☀ We are Hiring ☀

PROJECT COORDINATOR

Bengali Drama: Narratives of Time (1963–2013)
Location: East London
Salary: £36,996 pro rata
Hours: 17.5 per week; Duration:18 months

For an application pack:

Email: info@artswithoutborders.co.uk
Deadline: 8 December 2024, 11:59 pm
Only successful applicants will be contacted
Online Interviews to be conducted on 13 December 2024

বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০২৪

সাময়িকী

চারাভাঙ্গার কান্না…

জানুয়ারি ১৪, ২০২৩ ৩:০৪ অপরাহ্ণ

সৈয়দ মনসুর উদ্দিন 

হাইলাইট

চারাভাঙ্গা তার আশপাশের পুরো এলাকা আস্তে আস্তে দানব হয়ে জেগে উঠছে শত শত একরের ধান ক্ষেতে অপরিকল্পিত কারখানার আলো জ্যোৎস্নাকে হত্যা করছে তিলে তিলে, বেলঘরের চূড়ায় এখন আর গোধূলি নামে না, বিদায় নিয়েছে জোনাকী পোকারা, সাইরেন আর গাড়ীর আওয়াজে হারিয়ে গেছে কুয়াশার নিঃশব্দ কোকিল, শালিক, ঘুঘু পাখিরাও চলে গছে বহু আগেই শিশিরে ঝলমল করা সোনা গলানো রোদে প্রভাত এসে আর লুটিয়ে পড়ে না এখানে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার অমৃতের টুকরাগুলো বিদায় নিচ্ছে একে একে চিরকালের মতো বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে আমার জন্মভূমি  

ছবির বাড়িটিই আমার জন্মস্থান। এ বাড়িতেই আমি ছিলাম জীবনের প্রথম ১৬ বছর। এক টানা। এরপর কেটেছে প্রায় ৩৫ বছর। এসময়ে এই উৎসভূমিতে গিয়েছি বিভিন্ন বিরতিতে। নানা জটিলতা আর করোনার কারণে এবার ৯ বছর বিরতিতে- এই ডিসেম্বরে! এর অবস্থান হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলায়। গ্রামের নাম চারাভাঙ্গা।

এই চারাভাঙ্গাকে এখন আমি আর আগের মতো চিনি না। আমি চিনি কেবল চোখ বুজলে। দেখতে পাই অজস্র দৃশ্য! একের পর এক! ছবির পর ছবি। এযেন অন্তহীন গ্রামীণ সৌন্দর্য্যরে লীলাভূমি! আমি দেখতে পাই বাড়ির সামনে সরু গ্রামীণ আধা পাকা রাস্তা। রাস্তার ওপারে ধান ক্ষেত, সকাল-সন্ধ্যা গরু নিয়ে কৃষকের কর্মচাঞ্চল্য। বামে প্রাইমারী স্কুল, ডানে সাবরেজিস্ট্রি অফিস। মাঝে ছোট খাল। খালের পার ঘেষে মেঠো পথ। পথের এক পাশে শ্মসানের মঠ।কখনো কখনো অনন্ত যাত্রার কুণ্ডলী পাকানো ধূঁয়া। আরো দূরে পশ্চিমের বেলঘর গ্রাম। প্রছন্ন, স্নিগ্ধ। বাড়ীর সামনে দাঁড়িয়ে এর পল্লবরাশিতে সোনার আলপনায় ছড়িয়ে থাকা আমার দেখা কত বিষণœ গোধূলি। দূরের সুপারি গাছে হারিয়ে যাওয়া সন্ধ্যার কত পাখি। দেখতে পাই ধানের ডগায় আছড়ে পড়া ভোরের শিশির, হেমন্তের কুয়াশা, আষাঢ় শ্রাবণের প্রবল বৃষ্টি, মাঝে মাঝে পানিতে ডুবে যাওয়া ধানের জমিতে পালতোলা নৌকা। গরু নিয়ে রাখালের পথচলা। বাড়ীর বাংলা ঘরের সামনে দেখতে পাই বিস্তৃত আকাশ, সাদা কালো মেঘের গুচ্ছ গুচ্ছ আনাগোনা, সন্ধ্যা তারা, দূরের নক্ষত্র, জোনাকী পোকাদের মিছিল। চোখে পড়ে রাত নেমে যাবার আগেই রাত। আর ঐ রাতের চাঁদ আর তার ব্যাকুল জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া আমার প্রিয় চারাভাঙ্গা গ্রাম। আমার মোনালিসা!

এখানেই আমি বেড়ে উঠেছি! পাশের জগদীশপুর প্রাইমারী আর যোগেশ চন্দ্র হাইস্কুলে দীক্ষা নিয়েছি। স্কুল মাঠে বন্ধুদের সাথে হাডুডু, ফুটবল আর ব্যাডমিন্টন খেলেছি। কোন কোন বিকেলে হারিয়ে গেছি পাশের চা বাগানের চিররহস্যঘেরা সৌন্দর্য্যে। ইটাখোলা স্টেশনের রেল লাইনে বসে থেকেছি অকারণে। সরল রেললাইনে বসেই বুকের ভেতরে আঁকাবাকা স্বপ্ন বুনেছি। নিকষ কালো অন্ধকার রাতে শেয়াল কিংবা ট্রেনের শব্দে জেগে উঠেছি। হুতোম প্যাঁচার ডাকে ভয় পেয়েছি কখনো কখনো। শীতের রাত্রিতে পূজার শব্দ কিংবা মাইকে ভেসে আসা চা শ্রমিকদের যাত্রা পালার সংলাপে শিহরিত হয়েছি। মুয়াজ্জীনের সুরেলা আজানে ভোরের বার্তা পেয়েছি। চারাভাঙ্গা আর তার আশে পাশের জল, জ্যোৎস্না, ধূলি, রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ সবই আমার গায়ে আজো মেখে আছে।

আমি আজো একে দেখি প্রবল ভাবে, এই পৃথিবীর যে কোন প্রান্তে। দেখি ঘুমে, স্বপ্নে, অর্জনে, দঃখে, অবসরে। এর নির্মল বাতাস, চারপাশের বুনো ফুল, ঘাসের তীব্র ঘ্রাণ, নবান্নের উৎসব আজো আমাকে আলোড়িত করে। আমি ভুলতে পারি না। পৃথিবীর কোন আয়োজনই আমাকে ভোলাতে পারে না চারাভাঙ্গাকে। দীর্ঘ নয় বছর পর এবার যে চারাভাঙ্গাকে দেখেছি তা আমার চারাভাঙ্গা নয়। প্রায় এক দশক পরে আশে পাশের যে এলাকাকে দেখেছি তা আমার শৈশবের চারণভূমি নয়। এখন চারপাশে তুমুল বদলে যাবার দুর্ধর্ষ দৃশ্য। এ দৃশ্য করুণ, নির্মম, ভয়ঙ্কর।

জগদীশপুর, বেলঘর, চারাভাঙ্গা, মির্জাপুর, সন্তোষপুর, নোয়াপাড়া, ছাতিয়াইন, খান্দুরা, শাহজীবাজার থেকে শায়েস্তাগঞ্জ পর্যন্ত মহাসড়ক ঘেষে ধান ক্ষেতে সারি সারি মাটি কাটার আধুনিক মেশিনপত্র আর ইমারত নির্মাণ-সামগ্রী। শত শত ইটের ভাটা। স্টিল আর সিমেন্টের বিজ্ঞাপন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক মোড় ঘুরে বাড়ীর অদূরে দিয়ে যাবার কারণে চলছে প্রকৃতির সব কিছুকে বিলুপ্ত করার মহা আয়োজন। সরকার নির্ধারিত স্থান না হওয়া সত্ত্বেও কৌশলে শত শত একর ধান ক্ষেত সস্তায় কিনে নিয়ে ব্যবসায়ীরা বানাচ্ছেন শিল্প প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে চালু হয়ে গেছে অনেকগুলো। উন্নত বিশ্বের মতো তাদের নেই রিসাইক্লিং অথবা সুয়ারেজ কিংবা ড্রেনেজ সিস্টেম। তাই অবলীলায় তারা শিল্পের বর্জ্য ‘ঢেলে দিচ্ছেন’ অবশিষ্ট ধান ক্ষেতে কিংবা খালে। ফলে ছড়াচ্ছে দূর্গন্ধ। নষ্ট হচ্ছে পানি, মরছে খাল বিলের মাছ। কখনো কখনো জমে থাকছে পানি। ভিক্ষা চাই না কুত্তা সামলাও- এই ভেবে কেউ কেউ স্বেচ্ছায় বিক্রি করছেন ধানী জমি। সুবিধাজনক অবস্থানে থাকারা বসে আছেন আরেকটু লাভের অপেক্ষায়।

ফসলী জমিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান বানানো আর বর্জ্য নিষ্কাশনের বিষয়ে আইন থাকলেও প্রয়োগ নেই কোথাও। ম্যানেজ হয়ে যাচ্ছে সব কিছু। অনায়াসে। উন্নয়নের বুঁদে সব মুখ চুপচাপ। সস্তা শ্রমে স্থানীয়দের কর্মসংস্থান হলেও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা শ্রমিকদের জন্য নেই কোন প্রাতিষ্ঠানিক আবাসনের ব্যবস্থা। নেই ট্রান্সপোর্ট, স্বাস্থ্য কিংবা শিক্ষার কোন আয়োজন। বিভিন্ন বাড়িতে ভাড়ায় থাকছেন তারা। আয়ের আশায় স্থানীয়রা বাড়ীকেই বানাচ্ছেন দোকান কিংবা মেস। কোথাও নিয়মনীতির বালাই নেই, অনুমতির প্রয়োজন নেই! যত্রতত্র আর এলোমেলোভাবে গড়ে উঠছে সব। যে যেখানে পারছেন বানাচ্ছেন বাড়ী, দোকান কিংবা হোটেল। অটো ট্রেডার্স, ভাই ভাই স্টোর, ভ্যারাইটিজ শপ, বিসমিল্লাহ খানাদানা, মায়ের দোয়া সুপারমার্কেট, আনারকলি শাড়ি বিতান, সোনামনি লুঙ্গি স্টোরও গড়ে উঠছে ধানক্ষেতে। ইট, বালু আর সুরকী নিয়ে গ্রামের সরু রাস্তা দিয়ে ছুটছে ভারী ভারী ট্রাক। এসব রাস্তায় হেলেদুলে চলা পাজেরো, প্রাডো, রেইঞ্জ রোভার আর বিরল নয়। দেশকে সিঙ্গাপুর, কানাডা বানাতে (!) পারার তৃপ্তিতে ভাসমান মালিক সাহেবরা ‘কালা কালা’ চশমায় চলেন এসবে। ফলে নিম্নমানের রাস্তাগুলো নষ্ট হচ্ছে আরো দ্রুতহারে। শত শত চাইনিজ ব্যাটারিচালিত রিকশা, সিএনজি আর টমটমে দৌড়াচ্ছেন গরীব মানুষজন। ব্যবহার শেষে ভয়ঙ্কর এসব ব্যাটারী কোথায় যায় কেউ জানে না।

মহাউন্নয়নের জোয়ারে দেশ এখন ভাসছে প্লাস্টিকের সাগরে। সারাদশের মতো আমার এলাকায়ও প্লাস্টিকের ছড়াছড়ি। বাড়ির সামনে, পিছনে, খালে, বিলে, পুকুরে, নদীতে, রাস্তায়, ছাদে, কার্নিশে, লোকালয়ে, মাঠে, ময়দানে, ডানে, বামে সর্বত্র ভয়ংকর অপচনশীল প্লাস্টিকের ব্যাগ, বোতল আর কৌটা। নোংরা, কুৎসিত, বীভৎস, করুণ এই দৃশ্য। অতলস্পর্শী অন্ধকারের হাতছানি। এখন আর কারো বাড়ীর সামনে কিংবা অন্দরে ফুলের গাছ চোখে পড়ে না। বকুল, হাসনা হেনা, গন্ধরাজ, জবা, টগর, গোলাপ আর বিচিত্র পাতাবাহার এখন ছোটবেলায় শোনা আঙ্গুর, বেদানা আর নাশপাতির মতই দূর্লভ বেহেশতী উপকরণ! সবাই ব্যস্ত। সবার হাতে মোবাইল। ‘মেইড ইন চাইনিজে’র ছড়াছড়ি। তরুণরা এখন আর বই পড়ে না। এরা স্ক্রল করে, কথা বলে, নিজে নিজেই হাসে, হেসে হেসে লুটিয়ে পড়ে। এরা এখন মেশিনে বানানো কফি কিনে খায়। মোটর সাইকেলে চড়ে। চারিদিকে ‘ধনের উল্লাসে’ বিদায় নিয়েছে ‘প্রাণের উল্লাস’। এলাকায় বেড়েছে আমার মত প্রবাসীর সংখ্যাও। ডলার, পাউণ্ড, দিরহাম, দিনারের দাপটে লাল, নীল, সবুজ, কমলা ইত্যাদি বিকট রংয়ের দালান হচ্ছে। রুচিবোধের কিংবা নান্দনিকতার কোন বালাই এসবে।

ধান, আলু, মুলা, সরিষা ক্ষেত থেকে শুরু করে, নালা, নর্দমা, খালে, বিলে ধূলিধূসরিত ‘ভিলা’, ‘ম্যানশন’, ‘হাবেলী’ আর ‘কটেজে’র ছড়াছড়ি। লণ্ডনে ৩ পাউণ্ড ৫০ পেন্সে বিক্রি হওয়া সেলিব্রেশন চকলেটের বক্স ১৭শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চারাভাঙ্গায়। মেয়ের জামাই বাড়ীতে ট্রাকে, লরীতে করে ইফতার, আম-কাঠাল পাঠানোও শুরু হয়ে গেছে। বিদেশের মাটিতে আধুনিক দাসত্বে কাটানো জীবন থেকে সাময়িক মুক্তি নিয়ে দেশের মাটিতে ‘প্রভু সুখ’ নেয়ার প্রবণতাও চোখে পড়েছে।

এলাকায় বিস্ময়করভাবে বেড়েছে মসজিদ, মাদ্রাসা, খানকা, দরবার শরীফ আর লালসালুর ব্যবসাও। এসবও ধানী জমিতে। প্রয়োজনের চেয়ে কোন্দলই ভূমিকা রাখছে মসজিদের সংখ্যা বৃদ্ধিতে। আসরের নামাজের সময় এক মসজিদে উঁকি দিয়ে দেখি ইমাম, মুয়াজ্জিনসহ মোটে ৭ জন। কোন্দলজনিত এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অপবিত্র অহংকারের একটি বড় কুফল হচ্ছে পাশাপাশি অবস্থিত একাধিক মসজিদ থেকে একসাথে ভেসে আসা তীব্র আজানধ্বনি। প্রভূর কাছে আত্মসমর্পণের এমন বিভক্ত আহবান আমি পৃথিবীর আর কোথাও শুনিনি। রাত যত গভীর হয় নানা প্রান্ত থেকে আসা ওয়াজের আওয়াজও তীব্র হতে থাকে। এক রাতে আমার কন্যার জিজ্ঞাসা ছিল- Why are they screaming’ ‘কোথাও কেউ নেই’ রাজ্যে এর কোন জবাব আমি দিতে পারিনি।

আদতে পুরো বাংলাদেশটিই এখন ধনী দেশগুলোর ফ্যাক্টরিতে পরিণত হয়েছে। বেকারত্বের মহাসমুদ্রে ফ্যাক্টরীগুলোই হয়ে উঠেছে ত্রাণ কর্তা। তৈরী হয়েছে নিজস্ব বাজার। পরিণত হয়েছে চীনের তৈরী সস্তা পণ্যের বিপণন কেন্দ্রে। দেশি-বিদেশী উদ্যোক্তাদের কেউই এখন ২০ কোটি মানুষের বাজার আর সস্তা শ্রমের বিশাল সুযোগ হারাতে রাজী নন। বাংলাদেশের পরিবেশ, শব্দদূষণ কিংবা জীব বৈচিত্র্য নিয়ে কারো মাথা ঘামানোর সময় নেই। এসব এখন সাহিত্যের উপকরণ! প্রকৃতিও এখন বিদেশের বিষয়! আইনকে দুমড়ে-মুচড়ে ফ্যাক্টরীর মালিকদের বেশির ভাগই শ্রমিক ঠকিয়ে, পরিবেশের তোয়াক্কা না করে মুনাফা গুনতে ব্যস্ত। Corporate কিংবা Social Responsibility বলতে কোন শব্দ তাদের অভিধানে আছে বলে শোনা যায় না।

বহুজাতিক কোম্পানিগুলো ১/২ পাউণ্ড উৎপাদন খরচের জিনিসটি ২/৩ পাউণ্ডে কিনে নিজ নিজ দেশে বিক্রি করছে ৫০/৬০ পাউণ্ডে। Compliance এর নামে যা হচ্ছে এর সবই আইওয়াশ ছাড়া আর কিছু নয়। সব কিছু ভেঙ্গে পড়ছে প্রতিদিন। দূর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, রুচিহীনতা, স্বেচ্ছাচারিতা, পরিকল্পনাহীনতা আর দূরদৃষ্টির অভাব সর্বত্র। ফ্যাক্টরীর কারণে কোন ধরনের প্রস্তুতি বা অবকাঠামো ছাড়াই গ্রামগুলো হয়ে উঠছে বিকৃত শহর কিংবা বিকৃত শিল্পাঞ্চল। বিশেষ করে আমাদের অঞ্চলটি।

