছে। এর ফলে বহুমূখী সমস্য তৈরি হয়েছে। একদিকে এজেন্টগুলো যে মিলিয়ন মিলিয়ন পাউণ্ড টিকিট ও হোটেল বুকিংয়ে বিনিয়োগ করেছে সেই অর্থ আটকে গেছে। যাদের কাছ থেকে হজের বুকিং নিয়ে অর্থ আদায় করা হয়েছে ওইসব হাজীদেরও অর্থ আটকে গেছে। এ অর্থ কবে কীভাবে ফেরত পাওয়া যাবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সৌদি সরকারের সিদ্ধান্তে হজ সেবাপ্রদানকারী এজেন্টগুলোর ব্যবসাও অনেকটা বন্ধ হয়ে গেছে বলা চলে। অন্যদিকে যারা হজে যাবেন তারা গ্রুপের সঙ্গে গাইড এবং গ্রুপ লিডার নিয়ে যেতে পছন্দ করেন। এতে হজের নিয়ম-কানুন পালনের পাশাপাশি থাকা-খাওয়া ও চলাচলে তাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। নতুন নিয়মে একা একা বা পরিবার নিয়ে হজ পালন করতে হবে। অনেকে অনলাইন ব্যবহার জানেন না। সৌদি আরব সম্পর্কে ধারণা নেই। ভাষা জানেন না। ফলে হজ পালন নিয়ে অনেকেই চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। এই এজেন্ট মালিক বলেন, একটি সরকার শেষ মূর্হেতে এসে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এটা অন্যায়। আগে থেকে নোটিস দিয়ে কাজটি করা উচিত ছিলো। তাহলে হজ এজেন্ট এবং হজে যেতে ইচ্ছুক মানুষদের ভিন্নরকম প্রস্তুতি থাকতো। ট্রাভেল এজেন্ট এবং হজ গাইড আবু সাইদ আনসারী স্কাই নিউজকে বলেন, পুরো পরিস্থিতিটা দু:স্বপ্নের মত। সৌদি সরকারের আকস্মিক এমন সিদ্ধান্তের কারণে যুক্তরাজ্যের ১৭৫ মিলিয়ন পাউণ্ডের হজ ইণ্ডাস্ট্রি রাতারাতি হারিয়ে যেতে বসেছে। তাঁর প্রতিষ্ঠান প্রায় ২ লাখ ৮০ পাউণ্ড ফেরত দিতে হবে বলে জানান তিনি। যুক্তরাজ্য থেকে হজে যেতে একজন যাত্রীর ৬ থেকে ১০ হাজার পাউণ্ড পর্যন্ত খরচ হয়। সৌদি সরকারের অনলাইন সেবা চালুর কারণে এ খরচ কিছুটা কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ ভোগান্তি এবং অনিশ্চয়তায় পড়বেন। বিশেষ করে হজ সেবাদানকারী এজেন্টগুলোর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হবে। বিবিসি জানিয়েছে, যুক্তরাজ্যের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক অল পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের চেয়ার ইয়াসমিন কুরেশি বিষয়টি নিয়ে সৌদি আরবের হজ অ্যাণ্ড ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন। চিঠিতে যুক্তরাজ্যের এজেন্ট ও হজে যেতে ইচ্ছুক মানুষের ভোগান্তির কথা তুলে ধরে তিনি সৌদি সরকারের অনলাইনে আবেদনের সিদ্ধান্ত আগামী বছর পর্যন্ত পেছাতে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া যেসব এজেন্টদের অর্থ সৌদি কোম্পানিগুলোর কাছে আটকা পড়েছে সেগুলো ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেছেন।