☀ We are Hiring ☀

PROJECT COORDINATOR

Bengali Drama: Narratives of Time (1963–2013)
Location: East London
Salary: £36,996 pro rata
Hours: 17.5 per week; Duration:18 months

For an application pack:

Email: info@artswithoutborders.co.uk
Deadline: 8 December 2024, 11:59 pm
Only successful applicants will be contacted
Online Interviews to be conducted on 13 December 2024

বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

সাময়িকী

‘মধুমালা’ মিষ্টির দোকান

মে ১২, ২০২৩ ৫:২৯ অপরাহ্ণ

|| হামিদ মোহাম্মদ ||

‘মধুমালা’মিষ্টির দোকান যেদিন যাত্রা শুরু করলো, সেদিন মানুষের ভিড় দেখে বিজয়পাল চমকে যায়। এতোদিন এতো মানুষ কোথায় ছিল? এরা তো এই এলাকারই লোক! তাদের আলাইঘর বা মিষ্টির দোকান চল্লিশ বছরের পুরোনো, এভাবে তো মানুষ ভিড় করেনি, লাইন ধরেনি মিষ্টি কিনতে। বিজয়পালের মিষ্টির দোকানের নাম নেই, কোনো সাইনবোর্ডও নেই, কিন্তু লোকে ‘মহাজানের মিষ্টির দোকান’ নামেই চেনে। সারা সিলেট তথা পুরো তল্লাটে এই দোকান চেনে না, এমন মানুষ কম। রমজান মাস এলেই ইফতারের বিশেষ আইটেম জিলিপি কিংবা রসগোল্লার জন্য কাছের টাউন থেকেও লোকজন আসে। তাদের দোকানের বিখ্যাত মিষ্টির নামডাক কতকালের।

মধুমালা দোকানটি যখন উদ্ধোধন হয় সেদিন নিমন্ত্রণ পেয়েছিল বিজয়, সামিজকতা রক্ষার্থে সে গিয়েছিল। মিষ্টির একটি প্যাকেট উপহার হিসাবে এনেছিল। এনে মুখে দিয়ে ওয়াক থু করে ফেলে দেয়। ছোটভাই ঝলক জিজ্ঞেস করে, কি হল দাদা! বিজয় আস্তে করে বললো, রাখ, চিনির ভাণ্ড আস্ত। ছানার পাত্তাই নেই।

শাখা দোকানটি দিয়েছে পাশের বনগা গ্রামের কলেজের অধ্যয়ন সমাপ্ত করা দুই যুবক। ব্যবসাটি নাকি চুক্তিভিত্তিক। মিষ্টি এখানে বানানো হবে না, প্রতিদিন ভ্যানগাড়িতে মিষ্টির চালান দিয়ে যাবে শহর থেকে কোম্পানির লোকজন। মাসিক নিয়মে হিশাবনিকাশ। আর সুযোগটা তৈরি হয়েছে গত বছর দশ মাইল দূরের বড় সড়কের সাথে এলজিডির নতুন পাকা সড়ক শ্যামগঞ্জবাজারকে সংযুক্ত করায়। এছাড়া দু বছর হয় পল্লীবিদ্যৎ আসায় বাজারের অবস্থা এখন দিনরাত সমান। ঝলমল করে দোকান পাট, বেড়ে গেছে মানুষের আনাগোনা। বলতে গেলে মানুষে গমগমই করে।

সামনে এক মাস পর রমজান মাস। রমজান মাসের ব্যবসাকে লক্ষ্য করেই মধুমালা খোলা হয়েছে। আগেবাগে কাস্টমার ধরতে হবে। এই উদ্দেশ্যে মধুমালার আগাম যাত্রা শুরু। রমজান মাস অনেক দূরে, আজই এতো লোকের ভিড়? বিজয় পালের এমন প্রশ্ন জাগা অমূলক নয়। এ এক নতুন দৃশ্য। তার চোখের পাতা এ দৃশ্যের প্রতি হা করে আছে। চোখ কপাল থেকে যেন আলগা হয়ে আছে এমনভাবে, দুপাতা এক হচ্ছে না। তাকিয়েই আছে উৎফুল্ল আর উৎসুক মানুষের দিকে। তাকাতে তাকাতে যখন চোখ বুঝলো, তখন তার ঘুমোতে ইচ্ছে হলো। কেন জানি ঘুম এলো বুঝতে পারে না।

ঘুম আসার এ সময়টিতে অন্যদিন সে কাসার থাল ভরে ভাত খেতো। পেটে ক্ষুধায় চিমচিম করা পেট তখন ভাত পেয়ে,সারা দেহ ঝিম ধরে ঘুম এলে, বুঝতো পেট ঠাণ্ডা। কিন্তু আজকে সে রকম নয়, মিষ্টির গন্ধে, না অন্য কোনো কারণে ঘুম এলো, এটা ভাবতে ভাবতেই বাড়ি পৌঁছে যায় বিজয়। তেল চিটচিটে বালিশের গন্ধ তার নাকে কোমল আবেশ না ছড়ালেও ঘুম এসে গেল।

মিষ্টির সুনাম রয়েছে বাঙ্গালমুলুকে। টাঙ্গাইলের চমচম, ব্রাম্মণবাড়িয়ার ছানার মিষ্টি, বগুড়ার দই, ঢাকার মরণচাঁদের রসগোল্লা আর রসমালাই কত কি। খেলে জিহবায় লেগে থাকে ঘি’য়ের ভাজা স্বাদ। সেই দিন পাল্টে গিয়ে হঠাৎ ছড়িয়ে পড়ে ফুলমালা, কাঞ্চনমালা,মধুমালা নামের মিষ্টির দোকানের শাখা জেলা থেকে জেলায়। শুরু নাকি চট্টগ্রাম থেকে। যতসব বাহারি মিষ্টির দোকান, রঙবেরঙের মিষ্টি। নতুন নতুন নামধারী মিষ্টি দেখতেও চোখ ঝলসে ওঠে। আগে যে সব ঐতিহ্যবাহী দোকান ছিল, সেগুলো সেই অঞ্চলেই সীমাবদ্ধ, কোনো শাখা ছিল না, এখন আবার শাখা। বড় বড় পুঁজি নিয়ে নেমেছেন চাটগাঁইয়া সদাগররা। মিষ্টি আর পারিবারিক ব্যবসা নয়, সদাগরী ব্যবসা।

বিজয় পালরা ছিল তিন ভাই। ঝলকপাল, তিলকপাল বাকী দুইভাই। তাদের বাবা আদিত্যপাল, দাদা সত্যপদ পাল। তিনপুরুষ সম্পর্কে বিজয় পালের জানা। এর আগের ইতিহাস তারা কেউ বলতে পারে না। তিন গ্রামের মধ্যখানে ভটেরখাল নামক নদীর পূব থেকে দক্ষিণমুখী বাঁকে গড়ে উঠেছে শ্যামগঞ্জবাজার। পূবপারে কামারদের গ্রাম বনগা, পাশে নমশূদ্রদের বীষ্ণপুর এবং পশ্চিম পারে বিজয়দের গ্রাম পালনগর। শোনা গল্প, এই তিনগ্রামের নিজ নিজ পেশার পসর সাজিয়ে বসতেন নদীর মোড়ের উঁচু তীরে। তাও প্রতিদিন ভোরবেলা। সূর্য ওঠার লগে লগে হাট বসতো, মাথার ওপর সূর্য আসার আগেই শেষ। বসবার জায়গাটি দিয়েছিলেন পালনগর গ্রামের অবস্থাসম্পন্ন গেরস্ত শ্যামচরণ দাশ। নদী থেকে সদ্যধরা তাজা মাছ, মাঠ থেকে তুলে আনা কুয়াশামাখা শাকসবজী আনাজপাতি, কামারদের তৈরী দা, কাস্তে যত কৃষিযন্ত্রপাতি মিলতো হাটে। ধীরে ধীরে দোকানপাট ওঠে। নাম হয়ে যায় শ্যামগঞ্জ। এই শ্যামগঞ্জবাজারে ছিল বিজয়দের একটি ভিটে। দোকান তোলার সাধ্য ছিল না। দাদামশাই সত্যবাবু বসতেন পেরা সর্ষের তেলের ভাণ্ড বা হাঁচি নিয়ে। টিনের তৈরি বেলী দিয়ে মেপে মেপে সর্ষের তেল বিক্রি করতেন। সর্ষে তেলেরও ইতিহাস আছে। বাড়ির পূবপাশে মেদল হাওরের জমিতে কার্তিক মাস এলে দাদা সর্ষে বুনতেন। দেখতে দেখতে হলুদ হয়ে যেতো মাঠ। তারপর সর্ষে পেকে এলে মাঠ থেকে এনে মাড়াই হতো উঠোনে। গরু দিয়ে মাড়াই। আমরা তিন ভাই সেই মাড়াই গরুর পেছনে ঘুরতাম হেই হেই করে। দাদা ও বাবা তেল বিক্রি করতেন বাজারের ভিটে বসে। আমরা নেংটিপরা তিন ভাই কাচুমাচু করে বসতাম পাশে। বেলী দিয়ে মেপে তেল বেচার পর বেলিতে যে তেল লেগে থাকতো, সেই তেল গা-গতর আর মাথার চুলে দেয়ার জন্য চলতো কাড়াকাড়ি। দাদু ধমক দিতেন। বলতেন, তোমরা অন্য কিছু করো, যাও এখান থেকে। কিছু সময়ের জন্য সরে গেলেও আবার হামলে পড়তাম। তেল ব্যবসার কারণে আমাদের পরিচয়টাও এক সময় হয়ে যায় ‘তেলি পাল’। মিষ্টির দোকানের রমরমা ব্যবসার দীর্ঘ দিনেও সে পরিচয় আর বদল হয়নি।

একদিন আমার ছোট ঝলকপাল এক বুদ্ধি আটলো। বুদ্ধিটা হলো, কলার পাতা এবং কচুপাতা হাটবারের বিক্রিকরা গলি গলি হেঁটে। কলা ও কচুপাতা দিয়ে মলাতামাক, শুঁটকিসহ আরো নানা সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দোকানীরা বিক্রি করে। যেই ভাবা তেমনি নেমে যাই তিনভাই এই দূর্দান্ত ব্যবসায়। কয়েক হাটবার পেরোনোর পর ব্যবসা যখন জমে ওঠে, দাদুও খুশি হলেন নাতিদের এই নতুন ব্যবসাটিতে, বাঁধা দিলেন না।

হঠাৎ দেখা গেল বাজারে প্লাস্টিক কেইনে তেল বিক্রি হচেছ। পাঁচ লিটার, তিন লিটার এবং এক লিটারের বোতল। স্বচ্ছ প্লাস্টিক কেইন। দেখতে ভারী সুন্দর, কেইনের ভেতরে তেল টলটল করছে। সবেমাত্র দেশ স্বাধীন হয়েছে। একাত্তরের যুদ্ধ গেছে দু’বছর হয়। মানুষ যুদ্ধের ধকল সয়ে মাত্র ঘুরে দাঁড়াবে, তখনই বিদেশী এই পণ্যের আর্বিভাব। তেলটির নাম পামওয়েল। বাংলা ও ইংরেজিতে লেখা। এরপর এলো সানফ্লাওয়ার। আস্তে আস্তে আরো অনেক তেল–তীর মার্কা, নৌকামার্কা, জাহাজ মার্কা। আরো আরো বহু মার্কার তেল, বাজার সয়লাব। দাদুর পেরা তেলের কদর নেমে গেল খুচরা ক্রেতা পর্যন্ত। দাদু তেলপেরা বন্ধ করে দিলেন। সঙ্গে বন্ধ হলো সরিষাচাষ। আমরা তিন ভাই খাম্মুস। ঘানিতে তেলপেরার সময় আমরা গরুর পিছে চিপচিপে সিঙ্গল নিয়ে গরু হাঁটাতাম। একটা কিছুতে ব্যস্ত থাকলে দাদুও খুশি হতেন। কলাপাতা বিক্রিও বন্ধ। বাজারের দোকানে দোকানে এখন পুরোনো খবরের কাগজ দিয়ে সওদা পেঁচিয়ে বা মুড়িয়ে দেয়া হয়। আস্তে আস্তে কাগজের টুংগার প্রচলন।

