লণ্ডন, ০৭ আগস্ট: বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী, কমিউনিটির অগ্রজ সাংবাদিক ও সম্পাদক, ‘যিসাসের আগমন অনিবার্য’ কবিতার লেখক সকলের পরম শ্রদ্ধেয় কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা ব্যক্তি জীবনে ৭০টি রঙিন বসন্ত পেরিয়ে এসেছেন। গত ৩০ জুলাই রবিবার ছিল তাঁর ৭১তম জন্মদিন। দিনটি উদযাপন উপলক্ষে ‘অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এদিন ‘লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব’ মিলনায়তনে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
গুণীজনকে মরণোত্তর সম্মানিত করার প্রচলিত চর্চা ভেঙে ‘অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ বিলেতে বাঙালি কমিউনিটির মুরুব্বী, প্রবীণ সাংবাদিক ও বহুল প্রচারিত ‘সাপ্তাহিক সুরমা’র প্রধান সম্পাদক কবি ও কলামিস্ট ফরীদ আহমদ রেজা’র ৭১তম জন্মদিন উদযাপন করেছে।
আয়োজকরা বলেন, ফরীদ আহমদ রেজার অনেক পরিচয়, তাঁর কাজের পরিধি বিস্তৃত, অবদানের তাৎপর্য সুদূরপ্রসারী। বিলেতের বাংলা মিডিয়া, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তিনি অগ্রণী ব্যক্তিত্ব। সাংবাদিক, সংগঠক, কবি, লেখক ও শিক্ষক হিসেবে তিনি অনন্য কৃতির অধিকারী। তাঁর এই বিপুল কর্মময় বর্ণাঢ্য জীবন সামগ্রিকভাবে বাঙালির মানস ও সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করেছে। দীর্ঘদিন তিনি বাংলা মিডিয়ার সঙ্গে আছেন। এ গুণী মানুষটি মেধা ও মননে বাংলা মিডিয়াকে বারবার প্রাণিত করছেন।
সাপ্তাহিক সুরমার প্রধান সম্পাদক, কবি ও প্রাবন্ধিক ফরীদ আহমদ রেজার ৭১তম জন্মদিনে তাঁর উপস্থিতিতে তাঁকে এই সম্মাননা প্রদান করা হয়। বৃষ্টিবিঘ্নিত দিনে বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিভিন্ন সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ কবি ফরীদ আহমেদ রেজাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। ৭০ দশকের এই চির তরুণ শক্তিমান লেখককে সবাই মিলে জন্মদিনে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান ও তাঁর হাতে জন্মদিনের উপহার সামগ্রী তুলে দেন এবং তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে নিমন্ত্রিত অতিথিরা মূল্যবান আলোচনা করেন।
জন্মদিনের অনুষ্ঠান উপলক্ষে অনেক দিন পর গত ৩০ জুলাই ’২৩, রবিবার কবি ফরীদ আহমেদ রেজা লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে এসেছিলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও ভয়েস ফর গ্লোবাল বাংলাদেশীজ-এর চেয়ার ড. হাসানাত এম হোসাইন, এমবিই। সাপ্তাহিক সুরমা সম্পাদক শামসুল আলম লিটনের সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, সাপ্তাহিক জনমত সম্পাদক সৈয়দ নাহাস পাশা, সুরমা’র ইংলিশ এডিসনের সম্পাদক সৈয়দ মামনুন মোর্শেদ, হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের প্রধান উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা কমাণ্ডার ড. এম এ রব ও চ্যানেল এস টিভির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মাহী ফেরদৌস জলিল। অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একজন মেধাবী ও অত্যন্ত সজ্জন মানুষ হিসেবে ফরীদ আহমদ রেজা সব সময়ই সবার কাছে শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন এবং আছেন। তাঁর প্রজ্ঞা ও অভিজ্ঞতা কমিউনিটির মধ্যকার পারস্পরিক সম্প্রীতি ও সহাবস্থান মজবুত রাখতে ভূমিকা রাখছে। তাঁর কবিতা, প্রবন্ধ, সাহিত্য বা সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ কমিউনিটির মানবিক ধারাকে প্রভাবিত করেছে, শক্তিশালী করেছে। সে জন্য কমিউনিটি তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।
বক্তারা আরও বলেন, কবি ফরীদ আহমদ রেজার কবিতায়, চিন্তায় ও লেখায় মুক্তিযুদ্ধ-দেশপ্রেম এসেছে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে। তিনি একজন সাহসী মানুষ। তিনি সবাইকে সাহসী হতে সাহস দেন। অন্ধকারকে আলো দেখাতে উদ্বুদ্ধ করেন। কমিউনিটির মুখপত্র হিসেবে প্রাচীন পত্রিকা সুরমাকে তিনি আরও এগিয়ে নিবেন। আমরা ফরীদ আহমেদ রেজা ভাইয়ের শততম জন্মদিন পালনের অপেক্ষায় থাকবো। কমিউনিটি এগিয়ে চলুক এই মশালের আলোয়।
