পত্রিকা ডেস্ক:
লণ্ডন, ০৫ জুন: দায়িত্ব পালনের প্রথম বছরেই ৪০টি প্রতিশ্রæত কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান। বারার বাসিন্দাদের জন্য গত ১২ মাসে মেয়র কী কী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন তার একটি সংক্ষিপ্ত তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে। তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত নির্বাহী মেয়র লুতফুর রহমান তাঁর মেয়াদের চার বছরের জন্য যে ১২৩টি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেগুলো মধ্যে প্রথম বছরেই প্রায় ৪০টি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন অথবা গৃহীত প্রকল্পগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বরাদ্দ দিয়েছেন।
গত ১ জুন বৃহস্পতিবার হোয়াইটচ্যাপেল-এ নবনির্মিত টাউন হলে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় মেয়র টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দাদের জীবন-মান উন্নয়নে জনকল্যাণমূলক সেবাগুলোতে বেশি বেশি করে বিনিয়োগ করার অঙ্গীকার করেন। মেয়র লুতফুর রহমান গত এক বছরে তাঁর প্রশাসনের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন। তিনি সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। লুতফুর রহমান টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র হিসেবে গত ৫ মে চলতি মেয়াদের এক বছর পূর্ণ করেন।
মিডিয়া ব্রিফিং এ ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার, হেড অব মেয়র অফিস এমি জ্যাকসন, ডেপুটি হেড আলিবর চৌধুরীসহ কাউন্সিলের উর্ধতন কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ব্রিফিং শেষে সাংবাদিক ও মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের গোটা টাউন হল ঘুরিয়ে দেখানো হয়।
মেয়র জানান, নিজস্ব স্থাপনায়?টাউন হল প্রতিষ্ঠা করায় বছরে কাউন্সিলের ১৬ মিলিয়ন পাউণ্ড সাশ্রয় হবে। উল্লেখ্য, ইতিমধ্যে মেয়র লুতফুর রহমানের কিছু কর্মসূচি বা উদ্যোগ ইংল্যাণ্ডের মধ্যে প্রথম হওয়ায় বিবিসিসহ মূলধারার মিডিয়ায় বিশেষগুরুত্ব পেয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রাইমারি স্কুলের পাশাপাশি ব্রিটেনের প্রথমবারের মতো সেকেণ্ডারি স্কুল পর্যায়ে ইউনিভার্সেল ফ্রি মিলস্ (সকল শিক্ষার্থীকে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ) সুবিধা চালুসহ ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস ও এডুকেশন মেইনটেন্যান্স এলাউন্স এবং ফ্রি হোম কেয়ার সার্ভিসেস প্রবর্তন। এছাড়া তিনি ইয়ুথ সার্ভিসের ক্ষেত্রে বাজেট কর্তনের মত প্রচলিত ধারার বিপরীতে গিয়ে বারায় ইয়ুথ সার্ভিসকে পুনর্জীবিত করতে বছরে প্রায় ১৪ মিলিয়ন পাউণ্ড বরাদ্দ দিয়েছেন। এর ফলে গোটা বারা জুড়ে নতুন নতুন (২০টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে) ইয়ুথ সেন্টার বা ইয়ুথ প্রকল্প চালু করা সম্ভব হবে। এ প্রসঙ্গে নির্বাহী মেয়র দাবি করে বলেন, এমন বরাদ্দ গোটা দেশের আর কোনো কাউন্সিল করবে না।
এছাড়া বারার সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো উন্নত ও সুসংহত করতে নতুন করে ৪১ জন এনফোর্সমেন্ট অফিসার নিয়োগের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দিয়ে টাওয়ার হ্যামলেটস্ এনফোর্সমেন্ট টিমকে ৭০ জনে উন্নীত করা এবং পর্যায়ক্রমে অন্তত ৩৩ জন অতিরিক্ত পুলিশ নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আর যথেষ্ট সক্রিয়তার সাথে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে চার বছরে ৪ হাজার বাসস্থান নির্মাণের কর্মসূচী। ইতিমধ্যে সোস্যাল বা প্রাইভেট ল্যাণ্ডলর্ড ছাড়াও নতুন ঘর নির্মাণের জন্য কাউন্সিল বারার মধ্যে বেশ কিছু জায়গা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে।
চলতি অর্থবছরের জন্য ট্যাক্স ফ্রিজ রাখা লণ্ডনের মাত্র তিনটি কাউন্সিলের অন্যতম একটি হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। এর ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির এই কঠিন সময়ে টাওয়ার হ্যামলেটসসহ অন্য দুটি কাউন্সিলে থাকবে অপরাপর বারার তুলনায় কম কাউন্সিল ট্যাক্স।
ব্রিফিংকালে নির্বাহী মেয়র বলেন, বিভিন্ন সার্ভিস উন্নত ও কার্যকর করাই আমাদের অন্যতম অগ্রাধিকার। এছাড়াও আমরা বারার ভবিষ্যত বিনির্মাণে ভূমিকা রাখছি যেমন টাওয়ার হ্যামলেটস হোমস্কে পুরোপুরি কাউন্সিল নিয়ন্ত্রণে আনা। একই সাথে আমরা লেইজার সার্ভিস ও ইয়ুথ সার্ভিসকেও কাউন্সিলের অধীনে নিয়ে আসছি। অত্যন্ত জনগুরুত্বপূর্ণ এই সার্ভিসগুলো সরাসরি কাউন্সিলের অধীনে আনার ফলে আরো ভালো ও উন্নত সেবা প্রদান করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি এবং এতে করে স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য আরো বেশি চাকুরীর সুবিধা তৈরি হবে।
প্রতি সপ্তাহে (শুক্র ও সোমবার) নিয়মিত ২টি সার্জারি করার মাধ্যমে মাসে প্রায় ৫ শ’ মানুষের সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন জানিয়ে মেয়র লুতফুর রহমান বলেন, এসব মানুষের বেশির ভাগের সমস্যা হাউজিং। তিনি বলেন, চার বছরে ৪ হাজার সোস্যাল হাউজ সরবরাহের যে প্রতিশ্রুতি আমরা দিয়েছি, সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমরা দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছি। মেয়র জানান, বারার এডুকেশন ও ইয়ুথ সার্ভিসে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির চরম এই দুঃসময়ে বারার বাসিন্দাদের পাশে দাঁড়াতে কস্ট অব লিভিং প্রকল্পগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছেন। ফ্রি স্কুল মিল পায় এমন শিশুরা যাতে স্কুল হলিডে চলাকালীন সময়েও প্রোটিনযুক্ত খাবার পায় সেটা নিশ্চিত করতে শিশুপ্রতি হলিডে গ্রান্ট হিসেবে ১শ’ পাউণ্ড করে বরাদ্দ দিয়েছেন। প্রায় ৭ হাজার পেনশনারকে ১শ’ পাউণ্ড করে আর্থিক সহায়তা দেয়া হয়েছে। কাউন্সিল ট্যাক্স ফ্রিজ করে রাখা হয়েছে। এছাড়া ১৫ হাজার পরিবারের জন্য শিগগিরই আরেকটি ফ্যামেলি গ্রান্ট রিলিজ করা হবে বলে জানান তিনি।
মিডিয়া ব্রিফিংয়ে ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মাইয়ুম মিয়া তালুকদার বলেন, “মেয়র বা মেয়র অফিস অলসভাবে বসে বসে আরাম করার জন্য নয়। আসুন দেখে যান আমাদের বিশেষজ্ঞরা, আমাদের টিম মেম্বাররা জনগণের স্বার্থে জনগুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচী বাস্তবায়নে কীভাবে পরিশ্রম করে চলেছেন। অতীতে আমরা যখন দায়িত্বে ছিলাম তখন ১২৩ মিলিয়ন পাউণ্ড সেভিং বা সাশ্রয় করেও জনগুরুত্বপূর্ণ সকল সার্ভিস চলমান রেখেছিলাম। কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও আমরা বাসিন্দাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী সার্ভিসগুলো প্রদান করেও ৩৭ মিলিয়ন সাশ্রয় করতে সক্ষম হবো।