হৃদরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে জীবন বাঁচান
সারা বিশ্বের মানুষকে নিজের হৃদযন্ত্রের যত্নের প্রতি মনোযোগী করতে ২৯ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ‘হার্ট’ দিবস পালিত হয়। এই দিবসকে সামনে রেখে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান এনএইচএস প্রচারাভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। এরই অংশ হিশেবে বহুজাতিক ব্রিটেনের সবচেয়ে বৈচিত্রপূর্ণ নগরী লণ্ডনেও চলছে নানা জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম।
এনএইচএসসহ বিভিন্ন সংস্থার জরীপ মতে, ‘করোনারি হার্ট ডিজিজ’ অর্থাৎ হৃদরোগ আক্রান্তের হার দক্ষিণ এশীয়দের ৫০ শতাংশ বেশি। হৃদরোগে আক্রান্তদের ব্যাক্তদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রেই জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে জানিয়েছেন চিকিৎকরা। বিভিন্ন জরীপ বলছে, অন্যান্যদের তুলনায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে আসা মানুষের মধ্যে ‘করোনারি হার্ট ডিজিজে’ আক্রান্তের হার ৫০ শতাংশ বেশি। হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধানতম ঝুঁকি এটি। কাজেই হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার লক্ষণ এবং এর থেকে দ্রুত সুস্থতা পাওয়ার জন্য সতর্ক থাকা অত্যন্ত জরুরি। আবার এনএইচএস ইংল্যাণ্ড পরিচালিত সমীক্ষা বলছে, ‘হার্ট অ্যাটাক’ ও ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ অর্থাৎ হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা নিয়েই সন্দিহান বহু মানুষ। লণ্ডনে সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারী দুই-তৃতীয়াংশ দক্ষিণ এশীয় এই দুটি বিষয়ের মধ্যে পার্থক্য করতে পারেন না। প্রতি চারজনে একজন (৩৮%) মনে করেন, হার্ট অ্যাটকেরই আরেক নাম কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট যা গুরুতর ভুল।
এদিকে, লণ্ডনে দক্ষিণ এশীয় জনগোষ্ঠীর ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষায় দেখা গেছে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি (৫২%) হৃদরোগে আক্রান্তের লক্ষণগুলো চেনার ব্যাপারে খুব একটা আত্মবিশ্বাসী নন। তারা মনে করেন, লক্ষণগুলো তারা না-ও চিনতে পারেন। এছাড়া লণ্ডনে বসবাসকারী প্রায় অর্ধেক (৪৬%) দক্ষিণ এশীয় জানিয়েছেন, তাদের বা তাদের কাছের মানুষের বুকে ব্যথা উঠলেও তারা ৯৯৯-এ ফোন করবেন না।
সম্প্রতি নর্থ লণ্ডন কার্ডিয়াক অপারেশনাল ডেলিভারি নেটওয়ার্ক তাদের প্রচারাভিযানের অংশ হিশেবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হলে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে জীবন বাঁচাতে সহায়তা করার আহবান জানিয়েছে। নিউহামের জিপি ডা. ফারজানা হোসেইন বলেছেন, সবাই জানে যে, বুকে ব্যথা হচ্ছে হৃদরোগে আক্রান্তের সবচেয়ে পরিচিত লক্ষণ। তবে ব্যক্তিভেদে তা ভিন্ন হতে পারে। তিনি আমাদের আরো জানাচ্ছেন, হৃদরোগে আক্রান্তের বাকি লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- বুকে ব্যথা, চাপ, ভার অনুভব করা। শরীরের অন্য অংশে ব্যথা অনুভব করা। মাথা হালকা বোধ হওয়া বা মাথা ঘোরা। ঘাম হওয়া, শ্বাসকষ্ট অথবা বমি বমিভাব বা বমি হওয়া। তীব্র অস্থিরতা বোধ কিংবা কফ বা কাশি।
সাউথ উডফোর্ডের ইংরেজি শিক্ষক আসিফ হক তাঁর হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে বলেছেন, সময় মতো চিকিৎসা তাঁর প্রাণ বাঁচিয়েছে। মধ্য চল্লিশে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। তবে তাঁর অভিজ্ঞতা বলছে, তিনি যদি আরো আগে সাহায্য চাইতেন তাহলে তার হৃদযন্ত্র ৩০ শতাংশ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচতে পারত। আমরা মনে করি যেহেতু দক্ষিণ এশীয় হিশেবে বাংলাদেশীরা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার অধিক ঝুঁকিতে রয়েছেন তাই এর লক্ষণগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখা সবার জন্যই খুবইপূর্ণ। এ ব্যাপারটি জানা থাকলে আপনি নিজের কিংবা অন্য কারো বেলায়?দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে জীবন বাঁচাতে পারেন।