মেরুদণ্ডের গুরুতর ও স্থায়ী ক্ষতি যৌন সক্ষমতা হারানো স্নায়ু বৈকল্য হাঁটাচলায় অসুবিধা নাইট্রাস অক্সাইড সংক্রান্ত নতুন আইন টাওয়ার হ্যামলেটস-কুইন মেরি যৌথ প্রতিরোধ কার্যক্রম
লণ্ডন, ০১ অক্টোবর: সর্বনাশা নেশাদ্রব্য ‘নাইট্রাস অক্সাইড’ (‘লাফিং গ্যাস’) সেবনের ভয়াবহ পরিণতির নানা দিক বেরিয়ে এসেছে কুইনমেরি ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায়। এই গবেষণা বলছে, নাইট্রাস অক্সাইড সেবনে মেরুদণ্ডের গুরুতর ও স্থায়ী ক্ষতি, যৌন সক্ষমতা হারানো এবং স্নায়ু বিকল হওয়াসহ হাঁটাচলায়?অসুবিধা দেখা দিতে পারে। বহুদিন থেকেই তরুণদের মধ্যে এই নেশাদ্রব্য সেবনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলেও এর পরিণাম সম্পর্কে অনেকেই অবগত ছিলেন না। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, নাইট্রাস অক্সাইড (এন২০) ব্যবহারকারীরা সব পটভূমির হলেও মূলত তরুণ ও এশিয়ান পুরুষরা আক্রান্ত হচ্ছে সবচেয়ে বেশি।
লণ্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর প্রিভেন্টিভ নিউরোলজির প্রফেসর এবং বার্টস হেলথ এনএইচএস ট্রাস্টের কনসালটেন্ট নিউরোলজিস্ট অ্যালিস্টার নয়েস বলেছেন, “গত কয়েক বছর ধরে, আমি কয়েকশ রোগী দেখেছি যারা নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার করছেন এবং ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছেন। সবচেয়ে সাধারণ জিনিস যা ঘটে তা হল তারা তাদের মেরুদণ্ডের ক্ষতি করে। তাদের হাঁটতে অসুবিধা হয়, তাদের হাত ও পা অনুভব করতে সমস্যা হয় এবং কখনও কখনও টয়লেটে যেতে সমস্যা হয় এবং তাদের অনেকেই যৌন সক্ষমতা হারায়।” আর এই বিপদ সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টির জন্য টাওয়ার হ্যামলেটস এবং কুইনমেরি ইউনিভার্সিটি সম্মিলিত উদ্যোগে কর্মশালার পাশাপাশি বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর বুধবার টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের টাউন হলে আয়োজিত এই যৌথ কর্মশালায় নির্বাহী মেয়র লুৎফুর বলেন, প্রতিরোধমূলক এই কর্মশালা নাইট্রাস অক্সাইডের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করবে। তিনি জানান, ড্রাগ বা মাদক ব্যবহারের পরিণতি তুলে ধরার একটি কর্মসূচির অংশ হিসাবে টাওয়ার হ্যামলেটসের কিশোর-তরুণদের কাছে নাইট্রাস অক্সাইড (এনওএক্স/এন২০) যে মেরুদণ্ডের ক্ষতি করতে পারে এবং গুরুতর ও স্থায়ী অক্ষমতার কারণ হতে পারে- এই বার্তা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ‘এন২০ নো দ্য রিস্কস্’ হচ্ছে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল এবং কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি কর্তৃক যৌথভাবে পরিচালিত একটি নতুন কর্মসূচি, যার লক্ষ্য হল নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহারের ঝুঁকি সম্পর্কে যেমন ভিটামিন বি-১২ কাজ করা বন্ধ করে দেওয়ার ফলে পক্ষাঘাত ও স্নায়ুর ক্ষতি হওয়ার মত গুরুতর ঝুঁকি সম্পর্কে সকলকে সচেতন করা।
এই প্রকল্পের আওতায় নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহারকারীদের জন্য?ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কিত কর্মশালার আয়োজন করার কর্মসূচি রয়েছে। এই কর্মসূচীর আওতায় বারার স্কুলসমূহ, তরুণদের গ্রুপসমূহ এবং কমিউনিটির বিভিন্ন ভবনে কম বয়সীদের জন্য নাইট্রাস অক্সাইড সেবনের ঝুঁকির উপর প্রতিরোধমূলক কর্মশালার আয়োজন করা হবে। উল্লেখ্য, রয়্যাল লণ্ডন হাসপাতালে প্রতি প্রতি সপ্তাহে নাইট্রাস অক্সাইড সম্পর্কিত স্নায়ুবিক ক্ষতির শিকার হওয়া ৫জন ভর্তি হওয়ার ঘটনা ঘটছে এবং এটি একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।
অ্যালিস্টার নয়েস আরো বলেন, “আপনি যদি নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার করেন এবং আপনি এই উপসর্গগুলির মধ্যে কোনটি অনুভব করেন, তবে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি অবিলম্বে নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার বন্ধ করুন এবং মূল্যায়নের জন্য হাসপাতালে আসুন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করুন।” জানা গেছে, টাওয়ার হ্যামলেটস এনফোর্সমেন্ট অফিসাররা যাতে ব্যবহারকারীদের কাছে নাইট্রাস অক্সাইডের ঝুঁকি সম্পর্কে রাস্তায় পরামর্শ প্রদান করতে পারেন, এবং যাদের লক্ষণ রয়েছে তাদের হাসপাতালে চিকিৎসা সেবার আওতায় আনা এবং গবেষণা ও ক্লিনিক্যাল বিষয়গুলো সম্পর্কে জানাকে আরো উন্নতি করা যায়, সেজন্য ‘এন২০ নো দ্য রিস্কস‘ প্রোগ্রামটিতে এনফোর্সমেন্ট অফিসারদের জন্য প্রশিক্ষণও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
প্রকল্পের অংশ হিসাবে একজন জুনিয়র ডাক্তার প্রকল্পের ক্লিনিক্যাল দিকগুলিতে নেতৃত্ব দেবেন। কর্মশালা আয়োজনে সহযোগী হিসেবে এই প্রকল্পের সাথে ওসমানী ট্রাস্ট অংশীদার হিসেবে সম্পৃক্ত থাকবে। নাইট্রাস অক্সাইডের বিপদ সম্পর্কিত বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য কমিউনিটি সংস্থাগুলো এবং পুলিশও জড়িত থাকবে। ইতিমধ্যে একটি কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছে এবং এর সাথে যারা জড়িত তাদের ওপর কর্মশালা ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে।
নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহারকারী এক ব্যক্তি বলেছেন: “আমি এখন নাইট্রাস অক্সাইডের ঝুঁকি সম্পর্কে জানি। আমি মনে করতাম এটি মোটেই ক্ষতিকারক নয় এবং এটি ব্যবহার করা ঠিক আছে। এখন আমি অবশ্যই এটি আর ব্যবহার করছি না। মানুষকে এটি ব্যবহার পরিত্যাগের জন্য বলার পরিবর্তে তারা আমাদেরকে এর ঝুঁকি সম্পর্কে জানিয়েছে।”
টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমান বলেন, “নাইট্রাস অক্সাইড ব্যবহার আমাদের অনেক বাসিন্দাকে প্রভাবিত করে। এটি গ্রহণের ফলে স্বাস্থ্যের ক্ষতি, এর সাথে সম্পর্কিত অসামাজিক আচরণ এবং ক্যানিস্টার ও সিলিণ্ডারে আবর্জনায় রাস্তা, ফুটপাত, পার্ক নোংরা হওয়ার কারণে আমরা এই সমস্যা মোকাবেলাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। “এই প্রতিরোধমূলক কর্মশালা এবং সচেতনতা সেশনগুলি আমাদেরকে নাইট্রাস অক্সাইডের বিপদ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সাহায্য করবে, যা এর ব্যবহার বন্ধ করার প্রচেষ্টার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যাইহোক, যারা আমাদের বারায় এটি ব্যবহার করে চলেছে বা যারা এগুলো বিক্রি করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।”
কমিউনিটি সেইফটি বিষয়ক কেবিনেট মেম্বার, কাউন্সিলর আবু তালহা চৌধুরী বলেছেন, “আমি একটি কর্মশালায় অংশ নিয়েছি এবং দেখেছি কিভাবে এটি ইতিমধ্যে আমাদের বারার তরুণদের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আমরা নিশ্চিত যে শিক্ষা এবং প্রয়োগের এই সম্মিলিত পদ্ধতি আমাদের বারায় এন২০ ব্যবহার কমিয়ে দেবে।” কুইন মেরি ইউনিভার্সিটি অফ লণ্ডনের মেডিক্যাল ছাত্র ডেভান মাইর, যিনি প্রফেসর নয়েস এর সহায়তায় ওয়ার্কশপগুলো তৈরি করেছিলেন এবং প্রাথমিকভাবে আয়োজন করেছিলেন, যা এখন টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল কর্তৃক আরো বিস্তৃত পরিসরে আয়োজন করা হচ্ছে, তিনি বলেন, “নাইট্রাস অক্সাইডের ঝুঁকি সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে আমরা মানুষকে ক্ষমতায়িত করতে চাই। কারণ, আমরা দেখেছি যে এটা একদম প্রাথমিক পর্যায়েই মানুষের জীবনে প্রভাব ফেলতে সক্ষম। এটি বক্তৃতা দেওয়ার বিষয় নয়, বরং এই সত্যটি পরিবর্তন করা যে অনেকেই জানেন না যে এই ক্যানেস্টারগুলো সম্ভাব্যভাবে মেরুদণ্ড এবং স্নায়ুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে, এমনকি এর ব্যবহারকারীকে পক্ষাঘাতের দিকেও ঠেলে দিতে পারে।” নেইবারহুডস্ টাওয়ার হ্যামলেটসের এমপিএস সুপারিনন্টেডেন্ট জয় সিং বলেছেন, “আমরা নাইট্রাস অক্সাইডকে ক্লাস সি ড্রাগ হিশাবে বিবেচনার জন্য সরকার কর্তৃক বর্ণিত আইনি সংস্কারের জন্য অপেক্ষা করছি। তবে আমি নাইট্রাস অক্সাইডের অপব্যবহার মোকাবেলায় এই জনস্বাস্থ্য পদ্ধতিকে স্বাগত জানাই। জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং ব্যবহারকারীদের এর ঝুঁকি সম্পর্কে শিক্ষিত করার মাধ্যমেই আমরা সুরক্ষা নিশ্চিত করার বিষয়টি শুরু করতে পারি। এনফোর্সমেন্ট একা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবে না।”