ভূত আছে বলে ছোটবেলায় উত্তর বাড়ির দুধ চাচার গাব গাছকে ভয় পেতাম। এবার পুরো চারাভাঙ্গা আর এর আশেপাশের এলাকাকে দেখেই আমি ভয় পেয়েছি। চারাভাঙ্গা ও তার আশপাশের পুরো এলাকা আস্তে আস্তে দানব হয়ে জেগে উঠছে। শত শত একরের ধান ক্ষেতে অপরিকল্পিত কারখানার আলো জ্যোৎস্নাকে হত্যা করছে তিলে তিলে, বেলঘরের চূড়ায় এখন আর গোধূলি নামে না, বিদায় নিয়েছে জোনাকী পোকারা, সাইরেন আর গাড়ীর আওয়াজে হারিয়ে গেছে কুয়াশার নিঃশব্দ। কোকিল, শালিক, ঘুঘু পাখিরাও চলে গছে বহু আগেই। শিশিরে ঝলমল করা সোনা গলানো রোদে প্রভাত এসে আর লুটিয়ে পড়ে না এখানে। মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার অমৃতের টুকরাগুলো বিদায় নিচ্ছে একে একে।

চিরকালের মতো বদলে গেছে, বদলে যাচ্ছে আমার জন্মভূমি। প্রকৃতিকে ধ্বংস করে বিষের পেয়ালায় ভরে উঠছে চারিদিক। ব্রিটিশ লোকাল গর্ভনমেন্ট অথরিটিতে সরাসরি কাজের অভিজ্ঞতা থেকে কসম দিয়ে বলছি, এ প্রক্রিয়া অন্যায়। এ প্রক্রিয়া ভুল। এসব উন্নয়ন নয়। ধ্বংস। আত্মহত্যা। অসুন্দর থেকে কোন দিনই সুন্দরের জন্ম হয় না। 

লণ্ডন, ৮ জানুয়ারী ২০২৩

লেখক: সাংবাদিক    

আরও পড়ুন »

আহা ফিলিস্তিন দিলু নাসের ♦ গাজার আকাশে দানবের ছায়ামাটিতে শকুন-দৃষ্টিধূ ধূ প্রান্তরে তাইপ্রতিদিন শিশুর রক্তবৃষ্টি!  সাঁজোয়াযানে সুপ্রাচীন ভূমি করছে ছিন্নভিন্ন নারী পুরুষের বুকের উপরদানবীয় পদচিহ্ন! ধ্বংসস্তূপে আগুনের ধোঁয়া পথে-প্রান্তরে লাশ লাশের উপরে দানব...

মায়াবী রাত

মায়াবী রাত

|| অঞ্জন নন্দী ||
এখন মাঝরাত। আকাশে বিশাল রূপোর থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ থেকে মোম জোছনা গলে গলে পড়ছে। নিশাচর পাখি আর নেট জগতের মানুষ ছাড়া সবাই ঘুমের দেশে। কুয়াশা ভেদ করে শহরের পথে আয়েশি ভঙ্গিতে একটা বাঘ হেঁটে হেঁটে চলছে। যেনতেন বাঘ নয়, একেবারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাগড়া শরীর, জ্বলজ্বলে চোখ, ভ্রুক্ষেপহীন। তার পিঠে সওয়ার হয়ে আছে এক লিকলিকে বালক। ঘোর কৃষ্ণবর্ণের শরীরে পাঁজরের হাড়গুলো গোনা যাবে। তার পরনে কোন জামা নেই। ঋজু ভঙ্গিতে নিশ্চুপ বসে আছে, হাতে একটা বেত, ঠিক আগে যেমন স্কুলে টিচারদের হাতে দেখা যেতো যার এক ঘা পিঠে পড়লে সাতদিন দাগ থাকতো। বেতের ভয়ে ছাত্ররা …

ক্রীম

মূল: হারুকি মুরাকামি অনুবাদ: মিলটন রহমান আমার এক তরুণ বন্ধুকে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অদ্ভুদ ঘটনা সম্পর্কে বলছিলাম। তখন আমার বয়েস ছিলো আঠারো।  ঠিক মনে করতে পারছিনা কেনো তাকে সে ঘটনা বলতে শুরু করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গেই ঘটনাটি উঠে এসেছিলো। অনেক আগের সেই ঘটনা। বলা...

হুমায়ুন আজাদ–রাঢ়ি খালের মুগ্ধকিশোর

আলমগীর শাহরিয়ার রাঢ়িখাল-তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটির ছোটবড়ো অনেক পুকুর আর ডোবাভরা এক গ্রাম। এক সময় বাংলার গ্রামগুলি এমন ছিল। নদীর পাড়ে পাড়ে গঞ্জ। খালের পাড়ে পাড়ে গ্রাম। বিলম্বিত বর্ষায় গ্রামের চারপাশে ফোটে থাকতো শাপলা ফুল। জারুল স্বাগত জানাতো গ্রীষ্ম ও...

স্মরিব ‘কাল নিরবধি’

সেলিম জাহান আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব তাঁর  শিক্ষার্থী ছিলেন। আমার অনেক অগ্রজেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি। তবু পাঁচ বছর আগেও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। যু্ক্তি ছিল তাঁর একটাই - তাঁর কন্যার শিক্ষককে তিনি ‘তুমি’ বলতে পারেন না। আশির...

আরও পড়ুন »

 

আহা ফিলিস্তিন দিলু নাসের ♦ গাজার আকাশে দানবের ছায়ামাটিতে শকুন-দৃষ্টিধূ ধূ প্রান্তরে তাইপ্রতিদিন শিশুর রক্তবৃষ্টি!  সাঁজোয়াযানে সুপ্রাচীন ভূমি করছে ছিন্নভিন্ন নারী পুরুষের বুকের উপরদানবীয় পদচিহ্ন! ধ্বংসস্তূপে আগুনের ধোঁয়া পথে-প্রান্তরে লাশ লাশের উপরে দানব...

মায়াবী রাত

|| অঞ্জন নন্দী || এখন মাঝরাত। আকাশে বিশাল রূপোর থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ থেকে মোম জোছনা গলে গলে পড়ছে। নিশাচর পাখি আর নেট জগতের মানুষ ছাড়া সবাই ঘুমের দেশে। কুয়াশা ভেদ করে শহরের পথে আয়েশি ভঙ্গিতে একটা বাঘ হেঁটে হেঁটে চলছে। যেনতেন বাঘ নয়, একেবারে রয়েল বেঙ্গল...

ক্রীম

মূল: হারুকি মুরাকামি অনুবাদ: মিলটন রহমান আমার এক তরুণ বন্ধুকে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অদ্ভুদ ঘটনা সম্পর্কে বলছিলাম। তখন আমার বয়েস ছিলো আঠারো।  ঠিক মনে করতে পারছিনা কেনো তাকে সে ঘটনা বলতে শুরু করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গেই ঘটনাটি উঠে এসেছিলো। অনেক আগের সেই ঘটনা। বলা...

হুমায়ুন আজাদ–রাঢ়ি খালের মুগ্ধকিশোর

আলমগীর শাহরিয়ার রাঢ়িখাল-তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটির ছোটবড়ো অনেক পুকুর আর ডোবাভরা এক গ্রাম। এক সময় বাংলার গ্রামগুলি এমন ছিল। নদীর পাড়ে পাড়ে গঞ্জ। খালের পাড়ে পাড়ে গ্রাম। বিলম্বিত বর্ষায় গ্রামের চারপাশে ফোটে থাকতো শাপলা ফুল। জারুল স্বাগত জানাতো গ্রীষ্ম ও...

স্মরিব ‘কাল নিরবধি’

সেলিম জাহান আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব তাঁর  শিক্ষার্থী ছিলেন। আমার অনেক অগ্রজেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি। তবু পাঁচ বছর আগেও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। যু্ক্তি ছিল তাঁর একটাই - তাঁর কন্যার শিক্ষককে তিনি ‘তুমি’ বলতে পারেন না। আশির...

‘মধুমালা’ মিষ্টির দোকান

|| হামিদ মোহাম্মদ || ‘মধুমালা’মিষ্টির দোকান যেদিন যাত্রা শুরু করলো, সেদিন মানুষের ভিড় দেখে বিজয়পাল চমকে যায়। এতোদিন এতো মানুষ কোথায় ছিল? এরা তো এই এলাকারই লোক! তাদের আলাইঘর বা মিষ্টির দোকান চল্লিশ বছরের পুরোনো, এভাবে তো মানুষ ভিড় করেনি, লাইন ধরেনি মিষ্টি কিনতে।...