দাদু বসে থাকার পাত্র নন। তিনি শুরু করলেন মিষ্টির দোকান। বাজারের ভিটেয় তুললেন দোকান। একছালা টিনের ঘর। সামনে বারান্দাও সমান লম্বা। কোণায় চা’র কেতলী বসানোর মাটির চূলা। পাশে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে জিলিপী বানানোর লোহার চ্যাপ্টা কড়াই। পুরোদস্তুর চা-মিষ্টির দোকান, রমরমা ব্যবসা। যেখানে চোখ আমাদের আন্ধার হওয়ার পালা, সেখানে দাদু আলো জ্বালালেন। আনন্দের কী বন্যা তখন বয়ে এলো, গতি পেলো আমাদের হঠাৎ থেমে যাওয়া জীবন। বাবা হাল ধরলেন এই মিষ্টির ব্যবসায়। এমনিতেই আমাদের কৃষিজীবী পরিবারে গো-পালন হতো। দাদু মিষ্টির দুধ সংগ্রহের জন্য গ্রামে গ্রামে ধর্ণা দেয়ার চেয়ে গো-পালন বাড়িয়ে দিলেন। বছরের ভেতরেই গবাদিপশু এখন আমাদের চল্লিশটির কাছাকাছি। বেশিরভাগ দুধাল গাই। দুধ দই খাই কত? উৎসবের বান যেন ডেকে এলো আমাদের জীবনে। দোকানদারদের মহাজন বলা হতো এ অঞলে। তাই, দিনে দিনে দাদুর মিষ্টির দোকানের নাম রটে গেল মহাজনের মিষ্টি।

চল্লিশ বছর পেরোনো দাদারখালি মিষ্টির ব্যবসায় আবার আঘাত। এই আঘাতের চট সইতে গিয়েই বিজয়পালের ঘুম নামে চোখে। দুপুর রাত্রে ঘুম ছাড়ে চোখ থেকে। চোখদুটো জেড়ে ঠাণ্ডাজল ঢেলে মুখটা ভিজিয়ে নিলো বিজয়পাল।

মনে পড়ে, এক সময় কোনো কোনোদিন সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে মিষ্টি বিক্রি বেড়ে যেতো। আগের দিনে মাটির হাড়ি দিয়ে মিষ্টি বিক্রির চল ছিল। মিষ্টি বেশি বিক্রির দিনে হাঁড়ি ফুরিয়ে যেতো। বাবা কিছু বলতে চাইলে দাদু বাঁধা দিতেন। বলতেন, কী অলক্ষুণে কথা।

শুনেছি, সন্ধ্যাকালে নাকি জ্বীন-পরী বা ভূতরা মিষ্টি খেতে দোকানে দোকানে ঘোরে। সব দোকানে তারা সওদাপাতি কেনাকেটা করে না, যে দোকানে এমন বেসামাল বিক্রি হয়, বুঝতে হবে লক্ষীর পা পড়েছে। বিজয় পাল চোখ বুজে ভাবতে থাকে, তাহলে এই লক্ষী কি এখন ‘মধুমালা মিষ্টি’র দোকানে আছর করলো? এরা মানুষ, নাকি অন্য কিছু লাইনে দাঁড়ানো! যাদের তার দাদু এতোদিন পোষ মানিয়ে এসেছিলেন! দাদু নেই বলে এরা পীছ দিয়েছে আমাদের। প্রতিযোগিতায় যদি ঠিকতে না-পারে? এমন করে ভাবতে গিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বিজয় পাল স্থির হয় এক সময়।

পরের দিন বিজয় ঘর থেকে ফ্রেম করা দাদুর একখান ছবি এনে দোকানের ভেতরের দেয়ালে ক্যাস বাকসের পেছনে টাঙিয়ে তাতে এক গাছি কাগজের ফুলের মালা যত্ন করে ঝুলিয়ে দেয়। এমনভাবে টাঙানো হল, দেখলে মনে হবে দাদু ক্যাস বাকসো পাহারা দিচ্ছেন। আর ধুপ জ্বালিয়ে পবিত্র ধূয়াে এবং স্বর্ণে চোবানো জল চিটিয়ে দোকানকে পবিত্র করার কার্যক্রম বাড়িয়ে দিল। দোকানকে ছাপছুতরো করা হল। ইঁদুর আর তেলাপোকার আড্ডা ভেঙে গোলাপ জল ছিটিয়ে দেয়। নিজেও সকালে উঠে পুকুরের জলে একটা ডুব দিয়ে নতুন না হলেও সাবান দিয়ে ধোয়া পুরোনো কাপড় পরে আসতে শুরু করে। বউকেও বলে দিল প্রতিদিন একসেট ধোয়া কাপড় চাই।

দেখতে দেখতে রমজান মাস এসে গেল। পয়লা রোজার দিন। একজন মধ্যবয়েসী লোক এলেন। হাতে বিদেশী ছাতা। ছোট ছাতা। কাপড়ে মোড়ানো। ভ্দ্রলোক বসে বললেন, দাদাবাবু এখখান কথা কমু। কাছে এসে কানে কানে বললেন, আপনার মিষ্টি খুব ভালো। আমার পছন্দ। কিন্তু একটা কাজ করতে হবে। আমাকে ‘মধুমালা’র রঙিন কার্টন দিয়ে প্যাক করে দিতে হবে। যদি দিতে পারেন তবে পাঁচ হাজার টাকার মিষ্টি নেবো, আমার মেয়ের বাড়ি প্রথম ইফতারি দেবো তো, তাই বলছিলাম, মিষ্টিটা ভালো চাই কিনা। আমি বললাম, এটা সম্ভব নয় কাকা।

রাতের বেলা যখন দোকান বন্ধ করে বিজয় ঘরে এলো তখন শরীরে অবসাদ নেমে এসেছে। ইদানিং শরীরে শক্তি পায় না বিজয়। মনে মনে ভাবে, কোন দোষে পেলোরে বাবা!

দাদুর মতো এতো বুদ্ধি নেই। কী টালমাটাল দিন এলো। এক সময় হাত ঝেড়ে বসা থেকে বারান্দায় দাঁড়ায় বিজয়। বুদ্ধি নেই তো কি হলো–পণ করে, এবার ব্যবসা বদল করলে রাজনীতিই করবো। রাজনীতি নাকি এখন খুব ভালো ব্যবসা!

আরও পড়ুন »

আহা ফিলিস্তিন দিলু নাসের ♦ গাজার আকাশে দানবের ছায়ামাটিতে শকুন-দৃষ্টিধূ ধূ প্রান্তরে তাইপ্রতিদিন শিশুর রক্তবৃষ্টি!  সাঁজোয়াযানে সুপ্রাচীন ভূমি করছে ছিন্নভিন্ন নারী পুরুষের বুকের উপরদানবীয় পদচিহ্ন! ধ্বংসস্তূপে আগুনের ধোঁয়া পথে-প্রান্তরে লাশ লাশের উপরে দানব...

মায়াবী রাত

মায়াবী রাত

|| অঞ্জন নন্দী ||
এখন মাঝরাত। আকাশে বিশাল রূপোর থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ থেকে মোম জোছনা গলে গলে পড়ছে। নিশাচর পাখি আর নেট জগতের মানুষ ছাড়া সবাই ঘুমের দেশে। কুয়াশা ভেদ করে শহরের পথে আয়েশি ভঙ্গিতে একটা বাঘ হেঁটে হেঁটে চলছে। যেনতেন বাঘ নয়, একেবারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। তাগড়া শরীর, জ্বলজ্বলে চোখ, ভ্রুক্ষেপহীন। তার পিঠে সওয়ার হয়ে আছে এক লিকলিকে বালক। ঘোর কৃষ্ণবর্ণের শরীরে পাঁজরের হাড়গুলো গোনা যাবে। তার পরনে কোন জামা নেই। ঋজু ভঙ্গিতে নিশ্চুপ বসে আছে, হাতে একটা বেত, ঠিক আগে যেমন স্কুলে টিচারদের হাতে দেখা যেতো যার এক ঘা পিঠে পড়লে সাতদিন দাগ থাকতো। বেতের ভয়ে ছাত্ররা …

ক্রীম

মূল: হারুকি মুরাকামি অনুবাদ: মিলটন রহমান আমার এক তরুণ বন্ধুকে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অদ্ভুদ ঘটনা সম্পর্কে বলছিলাম। তখন আমার বয়েস ছিলো আঠারো।  ঠিক মনে করতে পারছিনা কেনো তাকে সে ঘটনা বলতে শুরু করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গেই ঘটনাটি উঠে এসেছিলো। অনেক আগের সেই ঘটনা। বলা...

হুমায়ুন আজাদ–রাঢ়ি খালের মুগ্ধকিশোর

আলমগীর শাহরিয়ার রাঢ়িখাল-তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটির ছোটবড়ো অনেক পুকুর আর ডোবাভরা এক গ্রাম। এক সময় বাংলার গ্রামগুলি এমন ছিল। নদীর পাড়ে পাড়ে গঞ্জ। খালের পাড়ে পাড়ে গ্রাম। বিলম্বিত বর্ষায় গ্রামের চারপাশে ফোটে থাকতো শাপলা ফুল। জারুল স্বাগত জানাতো গ্রীষ্ম ও...

স্মরিব ‘কাল নিরবধি’

সেলিম জাহান আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব তাঁর  শিক্ষার্থী ছিলেন। আমার অনেক অগ্রজেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি। তবু পাঁচ বছর আগেও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। যু্ক্তি ছিল তাঁর একটাই - তাঁর কন্যার শিক্ষককে তিনি ‘তুমি’ বলতে পারেন না। আশির...

আরও পড়ুন »

 

আহা ফিলিস্তিন দিলু নাসের ♦ গাজার আকাশে দানবের ছায়ামাটিতে শকুন-দৃষ্টিধূ ধূ প্রান্তরে তাইপ্রতিদিন শিশুর রক্তবৃষ্টি!  সাঁজোয়াযানে সুপ্রাচীন ভূমি করছে ছিন্নভিন্ন নারী পুরুষের বুকের উপরদানবীয় পদচিহ্ন! ধ্বংসস্তূপে আগুনের ধোঁয়া পথে-প্রান্তরে লাশ লাশের উপরে দানব...

মায়াবী রাত

|| অঞ্জন নন্দী || এখন মাঝরাত। আকাশে বিশাল রূপোর থালার মতো পূর্ণিমার চাঁদ থেকে মোম জোছনা গলে গলে পড়ছে। নিশাচর পাখি আর নেট জগতের মানুষ ছাড়া সবাই ঘুমের দেশে। কুয়াশা ভেদ করে শহরের পথে আয়েশি ভঙ্গিতে একটা বাঘ হেঁটে হেঁটে চলছে। যেনতেন বাঘ নয়, একেবারে রয়েল বেঙ্গল...

ক্রীম

মূল: হারুকি মুরাকামি অনুবাদ: মিলটন রহমান আমার এক তরুণ বন্ধুকে অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া একটি অদ্ভুদ ঘটনা সম্পর্কে বলছিলাম। তখন আমার বয়েস ছিলো আঠারো।  ঠিক মনে করতে পারছিনা কেনো তাকে সে ঘটনা বলতে শুরু করেছিলাম। কথা প্রসঙ্গেই ঘটনাটি উঠে এসেছিলো। অনেক আগের সেই ঘটনা। বলা...

হুমায়ুন আজাদ–রাঢ়ি খালের মুগ্ধকিশোর

আলমগীর শাহরিয়ার রাঢ়িখাল-তিন ভাগ পানি আর এক ভাগ মাটির ছোটবড়ো অনেক পুকুর আর ডোবাভরা এক গ্রাম। এক সময় বাংলার গ্রামগুলি এমন ছিল। নদীর পাড়ে পাড়ে গঞ্জ। খালের পাড়ে পাড়ে গ্রাম। বিলম্বিত বর্ষায় গ্রামের চারপাশে ফোটে থাকতো শাপলা ফুল। জারুল স্বাগত জানাতো গ্রীষ্ম ও...

স্মরিব ‘কাল নিরবধি’

সেলিম জাহান আমার অনেক বন্ধু-বান্ধব তাঁর  শিক্ষার্থী ছিলেন। আমার অনেক অগ্রজেরও শিক্ষক ছিলেন তিনি। তবু পাঁচ বছর আগেও প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করতেন। যু্ক্তি ছিল তাঁর একটাই - তাঁর কন্যার শিক্ষককে তিনি ‘তুমি’ বলতে পারেন না। আশির...

চারাভাঙ্গার কান্না…

সৈয়দ মনসুর উদ্দিন  হাইলাইট চারাভাঙ্গা ও তার আশপাশের পুরো এলাকা আস্তে আস্তে দানব হয়ে জেগে উঠছে। শত শত একরের ধান ক্ষেতে অপরিকল্পিত কারখানার আলো জ্যোৎস্নাকে হত্যা করছে তিলে তিলে, বেলঘরের চূড়ায় এখন আর গোধূলি নামে না, বিদায় নিয়েছে জোনাকী পোকারা, সাইরেন আর গাড়ীর...