বক্তারা উল্লেখ করেন, সাংবাদিকতা, কাব্যচর্চা ও শিক্ষকতার মাধ্যমে ফরীদ আহমেদ রেজা তাঁর কর্মজীবন অব্যাহত রেখেছেন। নানা প্রতিকূলতার মধ্যে সমাজে একজন সৃজনশীল মানুষের সততা ও নিষ্ঠা ধরে রাখা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। ফরীদ আহমেদ রেজা সেক্ষেত্রে একটি দৃষ্টান্ত ও অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবেন। তাঁর দীর্ঘ জীবন কামনা করে সমাজে শিক্ষা ও সহনশীলতার প্রসারে আরও অবদান রেখে যাবেন বলে সকলে আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে ফরীদ আহমেদ রেজা’র জীবন ও কর্মের উপর মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন শিক্ষাবিদ প্রফেসর আব্দুল কাদের সালেহ। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য ও প্রশ্নোত্তরে অংশ নেন শিক্ষাবিদ শাহ আলম, টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল মেয়রের উপদেষ্টা ও প্রেস ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ জুবায়ের, প্রাবন্ধিক ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আহমেদ কুতুব, মাওলানা রফিক আহমেদ, কবি আহমেদ ময়েজ, সাংবাদিক ও কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট বদরুজ্জামান বাবুল, সাংবাদিক ও কবি কাইয়ুম আব্দুল্লাহ, সাংবাদিক ও লেখক মোহিতুর রহমান বাবলু, সাংবাদিক ও কবি শরিফুজ্জামান, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ট্রেজারার সালেহ আহমেদ, লণ্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ইভেন্ট অ্যাণ্ড ফ্যাসিলিটিজ সেক্রেটারি রেজাউল করিম মৃধা ও সাংবাদিক আমিমুল ইসলাম তানিম প্রমূখ।
অনুষ্ঠানে তিন কিশোর ভক্ত আইমান, জিয়ান ও ফারহান তাদের প্রিয়জন ফরীদ আহমেদ রেজাকে জন্মদিনের উপহার প্রদান করেন। সংগীত শিল্পী ও আবৃত্তিকার সোমা দাস ফরীদ আহমেদ রেজা’র কবিতা আবৃত্তি করেন। অনুষ্ঠানে সার্বিক সমন্বয়ে ছিলেন হায়দার খান নান্না। সাংবাদিক ফরীদ আহমেদ রেজাকে সুরমা পরিবারের পক্ষ থেকে ফুল ও উপহার দিয়ে স্বাগত জানানো হয়। এছাড়া অন্যান্যের মধ্যে প্রবাসী অধিকার পরিষদের পক্ষ থেকে জামান সিদ্দিকী, ইক্যুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল-এর পক্ষ থেকে সাংবাদিক মাহবুব আলী খানশূর ও নিরাপদ বাংলাদেশ আন্দোলনের পক্ষ থেকে তরিকুল ইসলামসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। আয়োজক সংগঠন ‘অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’ এর প্রধান ও ‘দ্যা গ্রেইট বেঙ্গল টুডে’র এডিটর ইন চিফ হাসানাত আরিয়ান খান গুণীজনদের সম্মাননায় এধরণের আয়োজন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। বিশেষ করে তিনি আমাদের জাতীয় জীবনে যে তিনটি বিশেষ সংখ্যা (৫২, ৫৭ ও ৭১) আছে, এই তিনটি সংখ্যায় দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত কমিউনিটির বরণ্যে গুণীজনরা পদার্পণ করলে আর ‘অখণ্ড বাংলাদেশ আন্দোলন’-এর সাথে সংশ্লিষ্টরা তা জানলে কিংবা কেউ জানালে বা কেউ তথ্য দিলে সবাইকে সাথে নিয়ে এমন আয়োজন বারবার করার ও গুণীজনদের নিয়মিত সম্মাননা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি কমিউনিটির বরণ্যে গুণীজনদের কেউ ৫২ বছর ও ৫৭ বছর এবং ৭১ বছরে পদার্পণ করলে সেই তথ্য জানাতে সকলকে বিনীত অনুরোধ করেন।
জন্মদিন উপলক্ষে কবি ফরীদ আহমেদ রেজা তাঁর অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, ‘হে সুহৃদগণ! আপনাদের ভালবাসায় আমি আপ্লুত, বাকরুদ্ধ। কৃতজ্ঞতা জানাবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। আমার জন্মদিনে যে সকল গুণী ব্যক্তি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন, শুভেচ্ছা জানাতে অনুষ্ঠানে এসেছেন, কথা বলেছেন, এমনকি অন্য প্রতিশ্রুতি থাকায় যারা আসতে পারেননি- সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং সবাইকে শুভকামনা জানাচ্ছি। আপনাদের সবাইকে শুকরিয়া জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, ‘যিসাসের আগমন অনিবার্য’ কাব্য গ্রন্থের লেখক বিশিষ্ট কবি ফরীদি আহমদ রেজা ৩০শে জুলাই ১৯৫২ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মনফর উদ্দীন আহমদ, মাতা সৈয়দা সুফিয়া আহমদ। স্ত্রী-নীলুফার খানম একজন শিক্ষক। স্ত্রী, দুই পুত্র ও দুই কন্যাকে নিয়ে তাঁর সুখের সংসার। পুত্র নাফে আনাম ও রাবি নিয়াম, কন্যা রিদা হিসান ও ওয়ারদাহ নিসওয়ান। অনুষ্ঠানে জাবেত্রী রেস্টুরেন্টের ঐতিহ্যবাহী চিকেন বিরিয়ানি দিয়ে সবাইকে আপ্যায়ন করা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি