পত্রিকা ডেস্ক
:লণ্ডন, ১১ জুন: সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৭ নম্বর ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থীর বাসার সামনে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে নগরের বিমানবন্দর থানার পুলিশ। গত ১০ জুন শনিবার ভোর চারটা থেকে সাড়ে চারটার মধ্যে নগরের বনকলাপাড়া ও হাজীপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন বনকলাপাড়া এলাকার আতিকুর রহমান (৪২), জুবের আহমদ (৩৮) ও হাজীপাড়া এলাকার নুরুজ্জামান (৩৪)। পুলিশের ভাষ্য, গ্রেপ্তার জুবের আহমদ ও নুরুজ্জামানের অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার বিষয়টি ফেইসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এ ঘটনায় শনিবার দিবাগত রাত সোয়া ১২টার দিকে বিমানবন্দর থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় ৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আফতাব হোসেন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ২০ থেকে ২৫ জনকে। গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা আফতাব হোসেন খানের অনুসারী হিসেবে এলাকায় পরিচিত। তিনজনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি নিশ্চিত করে সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) সুদীপ দাস বলেন, অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। পুলিশ ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ তাঁর বাসার সামনে আরেক প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী আফতাব হোসেন খান ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার পাশাপাশি ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ করেন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে। ৯ জুন শুক্রবার বেলা সাড়ে পাঁচটার দিকে এ অভিযোগ দেওয়ার পরপরই রিটার্নিং কর্মকর্তা পুলিশকে বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এরপরই পুলিশ সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে।
স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন-২০০৯ এবং আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ (দ্রæত বিচার) (সংশোধন) আইন-২০১৯ অনুযায়ী, ত্রাস সৃষ্টি করে ভয়ভীতি ছড়ানোসহ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অপরাধে মামলাটি হয়েছে। শনিবার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগে কাউন্সিলর প্রার্থী সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ বলেন, গত মঙ্গলবার আনুমানিক সকাল ছয়টার দিকে বর্তমান কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খানের নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২টি মোটরসাইকেলে ২০ থেকে ২৫ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী তাঁর বাসার ফটকের সামনে আসে। এ সময় সন্ত্রাসীরা বন্দুক তাক করে তাঁকে (আবদুল্লাহ) ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়। পাশাপাশি ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এদিকে অস্ত্রসহ মহড়া দেওয়ার তিনটি ভিডিও গত বৃহস্পতিবার রাতে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব ভিডিওর একটিতে সায়ীদ মো. আবদুল্লাহর বাড়ির সামনে আফতাব হোসেনকে মহড়া দিতে দেখা গেছে। সিলেট সিটির ৭ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আফতাব ঘুড়ি প্রতীক, সায়ীদ মো. আবদুল্লাহ লাটিম প্রতীক ও মো. জাহিদ খান সায়েক ঠেলাগাড়ি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। ২১ জুন সিলেট সিটিতে ভোট অনুষ্ঠিত হবে। সিলেটের সেই কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাবকে ইসিতে তলব প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থীর বাড়ির সামনে অস্ত্র প্রদর্শনের ঘটনায় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনের এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে তলব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন তাঁর প্রার্থিতা বাতিল করা হবে না বা তাঁর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছে। সোমবার ইসির পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শরিফুল আলমের সই করা সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
ওই কাউন্সিলর প্রার্থীর নাম আফতাব হোসেন। তাঁকে আগামী বুধবার ঢাকায় নির্বাচন কমিশনে ব্যক্তিগতভাবে হাজির হতে বলা হয়েছে। ইসির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী আফতাব হোসেন খানের (ঘুড়ি প্রতীক) বিরুদ্ধে লোকজনসহ প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থীর বাড়ির সামনে সশস্ত্র মহড়া দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, ভিডিও চিত্র রয়েছে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিষয়টি প্রচারিত হয়েছে। তা ছাড়া ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী সাঈদ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ (লাটিম প্রতীক) এ বিষয়ে কমিশন বরাবর লিখিত অভিযোগ ও এজাহার দায়ের করেছেন। ওই অভিযোগ ও এজাহারের ভিত্তিতে রিটার্নিং কর্মকর্তা তদন্ত করে এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেছেন, যেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আচরণ বিধিমালা ২০১৬-এর বিধি ৩০ লঙ্ঘনের দায়ে, বিধি ৩১ ও ৩২ অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল অথবা তাঁর বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, সে বিষয়ে লিখিত বক্তব্যসহ নির্বাচন কমিশনে আগামী বুধবার বেলা তিনটায় ব্যক্তিগতভাবে উপস্থিত হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।